বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

সূরা হুদ;(১৭তম পর্ব)



সূরা হুদ; আয়াত ৬৯-৭৩

সূরা হুদের ৬৯ ও ৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُنَا إِبْرَاهِيمَ بِالْبُشْرَى قَالُوا سَلَامًا قَالَ سَلَامٌ فَمَا لَبِثَ أَنْ جَاءَ بِعِجْلٍ حَنِيذٍ (69) فَلَمَّا رَأَى أَيْدِيَهُمْ لَا تَصِلُ إِلَيْهِ نَكِرَهُمْ وَأَوْجَسَ مِنْهُمْ خِيفَةً قَالُوا لَا تَخَفْ إِنَّا أُرْسِلْنَا إِلَى قَوْمِ لُوطٍ

"আমার প্রেরিত (ফেরেশতাগণ) সুসংবাদ নিয়ে ইব্রাহীমের নিকট এল। তারা বললো, সালাম, সেও বললো সালাম। সে অবিলম্বে কাবাব করা এক গো বৎস নিয়ে এল।” (১১:৬৯)

“সে যখন দেখলো, তারা খাবারের দিকে হাত বাড়াচ্ছে না তখন তাদেরকে অবাঞ্চিত মনে করলো এবং তাদের সম্বন্ধে তার মনে ভীতি সঞ্চার হলো, তারা বললো ভয় করো না, আমরা লুতের সম্প্রদায়ের প্রতি প্রেরিত হয়েছি।" (১১:৭০)

হযরত হুদ ও সালেহ (আ.) এর ঘটনা বর্ণনার পর ৬৯ থেকে ৭৩ আয়াতে হযরত ইব্রাহীম (আ.) ও তার সাথে কয়েকজন ফেরেশতার সাক্ষাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল, একদিন কয়েকজন ফেরেশতা মানবাকৃতিতে হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর বাড়ীতে এলেন। হযরত ইব্রাহীম (আ.) তাদেরকে আপ্যায়নের জন্য গরুর গোশতের কাবাব পরিবেশন করলেন। ফেরেশতারা যেহেতু পানাহারের উর্ধ্বে তাই তারা খাবারের দিকে হাত বাড়ালেন না। ব্যাপারটি লক্ষ্য করে হযরত ইব্রাহীম (আ.) উদ্বিগ্ন ও আতঙ্কিত হলেন এবং ভাবতে লাগলেন এদের মনে কোন দুরভিসন্ধি আছে কিনা। হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর আশঙ্কা দূর করার জন্য আগন্তুকরা সুস্পষ্ট করে জানালেন, আপনি আশঙ্কিত হবেন না। আমরা আল্লাহর ফেরেশতা, আপনাকে একটি সুসংবাদ দান করা ও অন্য একটি বিশেষ কাজ সমাধা করার জন্য আমরা প্রেরিত হয়েছি। সুসংবাদ হচ্ছে, আল্লাহ আপনাকে এই বৃদ্ধ বয়সে একটি পুত্র সন্তান দান করবেন। আর অপর কাজটি হচ্ছে- লুত (আ.)এর সম্প্রদায় ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে। তাদের ব্যাপারে ঐশী শাস্তির নির্দেশ অচিরেই কার্যকরী হবে।

মুফাসসিরগণ মনে করেন, হযরত লুত (আ.) যেহেতু হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর শরীয়তের প্রচারক ছিলেন,তাই ঐশী শাস্তির বিষয়টি আগে হযরত ইব্রাহীম (আ.)কে জানিয়ে পরে হযরত লুত (আ.)কে জানানো হয়।

এই আয়াতে একে অপরকে সালাম দেয়ার গুরুত্বের বিষয়টি ফুটে উঠেছে। সালামের গুরুত্ব এত বেশী যে, ফেরেশতারাও সালাম দিয়ে তারপর কথা শুরু করেন। অতিথি পরায়নতা যে নবী রাসূলদের সুন্নাত, এ বিষয়টিও এ আয়াতে ফুটে উঠেছে।

এই সূরার ৭১ ও ৭২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَامْرَأَتُهُ قَائِمَةٌ فَضَحِكَتْ فَبَشَّرْنَاهَا بِإِسْحَاقَ وَمِنْ وَرَاءِ إِسْحَاقَ يَعْقُوبَ (71) قَالَتْ يَا وَيْلَتَى أَأَلِدُ وَأَنَا عَجُوزٌ وَهَذَا بَعْلِي شَيْخًا إِنَّ هَذَا لَشَيْءٌ عَجِيبٌ

"হযরত ইব্রাহীমের স্ত্রী নিকটেই দাঁড়িয়ে ছিল। সে হেসে ফেললো। অতঃপর আমি তাকে ইসহাকের জন্মের সুখবর দিলাম এবং ইসহাকের পরে ইয়াকুবেরও।” (১১:৭১)

“সে বললো, কি আশ্চর্য! আমি সন্তানের জননী হব, অথচ আমি বার্ধক্যের শেষ প্রান্তে এসে উপনীত হয়েছি আর আমার স্বামীও বৃদ্ধ! এত ভারী আশ্চর্য্যের কথা!" (১১:৭২)

হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর স্ত্রী সারা পাশে দাঁড়িয়ে ফেরেশতাদের কথা শুনছিলেন। তিনি নিঃসন্তান ছিলেন। এখন বৃদ্ধ বয়সে সন্তানের জন্ম দেবেন এ কথা শুনে তিনি অভিভূত হয়ে পড়েন। হযরত ইব্রাহীম (আ.)ও ঐ সময় যথেষ্ট বৃদ্ধ ছিলেন। তাই ঐ পড়ন্ত বয়সে সন্তান জন্ম দেয়ার বিষয়টি অবাক করার মতই ঘটনা! কিন্তু আল্লাহর অসাধ্য কিছুই নেই, সব কিছুই তার ইচ্ছার অধীন। হ্যাঁ, পার্থিব জগতের কোন কিছু আল্লাহর শক্তির সঙ্গে তুলনা হয় না। তিনি অসীম ও পরাক্রমশালী।

সূরা হুদের ৭৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

  قَالُوا أَتَعْجَبِينَ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ رَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ عَلَيْكُمْ أَهْلَ الْبَيْتِ إِنَّهُ حَمِيدٌ مَجِيدٌ

"ফেরেশতাগণ (হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর স্ত্রীকে) বললো, আল্লাহর কাজে বিস্ময়বোধ করছো? হে নবীর পরিবার তোমাদের প্রতি রয়েছে আল্লাহর অনুগ্রহ ও কল্যাণ, নিশ্চয় আল্লাহ প্রশংসিত মহিমাময়।" (১১:৭৩)

হযরত ইব্রাহীম (আ.)এর স্ত্রী সারা ফেরেশতাদের কথা শুনে বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। এতে বিস্মিত হবার যুক্তিসঙ্গত কারণও ছিল। বৃদ্ধ বয়সে সন্তান জন্ম দেবার পূর্বাভাস শুনলে যে কেউ হতবাক হবে এটাই স্বাভাবিক। এ জন্য ফেরেশতাগণ আল্লাহর কুদরতের কথা বিবি সারাকে স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং নবী পরিবারের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করলেন।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হযরত আলীর (আ.) প্রতি বিশ্বনবী (সা.)এর ...
মুসলিম-দর্শনে অনাদিত্ব বিষয়ক ...
লম্বা স্কার্ট পরায় স্কুল ছাত্রী ...
যদি আল-মাজেদ জীবিত থাকতেন...
রোহিঙ্গা ফেরত নেয়া নিয়ে ইরানি ...
সূরা হুদ;(১৭তম পর্ব)
আয়াতুল্লাহ জাকজাকি বেঁচে আছেন ...
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
ইরানের কয়লা খনিতে বিস্ফোরণ: ৩৫ ...
মুসলিম সমাজে স্বামী-স্ত্রীর ...

 
user comment