বাঙ্গালী
Friday 29th of March 2024
0
نفر 0

হযরত আলীর (আ.) অভিষেক

হযরত আলীর (আ.) অভিষেক

দশম হিজরীর ১৮ ই জিলহাজ্ব, ইসলামের ইতিহাসের একটি চিরস্মরণীয় দিন ।এ দিনেই মহান রাব্বুল আলামিন প্রদত্ত এবং হযরত মুহাম্মদ (সা.)আনিত ইসলাম ধর্ম পূর্ণতা লাভ করে এবং মহান আল্লাহ তাআলা কর্তৃক একমাত্র মনোনীত ধর্ম হিসেবে দুনিয়ার বুকে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
বিদায় হজ্ব শেষে মদিনাভিমুখে যাত্রার সময় মহানবী (সা.) গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে মহান আল্লাহর নির্দেশে এক অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে হযরত আলীকে (আ.) মুমিনগনের নেতা হিসেবে মনোনীত করেন।
প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)শেষবারের মত আল্লাহর ঘর জিয়ারতের পর প্রিয় জন্মভূমি পবিত্র মক্কা ত্যাগ করে ক্লান্ত শ্রান্ত শরীরে ব্যাথাক্রান্ত ভগ্ন হৃদয়ে মদিনা যাওয়ার সময় গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে পৌছালে পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি নাযিল হয়-
يَا أَيُّهَا الرَّسُولُ بَلِّغْ مَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ وَإِن لَّمْ تَفْعَلْ فَمَا بَلَّغْتَ رِسَالَتَهُ وَاللّهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ إِنَّ اللّهَ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ ﴿۶۷﴾  
অর্থাৎ হে রাসূল!যা (যে আদেশ) তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা পৌছে দাও, আর যদি তা না কর, তবে (যেন) তার কোন বার্তাই পৌছাওনি; এবং (তুমি ভয় কর না) আল্লাহ তোমাকে মানুষের অনিষ্ট হতে রক্ষা করবেন; এবং নিশ্চয় আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে সঠিক পথে পরিচালিত করেন না ।(সূরা মায়েদাহ, আয়াত- ৬৭)
রাসূল (সা.)দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে নবুয়াত ও রেসালতের দায়িত্ব যথাযথ ভাবে পালন করে আসছেন । নবুয়াত ও রেসালতের বিভিন্ন নির্দেশ তিনি যথাসময়ে উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। শরীয়তের কোন বিধি বিধান বর্ণনা করাও অবশিষ্ট ছিলনা, কোরাআন অবতীর্ণও প্রায় শেষ। বিদায় হজ্বে সবার কাছ থেকে বিদায়ও নেওয়া হয়েছে। তার জীবন সায়াহ্নে  কি এমন নির্দেশ, যা তিনি এখনো উম্মতের কাছে পৌঁছাননি ? আবার বলা হচ্ছে “আর যদি তা না কর, তবে (যেন) তার কোন বার্তাই পৌছাওনি” । সত্যিই ভাববার বিষয় ! আল্লাহর পক্ষ হতে এই আয়াত টি নাযিল হবার পর, রাসূলুল্লাহ (সা.) গাদীর-এ- খুম নামক স্থানে আল্লাহর সেই ঘোষণাটি তার উম্মতকে জানিয়ে দেয়ার জন্য থেমে গেলেন এবং বাহন থেকে নেমে পড়লেন। সবাইকে একত্রিত হতে বললেন । জোহরের নামাজ শেষে উটের গদিগুলো দিয়ে বেদী বা মঞ্চ তৈরী করা হলো । তিনি সেখানে দাড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা বর্ননা করে বললেনঃ
 “ নিশ্চয় আমি তোমাদের মধ্যে দুটি মূল্যবান জিনিস রেখে যাচ্ছি, যদি এ দু’টিকে আঁকড়ে ধর তাহলে কখনো পথভ্রষ্ট্র হবেনা। তার একটি হলো আল্লাহর কিতাব-যা আসমান হতে জমিন পর্যন্ত প্রসারিত রজ্জু এবং অন্যটি হল আমার আহলে বাইত(আমার পরিবার)। এ দুটি কখনো পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হবেনা এবং এ অবস্থায়ই হাউজে কাউসার আমার সাথে মিলিত হবে। তাই লক্ষ্য রেখ তাদের সাথে তোমরা কিরুপ আচরন করবে” (তিরমিযী)
 অন্য বর্ননায় উক্ত হাদিসের শেষে এ কথাটি রয়েছে যে, “আমি আমার আহলে বাইয়েত সম্পর্কে তোমাদেরকে আল্লাহর কথা স্মরণ করে দিচ্ছি”- এ কথাটি রাসূল (সা.) তিনবার করে বলেছিলেন। এ হাদিসটি তিরমিযী সূত্রে মেশকাতের ৫৮৯২ এবং ৫৮৯৩ নং হাদিসে সহী সূত্রে বর্ণিত হয়েছে, হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারী (রা.) হতে এবং মুত্তাকী হিন্দী তাঁর “কানজুল উম্মাল” গ্রন্থে বর্ননা করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ  “আমি তোমাদেরকে অবশ্যই দুটি জিনিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করব। আর তা হল-কোরান ও আমার আহলে বাইত। (আরবাইনাল আরবাইন এবং আল্লামা সূয়ূতীর “ইহয়াউল মাইয়্যেত”)

 তারপর রাসূলুল্লাহ (সা.) মিম্বরে দাঁড়িয়ে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন ঃ “আলাস্ত আওলা বেকুম মিন আনফুসিকুম”  অর্থাৎ আমি কি তোমাদের স্বীয় জীবন হতে অধিক প্রিয় নই ?  সবাই বললেনঃ “কালু বালা” অর্থাৎ “ হ্যা” ইয়া রাসূলুল্লাহ(সা.)। সমবেত জনতার কাছ থেকে তিনবার এই সম্মতি নেবার পর রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত আলী (আ.) এর দু’বাহু সমবেত জনতার সামনে তুলে ধরলেন আর বললেনঃ
 “মান কুনতু মাওলাহু ফাহাজা আলিউন মাওলাহু আল্লাহুম্মা ওয়ালে মান ওয়ালাহু, আদামান আদাহু, অন্সুর মান নাসারা অখ্‌জুল মান্‌ খাজালা, ফাল ইয়াছ হাদিল হাজেরুন খায়েরা”।
 অর্থাৎ আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ! তুমি তাকে বন্ধু রুপে গ্রহণ কর যে তাকে বন্ধু রুপে গ্রহন করে, তাকে শত্রু রুপে গ্রহন কর যে তার সাথে শত্রুতা করে, এবং তাকে সাহায্য কর যে আলীকে (আ.) সাহায্য করে, এবং লাঞ্চিত কর তাকে যে আলীকে (আ.) লাঞ্চিত করে। এই হাদিসটি কমপক্ষে ১১০ জন সাহাবা, ৮৪ জন তাবেঈন, ২৫৫ জন ওলামা, ২৭ জন হাদিস সংগ্রাহক, ১৮ জন ধর্মতত্ত্ববিদ, ১১ জন ফিকাহবিদ, ইমাম ও ওলামাবৃন্দ থেকে মসনদে ইবনে হাম্বল, তিরমিযি, নাসাঈ, ইবনে মাযা, আবু দাউদ, তফসিরে কাশশাফ ইত্যাদি বিখ্যাত কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। শাহ ওয়ালীউল্লাহ মোহাদ্দেস দেহলবীর ‘ইজালাতুল খাফা’ কিতাব বিশেষভাবে দ্রষ্টব্য।
এ ভাবে হযরত আলীর (আ.) প্রতিনিধিত্ব বা মওলাইয়্যাতের বায়াত শেষ হলে তখন পবিত্র কোরানের শেষ আয়াতটি নাযিল হল ‘(হে মুসলমানগণ!) আজ অবিশ্বাসীরা তোমাদের ধর্ম হতে নিরাশ হয়ে গেছে,  সুতরাং তোমরা তাদের ভয় কর না; বরং শুধু  আমাকেই ভয় কর; আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের প্রতি আমার নিয়ামত সম্পূর্ণ করলাম এবং তোমাদের জন্য ধর্ম হিসেবে ইমলামের প্রতি সন্তুষ্ট হলাম।’ ( সুরা মায়েদাঃ ৩)

 পবিত্র কোরআনেও আল্লাহ  তায়ালা হযরত আলীকে (আ.) মুমিনগনের মওলা (অভিভাবক) হিসেবে ঘোষণা করছেন । মহান রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনে বলেছেন : – “ (হে মুসলমানগণ  তোমাদের অভিভাবক তো কেবল আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সা.)এবং সেই সব বিশ্বাসীরা যারা নামায প্রতিষ্ঠা করে এবং রুকু অবস্থায় যাকাত প্রদান করে”  (সুরা মায়েদাহ- ৫৫)
তফসিরকারকরা সবাই একমত যে, এ আয়াতটি হযরত আলীর (আ.) শানে নাযিল হয়েছে।
হযরত আবুজর গিফারী (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, একদিন আমরা সবাই নবীজী (সা.) এর সাথে মসজিদে নামাজরত অবস্থায় ছিলাম, এমন সময় একজন ভিক্ষুক এসে হাঁক দিল। কেউ তাকে ভিক্ষা দিচ্ছিল না দেখে সে দু’হাত তুলে আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করে বলল, ‘হে খোদা তুমি  সাক্ষী থেক, আমি আজ তোমার নবীর দরবার থেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি ।’ হযরত আলী (আ.)নামাজরত অবস্থায় তার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলেন । লোকটি তাঁর আঙ্গুল থেকে আংটিটি খুলে নিয়ে চলে গেল। নামায শেষ হতে না হতেই আল্লাহ তাআলা এ আয়াতখানি অবতীর্ণ করলেন। হযরত ঈমাম গাজ্জালী (রা.) বলেন, সেই ভিক্ষুকটি কোন পেশাদার ভিক্ষুক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর একজন ফেরেশতা।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

বিভিন্ন ফিকাহর দৃষ্টিতে যাকাত
আল-কুরআনের মু’জিযা: একটি ...
সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
ইসলাম ধর্ম, চিত্ত বিনোদন ও আনন্দ
জান্নাতুল বাকিতে ওয়াহাবি ...
কোরআনে কারিম তেলাওয়াতের আদব
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম হাসান (আ.)-এর জন্মদিন

 
user comment