বাঙ্গালী
Friday 19th of April 2024
0
نفر 0

নাহজুল বালাগায় স্রষ্টাতত্ত্ব ও অধিবিদ্যা

নাহজুল বালাগায় স্রষ্টাতত্ত্ব ও অধিবিদ্যা

তাওহীদ ও মারেফাত

নাহজুল বালাগার অন্যতম মৌলিক অধ্যায় স্রষ্টাতত্ত্ব ও অধিবিদ্যার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয়াদি। সমগ্র খুতবা,পত্র ও সংক্ষিপ্ত বাণীতে প্রায় ৪০ বার এ সব বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। অবশ্য এ সব ক্ষেত্রে কতিপয় সংক্ষিপ্ত বাক্য বিদ্যমান রয়েছে। তবে প্রধানত এ সব ক্ষেত্রে কয়েক ছত্র এবং কখনো কখনো কয়েক পৃষ্ঠাব্যাপী হযরত আলী (আ.)-এর বক্তব্য ও বাণী পরিলক্ষিত হয়।

নাহজুল বালাগার তাওহীদ সংক্রান্ত আলোচনাগুলোকে এ গ্রন্থের সবচেয়ে বিস্ময়কর আলোচনা বলে গণ্য করা সম্ভব। কোন প্রকার অতিশয়োক্তি ছাড়াই এ সব আলোচনা অবতারণা করার সামগ্রিক অবস্থা ও শর্ত বিবেচনা করলে এগুলো যে আসলেই বিস্ময়কর ও অলৌকিক তা স্পষ্ট হয়ে যায়।

এ ক্ষেত্রেও নাহজুল বালাগার আলোচনাগুলো খুবই বৈচিত্র্যপূর্ণ। মহান আল্লাহর সৃষ্টিকর্ম,অস্তিত্বজগৎ এবং প্রজ্ঞা সম্পর্কে নাহজুল বালাগার একটি অংশে গবেষণাধর্মী আলোচনার অবতারণা করা হয়েছে। কখনো কখনো নভোমণ্ডল ও পৃথিবীর সার্বিক ব্যবস্থা সম্পর্কে এ অংশে আলোচনা করা হয়েছে। আবার কখনো কখনো বাদুড়,ময়ূর অথবা পিপীলিকার মতো নির্দিষ্ট কোন প্রাণীও আলোচনার বিষয়বস্তু হয়েছে। মহান আল্লাহর সৃষ্টিকর্মের নিদর্শনসমূহ অর্থাৎ প্রাণী ও অস্তিত্বময় সত্তাসমূহের সৃষ্টি প্রক্রিয়ায় সুষ্ঠু ঐশী পরিকল্পনা এবং লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতি ঐশী দৃষ্টি ও মনোযোগের ভূমিকা ও প্রভাব সম্পর্কেও আলোচনা করা হয়েছে। আমরা এখানে উদাহরণস্বরূপ পিপীলিকা সংক্রান্ত হয়রত আলী (আ.)-এর বাণীর অনুবাদ এখানে পেশ করব। ১১৭ নং খুতবায় বর্ণিত হয়েছে :  

“তারা কি তাঁর ক্ষুদ্র একটি সৃষ্টির ব্যাপারে গভীর মনোযোগ ও দৃষ্টি দেয় না যে,তিনি কিভাবে এর সৃষ্টি প্রক্রিয়া দৃঢ় এবং এর দৈহিক গঠন নিপুণভাবে সৃষ্টি ও শক্তিশালী করেছেন? ক্ষুদ্র জীবকেও তিনি শ্রবণেন্দ্রিয় ও দর্শণেন্দ্রিয় দিয়েছেন;অস্থি ও ত্বক দিয়ে সজ্জিত করেছেন...। পিপীলিকার দিকে তাকাও;এর ক্ষুদ্র দেহ ও সূক্ষ্ম দেহাবয়ব নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করো;এ প্রাণীটি এতটা ক্ষুদ্র যে,চোখ দিয়ে তা দেখাই যায় না এবং (মানুষের) চিন্তা ও কল্পনার মধ্যেও আসে না। কিভাবে তা মাটির ওপরে পথ চলে এবং খাদ্যের ওপরে ঝাঁপিয়ে পড়ে;শস্যদানা ঢিঁবির মধ্যে বহন করে নিয়ে যায় যা সে তার বাসস্থানে (গুদামে) সংরক্ষণ করে (রাখে) এবং গ্রীষ্মকালে শীতকালের জন্য খাদ্য মওজুদ করে;শীতকালীন নিদ্রা ও অবকাশ যাপনে গমনের সময়,(ভূ-পৃষ্ঠের ওপর) বের হয়ে আসার সময়কালটাও সে পূর্ব হতে নির্ধারণ করে নেয়। এ প্রাণীটির জীবিকারও নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে এবং এর দৈহিক গঠনানুসারে যথাযথ জীবিকা দেয়া হয়েছে। দয়ালু মহান আল্লাহ্ এ ক্ষুদ্র জীবটির ব্যাপারে মোটেও অমনোযোগী নন এবং তাকে (জীবন ধারণের অপরিহার্য উপাদান ও সামগ্রী থেকে) বঞ্চিত করেননি,এমনকি যদিও তা (পিপীলিকা) শুষ্ক এবং কঠিন শিলার নিচেও থাকে। আর তুমি যদি এ ক্ষুদ্র জীবটির খাদ্য প্রবেশ ও নির্গমন পথের (অর্থাৎ পরিপাকতন্ত্র) ব্যাপারে,এর দেহের ঊর্ধ্বাঙ্গ ও নিম্নাঙ্গ,এর উদরস্থ অঙ্গ-প্রতঙ্গ যা কিছু আছে এগুলোর গঠন এবং এর মস্তকস্থ চোখ ও শ্রবণেন্দ্রিয়ের গঠনশৌকর্য নিয়ে চিন্তা কর তাহলে তুমি বিস্মিত না হয়ে পারবেই না।”

কিন্তু নাহজুল বালাগায় তাওহীদ সংক্রান্ত যে সব আলোচনা রয়েছে সেগুলোর অধিকাংশই বুদ্ধিবৃত্তিক ও দার্শনিক আলোচনা। নাহজুল বালাগার অসাধারণ উৎকর্ষ এ সব আলোচনার মধ্য দিয়ে প্রতিভাত হয়। নাহজুল বালাগার তাওহীদ সংক্রান্ত বুদ্ধিবৃত্তিক ও চিন্তামূলক আলোচনাসমূহে যা কিছু রয়েছে,তার সকল আলোচনা,যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন এবং ফলাফল ও সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার মূল ভিত্তিস্বরূপ হচ্ছে মহান স্রষ্টার পবিত্র সত্তার নিরঙ্কুশ অসীমত্ব,স্থায়িত্ব এবং সব কিছু অর্থাৎ যাবতীয় বস্তুনিচয়ের ওপর তাঁর কর্তৃত্ব ও আধিপত্য এবং সেগুলোর তত্ত্বাবধান। হযরত আলী (আ.) এ অংশে তাঁর নিজ বক্তব্যের হক পূর্ণাঙ্গ ও যথার্থভাবে আদায় করেছেন (তিনি পূর্ণাঙ্গ আলোচনা করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে কোন কিছুই উপেক্ষা করেন নি। না তাঁর আগে কেউ অথবা তাঁর পরে কেউ তাঁর পর্যায়ে পৌঁছতে পেরেছে (অর্থাৎ কোন ব্যক্তিই তাঁর মতো এতদপ্রসঙ্গে আলোচনা করেনি)।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তার নিরঙ্কুশ সরল ধারণা;সব ধরনের বহুত্ব এবং গাঠনিক উপাদান ও অংশে এর বিশ্লেষণ ও বিভক্তির ধারণা প্রত্যাখ্যান এবং মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তা থেকে তাঁর গুণাবলী ভিন্ন ও স্বতন্ত্র হওয়ার ধারণা প্রত্যাখ্যান নাহজুল বালাগার এ অংশে বহুল আলোচনা করা হয়েছে।

আরো বেশ কিছু গভীর তাৎপর্যমণ্ডিত ও অভূতপূর্ব বিষয়ের আলোচনাও নাহজুল বালাগার এ অংশে স্থান লাভ করেছে। যেমন মহান আল্লাহর প্রথম হওয়াই (আদি) হচ্ছে হুবহু তাঁর সর্বশেষ হওয়া,তাঁর প্রকাশমানতাই হচ্ছে হুবহু তাঁর অপ্রকাশমানতা,সময়-কাল ও সংখ্যার ওপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব,প্রাধান্য ও অগ্রবর্তিতা,তাঁর অনাদি ও চিরস্থায়ী হওয়া কালগত অনাদি ও চিরস্থায়ী না হওয়া,তাঁর একত্ব সংখ্যাবাচক একত্ব না হওয়া,তাঁর সত্তাগত মহত্ব,কর্তৃত্ব,পরাক্রমশীলতা ও অমুখাপেক্ষিতা,অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্ব দান (অর্থাৎ অনস্তিত্ব থেকে সকল বস্তুকে সৃষ্টি ও অস্তিত্বে আনয়ন)। কোন বিষয় ও অবস্থাই যে তাঁকে অন্য আরেকটি অবস্থা ও বিষয় থেকে বিরত রাখতে পারে না-এ বিষয়টি;তাঁর বাণীই যে হুবহু তাঁর কর্ম-এ বিষয়টি,তাঁর পবিত্র সত্তাকে পূর্ণরূপে উপলব্ধি করার ব্যাপারে আকল অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিসমূহের অপারগতা ও অক্ষমতা,মহান আল্লাহর জ্ঞান যে আকল অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তির ওপর তাঁর এক ধরনের প্রকাশ ও বিচ্ছুরণস্বরূপ তবে তা কোন অর্থ ও ধারণার ওপর মনের আধিপত্য ও তা ধারণ ও বেষ্টন করার মতো নয়-এ বিষয়টি;মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তা থেকে সাকারত্ব (দেহধারী হওয়া),গতি,স্থিতি,পরিবর্তন,স্থান-কাল,সমকক্ষ,প্রতিপক্ষ,শরীক,সদৃশ,যন্ত্র ও মাধ্যম ব্যবহার,সীমাবদ্ধতা,সসীমত্ব ইত্যাদির ধারণা প্রত্যাখ্যান করা। এ ছাড়া আরো কিছু বিষয় আছে যেগুলোর প্রতিটির একটি নমুনা ইনশাল্লাহ্ আমরা যথাস্থানে উল্লেখ করব।

এগুলো হচ্ছে এমন সব আলোচ্য বিষয় যা বিস্ময়কর এ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। প্রাচীন ও আধুনিক দার্শনিকদের যাবতীয় আকীদা-বিশ্বাস ও চিন্তাধারার সাথে যিনি পরিচিত কেবল তিনি নাহজুল বালাগায় বর্ণিত এ সব বিষয়ের সাথে পরিচিত হয়ে ভীষণভাবে অবাক না হয়েই পারবেন না।

এ ক্ষেত্রে নাহজুল বালাগায় যে সব বিষয় বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনার জন্য একটি বিরাট স্বতন্ত্র গ্রন্থ রচনা করা প্রয়োজন। একটি বা দু’টি প্রবন্ধে সব কিছু ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয়। তাই এ প্রবন্ধে সংক্ষেপে আলোচনা করা ছাড়া আর কোন উপায়ও নেই। তবে যাতে করে নাহজুল বালাগার এ অংশে একটি সংক্ষিপ্ত সার্বিক দৃষ্টি দিতে পারি সেজন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে কয়েকটি দিকের প্রতি ইঙ্গিত করতে চাই :

তিক্ত স্বীকারোক্তি

আমরা যারা মহান আহলে বাইতের অনুসারী তাদেরকে অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে,আমরা যাঁর অনুসারী হওয়ার গর্ব অনুভব করি হযরত আলী (আ.)-এর প্রতি আমরা অন্যায় এবং ন্যূনতম হলেও অবহেলা প্রদর্শন করেছি। আসলে আমাদের অবহেলাই তাঁর প্রতি জুলুম তুল্য। আমরা আলী (আ.)-কে চিনতে চাইনি এবং পারিওনি। আমাদের অধিকাংশ চেষ্টা-প্রচেষ্টা হযরত আলী (আ.)-এর ব্যাপারে মহানবী (সা.)-এর বর্ণিত বাণী ও হাদীসসমূহ এবং যারা এগুলো উপেক্ষা ও অবহেলা করেছে তাদেরকে দোষারোপ করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে,তবে মাওলা আলী (আ.)-এর প্রকৃত মহান ব্যক্তিত্বকে ঘিরে নয়। আমরা একদম উদাসীন থেকে গেছি যে,মৃগনাভী (মিস্ক) সদৃশ আলী (আ.) প্রকৃতপক্ষে মহান স্রষ্টা ও তাঁর রাসূল (সা.)-ই যাঁর পরিচিতি সকলের সামনে তুলে ধরেছেন তাঁরই আছে মৃগনাভীসদৃশ সুবাস ও সৌরভ (অতি মহান চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসমূহ)। সব কিছুর চেয়ে অধিক প্রয়োজনীয় হচ্ছে আমাদের ঘ্রাণেন্দ্রিয়কে তাঁর সুবাস ও সৌরভের সাথে পরিচিত ও অভ্যস্ত করা অর্থাৎ আমাদের অবশ্যই পরিচিত হতে ও পরিচিত করতে হবে। মহান আল্লাহর রাসূল (সা.) আলী (আ.)-এর সুমহান ব্যক্তিত্বের সৌরভ এ কারণেই পরিচিত করিয়ে দিয়েছিলেন যে,মানুষ তাঁর সুমহান ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের সাথে পরিচিত হবে;অবশ্যই এমনটা উদ্দেশ্য ছিল না যে,তারা কেবল আতর বিক্রেতার কথার ওপর নির্ভর করবে এবং কেবল তাঁর পরিচিতি তুলে ধরার আলোচনায় তারা তাদের সকল সময় ব্যয় করবে। অথচ তারা নিজেরা তাঁর সাথে সম্যকভাবে পরিচিত হবে না!

নাহজুল বালাগাহ্ যদি অন্যদের সৃষ্টিকর্ম হতো তাহলে কি তাঁর সাথে এ ধরনের আচরণ করা হতো? ইরান হযরত আলীর ভক্ত ও অনুসারীদের দেশ এবং ইরানের জনগণ ফার্সীভাষী। আপনারা যদি নাহজুল বালাগার ফার্সী অনুবাদ ও ব্যাখ্যাগুলোর প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করেন তাহলে নিজেদের কর্মকাণ্ডের প্রকৃত বিচার করতে পারবেন।

সার্বিকভাবে আহলে বাইতের বর্ণিত হাদীসগুলো ঠিক এমনিভাবে তাঁদের থেকে বর্ণিত প্রার্থনাসমূহ,আধ্যাত্মিক তত্ত্বজ্ঞান ও মারেফাত এবং একইভাবে আরো যাবতীয় বিষয়বস্তু ও তাৎপর্যের দৃষ্টিতে অন্য সকল মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক বর্ণিত হাদীস ও প্রার্থনাসমূহের সাথে তুলনাই করা যায় না। উসূলুল কাফী,শেখ সাদূকের ‘তাওহীদ’ অথবা আল্লামা তাবারসীর ‘আল ইহ্তিজাজ’ গ্রন্থে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে তা অপরাপর মুসলিম সম্প্রদায়ের কোন গ্রন্থেই বর্ণিত হয়নি। অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের গ্রন্থসমূহে এ ক্ষেত্রে কখনো কখনো এমন সব বিষয়ও বর্ণিত হয়েছে যে,নির্দ্বিধায় সেগুলোকে বানোয়াট (জাল) বলা যেতে পারে। কারণ সেগুলো পবিত্র কোরআনের স্পষ্ট উক্তি ও মূলনীতিসমূহের পরিপন্থী এবং সেগুলো থেকে পৌত্তলিকতা ও সাদৃশ্যবাদের গন্ধ পাওয়া যায় (যা শিরক)। সম্প্রতি হাশেম মারুফ আল হাসানী তাঁর রচিত ‘দিরাসাত ফীল কাফী ওয়াস্ সাহীহ্ লিল বুখারী’ নামক গ্রন্থে দক্ষতা ও নিপুণতার সাথে সহীহ বুখারী ও আল কাফীতে বর্ণিত স্রষ্টাতত্ত্ব সংক্রান্ত হাদীসসমূহের তুলনামূলক আলোচনা করে উক্ত গ্রন্থদ্বয়ের একটি তাত্ত্বিক মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করেছেন। আহলে বাইতের মতাদর্শে বুদ্ধিবৃত্তি (আকল) আহলে বাইতের ইমামদের মাধ্যমে স্রষ্টাতত্ত্ব সংক্রান্ত যে সব আলোচনা-পর্যালোচনা উত্থাপিত হয়েছে সেগুলো এবং এতৎসংক্রান্ত ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণসমূহ (যেগুলোর উদাহরণ বিদ্যমান এবং নাহজুল বালাগাহ্ হচ্ছে যেগুলোর সর্বশ্রেষ্ঠ উদাহরণ) প্রাচীনকাল থেকেই আহলে বাইতের অনুসারীদের বুদ্ধিবৃত্তিকে দার্শনিক বুদ্ধিবৃত্তিতে রূপান্তরিত করেছে। আর এটা ছিল না কোন বিদআত ও ধর্মবহির্ভূত নবোদ্ভাবিত বিষয়;বরং এটা ছিল পবিত্র কোরআন নির্দেশিত পথ। পবিত্র কোরআনই মুসলমানদের সামনে এ পথটির প্রবর্তন করেছে। আর আহলে বাইতের মহান ইমামগণ পবিত্র কোরআনের শিক্ষা ও নীতিমালার আলোকে পবিত্র কোরআনের ব্যাখ্যাস্বরূপ এ সব সত্য প্রকাশ করেছেন। নিন্দা করতে হলে ঐ সব ব্যক্তিকেই করতে হবে যারা এ পথ অনুসরণ করেনি এবং পথ চলার উপায় ও মাধ্যমকেও হারিয়েছে।

ইতিহাস থেকে প্রমাণিত হয় যে,ইসলাম ধর্মের শুরু থেকেই আহলে বাইতের অনুসারিগণ অন্যদের চেয়ে বেশি এ সব বিষয়ে ঝোঁক ও উৎসাহ প্রদর্শন করেছে। অন্যান্য সম্প্রদায়ের মধ্যে কেবল মু’তাযিলা সম্প্রদায় আহলে বাইতের অনুসারীদের চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার নিকটবর্তী ছিল। মু’তাযিলা সম্প্রদায়েরও এ সব বিষয়ের দিকে উৎসাহ ও আগ্রহ ছিল। তবে যেহেতু তারা (মু’তাযিলাগণ) মুসলিম উম্মার সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের সামাজিক মানসিকতা পোষণ করেনি সেহেতু প্রায় হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর পর থেকেই (মু’তাযিলা সম্প্রদায়) সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যায়।

প্রখ্যাত মিসরীয় লেখক আহমাদ আমীন তাঁর রচিত ‘যুহরুল ইসলাম’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে এ বিষয়টি স্বীকার করেছেন। তিনি মিসরে আহলে বাইতের অনুসারী ফাতেমীয়দের দ্বারা সৃষ্ট দার্শনিক আন্দোলন প্রসঙ্গে বলেছেন :

এ কারণেই আহলে তাসান্নুনের (সুন্নী সম্প্রদায়) চেয়ে আহলে বাইতের মতাদর্শের সাথেই দর্শনশাস্ত্র অত্যধিক সংশ্লিষ্ট। আমরা ফাতেমীয় ও বুওয়াইহিদ যুগে তা প্রত্যক্ষ করি,এমনকি পরবর্তী যুগগুলোতে পারস্য ইসলামী দর্শন চর্চা এবং এতৎসংক্রান্ত গ্রন্থাবলী রচনা ও প্রসারের ব্যাপারে অন্য সকল দেশের চেয়ে বেশি মনোযোগ ও আগ্রহ প্রদর্শন করেছে। জামালুদ্দীন আল আফগানী যাঁর মধ্যে আহলে বাইতের মতাদর্শের প্রতি ঝোঁক ও প্রবণতা বিদ্যমান ছিল এবং যিনি ইরানে দর্শন অধ্যয়ন করেছিলেন আমাদের সমসাময়িক যুগে যখন তিনি মিসরে আগমন করেন তখন থেকে তিনি মিসরে দর্শনকেন্দ্রিক আন্দোলনের সূত্রপাত করেন।

কিন্তু ‘কেন আহলে বাইতের মতাদর্শের অনুসারীরা অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায়ের চেয়ে বেশি দর্শনশাস্ত্রের প্রতি আগ্রহ ও ঝোঁক প্রদর্শন করেছে’-এ ব্যাপারে আহমাদ আমীন ইচ্ছে করে অথবা বিস্মৃত হয়ে ভুল মন্তব্য করে বলেছেন : “বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা ও দর্শন চর্চার প্রতি আহলে বাইতের ভক্ত ও অনুসারীদের বেশি বেশি আগ্রহ ও মনোযোগ প্রদর্শনের কারণ হচ্ছে ধর্মের স্পষ্ট ও বাহ্য (প্রকাশ্য) অর্থ ও ব্যাখ্যা বাদ দিয়ে দুর্বোধ্য রহস্যাবৃত অর্থ ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা করার প্রতি তাদের আগ্রহ ও প্রবণতা। তারা নিজেদের এই অতীন্দ্রিয়বাদী রহস্যময়তাকেন্দ্রিক প্রবণতার একটি গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করানোর জন্য দর্শনের শরণাপন্ন হতে বাধ্য হয়েছিলেন। আর এ কারণেই ফাতেমীয়দের শাসনামলে মিসর এবং বুওয়াইহী সাফাভী ও কাজারীয় শাসনামলে ইরান অন্য সকল মুসলিম দেশ অপেক্ষা সবচেয়ে বেশি দার্শনিক প্রবণতা ও দর্শনের প্রতি আগ্রহ প্রদর্শন করেছে।”

আসলে আহমাদ আমীনের বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। আহলে বাইতের মহান ইমামগণই তাঁদের ভক্ত ও অনুসারীদের মধ্যে এ আগ্রহ ও প্রবণতার স্রষ্টা। তাঁরাই তাঁদের যুক্তিপ্রমাণ উপস্থাপন (ইহ্তিজাজ),বক্তৃতা,ভাষণ,হাদীস এবং প্রার্থনাসমূহে ঐশ্বরিক প্রজ্ঞা-দর্শনের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সূক্ষ্মতম বিষয়াদি উপস্থাপন করেছেন। আর নাহজুল বালাগাহ্ হচ্ছে এর একটি উৎকৃষ্ট নিদর্শন। এমনকি আহলে বাইতের মাধ্যমে মহানবী (সা.)-এর নিকট থেকে এমন সব উচ্চাঙ্গের হাদীস বিদ্যমান রয়েছে যেগুলো অন্যান্য মুসলিম সম্প্রদায় কর্তৃক মহানবীর নিকট থেকে বর্ণিত হয়নি। আহলে বাইতের মতাদর্শের অনুসারীদের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তি কেবল দর্শনশাস্ত্রের সাথেই সংশ্লিষ্ট নয়;বরং কালাম,ফিক্হ্ ও উসূলে ফিক্হতেও তাদের মেধা ও বুদ্ধিবৃত্তি অনন্যসাধারণ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। আর এ সব কিছুর উৎসমূল আসলে একটাই (অর্থাৎ আহলে বাইতের মহান ইমামদের বুদ্ধিবৃত্তিক প্রচেষ্টা ও আন্দোলন)।

কেউ কেউ এ পার্থক্য ও স্বাতন্ত্র্য আহলে বাইতের অনুসারীদের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করেন এবং বলেন যে,যেহেতু আহলে বাইতের অনুসারীরা ছিল ইরানী এবং ইরানীরা ছিল আহলে বাইতের অনুসারী আর ইরানের জনগণ ছিল চিন্তাশীল ও সূক্ষ্মদর্শী সেহেতু তারা নিজেদের শক্তিশালী বুদ্ধিবৃত্তি ও চিন্তাশক্তির দ্বারা আহলে বাইতের অনুসারীদের জ্ঞানভাণ্ডার সমৃদ্ধ (করেছেন) এবং তা ইসলামী রংয়ে রঞ্জিত করেছেন।

বার্ট্রান্ড রাসেল তাঁর ‘পাশ্চাত্য দর্শনের ইতিহাস’ গ্রন্থের দ্বিতীয় খণ্ডে প্রাগুক্ত ভিত্তির ওপর নির্ভর করেই মন্তব্য করেছেন। রাসেল তাঁর স্বভাবসুলভ বৈশিষ্ট্য ও চিরাচরিত অভ্যাস অনুযায়ী বেশ অমার্জিত ও অশালীন ভাষায় এ ব্যাপারে তাঁর দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করেছেন। অবশ্য এ ধরনের দাবি করার ক্ষেত্রে তাঁকে দোষ দেয়াও যায় না। কারণ তিনি ইসলামী দর্শনের সাথে আদৌ পরিচিত ছিলেন না এবং এ ব্যাপারে তাঁর কাছে ন্যূনতম তথ্য ও জ্ঞান ছিল না। তাই কিভাবে ইসলামী দর্শনের উৎস ও উৎপত্তিস্থল শনাক্ত করা তাঁর পক্ষে সম্ভব হবে?

আমরা এ ধরনের ধ্যান-ধারণা পোষণকারীদের উদ্দেশে বলতে চাই যে,প্রথমত আহলে বাইতের মতাদর্শের সকল অনুসারী না ইরানী ছিল,আর না সকল ইরানী ছিল আহলে বাইতের মতাদর্শের অনুসারী। শুধু মুহাম্মদ ইবনে ইয়াকুব কুলাইনী,মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে হুসাইন ইবনে বাবাওয়াই কোমী এবং মুহাম্মদ ইবনে আলী তালিব মাযানদারানী কি ইরানী ছিলেন? আর মুহাম্মদ বিন ইসমাঈল বুখারী,আবু দাউদ সুজিস্তানী এবং মুসলিম বিন হাজ্জাজ নিশাবুরী কি ইরানী ছিলেন না? সাইয়্যেদ রাযী যিনি ‘নাহজুল বালাগাহ্’ গ্রন্থের সংকলক তিনি কি ইরানী ছিলেন? মিসরের ফাতেমীয়গণ কি ইরানী ছিলেন?... কেন মিসরে ফাতেমীয়দের প্রভাব-প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সাথে সাথে সেদেশে দার্শনিক চিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ হয় এবং তাদের পতনের সাথে সাথে ঐ চিন্তাধারার মৃত্যু ঘটে? এরপর বহু শতাব্দী পরে আহলে বাইতের অনুসারী একজন ইরানী সাইয়্যেদের (সাইয়্যেদ জামালুদ্দীন আফগানী) মাধ্যমে পুনরায় সেখানে দার্শনিক চিন্তার প্রসার হয়।

বাস্তব কথা হচ্ছে এই যে,কেবল আহলে বাইতের মহান ইমামগণই ছিলেন এ ধরনের চিন্তা-চেতনা এবং প্রবণতা ও আগ্রহের মূল উদ্গাতা। আহলে সুন্নাতের সকল গবেষক-আলেম স্বীকার করেন যে,হযরত আলী (আ.) ছিলেন হাকীম-ই আসহাব (অর্থাৎ মহানবীর সাহাবীদের মধ্যে প্রজ্ঞাবান)। তাঁর বুদ্ধিবৃত্তি ও মেধা অন্যান্য সাহাবীর বুদ্ধিবৃত্তি ও মেধার তুলনায় ছিল স্বতন্ত্র ও ভিন্নধর্মী। দার্শনিক আবু আলী ইবনে সিনা বলেছেন :

“ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য আংশিক (সামান্য) জড় বিষয়াদির মাঝে বুদ্ধিবৃত্তিক সামগ্রিক (সর্বজনীন) বিমূর্ত ধারণা বা অর্থ যেরূপ হয় অথবা জড় দেহসমূহের ওপর প্রাধান্য বিস্তারকারী আকল (অজড় আত্মা) যেরূপ,আলী (আ.)ও মহানবী (সা.)-এর সাহাবীদের মাঝে ছিলেন ঠিক সেরূপ।”

তাই এ বিষয়টি স্পষ্ট যে,এ ধরনের ইমামের অনুসারীদের চিন্তা-চেতনা অন্যদের চিন্তা-চেতনার সাথে তুলনা করলে অবশ্যই এগুলোর মাঝে বিরাট ব্যবধান পরিলক্ষিত হবে।

আহমাদ আমীন এবং আরো কতিপয় ব্যক্তি এক ভ্রান্ত ধারণার বশবর্তী হয়ে এ ধরনের (দার্শনিক ও প্রজ্ঞাজনোচিত) বাণী ও উক্তি যে হযরত আলী (আ.)-এর হতে পারে সে ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করেছেন এবং তাঁরা বলতে চান যে,গ্রীক দর্শনের সাথে পরিচিত হবার আগে আরবগণ এ ধরনের দর্শনধর্মী ও প্রজ্ঞানির্ভর আলোচনা-পর্যালোচনা এবং তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের সাথে মোটেও পরিচিত ও অভ্যস্ত ছিল না। পরবর্তীকালে যারা গ্রীক দর্শনের সাথে পরিচিতি লাভ করেছিল তারাই এ ধরনের দার্শনিক উক্তি ও বাণী তৈরি করে হযরত আলী (আ.)-এর নামে চালিয়ে দিয়েছে!

আমরাও বলতে চাই যে,আরবরাই কেবল এ ধরনের উচ্চাঙ্গের দার্শনিক প্রজ্ঞাজনোচিত উক্তি ও বাণীসমূহের সাথে পরিচিত ছিল না;বরং অনারবগণও পরিচিত ছিল না। গ্রীস ও গ্রীক দর্শনও এ সব উচ্চাঙ্গের দার্শনিক ও প্রজ্ঞানির্ভর বাণী ও উক্তির সাথে পরিচিত ছিল না। আহমাদ আমীন প্রথমত আলী (আ.)-কে দৃষ্টিভঙ্গি,চিন্তা ও ধ্যান-ধারণার দিক থেকে আবু জাহল ও আবু সুফিয়ানের মতো অজ্ঞ-মূর্খ ও সভ্যতাবর্জিত আরব বেদুঈনদের পর্যায়ে নামিয়ে এনেছেন এবং এরপর যুক্তিবিদ্যার পক্ষ (অপ্রধান) আশ্রয় বাক্য (সুগরা)ও সাধ্য (প্রধান) আশ্রয় বাক্য(কুবরা)সাজিয়ে এ ধরনের সিদ্ধান্তে (নাতিজাহ)উপনীত হয়েছেন এবং মন্তব্য করেছেন। তাহলে বলতে হয় যে,জাহেলী আরব জাতি কি পবিত্র কোরআনের সুমহান অর্থ ও তাৎপর্যের সাথে পরিচিত ছিল? হযরত আলী (আ.) কি মহানবী (সা.) কর্তৃক বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত ও দীক্ষাপ্রাপ্ত ছিলেন না? মহানবী (সা.) কি হযরত আলীকে সাহবীদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী বলে পরিচিত করিয়ে দেননি? কতিপয় সাহাবী যাঁরা মেধা,বুদ্ধিবৃত্তি,অনুধাবন,উপলব্ধি এবং আধ্যাত্মিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত সাধারণ পর্যায়ের ছিলেন তাঁদের মর্যাদা রক্ষা করার উদ্দেশ্যে হযরত আলী (আ.)-এর মতো অসাধারণ ব্যক্তি যিনি ইসলাম ধর্মের আশীর্বাদে সর্বোচ্চ আত্মিক ও আধ্যাত্মিক এবং তাত্ত্বিক পর্যায়ের অধিকারী হয়েছিলেন তাঁর মর্যাদা অস্বীকার করার কি কোন প্রয়োজন ও যৌক্তিকতা আছে?

আহমাদ আমীন বলতে চান যে,গ্রীক দর্শনের সাথে পরিচিত হবার আগে আরবগণ নাহজুল বালাগায় বর্ণিত সূক্ষ্ম অর্থ,ভাব,তাৎপর্য,ধ্যান-ধারণা ও চিন্তাধারার সাথে মোটেও পরিচিত ছিল না।

এর উত্তরে বলতে হয় যে,নাহজুল বালাগায় যে সূক্ষ্ম চিন্তা,ভাব,তাৎপর্য,ধ্যান-ধারণা ও তত্ত্ব বর্ণিত হয়েছে,গ্রীক দর্শনের সাথে পরিচিত হবার পরও সেগুলোর সাথে আরবগণ পরিচিত হতে পারে নি। শুধু আরবরা কেন অনারব মুসলমানরাও নাহজুল বালাগার চিন্তা ও দর্শনের সাথে সম্যক পরিচিতি ও জ্ঞান লাভ করতে পারে নি। আর গ্রীক দর্শনও নাহজুল বালাগার সূক্ষ্ম চিন্তা ও দর্শনের সাথে পরিচিত ছিল না। আসলে নাহজুল বালাগায় বর্ণিত এ সব সূক্ষ্ম চিন্তাধারা ও দার্শনিক বিষয়াদি ইসলামী দর্শনের একান্ত নিজস্ব বিষয় ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যাবলীর অন্তর্ভুক্ত। অর্থাৎ এগুলো আসলে ইসলাম ধর্মেরই স্বতন্ত্র ও অনন্য বৈশিষ্ট্য। আর মুসলিম দার্শনিকগণ ইসলাম ধর্মের মূলনীতিসমূহের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েই এ সব বিষয়কে ইসলামী দর্শনশাস্ত্রের অন্তর্ভুক্ত করেছেন। মূল ফার্সী থেকে মো. মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত (জ্যোতি, ২য় বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা)

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কারবালার বিয়োগান্ত ঘটনা : একটি ...
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
‘বাতিলের মুকাবিলায় ঐক্যই ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
কোরআন ও চিকিৎসা বিজ্ঞান
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস (পর্ব-১)
সূরা ইউনুস;(১৭তম পর্ব)
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
পরকালের জন্য প্রস্তুতি এবং ...

 
user comment