বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

ব্যবসায়ী ও তার তিন ছেলে

এক ব্যবসায়ীর তিন ছেলে ছিল। ছেলেদের নাম ছিল যথাক্রমে সেলিম, সালেম এবং জুযার। যেমন হয় আর কি, বাবা তার ছোটো ছেলেকে অন্য দুই ছেলের তুলনায় একটু বেশি স্নেহ করতো। আর এই বিষয়টাই কাল হয়ে দাঁড়ালো। বড় দুই ভাই ছোটো ভাইকে হিংসার চোখে দেখতে লাগলো। তার বিরুদ্ধে দু ভাই বিদ্বেষী হয়ে উঠলো ভেতরে ভেতরে। এদিকে বয়স তো আর থেমে থাকে না। বৃদ্ধ বাবা ভাবলো যে-কোনো সময় তো মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে হতে পারে। মৃত্যুর পরে সেলিম এবং সালেম জুযারকে জ্বালাতন করে কিনা এ আশঙ্কা তাঁর ভেতর জেগে উঠলো। তিনি ভাবলেন ওরা যদি জুযারকে তার প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে, তাকে তার সম্পত্তি যদি না দেয়!

 

এই টেনশন থেকে ব্যবসায়ী বাবা সিদ্ধান্ত নিলো মরার আগে তাঁর সম্পত্তি ছেলেদের মাঝে ভাগ করে দেবেন। তাই করলেন। একদিন তিনি তাঁর পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের দাওয়াত করলেন বাসায়। সবার উপস্থিতিতেই তিনি তাঁর সম্পত্তিকে চার ভাগে ভাগ করলেন। তিন ভাগ দিলেন তিন ছেলেকে আর এক ভাগ ব্যবসায়ী নিজের এবং তাঁর স্ত্রীর জন্য রাখলেন। এর কিছুদিন পর ব্যবসায়ী এই পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন। সেলিম এবং সালেম তাদের অংশ নিয়ে সন্তুষ্ট হলো না। তারা জুযারের অংশও নিয়ে যেতে চাইলো। স্বাভাবিকভাবেই তিন ভাইয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব কলহ দেখা দিলো।

 

সেলিম এবং সালেম জুযারের বিরুদ্ধে বিচারকের কাছে অভিযোগ করলো। জুযার মামলা নিয়ে এক আদালত থেকে আরেক আদালতে দৌড়লো। সেলিম সালেম এই মিথ্যা মামলা চালাতে গিয়ে ব্যাপক টাকা পয়সা খরচ করে ফেললো। কিন্তু তারপরও কোনো ফল হলো না। এভাবে কিছুদিন যাবার পর তাদের টাকা পয়সা জমিজমা সব শেষ হয়ে গেল। সর্বস্বান্ত হয়ে সেলিম সালেম নিঃস্ব হয়ে গেল। এরপর তারা গেল তাদের মায়ের কাছে। মাকে পিটিয়ে জোর করে তাঁর কাছে থাকা বাবার দেওয়া টাকাগুলো নিয়ে গেল। জুযার বাসায় ফেরার পর মা কান্নাকাটি করতে করতে তাঁর সাথে সেলিম সালেমের দুর্ব্যবহারের পুরো ঘটনা খুলে বললো। জুযার মায়ের কপালে চুমু খেয়ে বললো: কেঁদো না মা! ধৈর্য ধরো! আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমার সাথে তাদের এই দুর্ব্যবহারের শাস্তি দেবেন! তুমি চিন্তা করো না! আমার বাসায় থাকো তুমি। আমি কাজ করবো। যেদিন যেটুকু মেলে বাসায় নিয়ে এসে একসাথে খাবো! মা এ কথা শুনে শান্ত হলেন।

 

জুযার মাছ শিকার করার জন্য একটা জাল বানালো এবং মাছ শিকার করার সিদ্ধান্ত নিলো। প্রতিদিন সকালবেলা খুব ভোরে ভোরে সে জাল নিয়ে সমুদ্রের তীরে চলে যেত, মাছ শিকার করতো এবং সেগুলো বাজারে বিক্রি করে যা পয়সা পেত সে পয়সায় খাবার দাবার কিনে বাসায় গিয়ে মাকে নিয়ে খেত। ভালোই কাটছিল মা এবং ছেলের জীবন। যদিও সাদামাটা তবু প্রশান্তি ছিল। কিন্তু সেলিম সালেম বেকার জীবনযাপন করতে লাগলো। মায়ের যে টাকাগুলো জোর করে নিয়ে এসেছিলো সেগুলো খরচ হয়ে গেল। এবার তো আর উপায় নেই। কী করবে এখন! নিরুপায় হয়ে ভিক্ষা করতে শুরু করলো।

 

সেলিম সালেম খালি পায়ে ময়লা জামা কাপড় পরে অলিগলিতে বাসাবাড়িতে গিয়ে ভিক্ষা করে যা পেত তা খেয়ে কোনোরকমে জীবন কাটাতে লাগলো। কখনো কখনো ঘুরতে ঘুরতে মায়ের বাসায় গিয়ে অনুনয় বিনয় করে ভিক্ষা চাইতো। মায়ের মনটা তাদের জন্য পোড়াতো। সেজন্য ঘরে কিছু থাকলে তাদের দিতে কার্পণ্য করতেন না। নিজের ছেলে বলে কথা। তাদের খেতে দিয়ে বলতেন: তাড়াতাড়ি খেয়ে চলে যাও! জুযার এসে পড়লে কী হয় কে জানে! এ কারণে তারা জুযার আসার আগেই তাড়াতাড়ি খেয়েদেয়ে চলে যেত। কিন্তু একদিন একটু দ্রুত বাসায় ফিরলো। সে সময় তার ভাইয়েরা খাচ্ছিলো। মা জুযারকে দেখে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রাখলো। অথচ জুযার ঠিক বিপরীত আচরণ করে ভাইদের সালাম দিয়ে বললো: স্বাগতম! তাহলে আমাকে এবং মাকে তোমাদের মনে পড়লো! আশ্চর্য! খুব খুশি হলাম তোমাদের দেখে।

 

ভাইয়েরা লজ্জা পেয়ে বললো: মায়ের কথা তোমার কথা তো সবসময়ই মনে পড়তো। কিন্তু যে ব্যবহার আমরা তোমাদের সাথে করেছি...লজ্জায় সামনে আসি নি। শয়তানের প্ররোচনায় আমরা তোমাদের সাথে দুর্ব্যবহার করেছি.. সেজন্য ভীষণ অনুতপ্ত। জুযার বললো: ‘আমার মনে কিচ্ছু নেই। তোমরা নিশ্চিন্তে এখানে থাকতে পারো'। মা খুশি হলো এবং দোয়া করলো: প্রিয় ছেলে আমার! আমাকে তুষ্ট করেছো! আল্লাহ তোমার ওপর সন্তুষ্ট হন।

 

এভাবে ভাইদের মাঝে মিল হয়ে গেল এবং তিনভাই একত্রে বসবাস করতে লাগলো। জুযার প্রতিদিন ভোরে উঠে মাছ শিকারে যেত আর ভাইয়েরা বসে বসে খেতে লাগলো। তারা কোনো কাজই করতো না।

 

একদিন জুযার জাল নিয়ে গেল ঠিকই কিন্তু একটি মাছও পেল না। মন খারাপ করে জালটা কাঁধে নিয়ে ফিরে আসার পথে রুটির দোকান পড়লো। বিশাল লাইন রুটির দোকানে। সে লাইনে না দাঁড়িয়ে একটু দূরে দাঁড়িয়ে রইলো। মুখ ভার। রুটির দোকানদারের দৃষ্টি পড়লো জুযারের ওপর। জুযারকে ডেকে বললো: রুটি লাগবে? নিয়ে যাও। থলি খালি দেখে বললো: মাছ পাও নি বুঝি। অসুবিধা নেই। এই বলে কিছু টাকাও জযযারকে দিল। বললো: পরে মাছ পেলে আমাকে দিও।

 

জুযার ওই টাকা দিয়ে মাংস কিনে বাসায় ফিরলো।

এর পরদিনও একই ঘটনা ঘটলো। কোনো মাছই পেল না। কতো দূরে দূরে গিয়ে জাল মারলো। তবু কাজ হলো না। ভাবখানা এমন যেন সাগর মাছশূন্য হয়ে গেছে।

 

হতাশ হয়ে বাসায় ফেরার পথে একই ঘটনা ঘটলো। রুটির দোকানদার তাকে ডেকে নিয়ে রুটি এবং কিছু টাকা দিয়ে দিলো। জুযার সেই টাকা দিয়ে মাংস কিনে বাসায় ফিরে মাকে দিলো রান্না করতে। মা রান্না করলো আর সব ভাই একসাথে বসে মজা করে খেল। কেউই বুঝতে পারলো না কীভাবে জুযার খাবারের আয়োজন করছে।

 

পরদিন আরো ভোরে গেল মাছ ধরতে। আজ নিশ্চয়ই মাছ পাওয়া যাবে-এরকম একটা আশা নিয়ে গেল সাগরে। কিন্তু না। আজও একই ঘটনা ঘটলো। মাছশূন্য থলি নিয়ে রুটির দোকানে সামনে আসতেই দোকানদার তাকে ডাকলো। দোকানদার তা চেহারা দেখেই বুঝে ফেললো আজও মাছ পাওয়া যায় নি। জুযারকে আজও সে রুটি আর টাকা দিয়ে বললো: সংকোচ করো না! কাল নিশ্চয়ই মাছ পাবে। তখন তুমি এসে ঋণ পরিশোধ করে দিও। যাও।

 

এভাবে এক সপ্তা হয়ে গেল সাগরে কোনো মাছই পেল না। পরদিন সকালে জুযার মনে মনে ভাবলো: সাগরে গিয়ে আর লাভ নেই। এবার বরং অন্য কোথাও যাই মাছ ধরতে। এই বলে সে এবার রওনা দিলো ‘কারুন' নামের একটি খালের দিকে। তারপর কী হলো? সে ঘটনা জানতে হলে পরবর্তী আসরেও আমাদের সঙ্গ দিতে ভুলবেন না।#

 

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি
হযরত আলীর নামের শেষে (আ.) ব্যবহার ...
কোরআন বিকৃতি মুক্ত
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...

 
user comment