আল্লাহর ওলীদের জন্য শোক পালনের দর্শন
কেন আমরা আল্লাহর ওলীদের শোকে মাতম করব? তাঁরা কি আমাদের শোক পালনের মুখাপেক্ষী? কেন আমরা অতীতের ঘটনাসমূহের স্মরণ করব? ওয়াহাবীরা এরূপ কর্মকে ‘বিদআত’ বলে জানে এবং অন্যান্যদেরকে এরূপ কর্মের জন্য সমালোচনা ও নিন্দা করে।১
এখানে আমরা উপরিউক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব দেয়ার চেষ্টা করব। প্রথমে আজাদারী বা শোক পালনের দলিলসমূহ উপস্থাপন করছি।
১। শোক পালন ভালোবাসা ও ঘৃণার প্রকাশ
ভালোবাসা ও বিদ্বেষ-এ দু’টি বৈশিষ্ট্য মানুষের মধ্যে রয়েছে। এ দু’টি বিষয় কারো প্রতি আকর্ষণ ও কারো প্রতি বিকর্ষণের আত্মিক রূপ।
যাদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা অপরিহার্য
বুদ্ধিবৃত্তিক ও বর্ণনাগত (কোরআন ও হাদীসভিত্তিক) দলিলের ভিত্তিতে কারো কারো প্রতি ভালোবাসা পোষণ করা অপরিহার্য। যেমন :
ক) আল্লাহ : মহান আল্লাহ যেহেতু সকল পূর্ণতার গুণাবলীতে গুণান্বিত ও সকল ত্রুটি হতে মুক্ত এবং সকল সৃষ্টি তাঁর উপর সত্তাগতভাবে নির্ভরশীল। তাই তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রকৃতিগত। ধর্মীয় নির্দেশেও তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণের ইঙ্গিত রয়েছে। যেমন পবিত্র কোরআনে এসেছে-
﴿قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَاؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّـهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُوا حَتَّىٰ يَأْتِيَ اللَّـهُ بِأَمْرِهِ ۗ وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ ﴾
“বল,তোমাদের নিকট যদি তোমাদের পিতা,তোমাদের সন্তান,তোমাদের ভাই,তোমাদের স্ত্রী,তোমাদের বংশ ও গোত্র,তোমাদের অর্জিত ধন-সম্পদ,তোমাদের ব্যবসা যা বন্ধ হয়ে যাওয়ার ভয় কর এবং তোমাদের বাসস্থান-যাকে তোমরা পছন্দ কর-আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করা থেকে অধিক প্রিয় হয়,তবে অপেক্ষা কর আল্লাহর বিধান আসা পর্যন্ত,আর আল্লাহ ফাসেক সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না।” (সূরা তাওবাহ্ : ২৪।)
খ) আল্লাহর রাসূল (সা.) : অপর যাঁকে আল্লাহর কারণে আমাদেরকে অবশ্যই ভালোবাসতে হবে তিনি হলেন তাঁর রাসূল। কারণ তিনি হলেন মহান আল্লাহর অস্তিত্বগত (তাকভীনি) ও বিধানগত (তাশরীয়ি) উভয় রহমত অবতীর্ণের মাধ্যম। এ কারণেই উক্ত আয়াতে আল্লাহর পাশাপাশি তাঁর নাম এসেছে এবং তাঁর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
মহানবী (সা.) বলেছেন :
احبُّوا الله لما یغذوکم و احبّونی بحبِّ الله
‘আল্লাহকে এ জন্য ভালোবাস যে,তিনি তোমাদের জীবিকা দেন এবং আমাকে আল্লাহর কারণে ভালোবাস।’২
অন্যদিকে মহানবী (সা.)-এর মধ্যে যে পূর্ণতামূলক গুণাবলী ছিল তার কারণে মানুষ স্বাভাবিকভাবেই তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতো এবং তাঁর ভালোবাসা তাদের হৃদয়ে গেঁথে গিয়েছিল।
গ) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র বংশধর : রাসূলের পবিত্র বংশধরদের প্রতি ভালোবাসা পোষণ করাও অপরিহার্য। কারণ তাঁরা উন্নত নৈতিক চরিত্রের অধিকারী ও পূর্ণতার গুণসম্পন্ন হওয়া ছাড়াও আল্লাহর সকল আধ্যাত্মিক ও বস্তুগত নিয়ামতের মাধ্যম হলেন তাঁরা। এ কারণেই রাসূল তাঁদের ভালোবাসার নির্দেশ দিয়েছেন।
মহানবী (সা.) পূর্বোক্ত হাদীসটিতে আরো বলেছেন :
.و احبّوا اهل بیتی لحبّی আমার বংশধরদের আমার ভালোবাসার কারণে ভালোবাস।
আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর বংশধরদের ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা
আল্লাহর রাসূলের বংশধরদের রাসূলের ন্যায় ভালোবাসার সপক্ষে দলিল:
১। রাসূলের বংশধরগণ রাসূলের সঙ্গে সম্পর্কিত,যা বিশেষ মর্যাদার। এ কারণেই রাসূল (সা.) বলেছেন,‘কিয়ামতের দিন সকল সর্ম্পক ছিন্ন হয়ে যাবে,শুধু আমার সাথে সম্পর্ক ব্যতীত।’
২। আল্লাহর রাসূলের বংশধরগণ আল্লাহর বিশেষ ভালোবাসার পাত্র। এ বিষয়টি হাদীসে কিসাসহ৩ অন্যান্য হাদীসে এসেছে।
৩। মুহাম্মদ (সা.)-এর রিসালাতের প্রতিদান তাঁর আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা পোষণের মাধ্যমে দেয়া হয়। যেমনটি মহান আল্লাহ বলেছেন-
﴿قُل لَّا أَسْأَلُكُمْ عَلَيْهِ أَجْرًا إِلَّا الْمَوَدَّةَ فِي الْقُرْبَىٰ﴾
“বলুন,আমি আমার রিসালাতের দায়িত্ব পালনের বিপরীতে কোন প্রতিদান চাই না,আমার রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয়ের প্রতি ভালোবাসা পোষণ ছাড়া।” (সূরা শুরা : ২৩)
৪। কিয়ামতের দিন রাসূলের আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসার বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।
মহান আল্লাহ বলেন,وقِفُوهم إنّهُم مَسئولون “তাদেরকে থামাও,তারা জিজ্ঞাসিত হবে।” ৪
উপরিউক্ত আয়াতের বিষয়ে সিবতে ইবনে জাওযী মুজাহিদ হতে বর্ণনা করেছেন,‘কিয়ামতের দিন হযরত আলীর প্রতি ভালোবাসা পোষণের বিষয়ে প্রশ্ন করা হবে।’৫
৫। মহানবীর আহলে বাইত পবিত্র কোরআনের সমকক্ষ হিসেবে সম্মানের ও ভালোবাসার পাত্র। যেমনটি হাদীসে সাকালাইনে বলা হয়েছে-
إنّی تارکٌ فیکم الثقلین کتاب الله و عترتی أهل بیتی إن تمسکتم بهما لن تضلّوا ابداً... فانظروا بم تخلفونی فیهما
‘আমি তোমাদের মাঝে দু’টি ভারী (মূল্যবান) বস্তু রেখে যাচ্ছি : আল্লাহর কিতাব (কোরআন) ও আমার রক্ত সম্পর্কীয় নিকটাত্মীয় (আহলে বাইত)। যদি তোমরা এ দু’টিকে আঁকড়ে ধর কখনোই বিভ্রান্ত ও বিপথগামী হবে না. লক্ষ্য রেখ,তাদের ক্ষেত্রে আমার সম্মান রক্ষা কর।’
৬। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সুন্নী-শিয়া উভয় সূত্রে সহীহ হাদীস মতে ঈমানের শর্ত। এ কারণেই মহানবী (সা.) হযরত আলীকে বলেছেন,
‘হে আলী,তোমাকে মুমিন ব্যতীত ভালোবাসবে না এবং মুনাফিক ব্যতীত তোমার প্রতি কেউ বিদ্বেষ পোষণ করবে না।’
৭। আহলে বাইত রাসূলের উম্মতের মুক্তির তরী। শিয়া-সুন্নী উভয় সূত্রে মহানবী (সা.) হতে বর্ণিত হয়েছে,‘আমার আহলে বাইতের দৃষ্টান্ত তোমাদের মাঝে নূহের তরণীর ন্যায়,যে তাতে আরোহণ করবে মুক্তি পাবে এবং যে না উঠবে নিমজ্জিত ও ধ্বংস হবে।’
৮। আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা আমল কবুলের শর্ত। হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লাম) হযরত আলীকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন,‘যদি আমার উম্মত এতটা রোজা রাখে যে,তাতে তাদের কোমর বাঁকা হয়ে ধনুকের মতো হয়,এতটা নামাজ পড়ে যে সূতায় পরিণত হয়,কিন্তু অন্তরে তোমার প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে তবে আল্লাহ তাদের মুখে জাহান্নামের আগুন লেপ্টে দিবেন অর্থাৎ তাদের দোযখে নিক্ষেপ করবেন।’৬
উক্ত হাদীসসমূহ হতে আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারি যে,শোকানুষ্ঠান পালন তাঁদের প্রতি ভালোবাসারই প্রকাশস্বরূপ।
খ) বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিকোণ থেকে আল্লাহর ওলীদের জন্য ক্রন্দন:
১। আল্লাহর নবীর আহলে বাইতের জন্য (বিশেষত ইমাম হুসাইনের জন্য) ক্রন্দন তাঁদের প্রতি ভালোবাসার প্রকাশ এবং বুদ্ধিবৃত্তি তা সমর্থন করে।
২। আহলে বাইতের জন্য অশ্রু বর্ষণ বিশেষত ইমাম হুসাইনের জন্য অশ্রুত্যাগ আল্লাহর নিদর্শনকে জাগরুক করার ও তার প্রতি সম্মান প্রদর্শনের প্রতীক।
৩। ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন প্রকৃতপক্ষে পূর্ণতার সকল গুণের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মাধ্যমে আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তনের শামিল। কারণ ইমাম হুসাইনের প্রতি ভালোবাসা নিছক ব্যক্তিকেন্দ্রিক কোন বিষয় নয়,বরং ইসলামের পূর্ণতার সকল দিক তাঁর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল এবং তিনি আল্লাহর দ্বীনকে পুনরুজ্জীবিত করতে মজলুমভাবে শহীদ হয়েছেন। তাঁর জন্য ক্রন্দন মূলত সত্য ও ন্যায়ের জন্যই ক্রন্দন। তাঁর শাহাদাতের মাধ্যমেই সত্য ও ন্যায় প্রকাশিত হয়। তাঁর লক্ষ্য ও কর্মপদ্ধতির পরিচয় লাভের মাধ্যমেই ইসলামের পরিচয় লাভ করা যায়। আর তাই হাদীসে তাঁর শাহাদাতের স্মরণে ক্রন্দনের সওয়াব সম্পর্কে বলা হয়েছে,‘যে কেউ ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন করবে অথবা কাউকে কাঁদাবে অথবা অন্তত কান্নার ভাব করবে,তার জন্য বেহেশত ওয়াজিব হবে।’কারণ ইমাম হুসাইনের পরিচয় এবং তাঁর অবিস্মরণীয় কর্মের সাথে পরিচয় লাভের ফলে মানুষ আল্লাহর প্রতি প্রত্যাবর্তন ও তাঁর জন্য আত্মত্যাগে উৎসাহিত হয়।
৪। মানুষ যতক্ষণ তার অভ্যন্তরীণ সত্তার দিকে প্রত্যাবর্তন না করে এবং আল্লাহর বিশেষ বান্দার সাথে নিজেকে সম্পৃক্ত না করে ততক্ষণ তার অন্তর নরম হয় না,তার কান্নাও আসে না। তাই ইমাম হুসাইনের মতো ব্যক্তির প্রতি লক্ষ্য করার মাধ্যমে মানুষ যখন নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে তখন সে মূলত নিজ সীমিত অন্তরের সঙ্গে অসীম এক অন্তরের সম্পর্ক স্থাপন করে। সুস্পষ্ট যে,এরূপ সম্পর্ক স্থাপনের ফলে মানুষ অসীমের সাথে সংযুক্ত হয়। যেমনভাবে,কোন ক্ষুদ্র গর্তে জমা পানিকে যদি অসীম সমুদ্রের সাথে সংযুক্ত করা না হয় ঐ স্বল্প পানি অসীমের সংস্পর্শ ছাড়া দুর্গন্ধময় হয়ে যায় অথবা রৌদ্রতাপে শুকিয়ে যায়। কিন্তু যদি ঐ ক্ষুদ্র পানিকেই মহাসমুদ্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত করা হয় তবে ঐ ক্ষুদ্র পানিটুকুই সকল প্রকার কলুষতা থেকে মুক্ত ও ধ্বংস হতে রক্ষা পায়।
৫। মজলুম ব্যক্তির (যার প্রতি অবিচার করা হয়েছে,অন্যায় করা হয়েছে ও তার অধিকার ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে) জন্য ক্রন্দন মানুষকে তার প্রতি সহানুভূতিশীল করে,ফলে সে নিজেকে ঐ মজলুমের সপক্ষ ভাবে বিশেষত ঐ মজলুম যদি কোন নবী,তাঁর স্থলাভিষিক্ত প্রতিনিধি ও নিষ্পাপ কোন ব্যক্তি হয়,তাহলে তাঁর প্রতি ভালোবাসা পোষণকারী ব্যক্তি শরীয়ত ও তাঁর আনীত দ্বীনের রক্ষক হওয়ার ব্রত নেয়। মনস্তত্ত্ববিদগণ এ বিষয়টি সমর্থন করেন। তাই আমরা ইতিহাসের পরিক্রমায় লক্ষ্য করি শিয়ারা ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের শোকাবহ ঘটনা হতে আত্মজাগরণের সর্বোচ্চ শিক্ষা গ্রহণের কারণে সবসময়ই নির্যাতিত ও মজলুমের সমর্থক হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
৬। আল্লাহর ওলীদের জন্য ক্রন্দন বিশেষত ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন দগ্ধ হৃদয়ের জন্য প্রশান্তির কারণ। ইমাম হুসাইনের উপর আপতিত মুসিবতের স্মরণে হৃদয়ে যে অগ্নি প্রজ্বলিত হয় (তাঁর ভালোবাসায় পূর্ণ ব্যক্তির হৃদয়ে) তাঁর জন্য অশ্রু বিসর্জন ঐ দগ্ধ হৃদয়কে উপশমে সাহায্য করে।
৭। আল্লাহর ওলীদের জন্য ক্রন্দন মানুষের হৃদয়কে নরম করে তাদের হৃদয় হতে কলুষতাকে দূর করে। ফলে তার হৃদয় ঐশী নূরে আলোকিত হওয়ার সুযোগ পায়। ঐ অশ্রু তার অন্তরের মরিচা দূর করতে সাহায্য করে।
৮। ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দন অত্যাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে এক প্রকার বাস্তব সংগ্রাম। এর মাধ্যমে ঘোষণা করা হয় অত্যাচারী শাসকদের আচরণের প্রতি আমরা বীতশ্রদ্ধ ও ক্রন্দন তাদের প্রতি ঘৃণার প্রকাশ। এ কারণেই মহানবী (সা.)-এর ইন্তেকালের পর সাকীফায়ে বনী সায়েদায় হযরত আলী (আ.)-এর অধিকার ছিনিয়ে নেয়ার প্রতি উত্তরে হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.) বিরামহীন ক্রন্দনের মাধ্যমে আনসার ও মুহাজিরদের বুঝিয়ে দিয়েছেন যে,তিনি তাদের অন্যায় কর্মের প্রতি অসন্তুষ্ট। যদিও রাসূলের আহলে বাইত ছিলেন ধৈর্য ও সহিষ্ণুতার মূর্ত প্রতীক ও এক্ষেত্রে মানব জাতির জন্য আদর্শ,কিন্তু তাঁরা এ কর্মের মাধ্যমে তাঁদের প্রতি কৃত অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছেন ও সকলকে তা অবহিত করেছেন।
৯। শিয়ারা আহলে বাইতের,বিশেষত শহীদদের নেতা ইমাম হুসাইনের জন্য ক্রন্দনের মাধ্যমে ঘোষণা করে : আমরা ইতিহাসের পরিক্রমায় ইয়াযীদ ও ইয়াযীদের অনুসারীদের বিরোধী এবং ইমাম হুসাইন ও তাঁর মতো ব্যক্তিত্বদের পক্ষে আছি। এ লক্ষ্যেই তারা ইমাম হুসাইনের স্মরণকে জাগরুক রাখে।
গ) আল্লাহর ওলীদের জন্য ক্রন্দন জায়েয হওয়ার সপক্ষে দলিল :
১। ক্রন্দনের সপক্ষে দলিল : হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থসমূহ অধ্যয়নে আমরা দেখি দ্বীনের ধারক-বাহকগণ আল্লাহর ওলীদের শোকে ক্রন্দন করেছেন। এখানে এরূপ কিছু নমুনা আমরা তুলে ধরছি।
ক) তাবারী নিজ সূত্রে হযরত আলী হতে বর্ণনা করেছেন যে,তিনি বলেছেন,‘যখন কাবিল স্বীয় ভ্রাতা হাবিলকে হত্যা করে তখন হযরত আদম (আ.) তার শোকে ক্রন্দন করেছেন।’৭
খ) তাবারী বর্ণনা করেছেন,‘হযরত ইয়াকুব হতে হযরত ইউসুফের বিচ্ছিন্ন থাকার সময়কাল ছিল চল্লিশ বছর। এই চল্লিশ বছর হযরত ইয়াকুব হযরত ইউসুফের বিচ্ছেদে ক্রন্দন করেছেন।’৮
গ) ইবনে মাসউদ বলেছেন,‘আমরা রাসূলকে হামজা (রা.)-এর শাহাদাতের দিনের ন্যায় ক্রন্দন করতে কখনোই দেখি নি।’৯
৪) ইবনে আবি শাইবা স্বীয় সূত্রে ইবনে মাসউদ হতে বর্ণনা করেছেন,‘একদিন আমরা রাসূলের নিকট বসেছিলাম। হঠাৎ বনী হাশিমের একদল নারী-পুরুষ সেখানে আসল। মহানবী তাদেরকে দেখা মাত্রই কাঁদতে শুরু করলেন এবং তাঁর চেহারা পরিবর্তিত হয়ে গেল। সাহাবীরা প্রশ্ন করলেন : হে আল্লাহর রাসূল! কেন আপনার চেহারায় বিষন্নতা লক্ষ্য করছি?
তিনি বললেন : আমরা এমন এক বংশ যাদের আখেরাতকে আল্লাহ দুনিয়ার উপর প্রাধান্য দিয়েছেন। বেশি দূরে নয়,আমার আহলে বাইতের উপর বিপদাপদ ও নির্বাসনের দুর্যোগ নেমে আসবে।’১০
৫। বুখারী নিজ সূত্রে বর্ণনা করেছেন,‘যখন হযরত জাফর ইবনে আবি তালিব,যাইদ ইবনে হারেসা এবং আবদুল্লাহ্ ইবনে রওয়াহার শাহাদাতের সংবাদ রাসূলের নিকট পৌঁছল তখন তিনি ক্রন্দন করেছিলেন।’১১
৬। ইবনে আসির বর্ণনা করেছেন,‘হযরত জাফর (রা.) ও তাঁর সঙ্গীদের শাহাদাতের খবর শোনার পর রাসূল (সা.) জাফরের গৃহে গেলেন ও তাঁর সন্তানদের নিজের কাছে ডাকলেন। তাদের কোলে নিয়ে মুখে চুমু খেলেন ও ক্রন্দন করলেন। জাফরের স্ত্রী আসমা তাঁকে বললেন : হে নবী! আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক। কেন আপনি ক্রন্দন করছেন? আপনার নিকট জাফরের কোন খবর এসেছে কি? তিনি বললেন,‘হ্যাঁ,সে আজ শহীদ হয়েছে।’ আসমা বলেন,‘আমি গৃহের ভেতরে প্রবেশ করে মহিলাদের সাথে নিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলাম। তখন হযরত ফাতিমা (আ.) সেখানে আসলেন ও ‘হে চাচা’ বলে ক্রন্দন করতে লাগলেন। রাসূল (সা.) তখন বললেন,‘ক্রন্দনকারীদের উচিত জাফরের মতো ব্যক্তির জন্যই ক্রন্দন করা।’১২
(৭) মুসলিম নিজ সূত্রে হযরত আবু হুরাইরা হতে বর্ণনা করেছেন,‘মহানবী (সা.) একদিন তাঁর মাতার কবর জিয়ারতে গেলেন এবং এতটা কাঁদলেন যে,তাঁর পাশে যাঁরা ছিলেন তাঁরাও কাঁদতে শুরু করলেন।’১৩
৮) হাকিম নিশাবুরী নিজ সূত্রে হযরত আয়েশা হতে বর্ণন করেছেন,‘মহানবী (সা.) উসমান ইবনে মাজউনের মৃত্যুর পর তাঁকে চুম্বন করেন ও ক্রন্দন করেন।১৪
৯) ইবনে মাজা আনাস ইবনে মালিক হতে বর্ণনা করেছেন,‘মহানবী (সা.) তাঁর পুত্র ইবরাহীমের মৃত্যুর পর আদেশ দেন তাকে না দেখার পূর্বে যেন কাফনে আবৃত করা না হয়। অতঃপর ইবরাহীমের মৃতদেহের নিকট এসে পুত্রের উপর উপুড় হয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন।’১৫
১০) ইবনে আব্বাস মালিকী ইমাম সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেন,‘হযরত ফাতিমা যাহরার ইন্তেকালের পর হযরত আলী (আ.) প্রতিদিন তাঁর কবর জিয়ারতে যেতেন। একদিন জিয়ারতে গিয়ে কবরের উপর আপতিত হয়ে এ কবিতাটি পাঠ করেন,১৬
مالی مررت علی القبور مسلَما
یا قبر الحبیب فلم یرد جوابی
یا قبر ما لک لا تجیب منادیا
أمللت بعدی خلّة الاحباب
১১) ইবনে কুতাইবা বর্ণনা করেছেন,সিফ্ফিনের যুদ্ধে হযরত আলী (আ.) আদীকে প্রশ্ন করেন : ‘আম্মার কি নিহত হয়েছেন? ’তিনি বললেন : ‘হ্যাঁ!’তখন আমীরুল মুমিনীন কাঁদতে শুরু করলেন এবং বললেন : ‘আল্লাহ তাঁকে রহম করুন।’১৭
১২) সিবতে ইবনে জাওযী বর্ণনা করেছেন,‘যখন মুহাম্মদ ইবনে আবি বাকরের শাহাদাতের খবর হযরত আলীর নিকট পৌছল তখন তিনি দুঃখ প্রকাশ করে ক্রন্দন করলেন এবং তাঁর হত্যাকারীর উপর লানত (অভিসম্পাত) বর্ষণ করলেন।’১৮
১৩) ইয়াকুবী বর্ণনা করেছেন,‘হযরত খাদিজা (আ.)-এর ইন্তেকালের পর হযরত ফাতিমা (আ.) রাসূলের নিকট এসে ক্রন্দনরত অবস্থায় বলতে লাগলেন,‘আমার মাতা কোথায়? আমার মাতা কোথায়?’১৯
১৪) ইবনে আবিল হাদীদ বর্ণনা করেছেন,‘যে রাতে হযরত আলী (আ.) শহীদ হন পরের দিন ভোরে ইমাম হাসান (আ.) কুফার মসজিদের মিম্বারে দাঁড়িয়ে আল্লাহর প্রশংসা ও পবিত্রতা ঘোষণার পর হযরত আলীর পরিচয় দিতে গিয়ে শোকে কণ্ঠ আড়ষ্ট হয়ে পড়লেন এবং কাঁদতে শুরু করলেন। ফলে শ্রোতারাও হযরত আলীর শোকে কাঁদতে শুরু করলেন।’২০
১৫) কান্দুযী হানাফী হযরত আব্বাস ইবনে আলী (আ.)-এর শাহাদাতের বর্ণনায় বলেন,‘এক ব্যক্তি লৌহনির্মিত বল্লম দিয়ে তাঁর পবিত্র মস্তকে আঘাত হানলে তা দ্বিখণ্ডিত হয়ে গেল এবং তিনি ঘোড়া হতে মাটিতে পড়ে গেলেন এবং চিৎকার করে বলেন,‘হে ভ্রাতা! হে আবা আবদিল্লাহ্! হে হুসাইন! আপনার উপর আমার সালাম।’ ইমাম হুসাইন দ্রুত তাঁর নিকট পৌঁছলেন এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় বলতে লাগলেন : হে আমার ভ্রাতা,আব্বাস! আমার দেহের অংশ।’ তাঁর নিকট দণ্ডায়মান শত্রুদের সরিয়ে দিয়ে তাঁর দেহকে মাটি থেকে উঠিয়ে নিয়ে তাঁর তাঁবুর ভিতর রাখলেন। কাঁদতে কাঁদতে বলতে লাগলেন,‘আল্লাহ তোমাকে উত্তম বিনিময় দান করুন।’২১
১৬) তিনি আরও উল্লেখ করেছেন,‘হুর ইবনে ইয়াযীদ রিয়াহির শাহাদাতের পর উমর ইবনে সাদের সৈন্যরা তাঁর দেহ হতে মস্তক বিচ্ছিন্ন করে ইমাম হুসাইনের দিকে ছুঁড়ে ফেলে। ইমাম হুসাইন তাঁর মাথাটি কোলে নিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলেন এবং তাঁর মুখের উপর থেকে রক্তগুলো পরিষ্কার করতে লাগলেন। অতঃপর তাঁর মস্তকের উদ্দেশে বললেন,‘তোমার মাতা তোমার নাম ভুল রাখেন নি। তুমি হুর অর্থাৎ স্বাধীন। পৃথিবীতেও তুমি স্বাধীন ছিলে,আখেরাতেও স্বাধীন ও সৌভাগ্যবান হলে।’২২
১৭) ইবনে আসাকির তাঁর সূত্রে ইমাম জাফর সাদিক (আ.) হতে বর্ণনা করেছেন যে,ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-কে প্রশ্ন করা হলো : কেন আপনি ইমাম হুসাইনের জন্য এত অধিক কান্নাকাটি করেন? তিনি জবাবে বললেন : ‘আমাকে এজন্য সমালোচনা করো না। কারণ ইয়াকুব (আ.) তাঁর এক সন্তান নিখোঁজ হওয়াতে এতটা ক্রন্দন করেন যে,তাঁর চোখ সাদা হয়ে যায়। অথচ তিনি জানতেন তাঁর সন্তান জীবিত আছেন। আর আমি আমার চোখের সামনে আমার পরিবারের চৌদ্দজন সদস্যকে জবেহ করে হত্যা করতে দেখেছি। তোমরা কি চাও এই চরম দুঃখ-কষ্টের বিষয়টি আমার মন থেকে মুছে ফেলতে?’২৩
১৮) সিবতে ইবনে জাওযী বলেছেন,‘ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের পর ইবনে আব্বাস (রা.) এতটা ক্রন্দন করতেন যে,তাঁর চোখ অন্ধ হয়ে গিয়েছিল।’২৪
১৯) ইবনে আবিদ্দুনিয়া বর্ণনা করেছেন,যায়েদ ইবনে আরকাম ইবনে যিয়াদের উদ্দেশে বলেন,‘তুমি তোমার লাঠিটি হুসাইনের দাঁত থেকে সরাও। আল্লাহর শপথ আমি অসংখ্যবার লক্ষ্য করেছি আল্লাহর রাসূল (সা.) ঐ ঠোট দু’টিতে চুম্বন করেছেন।’ এই বলে তিনি ক্রন্দন করতে লাগলেন।২৫
২০) ইবনে হাজার হাইসামী বর্ণনা করেছেন,‘উম্মুল মুমিনীন উম্মে সালমা (রা.) ইমাম হুসাইনের শাহাদাতের খবর শুনে আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করলেন : তারা এমন জঘন্য কাজ করেছে? হুসাইনকে হত্যা করার কারণে আল্লাহ তাদের কবরকে অগ্নিতে পূর্ণ করুন। অতঃপর এতটা ক্রন্দন করলেন যে,অজ্ঞান হয়ে পড়লেন।’২৬
ঘ) আল্লাহর ওলীদের জন্য শোকানুষ্ঠান পালনের বৈধতার বর্ণনা ও হাদীসভিত্তিক দলিল :
হাদীস গ্রন্থসমূহ এবং মহানবী (সা.) ও তাঁর সাহাবীদের জীবন চরিত অধ্যয়ন করলে আমরা দেখি ঐ মহান ব্যক্তিবর্গ আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দাদের জন্য শোক পালনের বিষয়ে বিশেষ দৃষ্টি দিতেন ও এরূপ অনুষ্ঠান পালন করতেন।
হাকিম নিশাবুরী সহীহ সূত্রে উম্মুল ফাজল হতে বর্ণনা করেছেন,‘একদিন রাসূল (সা.)-এর নিকট উপস্থিত হয়ে বললাম : হে আল্লাহর রাসূল! গতরাত্রে আমি একটি দুঃস্বপ্ন দেখেছি।
রাসূল বললেন : কি স্বপ্ন?
আমি বললাম : দুঃস্বপ্ন।
রাসূল বললেন : তা বল।
আমি বললাম : ‘হে রাসূলাল্লাহ্! স্বপ্নে দেখলাম আপনার দেহের একটি টুকরা বিচ্ছিন্ন হয়ে আমার কোলে এসে পড়েছে।’
নবী (সা.) বললেন : তুমি ভালো স্বপ্ন দেখেছ। আল্লাহ চাইলে আমার কন্যা ফাতিমা এক পুত্রসন্তান জন্মদান করবে,যে তোমার কাছে প্রতিপালিত হবে।’
উম্মুল ফাজল বলেন : ফাতিমা (আ.) হুসাইন নামের এক পুত্রসন্তান জন্মদান করলে সে আমার কোলে প্রতিপালিত হয় যেমনটি রাসূল (সা.) বলেছিলেন। হুসাইন (আ.) জন্মগ্রহণ করলে আমি তাকে নিয়ে রাসূলের কোলে দিলে লক্ষ্য করলাম তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে ক্রন্দন করছেন। আমি বললাম,‘হে আল্লাহর রাসূল! আমার পিতামাতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত হোক। কেন আপনি ক্রন্দন করছেন? রাসূল বললেন : ‘জীবরাঈল (আ.) আমার কাছে এসে খবর দিলেন যে,আমার উম্মত অতি নিকটেই তাকে হত্যা করবে।’
আমি বললাম : এই শিশুকে?
তিনি বললেন : ‘হ্যাঁ,অতঃপর তাঁর শাহাদাতের ভূমি হতে এক টুকরা মাটি আমার হাতে দিলেন।’২৭
হাফেজ তাবরানী সহীহ সূত্রে শাইবান হতে বর্ণনা করেছেন,‘আমি হযরত আলীর সাথে কারবালায় প্রবেশ করলাম। তখন তিনি বললেন : এখানে এমন একদল লোক শহীদ হবে যাদের সঙ্গে বদরের শহীদগণ ব্যতীত কেউই তুলনীয় নয়।’২৮
তিরমিযী সহীহ সূত্রে হযরত সালমা হতে বর্ণনা করেছেন,‘একদিন উম্মে সালমার নিকট গেলে তাঁকে ক্রন্দনরত অবস্থায় দেখলাম। তাঁকে এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন,‘স্বপ্নে আল্লাহর রাসূলকে অত্যন্ত শোকাহত অবস্থায় দেখলাম। তাঁর পবিত্র মস্তক ও মুখমণ্ডল ধুলায় আবৃত ছিল। তাঁকে জিজ্ঞাসা করলাম,হে আল্লাহর রাসূল! কি হয়েছে?
তিনি বললেন : এখনই হুসাইনকে শহীদ করা হয়েছে।’২৯
আল্লাহর ওলীদের শোকানুষ্ঠানে উপস্থিত হওয়া
আল্লাহর ওলীদের,বিশেষত ইমাম হুসাইনের শোকে শোক পালন শুধু জায়েযই নয়,পছন্দনীয়ও বটে,যেমনটি দ্বীনের মহান ব্যক্তিত্বরা করতেন।
বুখারী স্বীয় সূত্রে হযরত আয়েশা হতে বর্ণনা করেছেন,‘যখন হযরত যায়েদ ইবনে হারেসা,জাফর ইবনে আবি তালিব এবং আবদুল্লাহ ইবনে রাওয়াহার শাহাদাতের সংবাদ রাসূলের নিকট পৌঁছল তখন তিনি শোকাচ্ছন্ন হয়ে মসজিদে গিয়ে বসলেন।’৩০
ইবনে হিশাম তাঁর সীরাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন,যখন রাসূল (সা.) ওহুদের যুদ্ধ হতে মদীনায় প্রত্যাবর্তন করে শহীদদের গৃহসমূহে ক্রন্দনের রোল শুনলেন তখন মহানবীর চোখ অশ্রুসিক্ত হলো এবং ক্রন্দনরত অবস্থায় বললেন,‘আফসোস হামজার জন্য কোন ক্রন্দনকারী নেই। এ কথা শুনে বনী আশহালের নারীরা হযরত হামজার গৃহে এসে ক্রন্দন করতে লাগলেন।’৩১
তথ্যসূত্র:
১। ইবনে তাইমিয়া,মিনহাজুস সুন্নাহ,১ম খণ্ড,পৃ. ৫২-৫৫।
২। মুস্তাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৯৪।
৩। সূরা আহযাবের ৩৩ নং আয়াত অবতীর্ণের প্রেক্ষাপটে যে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। হাদীসে‘ তীয়ার’ও‘রায়েহ'তেও তার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে।
৪। সূরা সাফ্ফাত : ২৪।
৫। তাযকিরাতুল খাওয়াস,পৃ. ১০।
৬। তারিখে দামেস্ক,১২তম খণ্ড,পৃ. ১৪৩।
৭। সীরাতে হালাবী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩২৩।
৮। তারিখে তাবারী,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৭।
৯। তারিখে তাবারী,১৩তম খণ্ড,পৃ. ৩২।
১০। আল মুসান্নিফ,৮ম খণ্ড,পৃ. ৬৯৭।
১১। সহীহ বুখারী,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪০,সাহাবীদের ফজিলতের অধ্যায়।
১২। কামিল,ইবনে আসির,২য় খণ্ড,পৃ. ৯০।
১৩। সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড,পৃ. ৯০।
১৪। মুসতাদরাকে হাকিম,১ম খণ্ড,পৃ. ৩৬১।
১৫। সুনানে ইবনে মাজা,১ম খণ্ড,পৃ. ৪৭৩,কিতাবুল জানায়িয।
১৬। প্রাগুক্ত
১৭। আল ইমামাহ ওয়াস সিয়াসাহ।
১৮। তাযকিরাতুল খাওয়াছ,পৃ. ১০৭।
১৯। তারিখে ইয়াকুবী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৫।
২০। ইবনে আবিল হাদীদ,শারহে নাহজুল বালাগা,৪র্থ খণ্ড,পৃ ১১।
২১। ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃ. ৪০৯।
২২। ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাহ,পৃ. ৪১৪।
২৩। তারিখে দামেস্ক,ইমাম যয়নুল আবেদীন (আ.) জীবনী অধ্যায়,পৃ ৫৬।
২৪। তাযকিরাতুল খাওয়াছ,পৃ. ১৫২।
২৫। উসদুল গাবাহ,২য় খণ্ড,পৃ. ২১।
২৬। সাওয়ায়েকে মুহরিকা,পৃ. ১৯৬।
২৭। মুস্তাদরাকে হাকিম,৩য় খণ্ড,পৃ. ১৭৬;কানজুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ২২৩।
২৮। মাকতালে খাওয়ারেজমী,পৃ. ১৬২।
২৯। মুস্তাদরাক আল সাহীহাইন,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৯।
৩০। ইরশাদুস সারী,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৯৩।
৩১। আস সীরাতুন নাবাভী,৩য় খণ্ড,পৃ. ১০৫।
source : alhassanain