বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

সূরা আল আনফাল;(২য় পর্ব)

সূরা আনফালের ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ بَيْتِكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ (5) يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنْظُرُونَ “এটাও এরূপ যেমন তোমার প্রতিপালক তোমাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তোমার গৃহ থেকে বের করেছিলেন অথচ বিশ্বাসীদের একটি দল তা পছন্দ করে নাই।" (৮:৫) "সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার প



সূরা আনফালের ৫ ও ৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

كَمَا أَخْرَجَكَ رَبُّكَ مِنْ بَيْتِكَ بِالْحَقِّ وَإِنَّ فَرِيقًا مِنَ الْمُؤْمِنِينَ لَكَارِهُونَ (5) يُجَادِلُونَكَ فِي الْحَقِّ بَعْدَمَا تَبَيَّنَ كَأَنَّمَا يُسَاقُونَ إِلَى الْمَوْتِ وَهُمْ يَنْظُرُونَ

“এটাও এরূপ যেমন তোমার প্রতিপালক তোমাকে ন্যায়সঙ্গতভাবে তোমার গৃহ থেকে বের করেছিলেন অথচ বিশ্বাসীদের একটি দল তা পছন্দ করে নাই।" (৮:৫)

"সত্য স্পষ্টভাবে প্রকাশিত হওয়ার পরও তারা তোমার সাথে বিতর্কে লিপ্ত হয়। মনে হচ্ছিল তারা যেন মৃত্যুর দিকে চালিত হচ্ছে আর তারা যেন তা প্রত্যক্ষ করছে।” (৮:৬)

বদর যুদ্ধের সময় কিছু মুসলমানের মনে যুদ্ধের পরিণতির ব্যাপারে যে সংশয় দেখা দিয়েছিল এই দুই আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছিল হিজরী ২য় সালে। পয়গম্বর (সা.) জানতে পারলেন আবু সুফিয়ানের নেতৃত্বে কাফেরদের একটি বাণিজ্যদল মক্কার দিকে যাচ্ছে। রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামের সাথে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নিলেন কাফের শক্তির অর্থনৈতিক ভিত্তি দুর্বল করার জন্য এবং দেশত্যাগী মুহাজের মুসলমানদের সম্পদ উদ্ধার করার জন্য কাফেরদের এই বাণিজ্য দলকে ধাওয়া করবে। কিন্তু, আবু সুফিয়ান মুসলিমদের এই সিদ্ধান্ত টের পেয়ে যায় এবং তারা তাদের পথ পরিবর্তন করে ভিন্ন পথে মক্কার দিকে যাত্রা করে। এর পরপরই রাসূল (সা.)-এর কাছে খবর আসে মক্কার কাফেররা আবু জেহেলের নেতৃত্বে যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে মুসলিম বাহিনীর দিকে এগিয়ে আসছে। তাদের সংখ্যা মুসলমানদের চেয়ে তিনগুণ বেশি হবে। রাসূলে খোদা এই খবরও পেয়ে গেলেন যে, কাফের বাহিনী মক্কা ও মদিনার প্রায় মাঝামাঝি বদর নামক স্থানে পানির কূপগুলোর আশেপাশে অবস্থান নিয়েছে।

এসব জানার পর আল্লাহর রাসূল সাহাবায়ে কেরামের সাথে বৈঠকে বসলেন। তিনি পরামর্শ চাইলেন কাফেরদের ওই বাণিজ্য কাফেলাকেই ধাওয়া করবেন-নাকি বিশাল কাফের বাহিনীর মুখোমুখী হওয়ার জন্য বদরের দিকে এগিয়ে যাবেন। এ অবস্থায় মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র দল যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করলেন। তাদের যুক্তি ছিল মুসলমানরা এত বিশাল বাহিনীর মুখোমুখি হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে মদিনা থেকে বের হননি। তারা এ নিয়ে পয়গম্বর (সা.)-এর সাথে বিতর্কেও লিপ্ত হলেন। কিন্তু আল্লাহর রাসূল অধিকাংশ সাহাবীর মতানুসারে যুদ্ধে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেন। ঐতিহাসিক বদর প্রান্তরে সংঘটিত ওই যুদ্ধে মুসলিম বাহিনী ঐশি সাহায্য লাভ করেছিল এবং তিন গুণ বেশি সুসজ্জিত শত্রুবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে তারা বিজয় ছিনিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছিল। ওই যুদ্ধে মক্কার কুরাইশ নেতা আবু জেহেলসহ ৭০ জন নিহত হয়। অপর ৭০ জন মুসলমানদের হাতে বন্দি হয়। আর মুসলমান পক্ষে মাত্র ১৪ জন শহীদ হন। যুদ্ধের পর গণিমতের মাল বন্টনের ব্যাপারে নওমুসলিমদের মধ্যে অনেকেই যে বিতর্ক সৃষ্টি করেছিলেন, এই আয়াতে সেদিকেই ইঙ্গিত করে মহান আল্লাহ বলেছেন, এ ধরনের বিতর্ক নতুন নয়। যুদ্ধে যাওয়া নিয়েও অনেকেই বিতর্ক সৃষ্টি করেছিল, কিন্তু মহান আল্লাহ যুদ্ধে সত্যপন্থী মুসলিম বাহিনীকে অত্যন্ত সম্মানজনক বিজয় দান করেছেন। কাজেই এসব বিষয় নিয়ে বিতর্ক বা সংকীর্ণতা পরিহার করা উচিত এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের পূর্ণ আনুগত্য করা উচিত।

এ সূরার ৭ ও ৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِذْ يَعِدُكُمُ اللَّهُ إِحْدَى الطَّائِفَتَيْنِ أَنَّهَا لَكُمْ وَتَوَدُّونَ أَنَّ غَيْرَ ذَاتِ الشَّوْكَةِ تَكُونُ لَكُمْ وَيُرِيدُ اللَّهُ أَنْ يُحِقَّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَيَقْطَعَ دَابِرَ الْكَافِرِينَ (7) لِيُحِقَّ الْحَقَّ وَيُبْطِلَ الْبَاطِلَ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ

"স্মরণ কর আল্লাহ তোমাদেরকে প্রতিশ্রুতি দেন যে, দুই দলের একদল তোমাদের আয়ত্তাধীন হবে। অথচ তোমরা চাচ্ছিলে নিরস্ত্র দলটি তোমাদের আয়ত্তাধীন হোক। আর আল্লাহ চাচ্ছিলেন যে, তিনি সত্যকে তার বাণী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করবেন এবং কাফেরদেরকে নির্মূল করবেন।" (৮:৭)

"এটা এ জন্য যে তিনি সত্যকে সত্য ও অসত্যকে অসত্য প্রতিপন্ন করেন। যদিও অপরাধীগণ এটা পছন্দ করে না।" (৮:৮)    

উপরে আমরা বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছি। আমরা লক্ষ্য করেছি, মুসলমানদের একটি ক্ষুদ্র অংশ বিরাট কাফের বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত না হয়ে কুরাইশদের বাণিজ্য কাফেলার ওপর আক্রমণের পক্ষে মত দিয়েছিলেন। তাদের যুক্তি ছিল- বাণিজ্য কাফেলায় হামলা করে কাফেরদের অর্থনৈতিক ভিত্তিতে আঘাত করা যাবে। এছাড়া কুরাইশরা মুহাজের মুসলমানদের সহায়-সম্পদ আটক করে রাখার জবাব হিসেবে তাদের সম্পদও বাজেয়াপ্ত করা যাবে। অপরদিকে, মদিনা থেকে মুসলমানরা যখন বের হন তখন তারা যুদ্ধের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি নিয়ে আসেনি। ফলে প্রতিপক্ষের বিশাল বাহিনীর মোকাবেলায় অবতীর্ণ হওয়া ঠিক হবে না বলে ওই পক্ষ মত দেন।

কিন্তু, আল্লাহর রাসূল মুসলমানদের প্রথম পক্ষের মত অনুযায়ী কুরাইশ বাহিনীর মুখোমুখী হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এই আয়াতে মহান আল্লাহ মুসলমানদেরকে সে কথাই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, রাসূল (সা.)এর সিদ্ধান্তের ফলে যে বিজয় অর্জিত হয় তা ছিল ইসলামের ও মুসলমানদের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত তাতপর্যপূর্ণ। মহান আল্লাহ বদরের ঘটনার মাধ্যমে তার বিধানের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। মিথ্যার ওপর সত্যের বিজয়ের বাস্তবতা প্রমাণিত হয়েছিল বদরের যুদ্ধে।

সূরা আনফালের ৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

إِذْ تَسْتَغِيثُونَ رَبَّكُمْ فَاسْتَجَابَ لَكُمْ أَنِّي مُمِدُّكُمْ بِأَلْفٍ مِنَ الْمَلَائِكَةِ مُرْدِفِينَ

"স্মরণ কর, তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট কাতর প্রার্থনা করেছিলে, তিনি তা কবুল করেছিলেন এবং বলেছিলেন- আমি তোমাকে সাহায্য করবো এক সহস্র ফেরেশতা দ্বারা যারা একের পর এক আসবে।" (৮:৯)

এই আয়াতে বদর যুদ্ধে মুসলমানদের প্রতি ঐশি মদদের বিষয়টি বর্ণিত হয়েছে। বলা হয়েছে- ফেরেশতা পাঠিয়ে তখন মুসলিম বাহিনীকে মদদ দেয়া হয়েছে। এই আয়াতে ফেরেশতার সংখ্যা এক হাজার বলা হয়েছে। কিন্তু সূরা আল ইমরানের ১২৪ ও ১২৫ নম্বর আয়াতে ৩০০০ এবং ৫০০০ বলা হয়েছে। এ থেকে এটা বুঝা যায়- বিভিন্ন পর্যায়ে ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয়েছেন এবং বিভিন্ন পর্যায়ে মুসলমান বাহিনীকে সাহায্য করেছেন। এখানে একটা প্রশ্ন হতে পারে- ফেরেশতারা কি নিজেরাও যুদ্ধ করেছেন?

বিশিষ্ট মুফাসসিরগণ মনে করেন, ফেরেশতারা সরাসরি যুদ্ধ করেননি। মুসলমানদের পাশে ফেরেশতাদের অবস্থানের ফলে মুসলিম বাহিনীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হয়েছে, তাদের ঈমান শক্তিশালী হয়েছে, তাদের আত্মবল বৃদ্ধি পেয়েছে। অপরদিকে, কাফের বাহিনীর মনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয় এবং তাদের মধ্যে হতাশা দেখা দেয়।

এ আয়াত থেকে আরেকটি বিষয় বোঝা যায় সেটি হচ্ছে, দোয়া বা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার বিশেষ ফজিলত রয়েছে।


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি
হযরত আলীর নামের শেষে (আ.) ব্যবহার ...
কোরআন বিকৃতি মুক্ত
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...

 
user comment