বাঙ্গালী
Wednesday 8th of January 2025
0
نفر 0

রমজানে দোয়া ও মোনাজাত

রমজানে দোয়া ও মোনাজাত

রমজান দোয়া কবুল ও পুণ্য অর্জনের মাস। এ মাসে অবারিত রহমত-বরকতের পাশাপাশি দোয়া-মোনাজাতের মাধ্যমে নিজেকে পাক-সাফ করে নেয়া যায়। মানবজাতির কল্যাণ ও মুক্তির জন্য এবং যে কোনো বিপদ-মসিবত থেকে উত্তরণে দোয়ার বিকল্প নেই। আমাদের ওপর আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এটা এক বড় ধরনের নিয়ামত ও অনুগ্রহ যে, তিনি আমাদের তাঁর কাছে দোয়া করার অনুমতি দিয়েছেন এবং দোয়া কবুলেরও ওয়াদা করেছেন। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার কাছে দোয়া কর, আমিই তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ (সুরা মুমিন : ৬০)
রমজানে দোজখের দরজাগুলো বন্ধ এবং বেহেশতের দরজাগুলো খোলা থাকে। শান্তির সুবাতাস বইতে থাকে চারদিকে, যার ফলে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সবার হৃদয়-মন হয় বিগলিত ও ইবাদতপ্রবণ। গোনাহ কম হয়, পুণ্যের কাজে অংশগ্রহণ বেড়ে যায়। সেইসঙ্গে আল্লাহতায়ালার করুণার বারি বর্ষণ মানুষকে বিনয়, সহানুভূতিশীল ও অহঙ্কারমুক্ত করে তোলে, যার ফলে অন্যের মঙ্গল কামনা ও সমবেদনায়ও মন আকুল হয়ে যায়, কায়মনে দোয়ার উচ্চারণ মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে। তার এ দোয়া আল্লাহতায়ালা ব্যর্থ মনোরথে ফেরত দেন না। কারণ রমজানের পুরো সময়েই রহমতের আবহ বইতে থাকে। এ সময়ের তারাবি, তাহাজ্জুদ, সাহরি ছাড়াও ইফতারে দোয়া কবুল হয়।
হাদিসে তিন ব্যক্তির দোয়া কবুল হওয়ার কথা এসেছে, তার একটি হলো রোজাদারের ইফতারের আগ মুহূর্তের দোয়া। রমজানে মহানবী (সা.) বেশি বেশি আল্লাহর দরবারে দোয়া ও প্রার্থনার তাগিদ দিয়েছেন। দোয়ার মাধ্যমেই তার নৈকট্য হাসিল করা সহজ। তাই দোয়াকে শুধু আনুষ্ঠানিকতার রূপ না দিয়ে ইবাদত মনে করতে হবে। একটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আদ্দুআ-উ হুয়াল ইবাদাহ’ অর্থাত্ দোয়াই ইবাদত। এ ছাড়াও তিনি দোয়াকে সর্বোত্তম ইবাদত ও ইবাদতের সার-নির্যাস বলেছেন।
আরও বলেছেন, দোয়া হচ্ছে মুসলমানদের হাতিয়ার ও দীন ইসলামের স্তম্ভস্বরূপ এবং আসমান-জমিনের নূরময় আলো, আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই। আল্লাহ যখন বান্দাকে দোয়া করার অনুমতি দেন, তখন তার জন্য রহমতের দ্বার খুলে যায়। কেননা, দোয়ার কারণে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত ও ধ্বংস হতে পারে না। এ মর্মে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) আমার বান্দা যদি আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে তবে তাদের বলে দিন, আমি তাদের অতি কাছে। আমাকে যে ডাকে আমি তার ডাক শুনি এবং তা কবুল করি।’ (সুরা বাকারা : ১৮৬)
যখন দোয়াকারী ব্যক্তি হালাল খাবার গ্রহণ করে উপযুক্ত সময়ে দোয়ার শর্তাবলি মেনে প্রাপ্তির আশা-ভরসা, নাজাতের প্রত্যাশা ও দোজখের শাস্তির ভয় নিয়ে কায়মনোবাক্যে এবং চোখে অশ্রু ও মনে পরম আকুতিসহ দোয়া করে, তখন দোয়া কবুলের সম্ভাবনা থাকে। পক্ষান্তরে যে আল্লাহর সামনে বিনীত হতে লজ্জাবোধ করে, লোকলজ্জায় দোয়া করে না, দোয়ায় অন্যমনষ্ক ও উদাসীনতা বিরাজ করে কিংবা গর্ব ও অহঙ্কারে দোয়া-মোনাজাত এড়িয়ে যায়, তার শাস্তি প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘যারা গর্ব ও অহঙ্কারে নিমজ্জিত হয়ে আমার ইবাদত করা থেকে বিমুখ থাকে, তারা সত্বরই লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’ অন্যত্র বলেছেন, তার জন্য আল্লাহর কোনো দায়দায়িত্বই নেই। ইরশাদ হয়েছে, ‘(হে নবী!) বলুন, তোমরা যদি আল্লাহকে না ডাক তোমাদের ব্যাপারে আমার প্রতিপালকের কী প্রয়োজন পড়েছে?’ (সুরা ফুরকান : ৭৭)
আম্বিয়ায়ে কেরাম (আ.) এবং আউলিয়ায়ে কেরাম (রহ.) আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে বেশি বেশি দোয়া ও কান্নাকাটি করতেন। দোয়া, কান্নাকাটি ও অনুনয়-বিনয় এবং এর মাধ্যমে আল্লাহতায়ালার নৈকট্য অর্জনই ছিল তাদের প্রকৃত চাওয়া-পাওয়া। শুধু রমজানে নয়, সারা বছর তাদের দৈনন্দিন আমলি জিন্দেগিতে অজিফা, জিকর, দোয়া ও মোনাজাত রুটিন কাজ ছিল।
আমাদেরও উচিত রমজানে দোয়া ও মোনাজাতের মাধ্যমে নিজেদের গোনাহখাতা মাফ করিয়ে নেয়া। মহানবীর (সা.) উচ্চারণ, ‘রমজানে যে ব্যক্তি নিজের গোনাহ মাফ করাতে পারে না, তার চেয়ে হতভাগ্য আর নেই।’ এ ধমকি থেকে যেন রেহাই পেয়ে যাই। দীন-দুনিয়ার তাবত্ কল্যাণে যাতে কাজ করে যেতে পারি, আল্লাহর কাছে সেই তাওফিক কামনা করছি।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সন্ত্রাস ও দুর্নীতি নির্মূলে ...
১০ ই মহররমের স্মরণীয় কিছু ঘটনা ও ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল্লাহর ওপর নির্ভরতা
নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ...
পরিবর্তনশীল জীবন এবং ইসলামী আইন
ইমাম সাজ্জাদ(আঃ)
শবে বরাত -আছে, না নাই
রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর-৯
ইমাম মাহদী (আ. ফা.) এর সংক্ষিপ্ত ...

 
user comment