ইব্রাহিমী ধর্মগুলোর মধ্যে সর্বশেষ ও পরিপূর্ণ ধর্ম ইসলাম গ্রহণের পর শ্যান এখন একজন মুসলমানের সবচেয়ে ভাল চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তিনি বলেছেন: ইসলাম ইব্রাহিমী ধর্মগুলোর অব্যাহত যুক্তির অংশ, ঠিক যেমনটি বিশ্বনবী (সা.) বলেছেন,ইব্রাহিমী ধর্মগুলো আল্লাহর মনোনীত ধর্ম। ইব্রাহিমী বা একত্ববাদী ধর্মগুলোর একজন ভাল প্রচারক হওয়ার আশা করছি আমি।হযরত ঈসা (আ.) বলেছেন, একজন ভাল মানুষের উচিত তার প্রতিবেশীর সেবা করা এবং তা করা উচিত সে কোন ধর্মের লোক তা না জেনেই। আমি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছি এবং এটা মেনে নিয়েছি যে হযরত মুহাম্মাদ (সা.) হলেন ইসলামের নবী । আমি আশা করছি পাশ্চাত্যে মুসলমানের সঠিক ছবি তুলে ধরতে পারব।
মার্কিন নও-মুসলিম‘শ্যান স্টোন’ ইসলাম ধর্মের সঙ্গে তার পরিচয় প্রসঙ্গে বলেছেন,স্কুলে যখন ইতিহাস পড়ছিলাম তখন ইসলামকে স্বৈরতান্ত্রিকরূপে তুলে ধরা হত আমাদের কাছে। কিন্তু যখন মুসলমানদের সঙ্গে মিশলাম এবং কুরআন পড়লাম তখন ইসলামকে সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ধর্ম হিসেবে মেনে নিতে বাধ্য হলাম। আমি এর মাধ্যমে ধর্মগুলোর মধ্যে সংলাপের পথ খুলে দেয়ার চেষ্টা করেছি। পাশ্চাত্যে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দেয়ার ও ইসলামকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা রয়েছে। অবশ্য এটা বলতেই হবে যে, ইসলাম ইহুদি ও খ্রিস্ট ধর্মের মতই কোনো ক্রমেই সহিংসতার ধর্ম নয়।
হলিউডের চলচ্চিত্র মুসলিম বিশ্বে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন ও ইসলাম-বিদ্বেষী ভাবধারা প্রচারের কার্যকর মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। শ্যান স্টোন তারা বাবা হলিউডের চলচ্চিত্র নির্মাতা অলিভার স্টোনের চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন। তিনি হলিউডের চিন্তাধারা এবং সমাজ ও পরিবারের ওপর হলিউডের প্রভাব সম্পর্কে সচেতন। স্টোন এ প্রসঙ্গে বলেছেন:
কার্টুন ও নানা ফিল্মে সব কিছুর প্রতীকিকরণ করা হচ্ছে। অর্থাত বিশেষ কিছু লক্ষ্য হাসিলের জন্য অনেক গোপন বা পরোক্ষ বার্তা ব্যবহার করা হচ্ছে এসব মাধ্যমে। অনেকের জন্যই বিষয়টি বিস্ময়কর হতে পারে। কিন্তু যারা নিজেই এ গ্রুপে জড়িত তারা এইসব বার্তা ঠিকই বোঝেন। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ এসব বিষয় লক্ষ্য করেন না বা বোঝেন না। ফলে এই প্রতীকগুলো মানুষের অবচেতন বা অচেতন মনে কাঙ্ক্ষিত বা প্রত্যাশিত প্রতীক হিসেবে রেকর্ড হয়ে থাকে। অ্যানিমেশন বা কার্টুন নির্মাতা খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো বিশ্বকে জনগণের সামনে এমনভাবে তুলে ধরছে যে নারী-পুরুষরা নানা স্বপ্ন-সাধের রাজ্যে ডুবে আছেন। ভাল সব নারীরা রাজকন্যা আর ভাল পুরুষরা সবাই রাজা। আর এইসব কার্টুন বা অ্যানিমেশনের মাধ্যমে তারা শিশুদেরকে বাস্তব দুনিয়া থেকে দূরে রাখছে ও তাদের মগজ ধোলাই করছে। পুরো হলিউডের শিল্প মাধ্যমেরই রয়েছে গোপন বার্তা। কিন্তু মানুষের জীবনের সব ক্ষেত্রে এভাবে প্রতীকিকরণ কেন করছে মার্কিন সরকার? আমি বলব, দর্শক-শ্রোতাদের সঙ্গে সংযোগ ঘটিয়ে দেয়া হচ্ছে এসবের মাধ্যমে যাতে পরে এইসব সংকেত বা প্রতীক ব্যবহার করে দর্শক-শ্রোতাদেরকে নিজের কাজে ব্যবহার করা যায়।
অন্য কথায় দর্শক-শ্রোতাদের চিন্তা-চেতনাকে পশ্চিমা নীতি-নির্ধারকদের কাঙ্ক্ষিত লক্ষের দিকে পরিচালিত করাই এইসব প্রতীকিকরণ বা সুপ্ত বার্তা তুলে ধরার উদ্দেশ্য।
মার্কিন নও-মুসলিম শ্যান স্টোন পরিবারের ওপর চলচ্চিত্রের প্রভাবকে নেতিবাচক বলে মনে করেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন: পশ্চিমে অবস্থা এমন হয়েছে যে নারী ও পুরুষ কোনো বাস্তব কারণে পরস্পরকে ভালবাসেন না। সেখানে নারী-পুরুষের পার্থক্য শেষ হয়ে গেছে। পুরুষরা বীরত্ব ও নারীরা ভালবাসার শক্তি হারাচ্ছেন। আমেরিকার সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা এমন দিকে গেছে যে তাতে পুরুষের পৌরুষত্ব ও ব্যক্তিত্ব পদপিষ্ট হয়েছে। পাশ্চাত্যে নারী ও পুরুষ আলাদাভাবে কর্মক্ষেত্রে বা অফিসে যান। তারা বলছেন যে, আমাদের পরস্পরের কোনো প্রয়োজন নেই। নারী পুরুষকে বলছে যে, আমি নিজেই জীবনের দায়িত্ব পালনে সক্ষম, কোনো পুরুষের দরকার নেই। এসবই হচ্ছে হলিউড ও অনুরূপ সংস্থাগুলোর সৃষ্ট বিপর্যয় যা মার্কিনীদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। আর এ অবস্থা চলতে থাকায় নারী ও পুরুষের মধ্যে নানা ধরনের মানসিক রোগ দেখা দিয়েছে।বাইরের পরিবেশের সঙ্গে মানবীয় প্রকৃতির নানা বৈপরীত্যেরই ফলই হল এইসব রোগ।
মার্কিন নও-মুসলিম স্টোন আরো বলেছেন:
পাশ্চাত্য মানুষের মগজ এমনভাবে ধোলাই করছে যে সবাইই ভোগ-বিলাসের পেছনে ছুটছে এবং অনাচারে বা নোংরামিতে জড়িত হওয়াকে একটি শিল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে। নারী ও পুরুষ টাকার জন্য যে কোনো কাজ করতে দ্বিধান্বিত হচ্ছে না। পাশ্চাত্যে মানুষকে ছোটবেলা থেকেই এমনভাবে গড়ে তোলা হয় যে তারা সব সময়ই টাকার পেছনে ছুটছে।
পাশ্চাত্যে তীব্র সহিংসতাও প্রচলিত রয়েছে। এমনকি সিনড্রেলা ও মতস-কন্যার মত বিখ্যাত কার্টুনেও তীব্র সহিংসতা দেখা যায়। অথচ এসব কাল্পনিক কার্টুনআনন্দদায়ক ও চিত্ত-বিনোদনমূলক হওয়া উচিত। এসব ছবিকে খুব সূক্ষ্ম দৃষ্টিতে দেখা উচিত। এমন মনে হয় যে এসব কাহিনীর শেষাংশ ভাল ও মিলনাত্মক, কিন্তু বাস্তবে তা নয়। আর এসব কার্টুন শিশুদের ব্যক্তিত্ব ও বিবেকের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলছে।
মার্কিন নও-মুসলিম স্টোন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্পর্কে বলেছেন:
পাশ্চাত্যে তার বক্তব্য আমাদের কাছে পৌঁছে না, কিন্তু তিনি কিছুকাল আগে যে বক্তব্য রেখেছেন তা ছিল খুবই সুন্দর। বিশ্বের অন্য কোনো নেতা এরকম কথা বলেন না। তিনি বলেছেন, মানুষ হচ্ছে পৃথিবীতে বা দুনিয়াতে আল্লাহর চেহারার প্রকাশ। এ বক্তব্যের জন্য আমি তার প্রশংসা করছি। আয়াতুল্লাহ খামনেয়ীই একমাত্র নেতা যিনি এ ধরনের কথা বলেছেন। পাশ্চাত্যের জনগণ এ ধরনের বক্তব্যকে ব্যাপক গুরুত্ব দিচ্ছে। মানুষ ও পশুর মধ্যে পার্থক্য কী? মানুষ যদি মূল্যবোধগুলোকে গুরুত্ব না দেয় তাহলে তারা কেবল একে-অপরকে হত্যা করে বাঁচতে চাইবে। ফ্যাসিবাদ ও পুঁজিবাদ সব সময়ই মানুষ হত্যাকরছে। কারণ, এসব মতবাদ মানবতার একটি অংশকে বিলুপ্ত করেছে। আরেকটি বিষয় হল, পাশ্চাত্যে সব সময়ই আয়াতুল্লাহিল উজমা খোমেনি (র.) ও খামেনেয়ী (র.)এর ক্রুদ্ধ চেহারা দেখানো হয়। কিন্তু আমি তেহরানে তাদের খুবই সুন্দর ও স্মিত হাসি যুক্ত ছবি দেখেছি।
ইসলাম তরবারির জোরে প্রচারিত হয়নি। বরং প্রথম থেকেই নিজের প্রকৃতিগত শক্তিকে তুলে ধরে মানুষের আত্মা ও চিন্তার ওপর জয়ী হয়েছে। আর এভাবেই ইসলাম পাশ্চাত্যের মুসলিম স্পেন তথা আন্দালুসিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছিল।
ইসলামের আধ্যাত্মিক ও সাংস্কৃতিক শক্তি এত জোরালো যে কেবল প্রচারণা বা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমেই এর মোকাবেলা সম্ভব বলে পশ্চিমা চিন্তাবিদরা মনে করেন। কিন্তু ইসলামের বিরুদ্ধে প্রচারণা ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সত্ত্বেও ইউরোপ-আমেরিকায় মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মানানসই এই খোদায়ী ধর্ম ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে। পশ্চিমের শিক্ষিত যুব প্রজন্মও ইসলামের সৌন্দর্যে অভিভূত হচ্ছে। বেশ কয়েক বছর আগে ইতালির ফিয়াট কোম্পানির মালিকের ছেলে নও-মুসলিম শহীদ এডওয়ার্ডো অনিল এবং সম্প্রতি বিখ্যাত মার্কিন চলচ্চিত্র অভিনেতা অলিভার স্টোনের ছেলে আলী স্টোনের মত যুবকরা পশ্চিমা সংস্কৃতি ও সভ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই শুরু করেছেন ওই সমাজের ভেতর থেকেই।(রেডিও তেহরান)