যা মানুষ ও মানব জাতির জন্য দিনকে দিন উন্নতির উচ্চতর সোপানগুলো অতিক্রমের সুযোগ এনে দেয়। যারা উন্নতি চায় তাদের জন্য প্রতি দিনই উন্নতির নতুন দিগন্ত খুলে দেয় এই মহান ধর্ম। বিকৃত নানা মত, পথ ও ধর্ম মানুষকে ডুবিয়ে রাখে অন্ধকারের অমানিশায়। কিন্তু যারা সত্য-সন্ধানী তারা বিচ্যুতির চোরাবালিতে তলিয়ে যেতে প্রস্তুত নন। তারা হচ্ছেন এমন মানুষ যারা জীবনের প্রকৃত অর্থ ও লক্ষ্য খুঁজে বেড়ান। আর একমাত্র ইসলামই তাদের কাছে জীবনের প্রকৃত অর্থ ও লক্ষ্য তুলে ধরে এবং পরিতৃপ্ত করে তাদের তৃষিত আত্মাকে সত্যের অমিয় ধারায়। নিউইয়র্কের অধিবাসী মার্কিন নও-মুসলিম অধ্যাপক স্টিভেন এরিক ক্রাউস' এমনই একজন সৌভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব। সাবেক ক্রাওস এখন আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ। তিনি মনে করেন ইসলাম প্রতি দিনই তার জীবনে আনছে পরিবর্তন।আর এ জন্য মহান আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞ আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ। তার মতে,"একমাত্র মুসলমানই আল্লাহর অনুগ্রহের গভীরতা অন্যদের চেয়ে ভালভাবে অনুভব করতে পারেন। কারণ, একজন মুসলমান প্রতিদিনই আল্লাহর সামনে সিজদাবনত হন। একজন (প্রকৃত) মুসলমান আল্লাহর ইচ্ছার কাছে নিজের ইচ্ছাকে সমর্পণ করেন।"
মার্কিন নও-মুসলিম 'স্টিভেন ক্রাওস' মনে করেন ইসলাম ইহুদি বা খ্রিস্টান ধর্মের মত নিছক কিছু বিশ্বাসের সমষ্টি নয়। বরং ইসলাম মানুষকে সত্য পথ দেখায়। প্রকৃত ক্ষমতার উৎস তথা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয় এ মহান ধর্ম। ইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, "ইসলাম সম্পর্কে জানাশোনা শুরু হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনার সময়। আমি ছিলাম একজন প্রোটেস্টান্ট খ্রিস্টান। তবে দীর্ঘকাল ধরেই ধর্মীয় কোনো ততপরতায় জড়িত ছিলাম না। এ ধর্ম সম্পর্কে অনীহা দেখা দেয় এ কারণে যে, স্রস্টার সত্তা এবং মানুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক বিষয়ে খ্রিস্ট ধর্মের বলার তেমন কিছুই নেই। স্রস্টার সাথে মানুষের যে সম্পর্কের কথা এ ধর্মে বলা হয়েছে তা অতি অস্পষ্ট ও দূরহ হওয়ায় আমি এমন কোনো মতবাদ বা ধর্ম খুঁজছিলাম যা আল্লাহ ও তাঁর সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে আরো উন্নত বক্তব্য রাখবে। কেন মানুষ সরাসরি আল্লাহর দরবারে দোয়া করতে পারবে না? কিভাবে আল্লাহ একজন মানুষের রূপ নিতে পারেন? তাই ধর্ম সম্পর্কে স্পষ্ট ও স্বচ্ছ দৃষ্টিভঙ্গি খুঁজে পাওয়ার জন্যব্যাকুল ছিলাম যে দৃষ্টিভঙ্গি দেখাবে সত্যিকারের সুপথ বা হেদায়াত, যুক্তিহীন বিশ্বাস ও আবেগ-প্রসূত ধারণা নয়। একজন মুসলমানের সঙ্গে পরিচয় ও তার জীবন-যাপন প্রণালী থেকে আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাই। এভাবে মহান আল্লাহ সত্যের পথ খুলে দিয়েছেন আমার জন্য।
মানসিক প্রশান্তি সব সময়ই মানুষের জন্য জরুরি বা অপরিহার্য চাহিদা। এই চাহিদা দিনকে দিন বাড়ছে। কারণ, বর্তমান বিশ্বের বেশিরভাগ মানুষ হতাশা ও উত্তেজনার মত নানা ধরনের মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্কহীনতা মানসিক রোগগুলোর অন্যতম প্রধান কারণ। অন্য কথায় আল্লাহর সঙ্গেযাদের সম্পর্ক যত শিথিল বা দুর্বল তারা তত বেশি মানসিক রোগে ভোগেন।
অথচ মুমিন মুসলমানের কাছে আল্লাহর শক্তি ও মর্যাদা বা স্থান সব কিছুর উর্ধ্বে। আল্লাহ তার কাছে নিছক বিশ্বাসের বিষয় নয়। একইসঙ্গে তিনি মানুষের সবচেয়ে কাছের সত্তা বা আপনজন। সুরা কাফ-এর ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
"আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও কাছে রয়েছি।"
সৌভাগ্য ও কল্যাণের পথ প্রদর্শক হিসেবে আল্লাহর উপস্থিতিকে মানুষ অনুভব করতে সক্ষম।
সুরা হাদিদ-এর ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,"তিনি নভোমন্ডল ও ভূ-মন্ডল সৃষ্টি করেছেন ছয়দিনে, অতঃপর আরশের উপর সমাসীন হয়েছেন। তিনি জানেন যা ভূমিতে প্রবেশ করে ও যা ভূমি থেকে নির্গত হয় এবং যা আকাশ থেকে বর্ষিত হয় ও যা আকাশে উত্থিত হয়। তিনি তোমাদের সাথে আছেন তোমরা যেখানেই থাক। তোমরা যা কর, আল্লাহ তা দেখেন।"
তাই আল্লাহর সঙ্গে যাদের সম্পর্ক রয়েছে তারা পরিপূর্ণ সুখ ও প্রশান্তি অনুভব করেন। তারা কখনও কোনো ধরনের হতাশা ও শূণ্যতার শিকার হন না।
সুরা ফাতহ-এর ৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, ফলে তাদের ঈমানবাড়তেই থাকে।..."
জড়বাদী বা বস্তুবাদী মার্কিন সমাজের আধ্যাত্মিক শূণ্যতা ও অন্তসারশুণ্যতা সমাজ বিশেষজ্ঞ 'স্টিভেন ক্রাওস' বা আবদুল লতিফ আবদুল্লাহ-কে ব্যথিত করে। এ ধরনের সমাজে অর্থ ও ভোগবাদকেই জীবনের লক্ষ্য বা সুখের ঠিকানা বলে মনে করা হয়। কিন্তু প্রকৃত সুখ তাদের কাছে মরীচিকা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন: "আমি সমাজ বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ। মার্কিন সমাজের রোগগুলো নিয়ে আমি গবেষণা করি। এসব গবেষণার মাধ্যমে আমার কাছে স্পষ্ট যে, বেশিরভাগ সামাজিক রোগগুলো সমাজের অসুস্থ আচরণের এবং উচ্চতর লক্ষ্য না থাকারকুফল। অথচ ইসলাম সুস্থতম জীবন-যাপনের পথ দেখিয়ে দিয়েছে মানব জাতিকে। জীবনের লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য কি তাও স্পষ্ট করেছে ইসলাম। তাই একমাত্র ইসলামই দিতে পারে সব ধরনের সামাজিক সংকটের সমাধান। ফলে এটা স্পষ্ট হল, দৈনন্দিন জীবনেই সচল রয়েছে ইসলাম এবং অন্য ধর্মগুলোর সঙ্গে এ ধর্মের গভীর বা মৌলিক তফাত রয়েছে। ইসলামকে সব মানুষেরই প্রয়োজন এবং এ ধর্ম হারিয়ে যাওয়া এমন সম্পদের মত যা আজো মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছে। ইসলামই হচ্ছে জীবনের অর্থ ও লক্ষ্যে পৌঁছার এবং সৌভাগ্য অর্জনের পথ। কারণ, এ ধর্ম সরাসরি মানুষকে সত্য ও ক্ষমতার প্রকৃত উৎস তথা আল্লাহর কাছে পৌঁছে দেয়।"
নও-মুসলিম 'স্টিভেন ক্রাওস' বা আবদুল লতিফ আবদুল্লাহর মতে, ইসলামকে চেনার পাশাপাশি তিনি এ ধর্মের আশ্রয়ে জীবন যাপনও করতে পারছেন এবং মুসলিম বন্ধুর জীবনের পরতে পরতে ইসলামের প্রয়োগ স্বচক্ষে দেখছেন। এটাইইসলামকে ধর্ম হিসেবে বেছে নেয়ার অন্যতম বড় কারণ। তিনি বলেছেন, "জীবন-যাপনের সব বিধানই রয়েছে ইসলামে। মানুষ যখন ইসলামী পরিবেশে থাকে তখন তারা দৈনন্দিন জীবন থেকে ইসলামকে পৃথক বা বিচ্ছিন্ন মনে করে না। এটা হল খ্রিস্ট ধর্মের ঠিক বিপরীত। খ্রিস্ট ধর্ম প্রাত্যহিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন। ইসলাম প্রতিটি দিনের রুটিন কাজ-কর্মকে এবাদতের দৃষ্টিতে দেখতে বলে।"
ঈমান যে মানুষের মানসিক রোগ সারাতে পারে তা স্বীকার করেছেন বিখ্যাত মার্কিন দার্শনিক ও মনোস্তাত্তিক উইলিয়াম জেমস। নও-মুসলিম'স্টিভেন ক্রাওস' মনে করেন ইসলামই তাকে দেখিয়ে দিয়েছে যে কেন ঈমানহীন মানুষ হতাশা ও মানসিক প্রশান্তিহীনতার শিকার হয়। তিনি আল্লাহবিহীন জীবনকে 'ভয়ানক' বলে মন্তব্য করেছেন। ক্রাওস বলেছেন, "আমি এটা ভালভাবে বুঝছি, কারণ, এক সময় আমি নিজেই এই ভয়ানক আতঙ্ক অনুভব করতাম। কিন্তু মুসলমান হওয়ার পর এখন ব্যক্তিত্বের স্বাধীনতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছেছি। অথচ এই স্বাধীনতায় আমার কোনো হাত নেই, সবই রয়েছে আল্লাহর হাতে। যেখানে যা থাকা উচিত তা-ই রয়েছে ইসলামের বিধানে। তাই জীবনকে এখন অর্থপূর্ণ ও সুশৃঙ্খল মনে হয়। আজ আমি বুঝতে পেরেছি কেন এ বিশ্বে এসেছি, কোথায় যাব এবং কিভাবে জীবন যাপন করা উচিত ও কোন কোন বিষয়কে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। আমি আশাবাদী ও দোয়া করছি পথহারা অন্য মানুষেরাও আমার আজকের এ আনন্দ আস্বাদন করতে পারেন।(রেডিও তেহরান)