বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

নৈতিকতা, ধর্ম ও জীবন: ৬ পর্ব

নৈতিকতা, ধর্ম ও জীবন: ৬ পর্ব

ইসলামী নৈতিকতার ভিত্তি হচ্ছে তাওহিদ বা একত্ববাদ। একত্ববাদে বিশ্বাস, মানুষকে মানুষের দাসত্ব হতে মুক্ত ও স্বাধীন করে। কারণ তাওহীদ বা একত্ববাদের অর্থ হলো, পরিপূর্ণভাবে একমাত্র আল্লাহর বশ্যতা ও অধীনতা স্বীকার করা এবং তার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করা। ইসলাম ধর্মমতে, সব কিছুর মালিক হচ্ছেন এক আল্লাহ। আল্লাহর ইচ্ছায় পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছে এবং এর মূলে রয়েছে কল্যাণ, দয়া ও শুভকামনা।

 

একত্ববাদে এ বাস্তবতা তুলে ধরা হয় যে, বিশ্বের সব সৃষ্টিই সমন্বিতভাবে একই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে চলেছে। প্রতিটি সৃষ্টির পেছনেই কোনো না কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। সৃষ্টির মধ্যে মানুষ হচ্ছে বিশেষ মর্যাদাপ্রাপ্ত এবং মানুষের রয়েছে বিশেষ কিছু দায়িত্ব। মানুষের নানা দায়িত্বের একটি হলো, আত্মপরিশুদ্ধির মাধ্যমে সমাজ সংশোধন। অন্য ধর্ম ও মতবাদের সঙ্গে ইসলামী নীতি-নৈতিকতার পার্থক্য রয়েছে। ইসলাম ধর্মে হিংসা, বিদ্বেষ, ঈর্ষা ও মিথ্যাচারের মতো অসত গুণাবলীকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার প্রধান কারণ শুধু এই নয় যে, মানব সমাজে এগুলো নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং অন্যদের জন্য বিরক্তি ও সমস্যার কারণ হয় বরং অন্য আরেকটি কারণ হলো, যারা এসব কাজ করে তাদের মন কলুষিত হয়ে পড়ে, আত্মা কালিমা লিপ্ত হয়ে পড়ে, ঐশী ফিতরাত থেকে মানবাত্মা দূরে সরে যায় এবং শয়তানি কাজের দিকে ধাবিত হয়। মানুষের চিন্তা-চেতনা ও উপলব্ধি কেবলি ভোগ প্রবণতার দিকে ধাবিত হলে এবং মানব সত্ত্বার সৃষ্টিগত সুপ্রবণতাকে উপেক্ষা করা হলে, তা ইসলাম ধর্মে অগ্রহণযোগ্য হিসেবে গণ্য হয়। কারণ এর মধ্যদিয়ে মানুষ তার মৌলিক সত্ত্বা থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়ে।

 

ইসলাম মানুষের স্বভাবগত প্রবণতাকে বাস্তবতা হিসেবে গণ্য করলেও ব্যক্তিগত ভোগ ও আরাম-আয়েশকেই মানুষের চূড়ান্ত লক্ষ্য-উদ্দেশ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। ইসলাম ধর্ম আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে পারাকে মানুষের পরম আকাঙ্খা হিসেবে গণ্য করে, যা অভ্যন্তরীণ যোগ্যতা বিকশিত হওয়ার পাশাপাশি তার অস্তিত্বের শূন্যতাগুলোর পূর্ণতার মধ্যদিয়েই কেবল সম্ভবপর হয়। আল্লাহর প্রিয় বান্দা হওয়ার আকাঙ্খা ও এ শুভ লক্ষ্যের বাস্তব প্রতিফলন তখনি সুস্পষ্ট হয়, যখন মানুষ আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে এবং আধ্যাত্মিক পুরস্কার প্রাপ্তির আশা করে। ইসলাম ধর্মে হারাম ও হালাল সুনির্দিষ্ট। তবে হালাল জিনিস ব্যবহারের ক্ষেত্রেও পরিমিতি বজায় রাখতে হবে। আসলে সর্বশ্রেষ্ঠ এ ধর্ম কখনোই মানুষের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনযাপনের বিরোধী নয়। কিন্তু ইসলাম ধর্ম অপচয়কে কখনোই সমর্থন করে না। ইসলামী নৈতিকতায় সব সময় ভারসাম্যপূর্ণ জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছে।

 

ব্যক্তি ও সামাজিক পরিবেশে নীতি-নৈতিকতার ভূমিকা জ্বাজ্জল্যমান সূর্যের মতো,যা ব্যক্তি ও সমাজের জন্য সুখ ও স্বাচ্ছদ্য নিয়ে আসে। ন্যায় ও সততা পৃথিবীতে প্রেম-ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের পরিবেশ সৃষ্টি করে,যাতে সবাই সৌহাদ্যপূর্ণ পরিবেশে বাস করতে পারে। প্রেম-ভালোবাসার ছায়াতলে সামাজিক ঐক্য ও সম্প্রীতি আরো দৃঢ় হয়। সামাজিক সম্পর্ক দৃঢ় করার মাধ্যমে সমাজের মানুষজন পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে পরিবেশকে সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হয়। আমিরুল মুমিনিন হজরত আলী (আ.) এ সম্পর্কে বলেছেন, সৎস্বভাব ও সচ্চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তিকে আল্লাহ ও মানুষ ভালোবাসে এবং সৎস্বভাব ও সচ্চরিত্র হচ্ছে সাহসিকতা, মহানুভবতা ও উদার্য্যের উতস। নৈতিক জ্ঞান ও শিক্ষা, নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি এবং নৈতিক প্রচেষ্টার মধ্যদিয়ে সত সমাজ প্রতিষ্ঠিত হয়। কিন্তু অংশবাদী চিন্তা ও বিশ্বাস, ঐশী আইন-কানুন ও নির্দেশনা সম্পর্কে অজ্ঞতা, পশু প্রবৃত্তি, অর্থপুজা, যৌনতার মতো অসত গুণাবলী মানুষের নৈতিক উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় বাধা। সৎ জীবনের জন্য নবী-রাসূলদের দিক-নির্দেশনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কখনো কখনো মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণের শক্তি ও স্পৃহার ক্ষেত্রে দুর্বলতা মানুষকে সমস্যার মুখে ঠেলে দেয়।

 

নীতি-নৈতিকতা মানুষের মহত্ত্ব, উদারতা ও মর্যাদাকে বাড়িয়ে তোলে। মানুষের জন্মগত প্রবণতা হলো, ভালো ও সৎ কাজের প্রতি আকর্ষণ। সত মানুষের প্রতি অন্তরের একটা ও ভালোবাসা মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্য। একারণেই সমাজে এ ধরনের মানুষের সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এ সম্পর্কে হজরত ইমাম আলী (আ.) বলেছেন, যদি বেহেশত, দোজখ ও সওয়াবের অস্তিত্ব না থাকতো, তারপরও আমাদের জন্য যৌক্তিক হতো, উন্নত নৈতিক গুণাবলী তথা এমন সব গুণাবলীর অধিকারী হওয়ার চেষ্টা করা,যা মানুষের জন্য মাহাত্ম্য ও মর্যাদা নিশ্চিত করে। কারণ এসব গুণই মানুষকে সফলকাম করে। ইসলামী শিক্ষায় সচ্চরিত্র ও সদাচারকে অত্যন্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। ইসলাম ধর্মে মানুষ-মানুষের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দাবি করতে পারে কেবল তাকওয়া বা খোদাভীতির ভিত্তিতে। পদমর্যাদা, বংশ, বর্ণ,অর্থ-এসব কখনোই শ্রেষ্ঠত্বের মাপকাঠি নয়। হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানব জীবনে সচ্চরিত্রের মান তুলে ধরেছেন অনেক উঁচুতে। মানুষকে তিনি উত্তম চরিত্র ও তার সহায়ক গুণাবলি অর্জনের শিক্ষা দিয়েছেন।

 

বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) মানুষকে সততা, সত্যবাদিতা ও চারিত্রিক নিষ্কলুষতার দিকে ডেকেছেন। সামাজিক সম্পর্ক সুদৃঢ় করতে তিনি পিতামাতার সঙ্গে সদাচার এবং আত্মীয়-স্বজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বহাল রাখতে বলেছেন। জীবনে তিনি এর সফল প্রয়োগও ঘটিয়েছেন। পক্ষান্তরে তিনি অসৎ চরিত্র থেকে দূরে থাকতে বলেছেন।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা ...

 
user comment