আহলে বাইত বার্তা সংস্থা (আবনা) : রাষ্ট্রীয় মদদেই মিয়ানমারের উগ্র জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধরা মুসলিম রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতন-নিপীড়ন চালায়; নিজেদের এক প্রতিবেদনে এমন দাবি করেছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা। ওই সংবাদ মাধ্যমের যুক্তরাষ্ট্রের সাংবাদিক জোসেফ স্কটের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে রোহিঙ্গা জীবনের ভয়াবহ বিপন্নতার কথা।
শত শত বৌদ্ধ ভিক্ষু সম্প্রতি (বুধবার) মিয়ানমারের সাবেক রাজধানী রেংগুনের ব্যস্ত রাস্তা দিয়ে মার্চ করতে করতে একটি ফুটবল মাঠে জড়ো হয়ে উত্তপ্ত বক্তৃতা দিয়েছে। সেখানে পুলিশ কিছুই করেনি। অদূরেই প্লাস্টিকের চেয়ারে বসে পুলিশ চা পান করছিল।
অভূতপূর্ব ও বিরল এ দৃশ্যের অবতারণা ঘটল কারণ আন্দোলনকারীরা দেশটির শিক্ষা ব্যবস্থা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছিল না। সেদিন তাদের আন্দোলনের বিষয়বস্তু ছিল দেশটির রাখাইন রাজ্যের রাজ্যহীন রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। রোহিঙ্গারা সম্প্রতি আবারও বিশ্বজুড়ে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে, নিজ দেশে নিরাপত্তা সংকটে হাজার হাজার রোহিঙ্গা উন্নত জীবনের আসায় মাসের পর সমুদ্রে ভেসে বেড়াচ্ছে, এমন খবর প্রকাশ হওয়ার পর। রোহিঙ্গাদের প্রতি মিয়ানমারে আচরণের কারণে এ সমস্যার উদ্ভব হয়েছে এমন ধারণা স্পষ্ট অস্বীকার করেছে দেশটি।
বুধবারের আন্দোলনকারীদের প্রত্যেকের টি-শার্টে রোহিঙ্গাবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান লেখা ছিল। তারা বলছিল, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারের নাগরিক নয়। তাদের কোনো দায়িত্ব নেবে না মিয়ানমার। রোহিঙ্গাবিরোধী এসব র্যালির নেপথ্যে থাকে বৌদ্ধ সংগঠনগুলো। মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানোয় সংগঠনগুলোর আদর্শিক বৈশিষ্ট্য।
গেল চার বছরের বেশি সময় ধরে এভাবেই দেশটি গণতন্ত্রের চর্চা করে আসছে। এ চর্চা নভেম্বরের সাধারণ নির্বাচনের আগে পরিবর্তনের খুব একটা সুযোগ নেই। দেশটির শীর্ষস্থানীয় সরকারি কর্মকর্তারাও এ ধরনের আন্দোলনকে সমর্থন দিয়ে অসছেন।
রেংগুনের ৩২ বছর বয়সী মুসলিম অং নিয়াং বলেন, সরকার কখনোই এ ধরনের উগ্র বৌদ্ধদের আন্দোলনের ব্যাপারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি বরং তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। জাতীয়তাবাদী বৌদ্ধদের একটি দল দ্য মা বা থার একটি হাতে লেখা আইনে দেশটির প্রেসিডেন্ট থেইন সেইন স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। আর তাতেই আরেকটি নতুন আইন জারি হয়ে গেল। নাম ল অব পপুলেশন কন্ট্রোল।
এ আইনে বলা হয়েছে, একজন নারীকে অবশ্যই দুই সন্তানের মা হতে অন্তত ৩৬ মাসের ব্যবধান রাখতে হবে। স্পষ্টতই এ আইন করা হয়েছে রোহিঙ্গাদের জন্মবৃদ্ধি রহিত করার জন্য। মিয়ানমারের অধিকাংশ মানুষ রোহিঙ্গাদের অধিক সন্তান উৎপাদনকে সমালোচনা করে থাকে। এ আইনটির সমালোচনা করেছেন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ অধিকাংশ মানবাধিকার সংস্থা।