ইমাম রেজা (আ.) থেকে বর্ণিত : ‘ইস্তিগফার হচ্ছে গাছে থাকা একটি পাতার মত, ঐ গাছ নাড়া দিলে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে। অতএব, যারা ইস্তিগফার করার পর পূনরায় গুনাহে লিপ্ত হয়, তারা এর মাধ্যমে মূলতঃ মহান আল্লাহকে উপহাস করে’।
আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা (আবনা): প্রতিক্ষীত রমজান আসন্ন; কয়েকদিন পরই মহান আল্লাহর মেহমানিতে যাবে মুসলমানেরা। মুমিন সারা বছর এ মাসের অপেক্ষায় পথচেয়ে থাকে। এ পথ চাওয়ার অবসান হতে যাচ্ছে আর কয়েকদিনের মধ্যেই।
যখনই আমরা কোথাও বেড়াতে যাই বা কোন গুরত্বপূর্ণ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাত করতে যাই তখন আমরা নির্দিষ্ট দিনের কয়েকদিন আগ থেকেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করি। যাতে সফর বা সাক্ষাত কাঙ্খিত রূপে সম্ভব হয়।
পবিত্র রমজান মাসে প্রবেশের আগে তাই নির্দিষ্ট কিছু প্রস্তুতি সেরে ফেলতে হয়। যাতে এ মাসে যে সকল অফার মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁর বান্দাদের জন্য রাখা হয়েছে সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার করা যায়। যে অফারের মেয়াদ হচ্ছে রমজানের ১ তারিখ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত।
প্রস্তুতি সারতে হয়, মেহমানির জন্য নিজেকে যোগ্য করে নিতে হয়। ফিজিক্যাল এবং বিশেষ করে স্প্রিচুয়্যাল দিক থেকে ফিট হয়েই এ মেহমানিতে যেতে হয়।
সাধারণভাবে আমরা রমজান মাসের প্রস্তুতি বলতে সারা মাসের ইফতারের জন্য বাজার করা, টাইম শিডিউলে একটু পরিবর্তন আনা ইত্যাদিকে বুঝাই।
কিন্তু এটা তো হল দুনিয়াবি প্রস্তুতি তাহলে যে মেহমানিতে যাচ্ছি তার প্রস্তুতি কোথায়?
এ নিবন্ধে আমরা চেষ্টা করেছি, পবিত্র রমজান মাসে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য কিছু নির্দেশনা উল্লেখ করার।
১। রমজানের আগে পূর্বের হিসাব কিতাব সেরে নেয়া
অনেক আলেমের মতে, আল্লাহ প্রেমিকরা তাদের সারা বছরের কর্মসূচীগুলো রমজান মাসকে কেন্দ্র করেই প্রস্তুত করে থাকেন। তাদের দৃষ্টিতে আমলের বছর শুরু হয় রমজান মাস থেকেই। কারণ বিশেষ তাৎপর্য মণ্ডিত এ মাসের ফজিলতই একে অন্যান্য মাস থেকে আলাদা করে রেখেছে। এই মাসে পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে। এ মাসের কোন একটি রজনীই হচ্ছে লাইলাতুল ক্বদর। এ কারণে রমজান মাসের চাঁদ ওঠার পর আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা’রা মুহাসাবাহ, মুরাকাবাহ, তাহাজ্জুদ, ইবাদত ও দোয়ার মাধ্যমে নতুন বছরে প্রবেশের প্রস্তুতি নেয়। আর এ ধরনের প্রস্তুতি শুধু রমজান মাসেই সম্ভব।
যেভাবে আমরা নতুন বছর শুরু করার আগে বিগত বছরের হিসেব শেষ করি, সেভাবে পবিত্র রমজান মাসে প্রবেশের আগে বিগত বছরের আমলের হিসাব নিজেদের করে ফেলা উচিত। জীবনের কালো অধ্যায়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরার এবং সেটা পরিচ্ছন্ন করার পথ বন্ধ হওয়ার আগেই সেগুলোকে চিহ্নিত করা উচিত। আর যা কিছু আমাদের হাতছাড়া হয়েছে তা রমজান মাসেই পূরণ করে ফেলা উচিত।
এ কারণেই শাবান মাসের শেষ শুক্রবারে উচিত হল, বিগত বছরে আমাদের আমলের সূক্ষ্ম হিসেব করে ফেলা। যে সকল গুনাহ আমাদেরকে কলুষিত করেছে সেগুলোকে চিহ্নিত এবং সেগুলোর জন্য আলাদা আলাদাভাবে মহান আল্লাহর কাছে তওবা ও ইস্তিগফার করা। কারণ মানুষ যতক্ষণ না তার কৃত গুনাহগুলো সম্পর্কে সচেতন হবে ততক্ষণ সে সেগুলো পূরণে অগ্রসর হতে পারবে না এবং আগামীতে সেগুলো থেকে দূরে সরার সিদ্ধান্তও নিতে পারবে না। যেভাবে হযরত ইমাম রেজার বাণীতে আমরা পড়ে থাকি:
‘ইস্তিগফার হচ্ছে গাছে থাকা একটি পাতার মত, ঐ গাছ নাড়া দিলে শুকনো পাতাগুলো ঝরে পড়ে। অতএব, যারা ইস্তিগফার করার পর পূনরায় গুনাহে লিপ্ত হয়, তারা এর মাধ্যমে মূলতঃ মহান আল্লাহকে উপহাস করে’। [আল-কাফি, খণ্ড ২, পৃ. ৫০৪]
আর এ ধরনের ইস্তিগফার নফসকে পবিত্র করার ক্ষেত্রে ন্যূনতম প্রভাব রাখে না। অতএব, আমাদের উচিত হল নিজের নফসের কৃতকর্মের হিসাব-কিতাবের জন্য সময় নির্ধারণ করা এবং প্রতিটি গুনাহকে স্মরণ করে মহান আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
উপরোক্ত বিষয়াদি আঞ্জাম দানের পর রমজান মাসের প্রবেশের পূর্বে তওবার গোসল ও নামায আদায় করা উচিত।
২। আল্লাহর কোন আওলিয়ার সাথে নিজেকে সংযুক্ত করে নেয়া
মানুষের জীবনের প্রতিটি দিনই আখেরাতের সফরের অংশ হিসেবে গণ্য। অতএব, আত্মশুদ্ধির পথে যে অগ্রসর হচ্ছে তার উচিত প্রথম মাস থেকেই আগত ১২টি মাসের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়া।
পথিকের যেমন সফরসঙ্গী, পথনির্দেশক, পৃষ্ঠপোষক এবং বিশ্বস্ত ও শক্তিশালী রক্ষকের প্রয়োজন রয়েছে। এ কারণে এ বিষয়ে অনেক বেশী তাগিদ প্রদান করা হয়েছে যে, এ পথ চলা শুরু করেছে এমন ব্যক্তির উচিত নিজেকে মহান আল্লাহর একজন একনিষ্ঠ বান্দা’র এক্তিয়ারে রাখা। এক্ষেত্রে আহলে বাইত (আ.) এর সদস্যদেরা হতে পারে সর্বোত্তম আদর্শ। মহান আল্লাহ্ পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে এবং মহানবি (স.) নিজের অসংখ্য হাদিসে তাদের পরিচয় করিয়েছেন। আর তারাই হচ্ছেন এক্ষেত্রে সবচেয়ে বিশ্বস্ত। যাদের অনুসরণ করলে পথ হারানোর কোন সম্ভাবনাই নেই এবং আল্লাহর রহমতে শয়তান ও তার দোসর জ্বীন ও ইনস থেকেও নিরাপদ থাকা সম্ভব ইনশা আল্লাহ্। অবশ্য মেহমানেরও উচিত মেজবানের সম্মান রক্ষা করা। মেহমানের শানে খাপ খায় এমন হাদিয়া নিয়ে যাওয়া।
বলা বাহুল্য, ভাই ও বোনেরা ভুল বুঝবেন না, আল্লাহর ওলি বলতে বর্তমানে প্রচলিত পীর-ফকিররা নয়। এ সকল পীর-ফকিরদের নিজেদের আমলনামা সাধারণ মানুষের তুলনায় অনেক বেশী অন্ধকারাচ্ছান্ন তারা নিজেদের কর্ম নিয়ে ইয়া নাফসি ইয়া নাফসি করবে অন্যের কর্ম দেখার সময় তাদের কোথায়।
৩। পার্থিব ব্যস্ততা কমিয়ে আনা:
পবিত্র রমজান মাসে পার্থিব বিষয়াদিতে নিজেকে অধিক ব্যস্ত রাখা মাকরুহ বলে বিবেচিত। তবে এটা বলছি না যে, সকল কাজ-কর্ম বন্ধ করে দিতে হবে। বরং দৈনন্দিন ব্যস্ততার কিছুটা কমিয়ে আনতে হবে। মানুষের উচিত, মহান আল্লাহর মেহমানির মাসে নিজের ব্যস্ততা কমিয়ে মেজবানের চিন্তায় মশগুল থাকা। এ মাসের রাতগুলো থেকে সর্বোচ্চ উপকৃত হওয়া। গরমের ছোট রাতগুলোতে যদি ফজরের নামাযের এক-দেড় ঘন্টা আগে উঠতে চান তবে সেক্ষেত্রে দিনের বেলায় বিশ্রামের পরিমাণটাও বাড়িয়ে দিতে হবে।
৪। দুনিয়া প্রেমীদের সহচর্য পরিত্যাগ করা
অসুস্থ রুহ বা নিরাময়ের দিকে যাওয়া শুরু করেছে এমন রুহ অতি দ্রুত দূষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অতএব, দুনিয়া প্রেমীদের সাথে অনর্থক কথোপকথন, এ পথের পথিকের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বন্ধুদের সাথে বসে দীর্ঘ রাত পর্যন্ত আড্ডা দেয়া বা ইফতারির মেহমানির নামে জড়ো হয়ে আল্লাহর অপছন্দনীয় কাজ-কর্মে লিপ্ত হওয়া এ ক্ষেত্রে ভয়ানক বলে বিবেচিত। আর তাই এ সকল আসরে বসে গিবত-অপবাদ বা অযথা কথাবার্তা শুনে নিজের রুহকে কলুষিত করা উচিত নয়। অন্যের বিষয়ে অবশ্যই সীমা লঙ্ঘন করা চলবে না। আর যদি বুঝতে পারি যে কোন কথা গুনাহের দিকে নিয়ে যাচ্ছে, দ্রুত কথা অন্য দিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে। এক কথায় বলা যেতে পারে আহলে দুনিয়ার সাথে আন্তরিকতা মানুষের অন্তরকে মেরে ফেলে।
আল্লাহর রাসুল (স.) এর দৃষ্টিতে ৪ কারণে মানুষের অন্তর মরে যায়: গুনাহের পূনরাবৃত্তি, না-মাহরাম নারীর সাথে ঠাট্টা মশকরা করা, মূর্খ লোকের সাথে তর্কাতর্কি ও কথাবার্তা কখনও সে কিছু বলে কখনও তুমি কিছু বলো কিন্তু পরিশেষে ফলাফল কল্যাণকর কিছু দাঁড়ায় না এবং সর্বশেষ মৃতব্যক্তিদের সাথে ওঠাবসা করা। জিজ্ঞেস করা হল হে আল্লাহর রাসুল মৃত ব্যক্তি কারা? তিনি (স.) বললেন: ভোগ-বিলাশে মত্ত বিত্তশালী ব্যক্তিরা।
৫। প্রত্যহের নামাযের প্রতি গুরুত্ব প্রদান:
পূর্বের তুলনায় অধিক গুরুত্বের সাথে দৈনন্দিন নামায আদায় করা। আত্মিক সফরের ক্ষেত্রে নামাযের চেয়ে মানুষকে অন্য কিছু মহান আল্লাহর নিকটবর্তী করে না। মহান আল্লাহর আওলিয়াদের ভাষাতেও এটা স্পষ্ট হয়েছে যে, নামায হচ্ছে সর্বোত্তম ইবাদত।
মুয়াবিয়া ইবনে ওয়াহাব বলেন: আমি ইমাম সাদিক (আ.) কে জিজ্ঞেস করলাম, বান্দাকে মহান আল্লাহর নিকটবর্তী করার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম আমল কোনটি? এছাড়া মহান আল্লাহর নিকট সবচেয়ে পছন্দনীয় আমলের বিষয়ে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি বললেন: ‘মারেফাতের পর নামাযের চেয়ে মূল্যবান আর কোন কিছুকে আমি চিনি না’।
দৈনন্দিন নামাযের পাশাপাশি রাতের নফল নামাযগুলো আদায় করতে হবে।
৬। দ্বীনি ভাইয়ের সমস্যা সমাধান করা;
রমজান মাস ইবাদতের মাস কিন্তু এ মাসে মু’মিনদের সমস্যার সমাধান করারও বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষতঃ প্রতিবেশীদের দিকে খেয়াল রাখা।
৭। মু’মিনদের কবর জিয়ারত করা; দুনিয়ার সাথে সম্পৃক্ততা সাইর ও সুলুকের পথে সবচেয়ে বড় বাধা।
কবর জিয়ারত মৃত্যুকে স্মরণ করিয়ে দেয়, পৃথিবী মূল্যহীন হওয়ার বিষয়টি মানুষের মাঝে জাগিয়ে তোলে এবং পৃথিবীর সাথে সম্পৃক্ততা কমিয়ে আনে। মানুষ যখন তার পূর্ব পুরুষ ও আত্মীয় স্বজনদের কবর জিয়ারতে ফাতেহা পড়ে এবং তাদের জন্য মহান আল্লাহর কাছে মাগফিরাত চেয়ে তাদেরকে স্মরণ করে তখন ঐ মৃত ব্যক্তিরাও তাদের জন্য দোয়া করে। আর এ কাজ পবিত্র এ মাসে মানুষের তৌফিককে কয়েকগুণে বাড়িয়ে দেয়। তাই কবরস্থানে যাবার শিডিউল এ মাসে বাড়িয়ে দিতে হবে।
মহান আল্লাহ বনি ইসরাইলের বিশেষ আলেম ও কারামাতের অধিকারী বালআম বাউর সম্পর্কে বলেছেন: ‘অবশ্য আমি ইচ্ছা করলে তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিতাম সেকল নিদর্শনসমূহের দৌলতে। কিন্তু সে যে অধঃপতিত এবং নিজের রিপুর অনুগামী হয়ে রইল। সুতরাং তার অবস্থা হল কুকুরের মত; যদি তাকে তাড়া কর তবুও হাঁপাবে আর যদি ছেড়ে দাও তবুও হাঁপাবে। এ হল সেসব লোকের উদাহরণ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে আমার নিদর্শনসমূহকে। অতএব, আপনি বিবৃত করুন এসব কাহিনী, যাতে তারা চিন্তা করে’। [সূরা আরাফ ; ১৭৫-১৭৬]
৮। বেশী বেশী কুরআন তেলাওয়াত করা।
আল্লাহর রাসুল (স.) বলেছেন: এ কুরআন হচ্ছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে তোমাদের সামনে বিছানো একটি দস্তরখানের ন্যায়। অতএব, যতক্ষণ জীবন আছে ঐশী এ দস্তরখান থেকে উপকৃত হও। কেননা কুরআন হচ্ছে স্পষ্টকারী নূর, নিরাময় দানকারী ও উপকারী… অতএব, এটাকে শেখো, কারণ মহান আল্লাহ তোমাদেরকে এর শিক্ষার মাধ্যমেই সম্মান দান করেছেন। [ওয়াসায়েলুশ শিয়া, খণ্ড ৬, পৃ. ১৬৮]
৯। রাত্রি জাগরণ ও মহান আল্লাহর কাছে দোয়া ও মুনাজাত:
মহান আল্লাহর সাথে কথোপকথনের জন্য নির্দিষ্ট কোন সময় নির্ধারিত না থাকলেও। রাতের আঁধারে সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে তখন একাকিত্বে মহান আল্লাহর সাথে কথা বলা। জন সম্মুখে প্রকাশের পূর্বেই নিজের ভুলগুলো মহান আল্লাহর কাছে স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা ও তওবা করে নেয়া।
১০। শরীরের অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গকে সামলানো
বিভিন্ন রেওয়ায়েত থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে এ মাসে মহান আল্লাহর সমীপে উপস্থিত হওয়ার প্রধান শর্ত হচ্ছে শরীরের অঙ্গ-প্রত্যাঙ্গকে গুনাহ থেকে দূরে রাখা। আর পেটের রোজা রাখাটা এ ক্ষেত্রে আদবের সর্বনিম্ন পর্যায় বলে বিবেচিত।
মানুষকে প্রতারণার ক্ষেত্রে শয়তান ভিন্ন ভিন্ন পথ অবলম্বন করে। কেননা প্রত্যেকেই নির্দিষ্ট কিছু গুনাহের বিপরীতে দূর্বল। আর শয়তান ঐ পথটাকেই বেছে নেয়। যেভাবে মহান আল্লাহ্ বলেন: ((إِنَّهُ یَراکُمْ هُوَ وَ قَبیلُهُ مِنْ حَیْثُ لا تَرَوْنَهُم)) ‘সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে দেখে যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখ না’। [আরাফ : ২৭]
অতএব, রমজান মাস শুরু হওয়ার আগে নিজের বিষয়ে সূক্ষ্ম হিসাব-কিতাব করে নিতে হবে এবং কোন কোন গুনাহের বিষয়ে নিজেদের দূর্বলতা রয়েছে তা চিহ্নিত করে অবশিষ্ট মাসগুলোতে অন্যান্য বিষয়ের পাশাপাশি এ বিষয়ে বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
১১। জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা: জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণ করা, মহান আল্লাহ হাদিসে মে’রাজে বলেছেন: আমার কাছে রোজা ও নিরবতার মত পছন্দনীয় আর কোন ইবাদত নেই। অতএব, যদি কেউ রোজা রাখে কিন্তু সে তার জিহ্বাকে রক্ষা না করে, সে হচ্ছে ঐ ব্যক্তির মত যে নামায দাঁড়িয়েছে অথচ কোন ক্বারায়াত করছে না। আমি তাকে কিয়ামের পুরস্কার দান করবো কিন্তু ইবাদতকারীদের পুরস্কার দান করবো না।
এই রেওয়ায়েতে রোজাকে নিরবতার পাশে স্থান দান করা হয়েছে। অবশ্য রেওয়ায়েত নিরবতা বলতে এটা বোঝানো হয় নি যে, কোন কথাই যেন না বলি। বরং এর অর্থ হচ্ছে তোমরা তোমাদের জিহ্বাকে নিয়ন্ত্রণে রাখো এবং অযথা ও অর্থহীন কথাবার্তা থেকে বিরত থাকো। যেভাবে পবিত্র কুরআনে বলা হচ্ছে: ((وَ الَّذینَ هُمْ عَنِ اللَّغْوِ مُعْرِضُون)) ‘যারা অনর্থক কথাবার্তায় নির্লিপ্ত’। [সূরা মুমিনূন : ৩]
১২। হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) এবং ইমাম মাহদি (আ.) এর উসিলা দিয়ে মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।
হযরত ফাতেমা যাহরা (সা. আ.) হচ্ছেন, মহানবি (স.) এর প্রাণপ্রিয় কন্যা, আমিরুল মু’মিনীন হযরত আলী (কা.) এর স্ত্রী এবং ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আলাইহিমাস সালামের) এর মা। এই ফাতেমা (সা. আ.) এর মাধ্যমেই ইমামত নবুয়্যতের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। তাঁর মর্যাদা পবিত্র কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও মহানবি (স.) থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েতে স্পষ্ট হয়েছে।
ইমাম মাহদি (আ.) হচ্ছেন আমাদের যুগের ইমাম এবং জমিনের বুকে আল্লাহর শেষ প্রতিনিধি। রাসুল (স.) এর হাদিস অনুযায়ী যে নিজের যুগের ইমামকে না চিনে মৃত্যুবরণ করবে তার মৃত্যু হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। আর তাই অবশ্যই তার কথা স্মরণে রাখতে হবে এবং যেহেতু তিনি বর্তমানে জমিনের বুকে মহান আল্লাহর হুজ্জাত তাই তার উসিলায় মহান আল্লাহর কাছে দোয়া প্রার্থনা আমাদেরকে গন্তব্যে পৌঁছে দেবে। কারণ মহান আল্লাহ্ তাঁর বিশিষ্ট বান্দাদেরকে প্রেরণ করেছেন যাতে তারা মানবজাতিকে হেদায়েত করে তাদেরকে নিরাপদে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারেন।