বাঙ্গালী
Thursday 28th of November 2024
0
نفر 0

হযরত আলী (আ.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী

ভেতরের অলংকার সুন্দরতরো বাইরের চেয়ে জ্ঞানের সৌন্দর্য সে তো কখনোই থাকে না লুকিয়ে পুরুষের সৌন্দর্য হলো তার ব্যক্তিত্ব আর ভদ্রতায় মানুষের সৌন্দর্যের রহস্য সততা আর সত্যবাদিতায় পাঠক! উপরোক্ত ক'টি লাইন ইমাম আলী (আঃ) এর কবিতা। তাঁরি শুভ
হযরত আলী (আ.) এর পবিত্র জন্মবার্ষিকী

ভেতরের অলংকার সুন্দরতরো বাইরের চেয়ে
জ্ঞানের সৌন্দর্য সে তো কখনোই থাকে না লুকিয়ে
পুরুষের সৌন্দর্য হলো তার ব্যক্তিত্ব আর ভদ্রতায়
মানুষের সৌন্দর্যের রহস্য সততা আর সত্যবাদিতায়
পাঠক! উপরোক্ত ক'টি লাইন ইমাম আলী (আঃ) এর কবিতা। তাঁরি শুভ জন্মবার্ষিকী উপলক্ষ্যে আপনাদের সবার প্রতি রইলো আন্তরিক অভিনন্দন ও মোবারকবাদ। এ দিনটি ইরানে বাবা দিবস হিসেবে পালিত হয়। পৃথিবীতে যতো মহান মনীষীর জন্ম হয়েছে তাঁদের অন্যতম একজন হলেন ইমাম আলী (আঃ)। তাঁর এই মহত্ব, বিশালত্ব এবং ধী-শক্তি প্রমাণ করে যে ইসলাম প্রজন্মের পর প্রজন্মকে যথার্থ শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে সক্ষম। কবিতায় সৌন্দর্যের কথা বলা হয়েছে। অভ্যন্তরীণ এই সৌন্দর্য ছিল তাঁর মধ্যে অফুরন্ত। ছিল চারিত্রিক সৌন্দর্য, ছিল আচার-আচরণ, নীতি-নৈতিকতা এবং সর্বোপরি আধ্যাত্মিক সৌন্দর্য। তাঁরজ্ঞান ও ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য সমাজে সবসময় আলো বিকিরণ করেছে এবং এখনো বিশ্বব্যাপী করে যাচ্ছে। ভবিষ্যতেও যে তা অব্যাহত থাকবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
এই পৃথিবীতে বহু শক্তির আবির্ভাব ঘটেছে। সমাজে তাদের প্রভাবও পড়েছে। কিন্তু সেইসব শক্তি ইতিবাচক কোনো আদর্শ হিসেবে উপস্থাপিত হয় নি। আবার এমন অনেক ব্যক্তিত্বেরও জন্ম হয়েছে,যাঁদের নাম ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। কারণ তাঁরা মানবতার স্বার্থে নিজেদের জ্ঞান ও গুণকে কাজে লাগিয়ে সমাজে যে আলো বিলিয়ে গেছেন সেই আলো আজো অম্লান রয়েছে। মানুষ সেই আলো থেকে আজো অজ্ঞতার আঁধার দূর করছে। তেমনি জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলো বিকিরণকারী অসামান্য একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন হযরত আলী (আঃ)।
তিনিই সত্য , স্বয়ং সত্য যাঁর নিত্য সহগামী
পৃথিবীর পবিত্রতম গৃহে জন্ম নিয়ে যিনি অনন্য
যাঁর জ্ঞানের দরোজা পেরিয়ে যেতে হয় নগরে
রাসূলের জ্ঞান-ধ্যানের পবিত্র আলোয় ধন্য
যে নগর জাহেলি পৃথিবীকে দিয়েছে আলোর দিশা
শ্বাশ্বত যে আলোয় কেটে গেছে কালের অমানিশা।
খাওয়ারেযমি লিখেছেন, নবী করিম ( সা ) বলেছেন, আমার পরে আমার উম্মতের মধ্যে সবচে বড়ো জ্ঞানী হলেন আলী ইবনে আবি তালিব। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ আনসারীও বর্ণনা করেন,একদিন নবীজী উচ্চস্বরে বললেন,আমি হলাম জ্ঞান ও বিজ্ঞানের শহর আর আলী হলেন সেই শহরের দরোজা। তাই যে-ই জ্ঞান অর্জন করতে ইচ্ছুক সে যেন এই শহরের দরোজার কাছে যায়।
হযরত আলী ( আ ) যে জ্ঞানী ছিলেন তাঁর নাহজুল বালাগা-ই তার প্রমাণ। ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনের বিচিত্র সমস্যার নৈয়ায়িক সমাধান যারা চায়, সেইসব ন্যায়-নীতিবান মানুষদের জন্যে নাহজুল বালাগাহ একটি চমৎকার গাইড লাইন।
বিশিষ্ট মুসলিম মনীষী ও দার্শনিক মরহুম আল্লামা মুহাম্মাদ তাকি জাফরি আলী (আঃ) এর ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন-দয়া এবং ভালোবাসা মানুষের উন্নত স্বাভাবিক গুণ। সকল মানুষের মাঝেই এইসব গুণাবলি লক্ষ্য করা যায়। তবে সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায় ছোটোখাটো ভুলের জন্যেও ঐ ভালোবাসা শত্র"তায় পরিণত হয়। কিন্তু যেসব মানুষ উন্নত নৈতিক গুণাবলি অর্জন করেছেন,তাঁদের ক্ষেত্রে এই ভালোবাসা ব্যক্তিগত প্রবণতা বা ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে না। তাঁরা সত্যের মানদণ্ডের ভিত্তিতে ভারসাম্য রক্ষা করে চলেন। কেননা তাঁদের দৃষ্টিতে স্বভাবত বা সৃষ্টিগতভাবেই মানুষ ভালোবাসার পাত্র। এই বৈশিষ্ট্যটা ইমাম আলী ইবনে আবি তালেব (আঃ) এর সমগ্র জীবনব্যাপী লক্ষ্য করা যাবে। সিফফিনের যুদ্ধে শত্র"রা আলী ( আ ) এর সেনাদের জন্যে পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছিলো যাতে আলী (আঃ) এর সেনারা তৃষ্ণায় মারা যায়।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আলী (আঃ) এর সেনারা ব্যাপক বীর বিক্রমে যুদ্ধ করে শত্র"পক্ষকে পিছু হটতে বাধ্য করে। ফলে ফোরাতের পানির নিয়ন্ত্রণ আলী (আঃ) এর সেনাদের হাতে এসে যায়। ইমামের সঙ্গীরা তখন শত্র"দের মতোই পানি সরবরাহ তাদের জন্যে বন্ধ করে দিতে চাইলো। কিন্তু আলী (আঃ) একাজ থেকে তাঁর সেনাদের বিরত রাখলেন এবং বললেন,"আমি কখনোই এভাবে বিজয় লাভ করতে চাই না। কেননা এই বিজয়ের মধ্যে মুসলমানিত্বের কোনো চিহ্ন নেই।"
একইভাবে ইমাম আলী (আঃ) এর মাথা মুবারকে ইবনে মুলযেম নামায পড়া অবস্থায় তলোয়ার দিয়ে যখন আঘাত হেনেছিল তখনও ইমাম সবকিছুর আগে তাঁর সন্তান ইমাম হাসান (আঃ) কে বলেছিলেন তাঁর হত্যাকারীর ওপর যেন জুলুম নির্যাতন করা না হয়। এটা হলো সেই চারিত্র্যিক সৌন্দর্য , সেই ভালোবাসা,যা মহান মনীষীগণকে উন্নত এবং পূর্ণতাপ্রাপ্তির মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে।হযরত আলী (আঃ) ছিলেন সেই পূর্ণতাপ্রাপ্ত মহান মনীষীদের অন্যতম। প্রশ্ন জাগতেই পারে কী করে তিনি এইসব অসামান্য গুণাবলি অর্জন করেছেন? উত্তরটা খুবই সোজা। কেননা তিনি পরশ পাথরের সংস্পর্শে বেড়ে উঠেছেন,মানুষ হয়েছেন। আল্লাহর শেষ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) এর ঘরে বড়ো হয়েছেন যেখান থেকে ইসলামের দাওয়াত শুরু হয়েছিল। সারাটি জীবন তিনি নবীজীর সাহচর্যে ছিলেন। তাঁর সাহচর্য পেয়েই আধ্যাত্মিকতার পূর্ণতায় পৌঁছেছেন তিনি।
বর্তমান বিশ্বে জোর যার মুল্লুক তার-এরকম অবস্থা বিরাজমান। যিনি শাসক তিনি যেন আইন-কানুনের উর্ধ্বে। তাঁর ব্যাপারে যেন কোনো আইন নেই, বিচার নেই। কে করবে তার বিচার-এরকম একটি অবস্থা। অথচ আলী (আঃ) সুযোগ থাকা সত্ত্বেও কোনোদিন খেলাফতের শক্তি বা ক্ষমতাকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেন নি। একটি ঘটনার উল্লেখ করে আজকের আলোচনার পরিসমাপ্তি টানবো। হযরত আলী (আঃ) তাঁর খেলাফতকালে একদিন তাঁর বর্মটা হারিয়ে ফেলেছিলেন। যতোই খোঁজাখুঁজি করলেন পেলেন না। কিছু সময় পেরিয়ে গেল। একদিন একটি গলিতে কুফার এক খ্রিষ্টান লোকের হাতে দেখলেন তার ঐ হারানো বর্মটি। লোকটি নিকটবর্তী হতেই তিনি চিনতে পারলেন তাঁর বর্মটি। আলী (আঃ) লোকটিকে তাঁর বর্মটি ফিরিয়ে দিতে বললেন। কিন্তু খ্রিষ্টান লোকটি অস্বীকার করে বললো-এটা তারি বর্ম। ফয়সালার জন্যে দু'জনেই গেলেন শহরের কাজির কাছে।
কাজী আলী (আঃ) কে খলিফা হিসেবে কোনোরকম গুরুত্ব না দিয়ে একজন সাধারণ বাদীর মতোই দেখলেন। বাদী-বিবাদী উভয়কেই নিজ নিজ স্থানে বসতে বললেন এবং ঘটনা কী জানতে চাইলেন। আলী (আঃ) বললেন ওর হাতের ঐ বর্মটা আমার। আমি না বিক্রি করেছি না তাকে দান করেছি। তাকে ফেরত দিতে বললে সে ফেরত দিলো না। পক্ষান্তরে খ্রিষ্টান লোকটিও বললো যে বর্মটা তার। বিচারক এবার ইসলামী আইন অনুযায়ী আলী (আঃ) কে দুইজন স্বাক্ষী আনতে বললেন। আলী (আঃ) বললেন-মেকদাদ এবং আমার ছেলে হাসান স্বাক্ষী দেবে যে ঐ বর্মটা আমার। কাজী বললেন-মেকদাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য কিন্তু হাসানের নয়,কারণ হাসান আপনার সন্তান। ফলে আপনি ঐ বর্মের মালিকানা দাবি করতে পারেন না, বর্মটা তাই খ্রিষ্টান লোকটির।
আলী (আঃ) বিচারকের রায় শোনার পর কোনোরকম অভিযোগ না করে উঠে চলে গেলেন। খ্রিষ্টান লোকটি জানতো যে আলী (আঃ) তার শাসন-ক্ষমতা ব্যবহার করে নিজের অধিকার আদায় করে নিতে পারতেন,কিন্তু তিনি আদালতের শরণাপন্ন হলেন। এ বিষয়টি খ্রিষ্টান লোকটিকে ভীষণভাবে বিস্মিত করে। সে আলী (আঃ) এর পূত-পবিত্রতা এবং সততা দেখে অবিশ্বাস্যরকমভাবে উঠে দাঁড়ালো এবং আলী (আঃ) এর পেছনে ছুটলো। নিজেকে আলীর পায়ে সঁপে দিলো। আলী (আঃ) তাকে ওঠালেন এবং শান্তহতে বললেন। খ্রিষ্টান লোকটি সলজ্জভাবে আলী (আঃ) কে তাঁর বর্মটি ফেরত দিলো এবং সেখানেই ইসলাম গ্রহণ করলো। #


source : abna24
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হযরত আলী (আ.)-এর জীবনের শেষ দিনগুলো
ইসলামী ঐক্য : গুরুত্ব ও তাৎপর্য
রমজানের ফজিলত ও গুরুত্ব
কোরবানি ঈদ সুস্থ থাকতে করণীয়
আল্লাহ্‌র ন্যায়পরায়ণতা
ইসলাম এবং আধ্যাত্মিকতা
বাতিল ওহাবী মতবাদ এবং তার স্বরূপ।
ইমাম মাহদী (আ.) কোথায় জন্মগ্রহণ ...
কোরআনের মুহকাম বা সুস্পষ্ট ও ...
পবিত্র কোরআনের সঙ্গে আহলে বাইতের ...

 
user comment