সত্য ও মিথ্যার লড়াই চলছে মানব-সভ্যতার সেই সূচনা-লগ্ন থেকেই। মূর্তি পূজারী মুশরিক ও কাফিররা ইসলামের ক্রমবর্ধমান সমৃদ্ধি, বিকাশ ও জনপ্রিয়তা দেখতে পেয়ে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)'র পবিত্র অস্তিত্ব এবং ইসলাম ধর্ম নির্মূলের আশায় প্রতিদিনই নানা ষড়যন্ত্র করত।
সেই যুগেও যেমন শত্রুরা ইসলামের অগ্রযাত্রায় ছিল আতঙ্কিত এবং এ নিয়ে ইতিহাসে তাদের দূর্বলতা বার বার প্রমাণিত হয়েছে, তেম্নি এ যুগেও ইসলামের শত্রুরা সর্বশক্তি নিয়ে এ পবিত্র ধর্মের মহাপুরুষের চরিত্র হননের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে যাতে ইসলামকে নির্মূল করা যায়।
ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "মুসলিম উম্মাহ ও ইসলামের শত্রুরা আজ ইসলামী গণ-জাগরণের প্রবল জোয়ার দেখে পিছিয়ে পড়ার গ্লানি অনুভব করছে, তাই তারা পাগলের মত আচরণ করছে।"
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মহামানব। মানুষের কুসংস্কার ও অজ্ঞতার আঁধার দূর করার ক্ষেত্রে অনন্য সাফল্যের অধিকারী এই মহামানব ছিলেন সাম্য, দয়া ও ক্ষমার সর্বোচ্চ মানবীয় প্রতীক। তিনি সক্ষম হয়েছিলেন মানুষের অন্তরগুলোকে ঘনিষ্ঠ করতে। তিনি মানুষের মধ্যে ধর্মীয় সম্পর্ক ও চিন্তাগত ভিত্তিগুলোকে মজবুত করেছিলেন, ফলে মুসলমানরা আজ তাঁর ইন্তেকালের ১৪০০ বছর পরও তাঁকে ঘিরে ঐক্যবদ্ধ এবং একই অঙ্গীকারে আবদ্ধ।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মনে করেন, "বিশ্বনবী (সা.)'র পবিত্র অস্তিত্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিভিন্ন চিন্তাধারা বা আকীদা-বিশ্বাস ও সব মুসলিম জাতিগুলোর ভালবাসার সম্মিলন-বিন্দু বা মিলন-মেলা।"
তিনি বিশ্বনবী (সা.)'র মর্যাদা প্রসঙ্গে বলেছেন, " বিশ্বনবী(সা.)'র মধ্যে সব নবী-রাসূল ও আওলিয়ার গুণের সমাবেশ ঘটেছে, তিনি উচ্চতর সেইসব গুণাবলীর পরিপূর্ণ ও পরিপক্ক সংস্করণ-যেসব গুণ যুগে যুগে নবী-রাসূল ও আউলিয়ার মধ্যে দেখা গেছে।"
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্প্রতি আমেরিকায় বিশ্বনবী (সা.)'র প্রতি অবমাননাকর ছায়াছবি নির্মাণকে এই মহামানব তথা রহমত, সম্মান ও মর্যাদার নবীর প্রতি সাম্রাজ্যবাদী শক্তি ও তাদের অনুচরদের গভীর বিদ্বেষের প্রমাণ বলে মনে করেন। আর তিনি এ ব্যাপারে পশ্চিমা সরকারগুলোর উদাসীনতা ও নির্বিকার অবস্থানকে মুসলিম বিশ্বের জন্য কল্যাণকর মনে করেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "যারা সবচেয়ে দেরিতে সত্যকে বিশ্বাস করেন এমন সবাই বুঝতে পেরেছেন যে, সত্য ও মিথ্যার লড়াইগুলো কোন্ অক্ষ-কেন্দ্রীক, বোঝা গেল মূল অক্ষটি হল ইসলাম ও শেষ নবী (সা.)'র অস্তিত্ব।"
পরিহাসের ব্যাপার হল, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলো একদিকে ইসলাম-অবমাননার এইসব পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছে না এবং এই মহা-অপরাধের ব্যাপারে তাদের দায়িত্ব পালন করছে না, অন্যদিকে নিজেরাও এই অবমাননার কাজে জড়িত নয় বলে দাবী করছে।
হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী মনে করেন মার্কিন ও ইউরোপীয় সরকারগুলোকে বাস্তবে এটা প্রমাণ করতে হবে যে, এই অপরাধে তারা জড়িত নয়, কেবল মুখে অস্বীকার করলেই হবে না। তিনি বলেছেন, "অবশ্য পশ্চিমারা এইসব আগ্রাসনের পথ বন্ধ করবে না, আর এর কারণও স্পষ্ট; ইসলাম ও ইসলামের পবিত্রতার প্রতি অবমাননার পেছনে পশ্চিমা মাধ্যম বা মহলগুলোর বিশেষ উদ্দেশ্য রয়েছে। বৃহত্তর ইসলামী জাগরণের জোয়ার দেখেই তারা এ ধরনের উন্মাদসুলভ আচরণ করছে।"
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, "পশ্চিমা সরকারগুলো বলছে, আমরা বাক-স্বাধীনতার প্রতি শ্রদ্ধাশীল বলে এ ধরনের অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের ততপরতা বন্ধ করতে পারি না! বিশ্বের কে এই কথা বিশ্বাস করবে? কারণ, এইসব দেশ বিভিন্ন বিষয়ে বাক-স্বাধীনতার লাল-সীমানা নির্ধারণ করে রেখেছে এবং কেউ ওইসব সীমানা লঙ্ঘন করতে গেলেই তাদের সঙ্গে কঠোরতম ও সহিংস আচরণ করে ওই সীমানাগুলো রক্ষা করে তারা; অথচ কেবল ইসলামের পবিত্রতার প্রতি অবমাননার ক্ষেত্রেই তারা বাক-স্বাধীনতা রক্ষা করাকে জরুরি মনে করে।"
তিনি স্মরণ করিয়ে দেন যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান নাতসীদের হাতে ইহুদি-নিধনের কথিত দাবী যা খুবই সন্দেহজনক ও অপ্রমাণিত সে বিষয়ে এবং সমকামীতার মত অনাচারের বিরুদ্ধে পাশ্চাত্য ও ইউরোপে প্রশ্ন তোলাও নিষেধ।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আরো বলেছেন, "আমেরিকায় কেউ যদি সমাজতত্ত্ব ও মনোস্তত্ত্বের আলোকে সমকামিতার বিরুদ্ধে কিছু লিখতে চান ও তা ছাপাতে বা প্রকাশ করতে চান তাকে তা করতে দেয়া হবে না। তাই তারা বাক-স্বাধীনতা মানতে বাধ্য- এ দাবীর কি কোনো ভিত্তি আছে? আসলে এখানে ইহুদিবাদীদের নোংরা রাজনীতি সক্রিয়। এইসব বিষয়ে বাক-স্বাধীনতার কোনো বালাই নেই। কেউ সাহসই করে না ও কারো অধিকার নেই এইসব নোংরা নীতির বিরুদ্ধে কিংবা হলোকাস্টের বিরুদ্ধে কিছু বলার বা প্রকাশ করার! অথচ ইসলাম অবমাননা ও মুসলিম বিশ্বের যুব সমাজের কাছে ইসলামের পবিত্রতাগুলোকে হাল্কাভাবে তুলে ধরতে চাইলে তার অনুমতি রয়েছে এবং তা পাশ্চাত্যে বৈধ!"
আজ বিশ্বজনমত মার্কিন ও ইহুদিবাদী নীতির বিরোধী। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন কেবল মুসলমানরাই নয় ন্যায়বিচারকামী ও মুক্তিকামী সব মানুষই সাম্রাজ্যবাদীদের নানা জুলুম এবং ঐশী ধর্মগুলোর অবমাননার ব্যাপারে ক্ষুব্ধ। এইসব জুলুম ও অবমাননার কারণে তারা এখন পাশ্চাত্য ও ইসরাইলকে আগের চেয়েও বেশি ঘৃণা করছে। অন্যদিকে এইসব অবমাননা মুসলমানদেরকে আরো বেশি ঐক্যবদ্ধ করছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা বলেছেন, "আপনারা আজ ইসলামী দুনিয়ার দিকে তাকিয়ে দেখুন সেখানে কী হচ্ছে? মুসলিম জাতিগুলো আজ কতটা ফুটন্ত ও টগবগে হয়ে উঠেছে তথা ক্ষোভ ও প্রতিবাদ দেখাচ্ছে। তাদের বেশিরভাগই (রাসূল-অবমাননার) ওই ছায়াছবিটি দেখেননি। তারা শুধু এটুকুই জেনেছে যে, রাসূল (সা.) ও ইসলামের প্রতি অবমাননার একটি ঘটনা ঘটেছে। মুসলিম জাতিগুলো ও জনগণ কোনো ধরনের উস্কানী ছাড়াই স্বতঃস্ফূর্তভাবে রাসূল (সা.)'র প্রতি গভীর ভালবাসা ও শ্রদ্ধা নিয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন। বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বিস্ময়কর। আরব দেশগুলোতে বড় বড় মূর্তি, দাম্ভিক শক্তি ও বড় ধরনের তাগুতি তথা খোদাদ্রোহী ও জালেম শাসকগোষ্ঠী ক্ষমতাসীন রয়েছে এবং এরা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর বিরুদ্ধে নিয়মিত ষড়যন্ত্রের নানা নীল-নক্সা বানিয়ে চলেছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও আরব দেশগুলোর জনগণ প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ইউরোপ ও আমেরিকাসহ অমুসলিম বহু দেশে মুসলমানরা ও অমুসলমানরাও ময়দানে এসেছেন প্রতিবাদ জানাতে। আর এ থেকেই ইসলামী দুনিয়ার ক্ষমতা ফুটে উঠেছে।"
শিয়া-সুন্নি নির্বিশেষে সব মুসলমানই আজ রাসূল (সা.)'র অবমাননার বিরুদ্ধে আন্তরিক চিত্তে প্রতিবাদ করছে, কারণ, মহানবী (সা.) সব মাজহাবের কাছেই ইসলামী আদর্শের মূল কেন্দ্রবিন্দু।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন, শত্রুরা মুসলিম উম্মাহর ক্ষোভ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিভেদকামী ষড়যন্ত্র করছে, কিন্তু তারা ভুলে গেছে যে বিশ্বনবী (সা.) মুসলিম মাজহাবগুলোর অভিন্ন নীতির অন্যতম প্রধান অক্ষ। বিশ্বনবী (সা.)'র প্রশংসা করে তিনি বলেছেন, "মহানবী (সা.) যেন বিশ্ব জগতের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্র। ... তিনি একাই বহু সৌরজগত নিয়ে গঠিত ছায়াপথের মত এবং তার মধ্যে রয়েছে হাজারো গুণের সমন্বিত প্রজ্জ্বোল উপস্থিতি। তাঁর মধ্যে সম্মিলিত হয়েছিল জ্ঞানের পাশাপাশি নৈতিকতা, প্রজ্ঞার সঙ্গে রাষ্ট্রনায়কত্বের সমাহার, মিলন ঘটেছিল আল্লাহর ইবাদতের সঙ্গে সৃষ্টির সেবার গুণ, জিহাদের সঙ্গে দয়ার সংমিশ্রণ, খোদা-প্রেমের সঙ্গে খোদার সৃষ্টির প্রেমের গুণ, সম্মানের সঙ্গে মিশে ছিল নম্রতার ও নিজেকে তুচ্ছ ভাবার গুণ, হালনাগাদের দক্ষতার সঙ্গে দূরদর্শিতার, মানুষের সঙ্গে আন্তরিকতার পাশাপাশি সূক্ষ্ম রাজনৈতিক সক্ষমতা, আল্লাহর স্মরণে ডুবে থাকা মন নিয়েও মানুষের প্রতি ভালবাসায় ও শান্তি প্রতিষ্ঠায়ও ছিলেন সবচেয়ে অগ্রণী এবং তাঁর মধ্যে সমন্বয় ঘটেছিল ইহকাল ও পরকালের। বিশ্বনবী (সা.)'র মধ্যে উচ্চতর খোদায়ী লক্ষ্যগুলোর পাশাপাশি আকর্ষণীয় মানবীয় লক্ষ্যগুলোও ছিল সমন্বিত। তিনি ছিলেন এমনই পরিপূর্ণ বা পূর্ণাঙ্গ আদর্শ যে আল্লাহ তাঁর চেয়ে পরিপূর্ণ কোনো সৃষ্টি তৈরি করেননি। বিশ্বনবী (সা.) ছিলেন সুসংবাদদাতা। গোটা মানবজাতিকে তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন আল্লাহর দিকে এবং মহানবী (সা.) ছিলেন মানুষের জন্য আলোর বন্যা ছড়িয়ে দেয়ার অত্যুজ্জ্বল মহা-প্রদীপ।" (সূত্র:ইন্টারনেট)