দুঃখ ও কষ্টবিহীন মানব জীবন কল্পনা মাত্র। অন্য কথায় দুঃখ-কষ্ট মানব জীবনের অন্যতম ও অবিচ্ছেদ্য অংশ। পৃথিবীতে বড় ধরনের কোনো সাফল্য লাভের জন্য কষ্ট-সহিষ্ণুতা ও পরিশ্রম অপরিহার্য। বিনা পরিশ্রমে যেমন পাহাড়ের চূড়ায় উপনীত হতে পারেন না পর্বতারোহী তেমনি কষ্ট করা বা পরিশ্রম ছাড়া জীবনের কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যগুলো অর্জন করা কারো পক্ষে সম্ভব নয় । অনেক মানুষ ব্যাপক দুঃখ-কষ্ট বা প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হন বুদ্ধিদীপ্ত সংগ্রামের মাধ্যমে। আবার অনেকে সামান্য দুঃখ-কষ্টেই ভেঙ্গে পড়েন।
সংকট মোকাবেলার অন্যতম এবং মোক্ষম পন্থা হল, সংকটের প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে খুব ভালভাবে জ্ঞান অর্জন করা। যেমন, দুজন প্রতিদ্বন্দ্বী খেলোয়াড় প্রতিযোগিতায় বিজয়ী হওয়ার জন্য পরস্পরের ইতিবাচক ও নেতিবাচক বা দূর্বল দিকগুলো সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করেন।
সংকট মোকাবেলার জন্য এর মূল কারণ বা মূল চালিকা শক্তিগুলো সম্পর্কে ধারণা রাখাও জরুরি। যেমন, দাঁতে ব্যাথা দেখা দিলে এর প্রতিকারের সবচেয়ে ভাল উপায় হল ব্যাথার মূল কারণ উদঘাটন করে ওই কারণ দূর করার চেষ্টা করা। প্রথমে প্রতিরোধের প্রাথমিক ব্যবস্থা অনুযায়ী দাঁতে লেগে থাকা ময়লা দূর করতে হবে এবং ময়লা জমে থাকার ফলে সৃষ্ট গর্তগুলো ভরাট করতে হবে। কিন্তু দাঁতের ক্ষয় রোগ যদি স্নায়ু পর্যন্ত পৌঁছে যায় তাহলে ব্যথা দূর করার জন্য ক্ষয়কারী চালিকাশক্তিগুলোকে প্রতিহত করার পাশাপাশি দাঁতের সাথে স্নায়ুর সংযোগও ছিন্ন করতে হবে, আর তা না করলে দাঁত নষ্ট হবার পর মাড়িও নষ্ট হতে শুরু করবে।
অন্য কিছু দুঃখ-বেদনা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভর করে। যেমন, যারা টাকা-পয়সা খুব ভালবাসেন তারা কিছু টাকা হারালে খুবই দুঃখিত হয়ে পড়েন। অথচ অন্য এক ব্যক্তি ওই অর্থের সমপরিমাণ অর্থ হারানোর কারণে কম দুঃখিত হন। কিংবা কোনো কোনো মানুষ খুব অল্প টাকা-পয়সা বা সম্পদে তুষ্ট থাকেন, আবার অন্য অনেক মানুষ ওই পরিমান অর্থের দ্বিগুণ অর্থ খর-পোষ ও বিনোদনের জন্য ব্যায় করা সত্ত্বেও জীবন সম্পর্কে সুখী নন। তাই অপেক্ষাকৃত বেশি দুঃখ পাওয়ার পেছনের মনস্তাত্বিক কারণ দূর করা হলে দুঃখের মাত্রা কমানো বা পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব। পবিত্র কোরআনের সুরা ইউনুসে মহান আল্লাহ বলেছেন,
أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ [١٠:٦٢]
''মনে রেখ যারা আল্লাহর বন্ধু, তাদের না কোন ভয় ভীতি আছে, না তারা চিন্তান্বিত হবে।"
দুঃখ-কষ্টের ব্যাপারে ওলি-আওলিয়াদের দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই তারা কখনও ভীত হন না ও দুঃখিত বা চিন্তান্বিত হন না।
আসলে এই মাটির পৃথিবীতে বস্তুগত ও প্রাকৃতিক কারণে সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট এড়ানো সম্ভব নয়। যেমন, বার্ধক্য বা অসুস্থতার ফলে সৃষ্ট দুঃখ-কষ্ট এড়ানো সম্ভব নয়। তবে বস্তুগত কারণের সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং ভুল মানসিক দৃষ্টিভঙ্গির সাথে সম্পর্কিত- এমন সমস্যাগুলো আত্মসংশোধনের মাধ্যমে কমিয়ে ফেলা সম্ভব।
মনে রাখতে হবে কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষকে শক্তিশালী করে ও তার প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের দেহকে শক্তিশালী করে, আবার কোনো কোনো দুঃখ-কষ্ট মানুষের আত্মা বা আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে শক্তিশালী করে।
স্কুলের একজন শিক্ষক তার ছাত্রদের বোঝাচ্ছিলেন যে রেশমের কীট নিজ চেষ্টায় রেশমের গুটি থেকে বেরিয়ে আসে প্রজাপতি হয়ে। তার প্রচেষ্টার মাধ্যমেই সে শক্তি অর্জন করে। তাই ওই কীটকে সাহায্য করতে যাওয়া কারো উচিত নয়। শিক্ষকের এই বক্তব্য শোনার পরও এক ছাত্র শিক্ষকের অনুপস্থিতিতে দয়া দেখিয়ে একটি রেশম কীটকে গুটি থেকে বের করে দেয়। প্রজাপতি আকারে কীট বেরিয়ে এল। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই সে মারা গেল। শিক্ষক ক্লাসে ফিরে এলে ছাত্রটি রেশম কীটের মৃত্যুর ঘটনা বলে এর কারণ জানতে চাইল। শিক্ষক বললেন, বেরিয়ে আসার জন্য রেশম কীট নিজে যে চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালায় তা হচ্ছে এমন এক অনুশীলনের মত যা তার পাখা ও পশমকে শক্তিশালী করে এবং এর মাধ্যমে সে প্রকৃতিতে টিকে থাকার মত শক্তি সঞ্চয় করে। কিন্তু তুমি যেহেতু তাকে নিজ প্রচেষ্টায় শক্তিশালী হওয়ার সুযোগ দাওনি, তাই সে দূর্বল রয়ে গেছে এবং বেশিক্ষণ বেঁচে থাকতে পারেনি।
ওসমান বিন হানিফের কাছে লেখা চিঠিতে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, "মনে রেখ মরুভূমি বা শুস্ক প্রান্তরের গাছগুলোর কাঠ বেশি শক্ত হয়, অন্যদিকে জলাশয়ের বা নদীর পাশে থাকা গাছগুলোর কাঠ নরম হয়। শুস্ক প্রান্তরের গাছগুলো বৃষ্টির পানির মাধ্যমে শক্তি সঞ্চয় করে এবং সেসবের কাঠ বেশিক্ষণ জ্বলে ও বেশি আগুন দেয়। "
এখানে আমিরুল মুমিনিন আলী (আঃ) এট বোঝাতে চেয়েছেন যে কম পানির মধ্যে কষ্ট করে বড় হওয়া গাছ অন্য গাছগুলোর চেয়ে বেশি শক্ত বা মজবুত হয়। তিনি আরো বলেছেন, "মহান আল্লাহ তার বান্দাদেরকে নানা ধরণের কঠিন দুঃখ-কষ্টের মধ্য দিয়ে এবং বিভিন্ন দায়িত্ব দিয়ে তাদের সংগ্রামী ও যোগ্য হিসেবে গড়ে তোলেন। ফলে আরামপ্রিয় বা সুবিধাবাদী লোকদের বিপরীতে এ ধরনের মানুষ কখনও অহংকারী হন না বরং আল্লাহর প্রতি সব সময় নতজানু থাকেন তারা। ওইসব দুঃখ-কষ্ট ও বেদনার মধ্য দিয়েই তাদের ওপর আল্লাহর রহমত বা অনুগ্রহ বিস্তৃত হয়। "
অবশ্য আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) সংকটের কাছে মাথা নত করতে বলেছেন এমন ভাবাটা হবে ভুল । বরং সংকটের মোকাবেলায় দৃঢ়তা এবং ব্যাপক চেষ্টা-প্রচেষ্টা চালানোর অনেক দৃষ্টান্ত দেখা যায় তাঁর মহান জীবনে। তিনি কখনও ধৈর্যহীন ও নিরাশ হতেন না। ধৈর্য্যের ও সংগ্রামের ফল সাধারণতঃ খুবই মিষ্টি হয়ে থাকে। কিন্তু অল্প দুঃখেই ভেঙ্গে পড়া মানুষ এ সুমিষ্ট ফলের স্বাদ পায় না । বরং তার হা-হুতাশ ও অধৈর্য্য তাকে অকাল- বৃদ্ধ করে তুলে।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন," দুঃখ লালন মানুষের বার্ধক্য টেনের আনার চালিকা শক্তিগুলোর অর্ধেক বা অর্ধাংশ।" কিন্তু যারা পৃথিবী বা ইহকালীন জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন এবং দুঃখ -বিপদে ভেঙ্গে পড়ে না তারা কখনও হতাশায় বা দুঃখে কাতর হয়ে পড়েন না। কারণ, তারা জানেন, সুখ ও দুঃখ বা সাফল্য ও ব্যর্থতা দুইই ইহকালীন জীবনের অপরিহার্য অংশ।
আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " যারা ইহকালীন জীবনের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত তারা কখনও বিপদ-আপদ ও দুঃখ-কষ্টের জন্য যাতনা ভোগ করেন না।"
পর্ব-২
গত পর্বে আমরা বলেছিলাম সমস্যা মোকাবেলার জন্য সমস্যার প্রকৃতি সম্পর্কে যথেষ্ট ধারণা থাকতে হবে। এ ছাড়াও কোনো কোনো সংকট বাস্তবে সংকট না হওয়া সত্ত্বেও নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গির কারণে সেগুলোকে সংকট বলে ধরে নেন অনেকেই। তাই সংকট মোকাবেলার জন্য ওই বিষয়ে যথেষ্ট ধারণা অর্জন ছাড়াও নিজেকে জানা ও নিজের বিভিন্ন যোগ্যতা বা প্রতিভা সম্পর্কে আত্মবিশ্বাস এবং দৃঢ় সংকল্প থাকাও জরুরি। যারা নিজেকে চেনেন না ও নিজেকে পুরোপুরো অযোগ্য মনে করেন তারা সংকট মোকাবেলায় ব্যর্থ হন। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ)'র ভাষায়-" যে নিজের মূল্য বোঝে না, হতভাগ্য হওয়াই তার পরিণতি। "
তবে অহংকার ও আত্মবিশ্বাসের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। প্রকৃত যোগ্যতা সম্পর্কে বিশ্বাসই হল আত্মবিশ্বাস। অন্যদিকে বাস্তব বা প্রকৃত যোগ্যতার চেয়েও নিজেকে বেশি যোগ্য হিসেবে তুলে ধরা হল অহংকার।
আত্মবিশ্বাস কোনো ব্যক্তি ও সমাজের অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি। আত্মবিশ্বাসের অভাবেই কোনো ব্যক্তি, সমাজ বা জাতি সমস্যার মোকাবেলায় দূর্বলতা দেখায়। ফলে আত্মবিশ্বাসহীন ওইসব ব্যক্তি বা সমাজ কিংবা জাতি হয়ে পড়ে পর-নির্ভর ও অন্যের সিদ্ধান্তের শৃংখলে বন্দি।
মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা ও আত্মবিশ্বাস, এ দুটি বিষয় সাংঘর্ষিক নয়। মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করা বলতে হাত-পা গুটিয়ে ঘরে বসে থাকাকে বোঝায় না। তাওয়াক্কুল বা মহান আল্লাহর ওপর ভরসার অর্থ হল, যে কাজ যেভাবে করা উচিত সেভাবে সম্পন্ন করার পাশাপাশি আল্লাহর সাহায্য চাওয়া। অন্য কথায় তাওয়াক্কুল চেষ্টা প্রচেষ্টার পরিপূরক মাত্র, বিকল্প নয়। তদ্রুপ সমস্যা মোকাবেলার ক্ষেত্রেও এর প্রকৃতি ও নানা দিক সম্পর্কে ব্যাপক ধারণা অর্জন করে দৃঢ়তা নিয়ে প্রতিরোধে এগিয়ে যাওয়ার পরই আল্লাহর সাহায্য নেমে আসে।
মহাপুরুষদের জীবনের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, ইস্পাত কঠিন মনোবল, দৃঢ়-সংকল্প বা অবিচলতা নিয়ে সংগ্রাম, কষ্ট সহিষ্ণুতা বা ধৈর্য্য- এসবই তাদেরকে সম্মান ও মর্যাদা এনে দিয়েছে। আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) এ সম্পর্কে বলেছেন, "কষ্ট সহিষ্ণু বা ধৈর্যশীল মানুষ বিজয় থেকে বঞ্চিত হন না, দেরিতে হলেও তার বিজয় অনিবার্য।" তিনি আরো বলেছেন, "আল্লাহ কোনো জাতিকেই সংশোধন করেন না যতক্ষণ না সেই জাতি নানা পরীক্ষা ও কষ্ট সহ্য করে।"
তাই এটা স্পষ্ট, মানুষের জীবনে দুঃখ-কষ্ট ও সংকট কল্যাণবিহীন বা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়। মহান আল্লাহ মানুষকে পরীক্ষা করা ও প্রতিভার বিকাশ ঘটানোর জন্য নানা দুঃখ-কষ্টে ফেলেন। আর এ জন্যই মহান আল্লাহ নবী-রাসূল এবং অলি-আওলিয়াদের বিভিন্ন কঠিন সংকটের মধ্যে ফেলে তাদের বহুমুখি যোগ্যতার বিকাশ ঘটিয়েছেন। মানসিক ও আধ্যাত্মিক সংকটও এইসব পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম।
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) নিজ যুগের জালেম ও তাগুতি শাসক নমরুদের সৃষ্ট অনেক সংকট মোকাবেলা করেছেন। তদ্রুপ হযরত মূসা (আঃ) ফেরাউনের ও হযরত ঈসা (আঃ) বহু কুচক্রীর সৃষ্ট অনেক সংকটের যাতন সহ্য করেছেন। একই কথা বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত সম্পর্কেও প্রযোজ্য।
সুরা আলে ইমরানের ১৪৬ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, "আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুসারী হয়ে জেহাদ করেছে; আল্লাহর পথে সংগ্রাম করতে গিয়ে তাদের কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও তারা হেরে যায়নি, ক্লান্ত হয়নি, নিরুৎসাহিত হয়নি বা দমেও যায়নি। আর যারা ধৈর্য ধারণ করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।"
ধৈর্য হচ্ছে কষ্টের তীব্র যাতনা সহ্য করা, অসহ বেদনার চাপেও ভেঙ্গে না পড়া বা অন্যায়ের কাছে নতি স্বীকার না করা।
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, "কোনো নবী আমার মত উৎপীড়িত হননি।" শত্রুরা তাঁর মাথার ওপর ছাই ফেলেছে, যুদ্ধের ময়দানে শত্রুর তরবারির আঘাতে মহানবী (সাঃ)'র পবিত্র চেহারা হয়েছে রক্তাক্ত ও ভেঙ্গে গেছে দান্দান মোবারক, কিন্তু ধৈর্য হারাননি কখনও। বিশ্বনবী (সাঃ)'র সাহাবিরা প্রাণপ্রিয় রসূলের ওপর শত্রুদের নির্যাতন ও নিপীড়নের তীব্রতা দেখে বলেছেন, " আপনি তাদেরকে অভিশাপ দিন যাতে আল্লাহর অভিশাপ বা কঠোর শাস্তি তাদের ওপর নেমে আসে। "
জবাবে তিনি বলেছেন, " মানুষকে অভিশাপ দেয়ার জন্য আমার আমাকে নবী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি, বরং তাদেরকে মহান আল্লাহর দিকে আহ্বান জানানো ও তাঁর অনুগ্রহের দিকে পরিচালনার জন্যই আমাকে রসূল করা হয়েছে। মানুষের জন্য আল্লাহ রহমত বা অনুগ্রহের মাধ্যম হওয়ার জন্যই আমাকে রসূল করা হয়েছে, আল্লাহ রহমত থেকে মানুষকে দূর করার মাধ্যম হওয়ার জন্য নয়। হে আল্লাহ, তুমি আমার জাতিকে সুপথ দেখাও, কারণ, তারা বুঝতে পারছে না। " অবরোধ, যুদ্ধ ও অন্য অনেক সংকটের মোকাবেলায় অবিচল থাকার ফলে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী হয়েছিলেন বিশ্বনবী (সাঃ)। তাঁর দৃঢ়তা ও মহানুভবতায় প্রভাবিত হয়ে বহু মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে। মহানবী (সাঃ) ও তাঁর সঙ্গীরা ধৈর্য, দৃঢ়তা বা অবিচলতা ও মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করেছিলেন বলেই বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইসলাম ধর্ম ছড়িয়ে পড়া সহজ হয়েছিল।
তাই সংকট মোকাবেলার জন্য দৃঢ়তা বা অবিচলতাও জরুরি। যাদের সংকল্প দূর্বল তারা সমস্যা ও কষ্ট এড়িয়ে যেতে চায়, ফলে সংকট কাটিয়ে ওঠার ভাগ্য তাদের হয় না। বিশ্বনবী (সাঃ)'র ইস্পাত-কঠিন সংকল্প প্রসঙ্গে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " তিনি কখনও এক পাও পিছু হটেননি এবং তাঁর সংকল্প কখনও দূর্বল হয়নি।"
দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষ সমস্যা ও বিপদগুলোকে সম্ভাবনায় পরিণত করেন এবং সেগুলো হয়ে পড়ে তার সাফল্যের সিড়ি। অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিয়ে তা থেকে শিক্ষা নিলে সমস্যা মোকাবেলা করা সহজ হয়ে পড়ে। সব সমস্যা বা বিপদ দূর করা কখনও সম্ভব নয়, কিন্তু সমস্যার মোকাবেলায় দৃঢ়তা সমস্যার মন্দ প্রভাব বা ক্ষতি থেকে নিরাপদ রাখে। অন্যদের সমস্যার দিকে দৃষ্টি দিলে মনে এ সান্তনা জন্ম নেয় যে সমস্যা কেবল কোনো এক ব্যক্তির জন্য সৃষ্টি হয়নি, বিশ্বের বহু মানুষই সমস্যায় আক্রান্ত। আলী (আঃ) কোনো এক ব্যক্তির মৃত্যুতে ওই গোত্রের লোকদের সান্তনা দিয়ে বলেছেন, " মৃত্যু কেবল তোমাদেরকে দিয়ে শুরু হয়নি এবং কেবল তোমাদেরকে দিয়েই শেষ হবে না।" দুঃখ ও বিপদের মোকাবেলায় নবী-রাসূলদের ধৈর্য ও অবিচলতা সব যুগের মানুষের জন্যই আদর্শ। কষ্ট ও সুখ এবং পরাজয় ও সাফল্য পরস্পর হাত ধরে চলে পালাক্রমে। এ প্রসঙ্গে হযরত আলী (আঃ) বলেছেন, " মানুষের দিন দু'টি। একদিন সে লাভবান হয়, অন্যদিন সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লাভের দিনে অহংকারী হয়ো না, আর ক্ষতির দিনে ধৈর্য ধরবে।"
(নাহজুল বালাঘা, হেকমত-৩৫৭ ** প্রগুক্ত- ৩৯৬)