আবু আবদিল্লাহ (আ.)-এর সঙ্গী-সাথিরা মর্যাদার আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আছেন। তাঁরা সকল মানুষের জীবনের জন্য নিজেদেরকে আদর্শ হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং তাঁদের পবিত্র নামসমূহের স্মরণ যে কোন সমাবেশকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তোলে। তাঁদের মহত্ত্ব এবং শ্রেষ্ঠত্বের পরিচয় দানে মুহররমের নবম দিবসের আসরের সময়ে ইমামের ভাষণই যথেষ্ট,যেখানে তিনি বলেছেন : ‘আল্লাহর শুকরিয়া আদায় এবং প্রশংসার পর আমি বলছি,নিশ্চয় আমার সঙ্গী-সাথিদের থেকে বিশ্বস্ত এবং শ্রেষ্ঠ কোন সাথি আমি দেখিনি এবং আমার পরিবারের চেয়ে উত্তম দয়ালু কোন পরিবার দেখিনি। আল্লাহ তা‘আলা আমার পক্ষ থেকে তোমাদেরকে উত্তম পুরস্কার দেবেন।’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৪ তম খণ্ড, ৩৫তম অধ্যায়)
কোন কোন যিয়ারতে ইমাম হোসাইনের সঙ্গী-সাথিদের উদ্দেশে বলা হয়েছে : ‘আপনারা ইহকাল এবং পরকালে শহীদদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ এবং অগ্রগামী।’(কামিলুয যিয়ারত, ৭৯ পরিচ্ছেদ, পৃ. ১৯৬) ইমাম সাদিক (আ.) থেকে বর্ণিত যিয়ারতের কিছু অংশে এসেছে- ‘আপনারা আল্লাহর নির্বাচিত ব্যক্তিবর্গ,আল্লাহ আপনাদেরকে আবু আবদিল্লাহর জন্য নির্ধারণ করেছেন।’(কামিলুয যিয়ারত, ৭৯ পরিচ্ছেদ, পৃ. ১৯৬) ইমামের সাথিদের সম্পর্কে خاصة الله (আল্লাহর বিশিষ্ট ব্যক্তিরা) শব্দটির ব্যবহার তাঁদের উচ্চ মর্যাদার নির্দেশক।
আবু আবদিল্লাহর জন্য উৎসর্গিত তাঁর সঙ্গী-সাথিদের জীবনী অধ্যয়ন থেকে বোঝা যায় যে,যদিও তাঁদের সকলেরই জীবনের শেষ পরিণতি সুন্দর ও মঙ্গলময় হয়েছিল অর্থাৎ তাঁরা সকলেই সর্বোচ্চ সম্মান ও মর্যাদা লাভ করেছিলেন,কিন্তু ইমামের বিপ্লবের প্রথমদিকে প্রেমাসক্তি,সংকল্প ও ইমামের সাহচর্যের দৃষ্টিতে সবার অবস্থা এক ছিল না। কেননা,ইমামের সঙ্গীদের জীবনীর এই দিকটা পর্যালোচনা করলে অনেক উপকারী এবং গঠনমূলক তথ্য পাওয়া যাবে। আমরা খুবই সংক্ষিপ্ত আকারে ইমামের কয়েকজন সঙ্গীর সৌভাগ্যপূর্ণ জীবনের কিছু পাতা উল্টে দেখব যেন তাঁদের জীবনের চড়াই-উৎরাই থেকে উপকৃত হতে ও শিক্ষা নিতে পারি।
হুর বিন ইয়াযীদ
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কাফেলা কয়েকটি গন্তব্য অতিক্রম করে ‘শারাফে’ পৌঁছল। তখন হুর বিন ইয়াযীদ বিপুল সংখ্যক সৈন্য নিয়ে ইমামের গতিরোধ করলেন। কেননা,এ উদ্দেশ্যেই তিনি প্রেরিত হয়েছিলেন। হৃদয়বান ইমাম পথের ধুলায় ধুসরিত,ক্লান্ত-শ্রান্ত ও পিপাসার্ত শত্রুবাহিনীকে দেখে নিজের সহচরদেরকে তাদের এবং তাদের ঘোড়াগুলোকে পানি পান করানোর আদেশ দিলেন। আর ইমামের সহচররাও তাঁর আদেশ অনুযায়ী কাজ করলেন। একদিকে ঐ বাহিনীর লোকদের পানি পান করানো হলো অন্যদিকে পাত্রসমূহ পানি পূর্ণ করে ঘোড়াগুলোর সামনে রাখা হলো। হুর বাহিনীর একজন বর্ণনা করেছে : “আমি প্রচণ্ড তৃষ্ণা এবং ক্লান্তির কারণে সবার পরে সৈন্যদের নিকট পৌঁছলাম। ইমামের সঙ্গী-সাথিরা আমাদের সৈন্যবাহিনীকে পানি পান করানোয় ব্যস্ত থাকায় কেউ আমার দিকে খেয়াল করল না। এমতাবস্থায় হোসাইন বিন আলী (আ.) আমাকে লক্ষ্য করলেন এবং নিজে পানির মশক নিয়ে এসে আমাকে দিলেন। আমি অতিরিক্ত তৃষ্ণা এবং প্রচণ্ড ক্লান্তির কারণে মশক থেকে পানি ঢেলে খেতে পারছিলাম না। ইমাম নিজে মশক থেকে পানি ঢেলে আমাকে পান করালেন। এই আদর,ভালোবাসা,আপ্যায়ন এবং সামান্য বিশ্রামের পর যোহর নামাযের সময় ইমামের বিশেষ মুয়ায্যিন আযান দিলেন। ইমাম (আ.) বললেন : ‘তুমি (হুর) তোমার বাহিনী নিয়ে নামায পড়।’ হুর বলল : ‘আমি আপনার সাথে এবং আপনার ইমামতিতে নামায পড়ব।’ আসরের নামাযও একইভাবে অনুষ্ঠিত হলো।
ইমাম আসরের নামাযের পর হুর বাহিনীর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দিলেন এবং নিজের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত প্রমাণ উপস্থাপন করলেন। ইমাম এবং হুরের মধ্যে কথাবার্তা হওয়ার পর সে বলল : ‘আমরা আদেশপ্রাপ্ত হয়েছি যে,আপনাকে কুফায় ইবনে যিয়াদের নিকট না নিয়ে যাওয়া পর্যন্ত আপনার থেকে আলাদা হব না।’ ইমাম রাগান্বিত হলেন এবং বললেন : ‘তোমার মৃত্যু তোমার এই চিন্তা ও ধারণার থেকে উত্তম।’ তিনি তাঁর সঙ্গীদেরকে আদেশ করলেন : ‘তোমরা বাহনে আরোহণ কর এবং ফিরে চল।’ হুর তার বাহিনী নিয়ে তাঁদের পথ আটকালো এবং যাত্রায় বাধা দিল। ইমাম (আ.) হুরকে বললেন : سكلتك امّك ما ترید؟ ‘তুমি কি করতে চাও? তোমার মা তোমার জন্য শোক করুন!’ হুর বলল : ‘যদি আপনি ছাড়া অন্য কেউ আমার মায়ের নাম নিত তবে তার জবাব দিয়ে দিতাম,কিন্তু আপনার মায়ের সম্পর্কে সম্মানজনক কথা ছাড়া মুখে কিছু আসবে না।’
আশুরার দিন হুর যখন উমর বিন সা’দের বাহিনীকে যুদ্ধের জন্য চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিতে দেখল এবং অসহায় ইমাম হোসাইনের সাহায্যের আহ্বান শুনতে পেল তখন নিজেকে দুই পথের ‘সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্য’ এবং ‘বেহেশ্ত ও দোযখ’ এর মধ্যে দেখতে পেল। আর সে নিজের অন্তর্দৃষ্টি ও বিবেক দিয়ে সৌভাগ্য এবং সম্মানের পথ বেছে নিল। সে তার হাত দু’টি মাথায় রেখে আল্লাহর দরবারে তার কৃত ভুল-ত্রুটি এবং গোনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনারত অবস্থায় নিজের ঘোড়াকে হাঁকিয়ে নিয়ে ইমামের কাছে পৌঁছল। অতঃপর তাঁকে বলল : ‘হে আল্লাহর রাসূলের সন্তান! আপনার জন্য আমার জীবন উৎসর্গিত হোক! আমিই সেই ব্যক্তি যে আপনার ফেরার রাস্তা বন্ধ করে দিয়ে আপনাকে এই বিপদসঙ্কুল স্থানে নিয়ে এসেছি। কখনই ভাবিনি যে,এ গোষ্ঠী আপনার সাথে যুদ্ধ করবে এবং আপনার সাথে এমন আচরণ করবে! আমি এখন দুঃখিত এবং লজ্জিত। আল্লাহর দরবারে তওবা করছি। আল্লাহ আমার তওবা কবুল করুন।’ হযরত হোসাইন (আ.) বললেন : ‘আল্লাহ তোমার অপরাধ ক্ষমা করুন।’(শেখ আব্বাস কুমি, মুনতাহাল আমাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬১৩)
ইমামের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে জ্ঞান এবং তাঁর প্রতি শিষ্টাচারই হুরের প্রত্যাবর্তন এবং জাগ্রত হওয়ার মূল কারণ। নামাযে হুর মহান ইমামের ইকতিদা করেছেন এবং ইমামের সম্মানিত মাতা সম্পর্কে শ্রদ্ধা,সম্মান এবং নম্রতা প্রকাশ করাই এ স্বাধীনচেতা মানুষের মুক্তি এবং সৌভাগ্যের কারণ।
অবশেষে হুর বিন ইয়াযীদ ইমামের প্রতিরক্ষার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন। নিজের জীবনকে বাজি রেখে শত তরবারির আঘাতপ্রাপ্ত ও তীরবিদ্ধ হয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং শাহাদাতের কোলে ঢলে পড়েন। সঙ্গীরা মৃতপ্রায় অবস্থায় হুরকে ইমামের কাছে নিয়ে আসলে তিনি তাঁর পবিত্র হাত তাঁর মুখে বুলিয়ে দিয়ে বলেন :
انت الحر كما سمتك امك و انت الحر في الدنیا وانت الحر في الاخرة
‘তুমি মুক্ত মানব,যেমন তোমার মা তোমার নাম রেখেছেন,তুমি ইহকাল এবং পরকাল দুই কালেই স্বাধীন।’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৫তম খণ্ড, পৃ. ১৪)
সম্ভবত হুর সম্পর্কে ইমামের উল্লিখিত বক্তব্য এই ইঙ্গিত বহন করে যে,হুর কামনা-বাসনা এবং দুনিয়ার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে মর্যাদার ঐ উচ্চ আসনে পৌঁছেছিলেন যা নবী,আওলিয়া এবং সত্যবাদীদের জন্য নির্ধারিত।
এই পূর্ণতায় পৌঁছা আল্লাহর বিশেষ রহমত এবং ইমামের সুদৃষ্টিরই ফলস্বরূপ। পরকালের বালা-মুছিবত থেকে মুক্ত হওয়া ঐ পূর্ণতারই অংশ। “وانت الحر فی الاخرة” বাক্য দ্বারা সে দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।(ফুরুগে শাহাদাত, পৃ. ২০৮)
মানুষের সামনে উন্মুক্ত দু’টি বিপরীত পথের-সম্মান ও অপমান,পবিত্রতা ও হীনতা ও কুফর ও ঈমান-মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার পরীক্ষায় হুর বিন ইয়াযীদ উত্তীর্ণ হয়েছেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন এবং এ ক্ষেত্রে তাঁর নির্বাচন ছিল বিজ্ঞতাপূর্ণ। সকল আসক্তি ত্যাগ করা এবং মন্দ ও বাতিলের বাহ্যিক আকর্ষণীয় চেহারা ও সৌন্দর্যের পেছনে বিদ্যমান নিকৃষ্টরূপ দেখতে পারা হুরের মতো মুক্ত মানুষেরই কাজ। তিনি চিন্তা করে দেখেছেন যে,অন্ধকার বাহিনীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে স্বাধীন মানুষের আলোকিত বাহিনীতে যোগদান যদিও কষ্টকর ও কঠিন,কিন্তু প্রকৃতপক্ষে চিরন্তন সৌভাগ্য এবং ইহকালীন ও পরকালীন সম্মান ও মর্যাদা এতেই নিহিত রয়েছে।
হুর তাঁর জীবনে যেরূপ ঘটনার মুখোমুখি হয়েছেন আমরাও আমাদের জীবনে অনুরূপ ঘটনার মুখোমুখি হই। কারণ,আমরাও প্রতিনিয়ত আনুগত্য ও অবাধ্যতা এবং ক্ষণস্থায়ী জীবনের কামনা-বাসনা ও চিরস্থায়ী জীবনের সৌভাগ্য এই দুই পথের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়ার পরীক্ষার সম্মুখীন হয়ে থাকি। এ ক্ষেত্রে আমাদের উচিত স্বাধীনতা এবং উদারতার পথকে বেছে নেয়া এবং ধ্বংসশীল পার্থিব জীবনের জাঁকজমকপূর্ণ তুচ্ছ সামগ্রীর ভোগে লিপ্ত না হওয়া। যৌবনের অহমিকা,অর্থ-সম্পদ ও পদমর্যাদা যেন আমাদেরকে মন্দ মানুষে পরিণত না করে এবং সত্য-সঠিক ও তাকওয়ার পথ থেকে বিচ্যুত না করতে পারে।
ইমাম সাদিক (আ.)-এর গভীর অর্থবোধক নিম্নোক্ত বাণীতে এ বিষয়টি পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। তিনি বলেছেন :
کل یوم عاشورا و کل ارض کربلا
অর্থাৎ প্রতিটি দিনই আশুরা এবং প্রতিটি যমিনই কারবালা।(ফুরুগে শাহাদাত, পৃ. ২০৮)
অর্থাৎ আশুরার ঘটনা ঐ দিন এবং ঐ বদ্ধ ভূমির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। আশুরা এক চিরন্তন সংস্কৃতি যা স্থান ও কালের গর্ভে বিরামহীনভাবে প্রবাহিত হচ্ছে। সত্য-মিথ্যা,হাবিল-কাবিল,ইবরাহীম-নমরূদ,মূসা-ফিরআউন,রাসূল (সা.)-আবু সুফিয়ান,ইমাম আলী (আ.)-মুয়াবিয়া এবং ইমাম হোসাইন (আ.) ও ইয়াযীদের সংঘর্ষ চিরস্থায়ী- সব সময়ের জন্য বিদ্যমান। অন্ধকারের বাহিনীর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে আলোর কাফেলার সাথে সংযুক্ত হওয়ার সুযোগ সবসময় রয়েছে। এ ক্ষেত্রে কখনই দেরী হয়ে গেছে বলা ঠিক নয়,এমনকি জীবনের অল্প কয়েকটি মুহূর্তও যদি বাকি থাকে।
هل من ناصر ینصرني অর্থাৎ ‘কোন সাহায্যকারী কি আছে যে আমাকে সাহায্য করতে পারে?’- ইমাম হোসাইনের এ ফরিয়াদ সর্বকালের সকল প্রজন্মের কানেই প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। অর্থাৎ ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর অনুসারীদের কাছ থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সাহায্যের আবেদন জানিয়েছেন।
যুহাইর বিন কাইন
যুহাইর কুফার একজন সাহসী এবং বিশেষ ব্যক্তি ছিলেন। বিভিন্ন যুদ্ধে তাঁর ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ষাট হিজরিতে সাইয়্যেদুশ শুহাদা (আ.) মক্কা থেকে কুফার উদ্দেশে রওয়ানা হওয়ার সময় তিনি তাঁর পরিবারের সাথে হজ থেকে ফিরছিলেন। তাঁর ইচ্ছা ছিল না যে,ইমামের সাথে সাক্ষাৎ করবেন ও একসাথে অবস্থান করবেন। যখনই ইমাম কোন স্থান থেকে যাত্রা করতেন যুহাইর সেখানে যাত্রা বিরতি করতেন এবং যেখানেই হোসাইন (আ.) অবস্থান করতেন যুহাইর দ্রুত সে স্থান ত্যাগ করতেন। এক জায়গায় তিনি বাধ্য হলেন ইমামের যাত্রা বিরতিস্থল থেকে কিছু দূরে তাঁবু স্থাপন করতে। যুহাইরের কিছুসংখ্যক সফরসঙ্গী বলে : “আমরা খাবার খাওয়ায় ব্যস্ত ছিলাম,এমন সময় ইমামের দূত এসে সালাম দিয়ে যুহাইরকে বললেন : ‘আবু আবদিল্লাহ তোমাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।’ এই ঘটনা আমাদের জন্য এতটা আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত ছিল যে,আমাদের গলা শুকিয়ে গেল। এমন অবস্থা হলো যে,আমরা মুখের ভেতরের খাবার না গিলতে পারছিলাম,না ফেলতে পারছিলাম। যুহাইরের স্ত্রী তাঁকে বললেন : ‘সুবহানাল্লাহ! নবীর সন্তান তোমাকে ডাকছে আর তুমি যেতে বিলম্ব করছ?’ এই কথায় যুহাইর সম্বিৎ ফিরে পেলেন এবং তাঁকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা থেকে বের করে আনল।
যুহাইর ইমাম হোসাইন (আ.)-এর নিকট গেলে ইমাম তাঁর সাথে কথা বললেন। ইমামের অমিয় বক্তব্য তাঁর অন্ধকার হৃদয়কে প্রজ্বলিত ও আলোকিত করল। তিনি ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অনুরাগী ও অনুসারী হয়ে গেলেন এবং আনন্দমাখা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা নিয়ে ফিরে আসলেন এবং নিজের তাঁবুকে ইমামের তাঁবুর নিকট স্থাপন করলেন।
তাঁর জাগ্রত হৃদয়ের দ্বারা যে দুর্গম পথ তিনি বেছে নিয়েছেন সে পথে স্ত্রীর সম্ভাব্য ক্ষতির কথা বিবেচনা করে তাঁকে তালাক দিলেন। অতঃপর তাঁকে তাঁর পরিবার-পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কয়েকজনকে দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু এ পরিণামদর্শী এবং দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নারী যুহাইরকে ত্যাগ করার জন্য এ শর্ত দিলেন যে,তিনি কিয়ামতের দিন নবী (সা.)-এর কাছে তাঁর জন্য শাফায়াত করবেন।
যখন হুরের বাহিনী ইমামের পথ অবরূদ্ধ করল,যুহাইর সাইয়্যেদুশ শুহাদার অনুমতি সাপেক্ষে তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করলেন (কিন্তু সফল হলেন না)। অতঃপর তাদের সাথে যুদ্ধ করার জন্য ইমামকে পরামর্শ দিলেন,কিন্তু ইমাম তা মানলেন না।
তা’সুয়ার (মুহররমের নবম) দিন বিকালে ইমাম (আ.) তাঁর পরিবার-পরিজন এবং সঙ্গী-সাথিদের তাঁকে ত্যাগ করে চলে যাওয়ার অনুমতি দিলে যুহাইর এক আকর্ষণীয় বক্তৃতায় তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং স্বীয় জীবন বাজি রেখে ইমামের প্রতিরক্ষায় একনিষ্ঠভাবে প্রচেষ্টা চালানোর অঙ্গীকার করেন। তিনি বলেন : ‘আল্লাহর শপথ,যদি হাজার বার নিহত হতাম এবং হাজার বার জীবিত হতাম এবং এর ফলে আল্লাহ আপনি এবং আপনার পরিবারবর্গকে রক্ষা করতেন আমি তা করাই পছন্দ করতাম।’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৪ তম খণ্ড, পৃ. ৩৯৩)
আশুরার দিন সাইয়্যেদুশ শুহাদা ডান দিকের সেনাবাহিনীর দায়িত্ব যুহাইরের ওপর অর্পণ করেন। ইমাম হোসাইন (আ.)-এর বক্তব্যের পর তিনিই প্রথম ব্যক্তি হিসেবে অস্ত্রসস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অশ্বে আরোহণ করে শত্রুদের সামনে যান এবং তাদেরকে উপদেশ দেন। আশুরার দিন যোহরে তিনি এবং সাদ বিন আবদুল্লাহ ইমামের সামনে ঢাল হয়ে দাঁড়ান,ইমাম নামায আদায় করেন। নামাযের পর তিনি যুদ্ধের ময়দানে যান এবং সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাতের সুধা পান করেন। ইমাম (আ.) তাঁর শিয়রে এসে তাঁর জন্য দোয়া করেন এবং তাঁর হত্যাকারীদেরকে ভর্ৎসনা ও অভিসম্পাত করেন।(আব্বাস কুম্মী, মুনতাহাল আমাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৬০৭; আশুরা অভিধান, পৃ. ২০১)
ইমামের সাথে যুহাইরের ক্ষণস্থায়ী সাক্ষাতে তাঁর মত ও পথ পরিবর্তন আশুরার একটি রহস্যময় ও আশ্চর্যজনক শিক্ষণীয় ঘটনা। এটি সুস্পষ্ট ভাবে জানা যায় না যে,ঐ আধ্যাত্মিক সাক্ষাতে যুহাইর ইমামের পবিত্র মুখনিঃসৃত এমন কী বাণী শুনেছিলেন যে,মাটি থেকে আরশের দিকে যাত্রা করেছেন এবং ইমামের প্রতি এতটা আকৃষ্ট হয়েছেন যে,তাঁর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছেন।
নিঃসন্দেহে যুহাইর তাঁর যুগের ইমাম,হোসাইন (আ.)-এর সুনজরে পড়েছিলেন। ফলে তাঁর ফিতরাতের ওপর থেকে পর্দা উঠে গিয়েছিল। নিজের ধারণক্ষমতা অনুযায়ী তিনি ইমাম হোসাইনের বেলায়াত (ঐশী কর্তৃত্ব) ও ইমামতের মর্যাদাকে চিনতে পেরেছিলেন। যুহাইরের বিভিন্ন বক্তব্য,সাহসিকতা ও উৎসর্গী ভূমিকা তাঁর আত্মার মহত্ত্বের পরিচয় দান করে এবং তিনি যে প্রকৃত অর্থেই ইমাম হোসাইনের মহান মর্যাদাকে অনুধাবন করেছিলেন তা অনুভব করা যায়।(ফুরুগে শাহাদাত, পৃ. ২০০)
নিঃসন্দেহে মানুষের মধ্যে যদি উপযুক্ত ধারণক্ষমতা এবং সত্যকে গ্রহণের অনুকূল ক্ষেত্র সৃষ্টি না হয় তবে সত্যকে গ্রহণে ভাগ্য তার সহায় হয় না এবং কখনই সে মঙ্গলজনক পরিণতি লাভে সক্ষম হয় না। নবী (সা.) বলেছেন : ‘আল্লাহর অনুগ্রহের বাতাস তোমাদের দিকে আকস্মিকভাবে প্রবাহিত হয়। তাই সবসময় তোমরা সজাগ থাক এবং নিজেদেরকে তার জন্য প্রস্তুত রাখ। তার থেকে বিমুখ হয়ো না।’(রেসালাতুল লুববুল আলবাব, আল্লামা সাইয়্যেদ মুহাম্মাদ হোসাইন তেহরানী, পৃ. ২৫) হুর এবং যুহাইরের মতো শ্রেষ্ঠ বীরেরা সর্বস্ব নিয়ে আল্লাহর রহমতের বায়ু প্রবাহিত হওয়ার রাস্তায় নিজেদেরকে উপস্থাপন করেছেন এবং তাঁদের অস্তিত্ব বৃক্ষ তা থেকে পরিপুষ্ট ও তৃপ্ত হয়েছে। তাঁরা সৌভাগ্য,আধ্যাত্মিকতা ও প্রেমের ফল উপঢৌকন হিসেবে পেয়েছেন।
ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর চলার পথে আরো অনেককে তাঁর মর্যাদাকর আলোর কাফেলার সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য আহ্বান জানান,কিন্তু ঐ অভাগাদের এই যোগ্যতা ছিল না যে,মানবতা ও মহানুভবতার এ অগ্রপথিকের পায়ে পা মিলিয়ে গর্বের সাথে শাহাদাতের দিকে ধাবিত হবে এবং তাদের নামকে চিরস্মরণীয় করবে। এই বঞ্চিত ব্যক্তিদের কাফেলা ছিল অনেক বড় এবং তাদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যও ছিল বিভিন্ন রকমের। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায় যার একটি নমুনা উপস্থাপন করা হলো :
উবায়দুল্লাহ বিন হুর জু’ফী
বনি মাকতাল নামক স্থানে ইমাম যাত্রা বিরতি করলে তাঁকে সংবাদ দেয়া হলো যে,উবাইদুল্লাহ বিন হুর জু’ফী এখানেই অবস্থান করছে। উবাইদুল্লাহ খলিফা উছমানের সমর্থক ছিল এবং তাঁর মৃত্যুর পর সে মুয়াবিযার কাছে চলে যায় এবং ছিফফিনের যুদ্ধে তার পক্ষ হয়ে আলী (আ.)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।(তারীখে তাবারী, ৭ম খণ্ড, পৃ. ১৬৭)
ইমাম হোসাইন (আ.) প্রথমে হাজ্জাজ বিন সারুক নামক এক ব্যক্তিকে তার কাছে পাঠালেন। হাজ্জাজ তাকে বললেন : ‘তোমার জন্য একটি মূল্যবান উপহার নিয়ে এসেছি। হোসাইন বিন আলী (আ.) এখানে এসেছেন এবং তোমাকে সাহায্যের জন্য ডেকেছেন যেন তাঁর সাথে যোগ দিয়ে মহাসৌভাগ্য ও পুণ্য অর্জন করতে পার।’
উবায়দুল্লাহ বলল : ‘আল্লাহর কসম ! আমি কুফা থেকে বের হওয়ার সময় অধিকাংশ মানুষ হোসাইন (আ.)-এর সাথে যুদ্ধ এবং তাঁর অনুসারীদের ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করছিল। এটা আমার কাছে পরিষ্কার যে,এই যুদ্ধে ইমাম নিহত হবেন। আর তাঁকে সাহায্য করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। আমি মোটেই চাই না যে,তাঁর সঙ্গে আমার দেখা হোক।’ হাজ্জাজ ইমামের কাছে ফিরে এসে উবায়দুল্লাহর জবাব পেশ করলেন। ইমাম নিজেই কিছুসংখ্যক সঙ্গীকে সাথে নিয়ে উবায়দুল্লাহর নিকট গেলেন। সে ইমামকে অভ্যর্থনা এবং সম্ভাষণ জানালো।
হোসাইন (আ.) তাকে বললেন : ‘তুমি তোমার জীবনে অনেক পাপ কাজ করেছ এবং অনেক ভুল-ত্রুটি ও খারাপ কাজ তোমার দ্বারা সম্পাদিত হয়েছে। তুমি কি তওবা করতে বা নিজের গুনাহসমূহ থেকে পবিত্র হতে চাও?’
উবাইদুল্লাহ বলল : ‘কিভাবে তওবা করব?’ ইমাম বললেন : ‘তোমার নবীর মেয়ের সন্তানকে সাহায্য কর এবং তার পাশে থেকে তার শত্রুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কর।’ উবাইদুল্লাহ বলল : ‘আল্লাহর কসম,আমি এটা জানি যে,যে আপনার আদেশের অনুসরণ করবে সে চিরস্থায়ী সুখ ও সৌভাগ্যের অধিকারী হবে। কিন্তু আমি মনে করি না যে,আমার সাহায্য আপনার উপকারে আসবে। আল্লাহর দোহাই দিচ্ছি,আমাকে এ কাজ থেকে রেহাই দিন। কেননা,আমি মৃত্যুকে প্রচণ্ড ভয় করি। কিন্তু আমার অতুলনীয় এ ঘোড়াটি- যা পশ্চাদ্ধাবন ও পলায়নে পটু তা আপনাকে দান করছি।’ ইমাম (আ.) বললেন : ‘ যখন আমাদের পথে নিজেকে উৎসর্গ করা থেকে বিরত থাকছ,তখন না আমার তোমাকে প্রয়োজন আছে,না তোমার ঘোড়াকে।’
উবায়দুল্লাহ এমন সুযোগ ও সৌভাগ্য হাতছাড়া করার জন্য জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অনুতাপ ও অনুশোচনা করেছে।
যদি আমরা নিষ্পাপ ইমামদের পরিকল্পনা ও কর্মসূচি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি এবং যুদ্ধ-সন্ধি,পদক্ষেপ গ্রহণ ও নীরবতা পালনের পেছনে নিহিত কারণ নিয়ে পর্যালোচনা করি তাহলে খুব ভালোভাবে অনুধাবন করতে পারব যে,ইমামরা নবী-রাসূলদের পথের অনুবর্তনকারী। মানবতার মুক্তিদান ও অন্ধকারে নিমজ্জিতদের পরিত্রাণ দেয়া ছাড়া তাঁদের অন্য কোন লক্ষ্য নেই। এই মুক্তিদান কখনো সর্বজনীনভাবে এবং কখনো ব্যক্তিবিশেষের ক্ষেত্রে সম্পাদিত হয়ে থাকে।
উবায়দুল্লাহর তাঁবুতে ইমামের আগমন প্রকৃতপক্ষে রোগীর গৃহে ডাক্তারের আগমনের মতো। আল্লাহর ওলীদের দৃষ্টিতে একজন মানুষকে মুক্তি দেওয়া এবং সৌভাগ্য ও পূর্ণতার কাফেলায় আনার মূল্য অনেক। বিশেষত যদি এই কাজ ঐ পবিত্র বিপ্লবের পথে হয় যে পথে সাইয়্যেদুশ শুহাদা তাঁর সর্বস্ব উৎসর্গ করেছেন। কিন্তু যখন ইমাম দেখলেন যে,উবায়দুল্লাহ তার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য উপলব্ধি করতে পারছে না এবং একটি ঘোড়া উপহার দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে সে প্রমাণ করেছে যে,সে বিষয়টিকে সংকীর্ণ বস্তুগত দৃষ্টিতে দেখেছে এবং ভেবেছে বাহ্যিক জয়-পরাজয়ের মধ্যেই সফলতা নিহিত রয়েছে,তাই ইমাম তাকে বললেন : ‘আমার না তোমাকে প্রয়োজন আছে,না তোমার ঘোড়াকে।’
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাস জুন
অন্যদিকে জুনের মতো ব্যক্তিরাও আশুরা বিপ্লবে উপস্থিত ছিলেন। জুন একজন কাফ্রী ক্রীতদাস ছিলেন। আমীরুল মুমিনীন (আ.) তাঁকে ১৫০ দিরহাম দিয়ে ক্রয় করে হযরত আবু যার গিফারীকে উপহার দিয়েছিলেন। হযরত আবু যার ‘রাবাযাহ’র মরুচরে নির্বাসিত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা পর্যন্ত তিনি তাঁর সাথেই ছিলেন।
জুন হযরত আবু যারের মৃত্যুর পর ইমাম আলী (আ.)-এর নিকট ফিরে আসেন এবং ইমামের সেবায় নিয়োজিত থাকার মহান গৌরব অর্জন করেন। অতঃপর তিনি ইমাম হাসান (আ.) ও ইমাম হোসাইনের খেদমত করেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ইমাম সাজ্জাদ (আ.)-এর সাথে ছিলেন এবং তাঁর সাথে কারবালা সফরে যান।
আশুরার দিন কারবালায় যুদ্ধ ভয়াবহ রূপ ধারণ করলে এই কৃষ্ণকায় গোলামের শ্বেত হৃদয় ইমাম হোসাইন (আ.)-এর অসহায় ও অত্যাচারিত অবস্থা দেখে বিষণ্ণ এবং ব্যথিত হয়ে পড়ে। তখন তিনি ইমামের কাছে এসে যুদ্ধের ময়দানে যাওয়ার অনুমতি প্রার্থনা করেন।
ইমাম বললেন : ‘আমি তোমাকে যুদ্ধের ময়দান থেকে চলে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছি। কেননা,তুমি সুখ-শান্তি ও আরামের জন্য আমাদের সঙ্গী হয়েছ,যুদ্ধ-বিগ্রহ এবং কষ্ট ও ঝামেলায় জড়ানোর জন্য নয়। সুতরাং তোমার আমাদের পথ ধরার কোন প্রয়োজন নেই।’
ঐ সৌভাগ্যবান কৃষ্ণাঙ্গ হোসাইন বিন আলী (আ.)-এর দুই পায়ে পড়ে চুমু দিয়ে বলতে লাগলেন : ‘হে নবীর সন্তান! এটা কিভাবে হয় যে,আমি সুখ-শান্তি এবং আরামের সময় আপনাদের সাথে থাকব আর বিপদের মুহূর্তে আপনাদের ছেড়ে চলে যাব? আল্লাহর কসম,আমার শরীরে দুর্গন্ধ,আমার বংশ নীচ এবং আমার চামড়ার রঙ কালো বলেই কি আপনি আমাকে অনুমতি দিচ্ছেন না? আল্লাহর কসম,ততক্ষণ আমি আপনাদের থেকে আলাদা হব না যতক্ষণ না আমার কালো রক্ত আপনাদের রক্তের সাথে মিশ্রিত হয়।’ অবশেষে জুন ইমামের অনুমতি নিয়ে যুদ্ধের ময়দানে যান এবং সাহসিকতা ও বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করে শাহাদাতের সুধা পান করেন।
আবু আবদিল্লাহর সঙ্গী-সাথিদের সর্বোচ্চ আনন্দ এটা ছিল যে,তাঁরা তাঁদের জীবনের শেষ মুহূর্তে চোখ মেলে তাঁদের শিয়রে ইমামের প্রেমময় চেহারা দেখতে পেরেছেন এবং এই নগদ বেহেশ্ত দেখার কারণে মৃত্যু তাঁদের কাছে মধুর মতো সুমিষ্ট ও সুস্বাদু মনে হয়েছে।
ইমাম হোসাইন (আ.) জুনের শিয়রে আসলেন এবং বললেন : ‘হে আল্লাহ! তার মুখমণ্ডলকে শুভ্র এবং তার গন্ধকে সুবাসিত করে দাও এবং তাকে পুণ্যবানদের সাথে পুনরুত্থিত কর। মুহাম্মাদ (সা.) এবং তাঁর বংশধরের সাথে তার বন্ধনকে ঘনিষ্ঠ করে দাও।’(বিহারুল আনওয়ার, ৪৫তম খণ্ড, পৃ. ৩২)
ইমামের (আ.) এই দোয়া কবুল হয়েছিল। যার ফল এই দুনিয়াতেই প্রকাশ পেয়েছিল। কেননা,হযরত বাকের (আ.) তাঁর পিতার নিকট থেকে বর্ণনা করেছেন : যখন লোকেরা কারবালার শহীদদের দাফন করার জন্য আসল,জুনের শরীরকে দশ দিন পর এমন অবস্থায় পেয়েছিল যে,তাঁর শরীর থেকে মৃগনাভীর গন্ধ ভেসে আসছিল।(বিহারুল আনওয়ার, ৪৫তম খণ্ড, পৃ. ৩২)
তুর্কি গোলাম
কারবালার ইতিহাসে একজন তুর্কি গোলাম সম্পর্কেও বলা হয়েছে। যখন তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তখন ইমাম হোসাইন (আ.) তাঁর শিয়রে বসে কেঁদেছিলেন। তিনি তাঁর সন্তান আলী আকবরের সাথে যে আচরণ করেছিলেন তাঁর সাথেও ঠিক সে আচরণই করলেন। অর্থাৎ তিনি তাঁর মুখটি ঐ তুর্কি গোলামের মুখের ওপর রাখলেন। এটা ঐ তুর্কি গোলামের কাছে এতটাই অবিশ্বাস্য ও উপভোগ্য ছিল যে,তিনি হাস্যোজ্জ্বল মুখে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন।(ফুরুগে শাহাদাত, পৃ. ২১৪)
ইমাম তাঁর পূত-পবিত্র খাঁটি এ সঙ্গীদের প্রতি প্রেম-ভালোবাসার দ্বার উন্মোচিত করে বিশ্ববাসীর প্রতি ঘোষণা করেছেন যে,মহা মূল্যবান সত্যের প্রতিরক্ষায় সাদা,কালো,কাছের ও দূরের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সকলের রঙ ‘আল্লাহর রঙ’ আর অভিন্ন চেহারা হচ্ছে ‘তাকওয়া’।