হযরত শিবলী (রহঃ) একদিন ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত দেহকে বিশ্রাম দেয়ার জন্য মসজিদে প্রবেশ করলেন। অযু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে মসজিদের এক কোণে মসজিদের দেয়ালে হেলান দিলেন তিনি। এত ক্লান্তির মধ্যেও তার চক্ষু বন্ধ হচ্ছিল না। তিনি অবাক হয়ে দেখছেন মসজিদের অভ্যন্তরে সদ্য মুক্ত ছাত্রদের দৌড়া-দৌড়ি। তারা তাদের ক্লাশ শেষ করে টিফিনের সময় কাটাচ্ছে। দুটি শিশু হযরত শিবলী (রহঃ)-র নিকট আসন পেতে বসলো। তারা তাদের আপন আপন খাবারের থলে উন্মুক্ত করলো। এদের একজন পোশাক ও পরিচ্ছদে পরিচ্ছন্ন ও পরিপাটি ছিলো। দেখেই স্পষ্ট বুঝা যাবে যে, এটি কোন ধনী পরিবারের সন্তান। ওর থলেতে ছিলো একটি রুটি ও কিছু হালুয়া। আর অন্য শিশুটির থলেতে ছিল শুধু একটি শুকনো রুটি। গরীব ছেলেটি ধনী ছেলেটির থলেতে অসহায় ভাবে তাকালো। গরীব ছেলেটি দেখতে পেলো ধনী ছেলেটি কত মজা করে রুটির সাথে হালুয়া খাচ্ছে। একটি ঢোক গিললো সে। গরীব ছেলেটি অবশেষে লোভ সামলাতে না পেরে বলেই ফেললোঃ “এই ছেলে, আমার শুধু একটি শুকনো রুটি, তুমি কি আমাকে একটু হালুয়া দিতে পারবে?” ধনী ছেলেটি উত্তর দিলো : “না, দিবো না।’ গরীব ছেলে : “কিন্তু এই শুকনো রুটি যে হালুয়া ছাড়া আমার গলায় প্রবেশ করবে না!” ধনী ছেলে : “যদি এই হালুয়া থেকে একটু তোমাকে দেই তাহলে কি তুমি আমার কুকুর হতে পারবে?” গরীব ছেলে : “জী-হ্যাঁ পারবো।” ধনী ছেলে : “তাহলে তুমি এখন আমার পোষ্য কুকুর।” গরীব ছেলে : “হ্যাঁ, ঠিক বলেছো।” ধনী ছেলে : “তাহলে কেন কুকুরের মতো শব্দ করছো না?” বেচারা গরীব ছেলেটি নিরুপায় হয়ে কুকুরের ডাক দিতে লাগলো আর ধনী ছেলেটি একটু একটু করে হালুয়া দান করতে থাকলো। এভাবে তাদের হালুয়া রুটি খাওয়া শেষ হলো।
হযরত শিবলী (রহঃ) এতক্ষন যাবত ঘটনাটি লক্ষ্য করছিলেন আর কাঁদছিলেন। তার ভক্তবৃন্দরা তাকে মসজিদে পেয়ে তার পাশে বসলেন। কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন : “দেখ! লোভ মানুষের জন্যে কি সর্বনাশা পরিণাম ডেকে আনে। যদি এ গরীব শিশুটি ওর নিজের শুকনো রুটিতেই সন্তুষ্ট থাকতো আর অন্যের হালুয়ার প্রতি লোভ না করতো তাহলে কুকুরের ন্যায় অন্যের গোলামী করতে হতো না।”