বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

শবে বরাত

শবে বরাত

হযরত আলী (আঃ) নবী করীম (সাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন যে, যখন শা'বানের পনেরো তারিখ হতো তখন তিনি বলতেন, তোমরা এ রাতে এবাদতে জাগ্রত থাকো এবং দিনের বেলায় রোজা রাখো। কেননা এ রাতে সূর্যাস্তের সাথে সাথে আল্লাহ দুনিয়ার নিকটবর্তী আসমানে নেমে এসে বলেন, ‘আছো কি কোন প্রার্থনাকারী-আমি তার প্রার্থনা কবুল করবো। আছো কি কোন রিযিক অন্বেষণকারী-আমি তাকে রিযিক দান করবো। আছো কি কোন রুগ্ন ব্যক্তি-আমি তাকে সুস্থতা দান করবো। এ ধরনের আরো কেউ আছো কি-আমি তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেবো। এমন করে সুবহে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ প্রত্যেক গোত্রের নাম ধরে ধরে ডাকতে থাকেন।

মুহাম্মাদ ইবনে আলী (আ) বর্ণনা করেছেন, এই রাত শবে কদরের পর সর্বোত্তম রাত। এই রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে নিজ করুণায় ক্ষমা করেন। তিনি আরো বলেছেন,এই রাতে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করো! কেননা,আল্লাহ তাঁর পবিত্র নামের শপথ করে বলেছেন, তিনি তাঁর কোনো বান্দাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দেবেন না,তবে শর্ত হলো ঐ বান্দা পবিত্র এই রাতে যদি কোনো গুনাহ না করে।

পাঠক ! আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছেন আমরা শবেবরাত সম্পর্কে দুটি হাদিসের উদ্ধৃতি দিয়েছি। শবেবরাত মুসলমানদের জন্যে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি রাত। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তানসহ বিভিন্ন মুসলিম দেশের জনগণ হিজরী শাবান মাসের পনেরো তারিখ রাতটিকে নফল ইবাদাত করা, কোরআন তেলাওয়াত করা, জিকির-আজকার করা, দোয়া-দরুদ পড়া ইত্যাদির মধ্য দিয়ে কাটায়। মোটকথা এই রাতটিতে তারা ঘুমায় না। রাত জেগে ইবাদত করে। দিনের বেলা নফল রোযা রাখে, কবর যিয়ারত করে এবং বিকেলে মসজিদ-মাদ্রাসায় মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে, হালুয়া-রুটি আর মিষ্টান্ন বিলায়। সব মিলিয়ে এই দিনটিতে কেমন যেন একটা আধ্যাত্মিক পরিবেশ বিরাজ করে। শবেবরাতে ইবাদাত বন্দেগি করা আর দিনের বেলায় রোযা রাখার ফযীলত সম্পর্কে বহু হাদীসও বর্ণিত হয়েছে।

তবে শিয়া মাযহাবের অনুসারীগণ ব্যাপক আড়ম্বরের সাথে জাঁকজমকের সাথে এই দিনটিকে উদযাপন করে থাকে। যেমনটি ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানসহ আরো অনেক মুসলিম দেশে লক্ষ্য করা যায়। তাঁদের বিশ্বাস হলো, এই দিনে নবী বংশের সর্বশেষ ইমাম মাহদি (আ) জন্মগ্রহণ করেন। যিনি বিশ্বের সর্বশেষ ত্রাণকর্তা। মহান এই ইমামের পবিত্র জন্মদিন হবার কারণে তাঁরা ইবাদাত-বন্দেগির পাশাপাশি উৎসব মুখর পরিবেশে এই দিনটিকে উদযাপন করে। পুরো ইরান জুড়ে এই রাতে ব্যাপক আলোকসজ্জা করা হয়। দেশটাকে সুন্দর পরিপাটি করে নয়নাভিরাম শোভায় সাজানো হয়। রাস্তায় রাস্তায় বিচিত্র মিষ্টি, শরবত, চা-নাশতা ইত্যাদি বিলানো হয়। যে যার সামর্থ অনুযায়ী সওয়াবের আশায় এসব করে থাকে। তো যে যেভাবেই পালন করুক না কেন সবারই উদ্দেশ্য অভিন্ন। তাহলো পূণ্য অর্জন। আল্লাহ আমাদেরকে পবিত্র এই রাতের পূণ্য অর্জন করার তৌফিক দিন-এই কামনা করে সর্বশেষ ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি (আ) সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করার চেষ্টা করবো।

সৃষ্টির শুরু থেকেই এই মহাবিশ্ব সুশৃঙ্খলভাবে এবং সুন্দর নিয়মানুবর্তিতার সাথে প্রবহমান। সৃষ্টি জগতে যতো গ্রহ-নক্ষত্র রয়েছে তাদের চলার মধ্যে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা দেখা যাচ্ছে না। আসলে অনিয়ম বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি ব্যবস্থারই বিপরীত। সে কারণে জুলুম-অত্যাচার যতো ভয়াবহই হোক না কেন বিশ্বে তার মূল কখনোই স্থায়ী নয়,তা একদিন অবশ্যই নির্মূল হবে। ধর্ম এবং মনীষীগণও এই মত পোষণ করে। এ সম্পর্কে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) ভবিষ্যতে এমন একজন ব্যক্তিত্বের আবির্ভাব সর্ম্পকে কথা বলেছেন যিনি বিশ্বের সকল প্রান্তে ন্যায়নীতি প্রতিষ্ঠা করবেন এবং জুলুমের বেসাতি দূর করবেন। আজ সেই মহান ত্রাণকর্তা ইমাম মাহদি (আ)'র জন্মদিন। তিনিই সময়ের কালো মেঘ সরে যাবার পর সকালের সূর্যের মতো উদিত হবেন। হযরত মূসা (আ) এর সাথে ইমাম মাহদির জন্মের তুলনা দেওয়া হয়। কেননা মূসা (আ) এর জন্মের সময় ফেরাউন সকল অন্তসত্ত্বা মহিলার ওপর অত্যাচার করেছিল। যতো পুত্রশিশুর জন্ম হয়েছিল,ফেরাউন তাদের মেরে ফেলেছিল।

আব্বাসীয় খলিফারাও রাসূলের বংশে একজন ত্রাণকর্তার আবির্ভাবের কথা জানতে পেরেছিলো যিনি তাদের হুকুমাতের পতন ঘটাবেন। সেজন্যে তারা মাহদি (আ) এর জন্ম ঠেকানোর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় সামেরা শহরে নিরাপত্তাহীন এক পরিবেশে হেদায়াতের সর্বশেষ সূর্যের জন্ম হয়। সময়টা ছিল জুমার ভোররাত। ২৫৫ হিজরীর শাবান মাসের ১৫ তারিখ। এই শিশুর জন্মের সাথে সাথে ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর ঘর নন্দিত আলোর ফোয়ারায় ভরে ওঠে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো নবজাতক তার জন্মের প্রথম প্রহরেই আল্লাহর একত্ব এবং নবীজীর রেসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছিলো। তাঁকে যখন তাঁর মহান পিতার কাছে নেওয়া হলো তিনি তখন কোরআন পাকের একটি আয়াত তেলাওয়াৎ করেন। আয়াতটি হলোঃ
"অ নুরিদু আন্নামুন্না আলাল্লাজিনাস-তাযআফু ফিল আরদি অনাজআলাহুম আয়িম্যাতান অনাজআলাহুমুল ওয়ারেসিন।" ( সূরা কাসাস,আয়াত : ৫)

আমরা চেয়েছি যমীনের মুযতাজআফিন বা যাদেরকে দুর্বল করে রাখা হয়েছিল তাদের ওপর আমাদের অনুগ্রহ বর্ষণ করতে এবং তাদেরকে নেতা ও দেশের উত্তরাধিকারী বানাতে।
আয়াতটি তেলাওয়াৎ করার পর ইমাম নবজাতকের নাম রাখলেন নবীজীর নামের সাথে মিল রেখে যাতে তাঁর চেহারা সুরৎ দেখে সর্বশেষ নবীর স্মৃতি মনে জাগে এবং বিশ্বকে নবীজীর মতোই যেন সত্য-সুন্দর ও সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারে।

তাঁর নাম হলো মুহাম্মাদ। ডাক নাম আবুল কাসেম। তাঁর উল্লেখযোগ্য কয়েকটি উপাধি হলো মাহদি, কায়েম, বাকিয়াতুল্লাহ, হুজ্জাতুল্লাহ, সাহেবুয্ যামান, আলমুন্তাজার, আলগায়েব, আবাসালেহ, চাহেবুল আম্র, ভালিআস্র ইত্যাদি। তিনি হলেন নবীবংশের সর্বশেষ অর্থাৎ বারোতম ইমাম। হযরত আলী (আ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,মাহদি হলো তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম জ্ঞানের অধিকারী। ইমাম বাকের (আ) তাঁর সম্পর্কে বলেছেন,মহান আল্লাহর কিতাব এবং নবীজীর সুন্নাতের জ্ঞান আমাদের মাহদির অন্তরে এমনভাবে উদিত হয় মাটিতে উদ্ভিদ যেভাবে সর্বোত্তম রূপে গজিয়ে ওঠে।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইমাম মাহদি (আ) কে পুনরায় পৃথিবীতে পাঠাবেন অন্যায় ও জুলুম-নির্যাতনক্লিষ্ট পৃথিবীতে পুনরায় ন্যায়ের শাসন কায়েম করার জন্যে। স্বয়ং ইমাম মাহদি (আ) বলেছেন,আমি হলাম পৃথিবীবাসীদের জন্যে নিরাপত্তা ও প্রশান্তির উৎস। আল্লাহ তাঁর আগমন ত্বরান্বিত করুন। তাঁর শুভ জন্মদিন উপলক্ষ্যে সবার প্রতি প্রত্যাশা থাকবে বেশি বেশি করে তওবা-ইস্তিগফার করবেন,কারো সাথে হিংসা-বিদ্বেষ বা মনোমালিন্য থাকলে আপোষে তা দূর করবেন,নফল নামায পড়া এবং নফল রোযা রাখার চেষ্টা করতে হবে। সবশেষে গরীবদের মাঝে দান-খয়রাত করে অফুরন্ত সওয়াব অর্জনের চেষ্টা করবেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তৌফিক দিন-পবিত্র শবেবরাতে এই হোক আমাদের পারস্পরিক দোয়া।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা ...
১০ ই মহররমের স্মরণীয় কিছু ঘটনা ও ...
আত্মগঠনের মাস : রমযান
দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়
পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন একটি অকাট্য ...
পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ

 
user comment