প্রশ্ন: শুনেছি, শিয়ারা হযরত আলী (আ.) কে রাসূল (সা.) এর চেয়েও বড় মনে করে। আপনাদেরকেও দেখি শুধু হযরত আলীকে নিয়েই কথা বলেন এবং রাসূলের অন্য সাহাবীদের নিয়ে কোনো আলোচনাই করেন না। কেন?
উত্তর: এ প্রশ্নের উত্তরকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:
প্রথমত, এমন কোন শিয়া নেই যে হযরত আলী (আ.)কে রাসূল (সা.) এর চেয়ে বড় মনে করে; বরং শিয়ারা হযরত মুহাম্মদ (সা.) কে সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল মনে করে ও মনে প্রানে বিশ্বাস করে। আর হযরত আলী (আ.) এবং অন্যান্য ইমামকে রাসূল (সা.) এর প্রতিনিধি বলে শ্রদ্ধা করে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য প্রখ্যাত শিয়া আলেমদের বই পড়তে পারেন। এখানে উদাহরণ হিসেবে শেখ তুসির “তালখিসুল মোহাসসেল” ও আল্লামা হিল্লির “কাশফুল মুরাদ” বই’র কথা উল্লেখ করা যেতে পারে।
দ্বিতীয়ত, শিয়ারা রাসূল (সা.)এর বহু সাহাবীকে শ্রদ্ধা এবং তাদের নিয়ে আলোচনা করেন। এখানে উদাহরণ হিসেবে হযরত আবু যার গিফারি, হযরত সালমান ফারসি, হযরত মিকদাদ, হযরত আম্মার ইয়াসিরের কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায়। শিয়াদের বিভিন্ন ঐতিহাসিক বইপুস্তক এ সব সাহাবীর জীবন ও কর্মে পরিপূর্ণ। শিয়াদের হাদিসগ্রন্থগুলিতেও এ সব সাহাবীর উদ্ধৃতি দিয়ে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে। অবশ্য আমাদের মনে রাখতে হবে, রাসূল (সা.)এর সঙ্গে যে সব ব্যক্তি ও সাহাবী ওঠাবসা করেছেন তাদের সবার মর্যাদা সমান ছিল না।
তৃতীয়ত, হ্যা, যদি হযরত আলী (আ.) সম্পর্কে তুলনামূলকভাবে বেশি আলোচনা করা হয় তার কারণ হল, তিনি সাহাবীদের মধ্যে অধিক ও বিশেষ মর্যাদার অধিকারী। আহমদ বিন হাম্বল বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী, রাসূল (সা.) গাদিরে খোমের জনসভায় এ বাক্যটি চার বার পুনরাবৃত্তি করেন: “মান কুনতু মাওলাহু ফাহাযা আলীয়ুন মাওলাহু”[1] অর্থাত্, “আমি যার মাওলা (আমার পর) আলীও তার মাওলা।”
এ ছাড়া, তাবুকের ঘটনায় রাসূল (সা.) আলী (আ.)কে উদ্দেশ করে বলেন:
افلا ترضی یا علی ان تکون منی بمنزلة هارون من موسی... [2]
অর্থাত্ “আমার কাছে তোমার মর্যাদা ঠিক সেরকম যেরকমটি ছিল মুসার কাছে হারুনের মর্যাদা।”
এ সম্পর্কে যে শুধুমাত্র রাসূল (সা.)এর বহু হাদিসই বর্ণিত হয়েছে তা নয়, বরং বহু সাহাবী এবং শিয়া-সুন্নি আলেম এ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। উদহারণ হিসেবে বলা যায়, যখন হযরত আলী (আ.) যখন অনেক সামাজিক ও জ্ঞানগত সমস্যার সমাধান করে দিতেন তখন ২য় খলিফা বলতেন:
عقمت النساء ان یلدن مثل علی بن ابی طالب. [3]
“বিশ্বের আর কোনো নারী আলীর মত ব্যক্তিত্বের জন্ম দেয়নি।”
উপসংহারে বলা যায়, হযরত আলী (আ.)এর শানে রাসূল (সা.) যে সব হাদিস বর্ণনা করেছেন তার সংখ্যা অন্য সব সাহাবীর চেয়ে অনেক অনেক বেশি। সেইসঙ্গে হযরত আলী (আ.)এর যে সব বিজ্ঞচিত ও জ্ঞানগর্ভ বক্তৃতা বর্তমানে পাওয়া যায়-পরিমান ও গুণগত মানের দিক থেকে অন্য কোনো সাহাবী তার ধারে কাছেও নেই। কাজেই রাসূলের (সা.) সাহাবীদের সম্পর্কে কথা উঠলে হযরত আলীর কথা বেশি আসবে- এটাই স্বাভাবিক।
১) আল্লামা আমিনী, গাদীর ১খ:, পৃ:৯-১১
২) ইবনে হিশাম, সীরাতে নবী, ২/৫১৯-৫২০, বোখারী, তাবুকের যুদ্ধ, ৩/৬ প্রকাশ ১৩১৪, মুসলিম, আলীর ফজিলত অধ্যায় , ৭/১২০, ইবনে মাজা, সাহাবীদের ফজিলত অধ্যায়ে, ১/৫৫,
[3])আল্লামা আমিনী, আলগাদীর, খ৬, পৃ: ৩০৮ নাজাফ প্রকাশনা, আরো বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন; তাহজিবুল তাহজিব, ইবনে হাজার আসকালানি, পৃ:৩৩৭, হায়দ্রাবাদ প্রকাশনা, জালাল উদ্দিন সিউতির তারিখে খলিফা, পৃ: ৬৬, ইমাম আহমাদ বিন হাম্বালের মাসনদে ১খ:, পৃ:৯৮,১১৮,১১৯;