বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

নৈতিকতা, ধর্ম ও জীবন- ৯ পর্ব

আমরা মানসিক সুস্থতাসহ জীবনের নানা ক্ষেত্রে ধর্মের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেছি। আল্লাহর প্রতি ঈমান আনলে মানুষের মাঝে এমন কিছু গুন বিকাশ লাভ করে, যা তার জীবন চলার পথে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। আশাবাদ হলো এমনি একটি গুন। আশা-প্রত্যাশা মানুষকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের বিষয়ে উতসাহী করে তোলে। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য স্বাভাবিকভাবেই মানুষ ভালো কাজ করে। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এ সম্পর্কে বলেছেন, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। যে মুমিন আল্লাহর ওপর আশা-ভরসা রাখে না, সদাচরণ করে না এবং অন্য মুমিনের গিবত করা থেকে বিরত থাকে না, আল্লাহ তাকে দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণ দান করেন না।’ তিনি আল্লাহর ওপর আশা রাখতে এবং আল্লাহর পথে চলতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
 
গত পাঠে আমরা বলেছি, জীবনের প্রতিটি স্তরে 'আশাবাদী' হতে হবে। এর ফলে মানুষের মনে প্রশান্তি আসবে। মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত হবে। মনোচিকিৎসকরাও বলছেন, রোগীদের ক্ষেত্রে 'আশাবাদ' এবং জীবনের প্রতি 'ইতিবাচক' দৃষ্টিভঙ্গি  রোগ দ্রুত সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে। আজকের আসরে আমরা মানুষের জীবনে ঈমানের আরো কিছু প্রভাব নিয়ে কথা বলবো।
 
‘মনের শান্তিই বড় শান্তি’- বাংলা ভাষায় এমন একটি প্রবচন প্রচলিত রয়েছে। মানসিক শান্তি নিশ্চিত করার উপায় ও কৌশল নিয়ে সারা বিশ্বেই আলোচনা চলছে। পুঁজিবাদী সমাজগুলোতে ব্যক্তি ও সামাজিক সম্পর্ক ক্রমেই জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে। ফলে বেড়ে যাচ্ছে মানসিক অবসাদ ও দুশ্চিন্তার মতো ধ্বংসাত্বক ব্যাধি। তবে অধিকাংশ মনোবিজ্ঞানীই এ বিষয়ে একমত যে, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা-আদর্শই মনের শান্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে। এ কারণে ঐশী ধর্মগুলোতে এবাদত-বন্দেগির ওপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। সব এবাদতের অভিন্ন বৈশিষ্ট্য হলো- আল্লাহকে স্মরণ করা। মানুষের মনের শান্তি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে এটি মহৌষধের মতোই।
 
মানুষ তার মনের শান্তির জন্য বৈষয়িক সব ব্যবস্থাই করছে,কিন্তু তাদের কাঙ্খিত সেই মানসিক সুখ ও শান্তি ধরা-ছোয়ার বাইরেই থেকে যাচ্ছে। বর্তমান ভোগবাদী সমাজে মানসিক সুখ ও শান্তিকে মরুভূমির মরীচিকার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে।
 
মরুভূমিতে তৃষ্ণার্ত হরিণ তৃষ্ণামেটাতে যতো দ্রুত ওই মরীচিকার দিকে ছুটে যায়, জলাশয়ের মতো দেখতে সেই মরীচিকা ঠিক ততো দূরে সরে যেতে থাকে। এর ফলে ওই মরীচিকাহরিণের তৃষ্ণাকে  আরো বাড়িয়ে দেয়। ভোগবাদী সমাজেও ঠিক একই অবস্থা চলছে। ভোগবাদী সমাজের মানুষেরা কেবল ধন-সম্পদ ও পদমর্যাদার মতো বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করেই সুখ ও শান্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে সুখ-শান্তি ক্রমেই আরো দূরে সরে যাচ্ছে।
 
ইরানের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ ও শহীদ অধ্যাপক মোর্তজা মোতাহারি  এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “অনেকেই মনে অশান্তি অনুভব করে। মনে সুখ নেই।  তাদের মন অস্থির ও অবসাদগ্রস্ত। কিন্তু এর কারণও তারা জানে না। যদিও তাদের জীবনের চারপাশে নানা সুযোগ-সুবিধায় ভরপুর। বৈষয়িক সব কিছুই তাদের আছে। তারপরও শান্তি নেই। তাদের আত্মায় শূন্যতা ও ঘাটতি অনুভব করে। এ ধরনের লোকদের জানা উচিত যে, বৈষয়িক সুযোগ-সুবিধার বাইরেও তাদের আরো কিছুর প্রয়োজন রয়েছে।  তাদের জানা উচিত যে, মানুষের প্রকৃতিগত ও স্বভাবগত  চাহিদা হলো-ঈমান এবং তারা ঈমানকে উপেক্ষা করেছে। আমরা যখনি ঈমানের উতস পানে তাকাই এবং ঐশী আলো দেখতে পাই। আল্লাহকে মন-প্রাণ ও আত্মা দিয়ে অনুভব করি। আর সে সময়ই কল্যাণ ও সুখের অর্থ অনুভব করি। যেমনিভাবে পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, আল্লাহর স্মরণ হচ্ছে এমন জিনিস যার সাহায্যে মন প্রশান্তি লাভ করে এবং শূন্যতা ও হতাশা থেকে মুক্তি পায়৷”
 
ইরানের বিখ্যাত মুফাস্সিরে কুরআন আল্লামা তাবাতাবায়ি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, “কেবলমাত্র আল্লাহর স্মরণই মানুষকে প্রশান্তি দেয় এবং অন্য কোনো কিছুই এর স্থলাভিষিক্ত হতে পারে না। এর কারণ হলো, মানুষ সুখী হতে চায় এবং দুঃখ-দুর্দশাকে ভয় করে। আর এসব কিছুই একমাত্র আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে। কেবল তিনিই যা করতে চান,তা সম্পাদন করতে পারেন। এ কারণে ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা দূঢ় অবলম্বনের খোঁজ করে,যাতে সুখ ও কল্যাণ নিশ্চিত হয়।” এ অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণের মধ্যদিয়ে মানুষ সর্বরোগের ওষুধ সেবনের মতো সুখ অনুভব করে বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।
 
আসলে আল্লাহর সঙ্গে ইতিবাচক সম্পর্ক গড়ে তোলার একটি উপায় হলো জিকির বা আল্লাহর স্মরণ। আর জিকিরের মাধ্যমে অন্তরে প্রশান্তি আসে। জিকিরের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আল্লাহর নামটি বারে বারে আবৃত্ত হয়, মনে শান্তি অনুভূত হয় এবং উন্নত ভবিষ্যতের আশা জাগে। আর প্রত্যেক এবাদতের মূলে রয়েছে আল্লাহর স্মরণ। এ কারণে এবাদত-বন্দেগি মানুষের মনের সুখ ও প্রশান্তি নিশ্চিত করে।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা ...
১০ ই মহররমের স্মরণীয় কিছু ঘটনা ও ...
আত্মগঠনের মাস : রমযান
দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়
পবিত্র কোরআনের আলোকে কিয়ামত
ইমাম মাহদী (আ.)এর আগমন একটি অকাট্য ...
পিতা মাতার সাথে উত্তম আচরণ

 
user comment