ভূমিকা
আমরা যারা মুসলমান তাদের নানা ধরনের সমস্যা রয়েছে। আমরা জানি না যে, আমরা কেন মুসলমান, ইসলাম ধর্ম কেন শ্রেষ্ঠ ধর্ম, আল্লাহ তা‘আলার প্রেরিত নবী-রাসূলগণ কেমন ছিলেন, আমরা কেন তাঁদের মেনে চলব অথবা আমরা কাদের মতো হব ইত্যাদি। আমরা এগুলো সম্পর্কে যথাযথভাবে চিন্তা-ভাবনা করি না বলেই মনে হয়।
আমরা আমাদের ছেলেমেয়েদের বিভিন্ন জিনিস শেখাই। কাউকে গান শেখাই, কাউকে নাচ, কাউকে অভিনয়, কাউকে খেলাধুলা আবার কাউকে অন্য কিছু। অর্থাৎ গায়ক, নৃত্যশিল্পী, অভিনয় শিল্পী তৈরি করছি। বিশেষ করে নাচের ব্যাপারে বলা যায় যে, প্রাচীনকালে রাজা-বাদশারা তাদের বিনোদনের জন্য সঙ্গী-সাথী নিয়ে একটি ঘরের মধ্যে যে নাচ দেখতো সেটাই আমরা টিভিতে, মঞ্চে দেখতে পাচ্ছি। অর্থাৎ আমরা কন্যাসন্তানদের যেন এক একজন নর্তকী বানাচ্ছি। ভদ্র ভাষায় যাকে ‘নৃত্যশিল্পী’ বলা হচ্ছে।
যদি আমরা কোন ছোট ছেলে বা মেয়েকে জিজ্ঞেস করি, তুমি বড় হয়ে কী হতে চাও। সে উত্তর দেয় যে, অমুক গায়কের মতো, অমুক নায়কের মতো, অমুক নৃত্যশিল্পীর মতো, অমুক খেলোয়াড়ের মতো হতে চাই। কেউ কি কখনও বলেছে, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মতো জীবন যাপন করতে চাই, বিশ্বের নারী জাতির আদর্শ হযরত ফাতিমা (আ.)-এর মতো হতে চাই। না, কদাচিৎ হয়ত তা শোন যায়। এটি তাদের দোষ নয়। এর জন্য আমরাই দায়ী।
আমরা আমাদের সন্তানদের ছোট থেকেই অনেক গায়ক, নায়ক, খেলোয়াড়ের সাথে পরিচিত করিয়েছি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কিংবা হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সাথে যেভাবে পরিচয় করানো উচিত ছিল সেভাবে পরিচয় করাইনি।
আমরা হয়ত হযরত ফাতিমার নাম বলেছি, মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর মেয়ে হিসাবে তাঁর পরিচয় দিয়েছি। কিন্তু কতটুকু এ পরিচয়? আমরা নিজেরাই হয়ত তাঁর সঠিক পরিচয় জানি না। তাহলে কীভাবে অন্যদের কাছে তাঁর পরিচয় তুলে ধরব? বংশ পরম্পরায় না আমাদের জীবন তাঁদের মতো , আর না আমাদের সন্তানদের জীবন।
হযরত ফাতিমা (আ.) রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর মেয়ে। কিন্তু এর চেয়ে বড় পরিচয় হল হযরত ফাতিমা হলেন বেহেশতের নারীদের নেত্রী। আর এটিই তাঁর আসল পরিচয়।
আমরা জানি যে, কেবল আত্মীয়তার সম্পর্ক থাকলেই যে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। যদি নবী-রাসূলগণের স্ত্রী-সন্তানও হয় তবুও না। হযরত নূহ (আ.)-এর স্ত্রী-সন্তান এবং হযরত লূত (আ.)-এর স্ত্রী জাহান্নামবাসী হয়েছে, এটি পবিত্র কুরআনেই বর্ণিত হয়েছে।
সূরা তাহরীমের ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে :
আল্লাহ অবিশ্বাসীদের জন্য নূহের স্ত্রী ও লূতের স্ত্রীর দৃষ্টান্ত উপস্থিত করেছেন, তারা আমার বান্দাদের মধ্যে দুই সৎকর্ম-পরায়ণ বান্দার অধীন ছিল। কিন্তু তারা তাদের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল। ফলে তারা (নূহ ও লূত) তাদের আল্লাহর (শাস্তি) থেকে তাদের রক্ষা করতে পারল না এবং তাদের বলা হল, ‘তোমরা উভয়ে প্রবেশকারীদের সাথে জাহান্নামে প্রবেশ কর।’
অপরদিকে নূহ (আ.)-এর পুত্র সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা হূদের ৪২-৪৩ নং আয়াতে বলা হয়েছে :
‘...নূহ তার পুত্রকে, যে তার থেকে পৃথক স্থানে ছিল, আহ্বান করে বলল, ‘হে আমার বৎস! আমাদের সঙ্গে আরোহণ কর এবং অবিশ্বাসীদের সঙ্গী হয়ো না।’ সে বলল, ‘অতিসত্বর আমি কোন পর্বতে আশ্রয় গ্রহণ করব যা আমাকে (প্লাবনের) পানি হতে রক্ষা করবে।’ সে (নূহ) বলল, ‘আজ আল্লাহর (শাস্তির) আদেশ থেকে পরিত্রাণ দানের কেউ নেই, তবে তিনি (আল্লাহ) যার প্রতি অনুকম্পা করেন।’ সহসা তাদের (পিতা-পুত্রের) মধ্যস্থলে তরঙ্গ প্রতিবন্ধক হয়ে গেল এবং সে নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’
এ আয়াত দু’টি থেকে বোঝা যায়, প্রত্যেককে আল্লাহর নির্দেশিত পথে জীবন যাপন করেই বেহেশতে প্রবেশ করতে হবে। আল্লাহর বিরোধিতা করে কেউ বেহেশতে যেতে পারবে না। এমনকি যদি রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর স্ত্রী-সন্তান হন, তবুও তাঁরা কেবল এ সম্পর্কের ভিত্তিতে বেহেশতে যেতে পারবেন না। যেমনটি বলা হয়েছে সূরা আহযাবের ৩০ নং আয়াতে :
‘হে নবীপত্নিগণ! তোমাদের মধ্যে যে কেউ প্রকাশ্য অশ্লীল আচরণ করবে তার শাস্তি দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হবে এবং এটা আল্লাহর পক্ষে অতি সহজ।’
হযরত ফাতিমা মাত্র ১৮ বা ২০ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। যদিও এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কিন্তু তাঁর সর্বোচ্চ জীবনকাল ৩০ বছর পর্যন্ত বলা হয়ে থাকে। যেটাই হোক না কেন, এ সময়ের মধ্যে তিনি এমন কী কাজ করেছেন যার জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ‘বেহেশতবাসী নারীদের নেত্রী’ বলে অভিহিত করলেন- এ প্রশ্নটি আমাদের মনে আসাটাই স্বাভাবিক। আর এ বিষয়টি অবশ্যই বোঝা যায় যে, রাসূলুল্লাহ্ (সা.) নিজের খেয়াল-খুশিমতো তাঁকে এমন অভিধায় অভিহিত করেননি। কারণ, তিনি প্রবৃত্তির বশবর্তী হয়ে কোন কথা বলেন না।১ আর এ থেকে আমরা বলতে পারি, হযরত ফাতিমা (আ.) ইসলামের জন্য বড় খেদমত আঞ্জাম দিয়েছেন, মহান আল্লাহর রাসূল (সা.) এজন্যই তাঁকে ভালবাসতেন এবং তাঁকে অনুসরণ করার জন্য আমাদের নির্দেশ দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু এ বিষয়টি আমাদের অনেকেরই জানার বাইরে রয়ে গেছে। আমরা এ বিষয়ে উদাসীন থেকেছি।
হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সংক্ষিপ্ত জীবনী তুলে ধরার জন্যই এ প্রবন্ধের অবতারণা।
হযরত ফাতিমার জন্মগ্রহণ
রাসূলুল্লাহ (সা.) চল্লিশ বছর বয়সে নবুওয়াতপ্রাপ্ত হন। এরপর মহান আল্লাহর নির্দেশে গোপনে তিন বছর মানুষকে ধর্মের দিকে দাওয়াত দিতে থাকেন। তিন বছর পর তিনি প্রকাশ্যে নিজের আত্মীয়-স্বজন ও মক্কাবাসীকে ধর্মের পথে দাওয়াত দেন। রাসূলের গোত্র বনু হাশিমের মধ্য থেকে তাঁর চাচা আবু লাহাব তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। আর মক্কার নেতৃস্থানীয় কুরাইশরা সকলে রাসূলের সাথে শত্রুতা শুরু করে।
এর মধ্যে রাসূলের পুত্রসন্তানরা মারা গেলে কাফির-মুশরিকরা রাসূলকে নিয়ে ঠাট্টা করতে থাকে। আস ইবনে ওয়ায়েল রাসূলকে ‘আবতার’ (লেজকাটা) বা নির্বংশ বলে গালি দেয়। সে বলত, ‘আরে মুহাম্মাদের তো কোন পুত্রসন্তান নেই, সে মরে গেলে তার নাম নেয়ার মতো ও কেউ থাকবে না।’ রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এ কথায় খুব কষ্ট পেতেন। মহান আল্লাহ তাঁর এ কষ্ট দূর করার জন্য যে অমূল্য নেয়ামত তাঁকে দান করেন তিনিই হলেন হযরত ফাতিমা (আ.)। এর প্রেক্ষিতেই পবিত্র কুরআনের সূরা কাওসার নাযিল হয়।
আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী তাঁর তাফসীর গ্রন্থে বলেন, হযরত ফাতিমার শানে এ সূরা নাযিল হয়েছে। তিনি এ প্রসঙ্গে আরও বলেন, অনেক অত্যাচার সত্ত্বেও হযরত ফাতিমার বংশধারা পৃথিবীতে টিকে আছে, অন্যদিকে বনু উমাইয়্যা ধ্বংস হয়ে গেছে।
এর সাথে আমরা বলতে চাই, পরবর্তী কালে বনু আব্বাসও রাসূলের পরিবারের প্রতি নিষ্ঠুর নির্যাতন চালিয়েছিল। অবশেষে তারাও ধ্বংস হয়ে গেছে। যারা রাসূলের বিরুদ্ধে কথা বলত তাদের বংশধরদের কোন খবর পৃথিবীর মানুষ জানে না, নেয় না। রাসূলের বংশধরদের নিশ্চিহ্ন করার জন্য সকল ধরনের চেষ্টা করেও তারা সফল হয়নি। আবু জেহেল, আবু সুফিয়ানরা চেয়েছিল রাসূলকে হত্যা করতে, আবু সুফিয়ানের সন্তান আমীরে মুআবিয়া চেয়েছিল হযরত আলীকে হত্যা করতে, তার রাজত্বকালেই ইমাম হাসানকে বিষ প্রয়োগে হত্যা করা হয়, মুআবিয়ার ছেলে ইয়াযীদ কারবালায় নৃশংসভাবে ইমাম হুসাইনকে সপরিবারে শহীদ করে। পরবর্তীকালে একের পর এক রাসূলের বংশধরকে হত্যা করা হয়। তারপরও যারা পুত্রসন্তান নিয়ে গর্ব বোধ করত তাদের কোন খবর আজ বিশ্ববাসী জানে না, অথচ রাসূলের বংশধারা হযরত ফাতিমার মাধ্যমে কিয়ামত পর্যন্ত বজায় থাকবে। এ বংশধারাতেই শেষ জামানায় ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হবেন এবং তিনি সারা বিশ্বে আল্লাহর ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করবেন। সেদিন আল্লাহ তা‘আলার সেই ঘোষণার বাস্তবায়ন হবে যা তিনি সূরা তওবায় বলেছেন :
‘তিনি তো সেই সত্তা যিনি তাঁর রাসূলকে পথনির্দেশ ও সত্যধর্মসহ প্রেরণ করেছেন, যাতে সেটিকে (নিজ ধর্মকে) সমুদয় ধর্মের ওপর বিজয়ী করেন; যদিও অংশীবাদীরা তা অপছন্দ করে।’২
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘সকল নারীর সন্তানদের তাদের পুরুষদের সাথে সংযুক্ত করা হয় শুধু ফাতিমা ব্যতীত। ফাতিমার সন্তানদের আমার সাথে সম্পর্কিত করা হয়েছে।’৩
আর সেজন্যই আমরা ইতিহাসে দেখতে পাই যে, হযরত ফাতিমার সন্তানদের মানুষ ‘ইয়াবনা রাসূলিল্লাহ’ অর্থাৎ হে রাসূলের সন্তান বলে সম্বোধন করত।
যা হোক, হযরত ফাতিমার জন্মের মাধ্যমে রাসূল অপরিসীম মানসিক শান্তি অনুভব করেন। তিনি তাঁকে কতটা ভালবাসতেন তা তাঁর কথায় বারবার প্রকাশিত হয়েছে। এ ভালবাসা অকারণ ছিল না। হযরত ফাতিমার তাকওয়া, তাঁর দুনিয়াবিমুখতা, তাঁর দায়িত্বশীলতা সব মিলিয়ে মহান আল্লাহর কাছে তাঁর যে অবস্থান সে কারণেই রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ভালবাসতেন। রাসূলুল্লাহ্্ (সা.)-এর কাছে হযরত ফাতিমা আগমন করলে তিনি তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্ভাষণ জানাতেন।৪ এটি কি শুধু একজন কন্যার প্রতি পিতার ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ছিল? আলেমগণ বলেছেন, কখনই নয়। কারণ, অন্য কোন সন্তানের ক্ষেত্রে রাসূল এমন কাজ করতেন না। প্রকৃতপক্ষে এ ছিল বেহেশতের নারীদের নেত্রীর প্রতি মহান আল্লাহর রাসূলের সম্মান বা ভালবাসা প্রদর্শন।
হযরত ফাতিমার জন্মকালীন নারী জাতির অবস্থা
হযরত ফাতিমা এমন এক সময় জন্মগ্রহণ করেন যখন সারা বিশ্বে নারীদের মানুষ বলে গণ্য করা হত না। তাদেরকে নানাভাবে নির্যাতন করা হত। খ্রিস্টানরা নারীকে ‘শয়তানের দোসর’ বলত এবং তাকে সব পাপের উৎস বলে মনে করত। আরবরা কন্যাসন্তান জন্মগ্রহণ করলে তাকে জীবন্ত কবর দিত।
পবিত্র কুরআনে সেই জাহেলিয়াতের যুগের কথা এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
‘আর যখন তাদের কাউকে কন্যাসন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখ কালো হয়ে যায়, অসহ্য মনস্তাপে ক্লিষ্ট হতে থাকে। তাকে শোনানো সুসংবাদের দুঃখে সে লোকদের থেকে মুখ লুকিয়ে থাকে। সে ভাবে তাকে অপমান সহ্য করে থাকতে দেবে, না তাকে মাটিতে পুঁতে ফেলবে।’৫
হযরত ফাতিমা সেই অবস্থায় জন্মগ্রহণ করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর মাধ্যমে আল্লাহ নারী জাতিকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) প্রথমে তাঁর স্ত্রী হযরত খাদীজার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে নারী জাতিকে সম্মানিত করেন। পরে স্বীয় কন্যা ফাতিমার প্রতি দায়িত্ব পালন করেও নারীদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করেন।
কোন কোন রেওয়ায়েতে হযরত ফাতিমার জন্মগ্রহণের সময় বেহেশতী নারীর আগমনের উল্লেখ দেখতে পাওয়া যায়। হযরত খাদীজা বলেন, ‘ফাতিমার জন্মগ্রহণের সময় সাহায্য করার জন্য আমি কুরাইশ নারীদের ডেকে পাঠিয়েছিলাম। তারা এ বলে প্রত্যাখ্যান করল যে, আমি মুহাম্মাদকে বিয়ে করেছি। আমি কিছুক্ষণের জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলাম। হঠাৎ দেখলাম চারজন উজ্জ্বল জ্যোতির্ময় দীর্ঘকায়া বিশিষ্ট নারী আমার দিকে এগিয়ে আসছেন। আমাকে আতংকিত দেখে তাঁরা বললেন : হে খাদীজা! ভয় পাবেন না। আমি হলাম ইসহাকের মা সারা, আর অপর তিনজন হলেন ঈসার মা মারইয়াম, ফিরআউনের স্ত্রী আছিয়া এবং মূসার বোন উম্মে কুলসুম। আল্লাহ আমাদের পাঠিয়েছেন আপনাকে সাহায্য করতে। এ বলে সেই জ্যোতির্ময় নারীরা আমার চারপাশ ঘিরে বসলেন। আমার মেয়ে ফাতিমা জন্মগ্রহণ করা পর্যন্ত তাঁরা আমার সেবা করলেন।’৬
হযরত ফাতিমার নামকরণ
মহান আল্লাহর নির্দেশে মহানবী (সা.) তাঁর কন্যাসন্তানের নাম রাখেন ফাতিমা। ‘ফাতম’ শব্দের অর্থ রক্ষা করা। আর তাঁর এমন নামকরণ সম্পর্কে মহানবী বলেন : ‘তার নামকরণ করা হয়েছে ফাতিমা। কেননা, আল্লাহ তাকে ও তার অনুসারীদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্ত রেখেছেন।’৭
হযরত ফাতিমার শৈশবকাল
সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ও রাসূল (সা.) ও বেহেশতী নারী হযরত খাদীজার গৃহে হযরত ফাতিমা জন্মগ্রহণ করলেন। সবচেয়ে সম্মানিত গৃহ। অথচ পার্থিব দিকে থেকে খুব কষ্টকর একটি গৃহে তিনি জন্ম নিলেন। যখন হযরত খাদীজার সাথে রাসূলের বিয়ে হয় তখন হযরত খাদীজা ছিলেন আরবের অন্যতম ধনাঢ্য ব্যক্তিত্ব। কিন্তু অসহায় মানুষদের সেবা ও নিপীড়িত মুসলমানদের পেছনে ব্যয় করতে গিয়ে তিনি শোচনীয় অবস্থায় নিপতিত হন।
ধর্ম প্রচারের কারণে রাসূলের ওপর কুরাইশরা নানাভাবে নির্যাতন শুরু করে। এভাবে হযরত ফাতিমার দুই বছর অতিক্রান্ত হয়। হযরত ফাতিমার জন্মের মাত্র দুই বছর পর তাঁরা সবচেয়ে কঠিন অবস্থায় পড়েন। বনু হাশিমের সাথে কুরাইশরা সকল সম্পর্ক ছিন্ন করার ঘোষণা দেয়। তখন বনু হাশিমের নেতা ছিলেন হযরত আবু তালিব। তিনি বনু হাশিমকে নিয়ে শেবে আবি তালিবে (আবু তালিবের গিরিগুহা) আশ্রয় নেন।
দিনের পর দিন তাঁদেরকে না খেয়ে থাকতে হত। এতে মহিলাদের বুকের দুধ শুকিয়ে যায়। সন্তানরা দুধ না পেয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে যেত। হযরত ফাতিমা শিশু বয়সেই এমন এক অবস্থার মধ্যে পড়েন। দীর্ঘ তিন বছর তাঁরা এ অবস্থার মধ্যে কাটান। অবশেষে তিন বছর পর তাঁরা এ অবরোধ থেকে বেরিয়ে আসেন। কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে এতো কষ্ট সহ্য করার পর সেই বছরই হযরত ফাতিমার প্রাণপ্রিয় মা ইন্তেকাল করেন। যে বয়সে তাঁর মাতৃস্নেহের প্রয়োজন, যে বয়সে তাঁর লালিত-পালিত হওয়ার কথা সে বয়সেই তাঁর ওপর রাসূলের দেখাশুনার গুরুদায়িত্ব এসে পড়ে। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র পাঁচ। তিনি রাসূলকে মায়ের মতোই যত্ন করতেন, তাঁর দিকে খেয়াল রাখতেন। শুধু ঘরের মধ্যে নয়, ঘরের বাইরেও তিনি রাসূলের বিষয়াদির প্রতি লক্ষ্য রাখতেন। অন্যান্য শিশুর মতো তিনি খেলাধুলা করতেন না। সেই ছোট বেলাতেই তিনি একজন দায়িত্বশীল নারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। যখনই তিনি জেনেছেন যে, কাফির-মুশরিকরা রাসূলকে নির্যাতন করছে, তখনই তিনি সেখানে ছুটে গেছেন এবং পিতাকে উদ্ধার করে এনেছেন। একবার আবু জেহেল ও তার সঙ্গীরা রাসূলের সিজদাবনত অবস্থায় মাথার ওপর উটের নাড়িভুঁড়ি চাপিয়ে দেয়। যখন হযরত ফাতিমা এ ঘটনার কথা শোনেন তখনই তিনি দৌড়ে সেখানে চলে যান এবং পিতার মাথার ওপর থেকে সেগুলো সরিয়ে ফেলেন। তিনি আবু জেহেলকে এজন্য তিরস্কার করতে থাকেন।
তিনি রাসূলের প্রতি এতটাই যত্নশীল ছিলেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁকে ‘উম্মু আবিহা’ (তার পিতার মা) বলে আখ্যায়িত করেন।৮
মদীনায় হিজরত
ইসলাম প্রচারের ত্রয়োদশ বর্ষে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) মহান আল্লাহ্্র নির্দেশে মদীনায় হিজরত করেন। তাঁর হিজরত করার সময় হযরত ফাতিমা মক্কাতেই অবস্থান করছিলেন। কয়েকদিন পর হযরত আলী (আ.) হযরত ফাতিমা ও বনু হাশিমের আরও কয়েকজন নারীসহ হিজরত করেন।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ নারীর বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া
দ্বিতীয় হিজরীতেই হযরত ফাতিমার সাথে হযরত আলীর বিয়ে হয়। তাঁর বিয়ের বিষয়ে ইতিহাসে যে বর্ণনা পাওয়া যায় তাতে তাঁর মর্যাদা আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে যায়। হযরত আবু বকর, হযরত উমর, হযরত উসমান এবং আরও অনেক খ্যাতনামা সাহাবী হযরত ফাতিমাকে বিয়ে করার জন্য রাসূলের কাছে প্রস্তাব দেন। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) তাঁদের কারও প্রস্তাবই গ্রহণ করেননি। তিনি বলেন, ‘ফাতিমার বিয়ে মহান আল্লাহর নির্দেশে সম্পন্ন হবে।’ হযরত আবদুর রহমান ইবনে আওফ রাসূলের কাছে গিয়ে বলেন, ‘যদি ফাতিমাকে আমার সাথে বিয়ে দেন, তাহলে মূল্যবান মিশরীয় কাপড় বোঝাই ১০০০টি উট এবং সেসঙ্গে ১০০০ দিনার (স্বর্ণমুদ্রা) মোহরানা হিসাবে প্রদান করব।’ রাসূল (সা.) এ প্রস্তাবে খুব অসন্তুষ্ট হন এবং বলেন, ‘তুমি কি মনে করেছ আমি অর্থ ও সম্পদের গোলাম? তুমি সম্পদ ও অর্থ দিয়ে আমার সাথে বড়াই করতে চাও?’৯
হযরত ফাতিমার বিয়ে প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন, ‘আল্লাহর ফেরেশতা আমার নিকট এসে বললেন, আল্লাহ আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং বলেছেন, তিনি আপনার কন্যা ফাতিমাকে আসমানে আলী ইবনে আবি তালিবের সাথে বিয়ে দিয়েছেন। সুতরাং আপনিও তাঁকে জমিনে তাঁর সাথে বিয়ে দিন।’১০
রাসূলুল্লাহ (সা.) পরবর্তীকালে বলেন, ‘আলীর জন্ম না হলে ফাতিমার সুযোগ্য স্বামী পাওয়া যেত না।’১১
বিয়ের সময় হযরত ফাতিমার বয়স ছিল মাত্র দশ-এগারো বছর। অথচ এ বয়সেই রাসূল বলছেন, ‘আলীর জন্ম না হলে ফাতিমার সুযোগ্য স্বামী পাওয়া যেত না।’ এ কথার মধ্যে কত বড় রহস্য লুকিয়ে ছিল তা পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছে।
ইসলামের জন্য হযরত আলী (আ.)-এর ত্যাগ সম্পর্কে আমরা জেনেছি। বদর, উহুদ, খন্দক, খায়বার, যাতুস সালাসিল, হুনায়ুন প্রভৃতি যুদ্ধে তাঁর অতুলনীয় অবদানের কথা ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা রয়েছে। অন্যদিকে তিনিই হলেন রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর জ্ঞানের ভাণ্ডার। একইভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.) ও হযরত আলীর প্রশান্তির মাধ্যম হযরত ফাতিমার অবদানও আমরা দেখেছি। তিনি রাসূলের ওফাতের পর ক্রান্তিকালে মানুষকে সত্যের দিকে আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি তাঁর ভূমিকার মাধ্যমে সত্যের আলো প্রজ্বলিত করেই এ পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাঁর প্রসিদ্ধ দু’টি ভাষণ ১২ আমাদের হেদায়াতের পথনির্দেশ করে। তাই আমরা বুঝতে পারি কেন রাসূল সেই দশ বছরের বালিকা ও বাইশ বছরের যুবক সম্পর্কে এ কথা বলেছিলেন!
বিয়ে পরবর্তী জীবনে রাসূলের সান্নিধ্য
বিয়ের পরও হযরত ফাতিমা রাসূলের সেবায় নিয়োজিত থাকতেন। তাঁর ঘর থেকে রাসূলের ঘর বেশি দূর ছিল না। তিনি সবসময় রাসূলের খবর নিতেন। রাসূলুল্লাহ (সা.)ও একইভাবে হযরত ফাতিমার খোঁজ-খবর নিতেন। প্রতিদিন প্রভাতে মসজিদে যাওয়ার পূর্বে রাসূল (সা.) হযরত ফাতিমার সাথে দেখা করতেন। নাফে বর্ণনা করেন, ‘আমি আট মাস মদীনায় বসবাস করেছিলাম। তখন প্রতিদিন রাসূল (সা.)-কে দেখতাম যখন তিনি ফজর নামায আদায়ের জন্য ঘরের বাইরে আসতেন তখন সর্বপ্রথম ফাতিমার দরজার সন্নিকটে গিয়ে বলতেন :
اَلسَّلامُ عَلَيْكُمْ يَا اَهْلَ الْبَيْتِ وَ رَحْمَةُ اللهِ وَ بَرِكَاتُهُ، اَلصَّلاةُ، ‘
হে আহলে বাইত! তোমাদের প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত (বর্ষিত হোক)। নামাযের সময় হয়েছে। হে আহলে বাইত! নিশ্চয়ই আল্লাহ চান তোমাদের থেকে সকল পাপ-পঙ্কিলতা দূর করতে এবং তোমাদের সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে।’১৩
কোন সফরে বা যুদ্ধে যাওয়ার সময় রাসূল সবশেষে হযরত ফাতিমার কাছ থেকে বিদায় নিতেন। আবার মদীনায় ফিরে সর্বপ্রথম তিনি হযরত ফাতিমার সাথে সাক্ষাৎ করতেন।
যুদ্ধক্ষেত্রে সেবিকার ভূমিকায়
হিজরতের প্রথম বছর মোটামুটি নির্বিঘ্নে কাটলেও দ্বিতীয় বছর থেকেই আবার কঠিন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। মক্কার কাফির-মুশরিকরা মুসলমানদের সাথে একের পর এক যুদ্ধে লিপ্ত হয়। প্রতিনিয়ত শঙ্কার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত হতে থাকে।
যুদ্ধের ময়দানেও হযরত ফাতিমা রাসূলের সেবায় নিয়োজিত হন। উহুদের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহ (সা.) আহত হলে তিনি যুদ্ধের ময়দানে ছুটে চলে যান। তিনি পিতার মুখমণ্ডল ধুয়ে দেন এবং খেজুরের ডাল ভস্মীভূত করে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন।
রাসূলের প্রতি ভালবাসার দু’টি নমুনা
খন্দকের যুদ্ধের পূর্বে রাসূল (সা.) একদিন পরিখা খননের কাজে ব্যস্ত ছিলেন, হযরত ফাতিমা একটি রুটি তাঁর জন্য নিয়ে আসেন। রাসূল (সা.) জিজ্ঞাসা করেন, এটি কি? ফাতিমা বলেন, সন্তানদের জন্য কয়েকটি রুটি বানিয়েছিলাম। সেখান থেকে একটি আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। রাসূল বলেন, হে ফাতিমা! এটাই প্রথম খাদ্য যা তিন দিন পর তোমার পিতার নিকট পৌঁছেছে।
তিনি তাঁর ছোট ছোট সন্তানদের ওপরও রাসূলকে প্রাধান্য দিতেন। প্রতিবেশীরা খাবার পাঠালে তিনি রাসূলকে সঙ্গে না নিয়ে তাদরেকে সে খাবার খেতে দিতেন না। এভাবে রাসূলের ওফাত পর্যন্ত আমরা তাঁকে একজন মমতাময়ী মায়ের ভূমিকায় পাই যিনি সত্যিই ‘উম্মু আবিহা’(স্বীয় পিতার মাতা-এ উপাধি তিনি পিতার ক্ষেত্রে মায়ের ভূমিকা পালনের কারণে পেয়েছিলেন। কারণ রাসূল (সা.) যখনই তাঁর নিকট আসতেন যেন মাতার সান্নিধ্য পেতেন ও তাঁর সকল কষ্ট দূরীভু’ত হত। রাসূল (সা.) এর ওপর ইসলাম প্রচারের যে গুরু দায়িত্ব ছিল ও এ পথে যত চাপ অনুভব করতেন ফাতিমার মাতৃস্নেহে রাসূল (সা) তা ভুলে যেতেন। বিশেষত হযরত আবু তালিব ও খাদীজার মৃত্যুর পর রাসূলের একাকিত্বে তিনি ছিলেন তাঁর পিতার সবচেয়ে বড় মানসিক প্রশান্তি।
সন্তান প্রতিপালনে হযরত ফাতিমা
যদি সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে সন্তানরা লালিত-পালিত হয় তাহলে ধর্ম প্রচারের কাজ কতই না সহজ হয়ে যায়! এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ হযরত ফাতিমা। হযরত ফাতিমার বিয়ের দুই বছরের মধ্যেই ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন জন্মগ্রহণ করেন। হযরত আলী নিশ্চিন্তে হযরত ফাতিমার ওপর সন্তান লালন-পালনের ভার দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাথে বেরিয়ে পড়তেন হয়ত কোন সফরে, না হয় কোন যুদ্ধে। আর হযরত ফাতিমা একাকী কত বড় দায়িত্বই না পালন করলেন! তিনি কীভাবে গড়ে তুললেন এ সন্তানদের? রাসূলের দুই নাতি তথা আল্লাহর তলোয়ার আলী মুর্তাজার দুই সন্তানকে তিনি গড়ে তুললেন ‘বেহেশতের যুবকদের নেতা’ রূপে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘হাসান ও হুসাইন বেহেশতের যুবকদের নেতা।’১৪
হ্যাঁ, এ নেতাদের গড়ে তুলেছেন বেহেশতেরই নারীদের নেত্রী হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.)। হযরত ফাতিমা দুইজন অতুলনীয় ব্যক্তিত্ব গড়ে তুললেন পরবর্তীকালে ইসলামের জন্য যাঁদের অবদান মুসলমানরা উপলব্ধি করতে পেরেছে। ইমাম হাসান এক মহাসংকটকালে সন্ধির মাধ্যমে ইসলামকে রক্ষা করেন। আর ইমাম হুসাইন ইসলামের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্যই কারবালার মরুপ্রান্তরে নিজের পরিবার-পরিজনসহ শাহাদাত বরণ করেন।
অথচ তাঁরাই হলেন রাসূলের পরিবার- রাসূলের আহলে বাইত পথভ্রষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ্্ (সা.) যাঁদেরকে পবিত্র কুরআনের পাশাপাশি আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে লোকসকল! নিশ্চয় আমি তোমাদের মাঝে এমন জিনিস রেখে গেলাম তোমরা তা ধারণ করলে কখনও পথভ্রষ্ট হবে না : আল্লাহর গ্রন্থ (আল কুরআন) এবং আমার ইতরাত (আহলে বাইত)।’১৫
অপর একটি হাদীসে বলা হয়েছে : ‘এ দু’টি কখনও বিচ্ছিন্ন হবে না কাওসার নামক ঝর্নায় আমার সাথে উপস্থিত না হওয়া পর্যন্ত। অতএব, তোমরা লক্ষ্য কর আমার পরে এতদুভয়ের সাথে তোমরা কীরূপ আচরণ করবে।’১৬
হযরত ফাতিমার মর্যাদা
পবিত্র কুরআনে
পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে হযরত ফাতিমার মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল।
১. সূরা আহযাবের ৩৩ নম্বর আয়াতে হযরত ফাতিমাকে নিষ্পাপ বলে ঘোষণা করা হয়েছে :
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর পোষ্য উমার ইবনে আবু সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, উম্মে সালামা (রা.)-এর ঘরে নবী (সা.)-এর ওপর এ আয়াত নাযিল হয় (অনুবাদ) : হে নবী-পরিবার! আল্লাহ তো চান তোমাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করতে এবং তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে। তখন নবী (সা.) ফাতিমা, হাসান ও হুসাইনকে ডাকেন এবং তাদেরকে একখানা চাদরে ঢেকে নেন। আলী তাঁর পেছনে ছিলেন। তিনি তাঁকেও চাদরে ঢেকে নেন। অতঃপর বলেন : হে আল্লাহ! এরা আমার আহলে বাইত। অতএব, তুমি তাদের থেকে অপবিত্রতা দূর করে দাও এবং তাদেরকে উত্তমরূপে পবিত্র কর। তখন উম্মে সালামা বলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিও কি তাদের অন্তর্ভুক্ত? তিনি বলেন, তুমি স্বস্থানে আছ এবং তুমি কল্যাণের মধ্যেই আছ।১৭
একই রকম হাদীস হযরত আয়েশা হতেও বর্ণিত হয়েছে।১৮
২. সূরা আলে ইমরানের ৬১ নম্বর আয়াত অনুযায়ী (আয়াতে মোবাহিলায়) হযরত ফাতিমাকে রাসূলুল্লাহ্(সা.) তাঁর নবুওয়াতের সত্যতার সাক্ষী করেছেন। পবিত্র কুরআনের সেই আয়াতটি হল :
‘অতঃপর তোমার নিকট যখন জ্ঞান (কুরআন) এসে গেছে, এরপরও যদি কেউ (খ্রিস্টান) তোমার সাথে তার (ঈসার) সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করে, তবে বল, ‘(ময়দানে) এস, আমরা আহ্বান করি আমাদের পুত্রদের এবং তোমাদের পুত্রদের, আমাদের নারীদের এবং তোমাদের নারীদের, এবং আমাদের সত্তাদের এবং তোমাদের সত্তাদের;’ অতঃপর সকলে মিলে (আল্লাহর দরবারে) নিবেদন করি এবং মিথ্যাবাদীদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষণ করি।’
ঘটনাটি এরূপ : নাজরান থেকে আগত খ্রিস্টান প্রতিনিধি দলের সাথে যখন মোবাহিলা (পারস্পরিক অভিশাপ বর্ষণ) করার জন্য মহান আল্লাহ রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন তিনি হযরত ফাতিমা, হযরত আলী, ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনকে সাথে নিয়ে উন্মুক্ত প্রান্তরে উপস্থিত হয়েছিলেন। কুরআনে বর্ণিত পুত্রদের স্থানে তিনি নিজের দুই নাতি ইমাম হাসান ও হুসাইনকে, নারীদের স্থানে নিজ কন্যা হযরত ফাতিমাকে এবং ‘সত্তা’ বলে গণ্যদের স্থানে হযরত আলীকে নিলেন এবং দো‘আ করলেন, ‘হে আল্লাহ! প্রত্যেক নবীর আহলে বাইত থাকে, এরা আমার আহলে বাইত। এদের সকল দোষ-ত্রুটি হতে মুক্ত ও পাক-পবিত্র রেখ।’ তিনি এভাবে ময়দানে পৌঁছলে খ্রিস্টানদের নেতা আকব তা দেখে বলল, ‘আল্লাহর কসম, আমি এমন নূরানি চেহারা দেখছি যে, যদি এ পাহাড়কে নিজ স্থান হতে সরে যেতে বলেন, তবে অবশ্যই সরে যাবে। সুতরাং মুবাহিলা হতে হাত গুটিয়ে নেওয়াই কল্যাণকর, অন্যথায় কিয়ামত অবধি খ্রিস্টানদের কেউ অবশিষ্ট থাকবে না।’ পরিশেষে তারা জিযিয়া কর দিতে সম্মত হল।১৯ এভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর পিতার নবুওয়াতের সপক্ষে সাক্ষ্য প্রদান করলেন।
৩. সূরা ইনসান বা দাহরে হযরত ফাতিমা ও তাঁর পরিবারের প্রশংসা করা হয়েছে এভাবে :
‘তারা তাঁর (আল্লাহ্্র) ভালবাসায় অভাবগ্রস্ত, অনাথ ও বন্দীকে আহার্য দান করে। এবং বলে, ‘কেবল আল্লাহ্্র সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আমরা তোমাদেরকে আহার প্রদান করি, আমরা তোমাদের নিকট হতে প্রতিদান চাই না, কৃতজ্ঞতাও নয়, আমরা আশংকা করি আমাদের প্রতিপালকের নিকট হতে এক ভীতিপ্রদ দিনের, সেদিন মুখমণ্ডল বিকৃত ও বিবর্ণ হয়ে যাবে’; পরিণামে আল্লাহ তাদের সেদিনের কঠিন পরিস্থিতি হতে রক্ষা করবেন এবং তাদের দান করবেন উৎফুল্লতা ও আনন্দ। আর ধৈর্যশীলতার প্রতিদানস্বরূপ তাদের প্রদান করবেন জান্নাত ও রেশমি বস্ত্র।’
এ ঘটনা প্রসঙ্গে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন : একদিন ইমাম হাসান ও হুসাইন পীড়িত হয়ে পড়লেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা.) তাঁর সাহাবীদের নিয়ে তাঁদের দেখতে গেলেন এবং তাঁদের রোগমুক্তির জন্য হযরত আলীকে রোযা মানত করতে বললেন। হযরত আলী ও ফাতিমা রোযার মানত করলেন। তাঁদের রোগমুক্তির পর হযরত ফাতিমা তাঁর পরিজন নিয়ে রোযা রাখা শুরু করলেন। তাঁরা পরপর তিনদিন রোযা রাখার নিয়্যত করেছিলেন। প্রথম দিন হযরত ফাতিমা ইফতারের জন্য পাঁচটি রুটি তৈরি করলেন। যখন তাঁরা ইফতারের জন্য খাবার নিয়ে বসেছেন সে সময়ে একজন মিসকিন এসে খাবার চাইল। তাঁরা তাঁদের খাবারের পুরোটাই সেই মিসকিনকে দিয়ে দিলেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিনে একইভাবে ইফতারের সময় যথাক্রমে একজন ইয়াতিম ও একজন বন্দী তাঁদের কাছে খাবার চাইল। তাঁরা পরপর এ তিনদিনই কেবল পানি দিয়ে ইফতার করলেন। এ ঘটনার প্রেক্ষিতেই সূরা দাহর বা ইনসান নাযিল হয়।২০
রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর হাদীসে
রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত ফাতিমার মর্যাদা সম্পর্কে অনেক কথা বলেছেন। যেমন : তিনি বলেন, ‘চারজন নারী সমগ্র নারী জাতির মধ্যে সর্বোত্তম : মারইয়াম বিনতে ইমরান, আছিয়া বিনতে মুযাহিম, খাদীজা বিনতে খুওয়াইলিদ এবং ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ। তাদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ হচ্ছে ফাতিমা।’২১
রাসূল (সা.) বলেন, ‘বেহেশতে সর্বপ্রথম আমার নিকট যে পৌঁছবে সে হচ্ছে ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ।’২২
বুখারী শরীফের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল (সা.) বলেন, ‘ফাতিমা আমার অস্তিত্বের অংশ। যে তাকে রাগান্বিত করে সে আমাকে রাগান্বিত করে।’২৩
তিনি আরও বলেন, ‘ফাতিমা কোন ব্যাপারে রাগান্বিত হলে আল্লাহও রাগান্বিত হন এবং ফাতিমার আনন্দে আল্লাহ্ও আনন্দিত হন।’২৪
প্রাসঙ্গিকভাবে বলতে হয় যে, এ হাদীসটি আমাদের জন্য অপরিসীম গুরুত্বের অধিকারী। যেহেতু রাসূলুল্লাহ (সা.) নিজ প্রবৃত্তি থেকে কোন কথা বলেন না, তাই তাঁর প্রতিটি কথার মধ্যেই গুঢ় তাৎপর্য রয়েছে। তিনি হযরত ফাতিমার মর্যাদা উল্লেখ করার পাশাপাশি তাঁর সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির প্রতি লক্ষ্য রাখা ও তাঁকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়ে সতর্ক করেছেন। হযরত ফাতিমার সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়ার সাথে মহান আল্লাহ্্র ও রাসূলের সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টি এবং রাসূলকে কষ্ট দেয়ার বিষয়কে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে হযরত ফাতিমার আচরণকে ধর্মের সীমায় আনা হয়েছে। রক্তের সম্পর্ক নয়, বরং বেহেশতের নারীদের নেত্রীর অসন্তুষ্টি অবশ্যই আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করবে। কারণ, তিনি অন্যায় কোন বিষয়ে অসন্তুষ্ট হতে পারেন না। যদি এ সম্ভাবনা থাকত যে, তিনি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির বিপরীত বিষয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেন তবে রাসূলুল্লাহ্ (সা.) কখনই তাঁর সম্পর্কে এমন কথা বলতেন না। আর সেজন্যই হযরত ফাতিমার অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়াকে রাসূলের অসন্তুষ্টি ও তাঁকে কষ্ট দেয়ার সমান করা হয়েছে। এমন নয় যে, অন্য দশজন লোককে কষ্ট দেয়ার সাথে এর তুলনা করা হবে। কারণ, রাসূলকে কষ্ট না দেয়ার বিষয়টি কুরআনেই এভাবে বর্ণিত হয়েছে :
‘নিশ্চয়ই যারা আল্লাহ ও রাসূলকে পীড়া দেয়, আল্লাহ তাদের দুনিয়া ও আখেরাতে অভিশপ্ত করেন এবং তিনি তাদের জন্য প্রস্তুত রেখেছেন লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।’২৫
আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে :
‘...এবং যারা আল্লাহর রাসূলকে যাতনা দেয়, তাদের জন্য রয়েছে বেদনাদায়ক শাস্তি।’২৬
হযরত ফাতিমার উপাধি
চারিত্রিক বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের কারণে হযরত ফাতিমা আরও কিছু উপাধিতে ভূষিত হন। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ হল যাহরা, যাকিয়াহ, বাতুল ও রাযিয়া।
হযরত ফাতিমার জীবনযাপন প্রণালী
হযরত ফাতিমা খুবই সাধারণ জীবন যাপন করতেন। সংসারের যাবতীয় কাজ তিনি নিজের হাতে করতেন। তাঁর কাজে সাহায্যের জন্য কোন দাস-দাসী ছিল না। মশক দিয়ে পানি উত্তোলনের ফলে তাঁর শরীরে দাগ পড়ে গিয়েছিল। তিনি যাঁতার মাধ্যমে এত পরিমাণ আটা তৈরি করতেন যে, তাঁর হাতে ফোস্কা পড়ে যেত। আর তিনি সেই আটা দিয়ে রুটি তৈরি করে মদীনার দরিদ্র ব্যক্তিদের মধ্যে বিতরণ করতেন। হযরত ফাতিমা কাপড়ে তালি লাগিয়ে সেই কাপড় পরিধান করতেন। পার্থিব কোন বস্তুই তাঁকে আকৃষ্ট করতে পারত না। আর এজন্যই রাসূল (সা.) তাঁকে ‘বাতুল’ উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন।
হযরত ফাতিমার ইবাদাত-বন্দেগী
যখন রাত্রিতে চারিদিকে নিস্তব্ধতা নেমে আসত, সকলেই ঘুমের কোলে ঢলে পড়ত তখন হযরত ফাতিমা নিবিষ্টচিত্তে আল্লাহ্্র ইবাদাত-বন্দেগীতে লিপ্ত হতেন। তিনি সারারাত জেগে নামায পড়তেন, মহান আল্লাহ্্র জিকির করতেন এবং রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর উম্মতের জন্য দো‘আ করতেন। তিনি এত বেশি নামায পড়তেন যে, তাঁর পা ফুলে যেত। ইমাম হাসান (আ.) বলেন, ‘আমার আম্মা বছরের অধিকাংশ দিন নফল রোযা রাখতেন আর রাত্রির অধিকাংশ সময়ই তিনি আল্লাহর ইবাদাতে কাটিয়ে দিতেন। তিনি মহান আল্লাহর দরবারে দু’হাত তুলে দো‘আ করে এমনভাবে কান্নাকাটি করতেন যে, চোখের পানিতে বুক ভিজে যেত।’ সংসারের কাজ করার সময়ও তাঁর মুখে আল্লাহর জিকির থাকত।
রাসূলুল্লাহ্(সা.)-এর ওফাতের পর
ইতিহাসে বর্ণিত হয়েছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর কিছু বিষয় নিয়ে হযরত ফাতিমা অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাঁকে কষ্ট দেয়া হয়েছিল এবং তিনি এসব বিষয় প্রকাশ্যে ব্যক্তও করেছিলেন।
রাসূলুল্লাহ (সা.) তথা ইসলামের বিরুদ্ধে যে ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল রাসূলের জীবদ্দশায় তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে সেই ষড়যন্ত্রের বাস্তবায়ন হয়েছে রাসূলের পবিত্র দেহ দাফন করার আগেই। একদিকে পিতার বিরহে হৃদয় দুঃখণ্ডভারাক্রান্ত, অন্যদিকে মুনাফিকদের চক্রান্ত দারুণভাবে মর্মাহত করে নবী-কন্যা হযরত ফাতিমাকে। তিনি দিনরাত রাসূলের কবরে গিয়ে ক্রন্দন করতেন। তিনি বলতেন, ‘হে পিতা! আপনার ওফাতের পর আমার ওপর এত জুলুম, দুঃখণ্ডদুর্দশা নেমে এসেছে যে, তা যদি আলোকিত দিনের ওপর আপতিত হত তবে তা অন্ধকারাচ্ছন্ন রাতে পরিণত হত।’
রাসূলের সম্মানিতা স্ত্রী হযরত উম্মে সালামাহ বলেন : রাসূলের ওফাতের পর ফাতিমাকে দেখতে যাই এবং তাঁর অবস্থা জানতে চাই। তিনি জবাব দিলেন : অত্যন্ত দুঃখণ্ডকষ্টে দিন অতিবাহিত হচ্ছে।...’২৭
হযরত ফাতিমার ইন্তেকাল
এ রকম কষ্টের মধ্য দিয়েই রাসূলুল্লাহ্্ (সা.)-এর ওফাতের অল্প কিছুদিন পরই হযরত ফাতিমা এ পৃথিবী থেকে বিদায় গ্রহণ করেন। কিন্তু এ প্রশ্ন খুব স্বাভাবিকভাবেই এসে যায় যে, হযরত ফাতিমার বয়স তখন খুব বেশি ছিল না, আবার তিনি কোনরকম অসুস্থতায়ও ভুগছিলেন না, তবে কীভাবে তিনি মৃত্যুবরণ করলেন?
রাসূল (সা.) ওফাতের আগে হযরত ফাতিমার কানে কানে বলে গিয়েছিলেন যে, তিনিই তাঁর সাথে প্রথম মিলিত হবেন। নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় রাসূলকে এও জানিয়েছিলেন যে, কীভাবে হযরত ফাতিমা তাঁর সাথে এত তাড়াতাড়ি মিলিত হবেন। আর সেজন্যই কি রাসূল (সা.) বারবার তাঁর উম্মতকে সতর্ক করছেন যে, তারা যেন হযরত ফাতিমাকে কষ্ট না দেয়, তাঁকে অসন্তুষ্ট না করে।
কোন কোন ইতিাসবেত্তা এ বিষয়টিই তাঁদের গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ওফাতের পর খলীফা নির্বাচন নিয়ে মতপার্থক্যের সৃষ্টি হয়। এরই এক পর্যায়ে হযরত ফাতিমার গৃহে আক্রমণ করা হয়।২৮ হযরত ফাতিমা আহত হন এবং পরবর্তীকালে এ আঘাতজনিত কারণেই শাহাদাত বরণ করেন।২৯
তথ্যসূত্র
১. সূরা নাজম : ৩-৪
২. সূরা তাওবা : ৩৩। এ আয়াতটি কুরআন মাজীদে কয়েকটি স্থানে বিদ্যমান। ফুসুলুল মুহিম্মা গ্রন্থে এ আয়াতের তাফসীরে সাঈদ ইবনে যুবাইর হতে বর্ণিত হয়েছে যে, এর লক্ষ্য হযরত ইমাম মাহদী (আ.) যিনি হযরত ফাতিমা (আ.)-এর সন্তানগণের মধ্যে থেকে হবেন। ফখরুদ্দীন রাযী তাফসীরে কাবীর গ্রন্থে ও আল্লামা সুয়ূতী তাফসীরে দুররে মানসূর গ্রন্থে এবং সাঈদ ইবনে মানসুর ও বায়হাকী নিজ নিজ সুনানে হযরত জাবির এবং আবু হুরায়রা হতে বর্ণনা করেছেন যে, এটা তখনই হবে যখন ইসলাম ভিন্ন না ইয়াহুদী থাকবে, না খ্রিস্টান, আর না অন্য কোন ধর্মের অনুসারী।
৩. কানজুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস ২৫১০, পৃ. ১৫২
৪. মানাকিবে শাহরাশুব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১১৩
৫. সূরা নাহল : ৫৮-৫৯
৬. মহানবী (সা.) ও তাঁর আহলে বাইত, পৃ. ৫১
৭. তারীখে বাগদাদ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৩১
৮. উসদুল গাবাহ, ৫ম খণ্ড, পৃ. ৫২০
৯. তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃ. ৩০৬
১০. যাখায়েরুল উকবা, পৃ. ৩১
১১. তাযকেরাতুল খাওয়াস, পৃ. ৩০৬
১২. ভাষণ দু’টি আঞ্জুমান-এ-পাঞ্জাতনী, খুলনা কর্তৃক প্রকাশিত আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাজী প্রণীত নারীকুল শিরোমণি গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে।
১৩. কাশফুল গুম্মাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩
১৪. বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত জামে আত-তিরমিযী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, হাদীস নং ৩৭২০
১৫. প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৭২৪
১৬. প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৭২৬
১৭. প্রাগুক্ত, হাদীস নং ৩৭২৫
১৮. বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত সমীহ মুসলিম, ৭ম খণ্ড, হাদীস নং ৬০৮০
১৯. তাফসীরে জালালাইন, ১ম খণ্ড, পৃ.৬০; বায়যাভী, ১ম খণ্ড, পৃ. ১১৮, তাফসীরে দুররুল মানসুর, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৯, মিশর মুদ্রণ
২০. তাফসীরে জামাখশারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৫২; তাফসীরে ফখরে রাযী, ৮ম খণ্ড, পৃ. ২৭৬; তাফসীরে দুররে মানসূর, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৯৯; যাখায়েরুল উকবা, পৃ. ৮৯;
২১. যাখায়েরুল উকবা, পৃ. ৪৪
২২. মিজানুল ইতিদাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ১৩১; কানজুল উম্মাল, ২য় খণ্ড, পৃ. ২১৯
২৩. বুখারী, কিতাবুল বাদাউল খাল্ক
২৪. কাশফুল গুম্মাহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ২৪; মানাকিবে শাহরাশুব, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১০৬; উয়ূন আখবারির রিযা (আ.), ২য় খণ্ড, পৃ. ২৬
২৫. সূরা আহযাব : ৫৭
২৬. সূরা তাওবা : ৬১
২৭. হযরত আয়াতুল্লাহ আল উযমা মাকারেম শিরাজী প্রণীত নারীকুলের শিরোমণি হযরত ফাতিমা যাহরা (আ.), পৃ. ৪১
২৮. আল মিলাল ওয়ান নিহাল, ১ম খণ্ড, পৃ. ৫৭; ইকদুল ফারীদ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ. ৯৪, মিসর মুদ্রণ, তারীখে তাবারী, ২য় খণ্ড, পৃ. ৪৪৩, বৈরুত মুদ্রণ।
২৯. বাইতুল আহযান
লেখক: মো. আশিফুর রহমান (গবেষক ও সাংবাদিক) #