বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী (পর্ব-০২)

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা'র সাংস্কৃতিক বিভাগ :

সংকলন ও ভাষান্তর : মোঃ ইউনুস আলী গাজী

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী (পর্ব-০২)

ইমাম (আ.) এর বন্দী থাকার দিনগুলি

যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, আব্বাসীয় খলিফা মুতাওয়াক্কিল কর্তৃক ইমাম হাদী (আ.) ও ইমাম আসকারী (আ.) কে সামররাতে নিয়ে আসার অর্থ হচ্ছে তাদের উপর এবং তাদের অনুসারীদের সাথে তাদের যোগাযোগের উপর পরিপূর্ণ দৃষ্টি রাখা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পিতা ও পুত্রের উপর যতদূর সম্ভব কঠোর আচরণ করা হত এবং যে সকল ঘটনায় শাসকগোষ্ঠি হুমকির সম্মুখীন হত সেসব ক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপে ইমাম হাদী (আ.) এবং তাঁর পুত্র আসকারী (আ.) কে তাঁদের কিছু কিছু ঘনিষ্ট জনদের সাথীদের সাথে কারারুদ্ধ করা হত।

ইমাম আসকারী (আ.) কে কারাবন্দী করার বিষয়ে বহু রেওয়ায়েত বর্ণিত হয়েছে।

একটি রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, মো'তায (২৫৫ হিজরীতে ক্ষমতাচ্যুত ও নিহত শাসক) কুফা সফরে যাওয়ার সময় ইমাম আসকারী (আ.) কে গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয় এবং নির্দেশ বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয় সাঈদ বিন হাজেবের উপর। আবুল হাইসাম এ বিষয়ে নিজের উদ্বিগ্নতার কথা উল্লেখ করে ইমামকে লিখলে ইমাম তার জবাবে লেখেন : তিনদিন পর সমস্যার সমাধান হতে যাচ্ছে; মো'তায নিহত হবে।

এটা নিশ্চিত যে, ইমাম আসকারী (আ.) মুহতাদী'র যুগে (২৫৫-২৫৬ হিজরী) কিছুদিনের জন্য কারাগারে ছিলেন, এরপূর্বে তাঁর কিছু অনুসারীকে কারারুদ্ধ করা হয়।

দাউদ বিন কাসেম ওরফে আবু হাশিম জাফারী -শিয়াদের মাঝে অন্যতম খ্যাতি সম্পন্ন ব্যক্তিত্ব- ২৫২ সালে কারাগারে ছিলেন। খতিব বাগদাদী, ইবনে আরাফা'র ভাষায় তার কারাবন্দী হওয়ার কারণ এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, তার হতে এমন কিছু কথা শোনা গিয়েছিল যার কারণে তাকে আটক করা হয়। শেইখ তুসী হতে বর্ণিত রেওয়ায়েতে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আব্দুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ আব্বাসীকে হত্যার দায়ে আবু হাশিমের সাথে বনি হাশেম কয়েকজনসহ অন্য কিছু লোককে গ্রেপ্তার করে কারাগারে প্রেরণ করা হয়। কিছু কিছু রেওয়ায়েতের বর্ণনা অনুযায়ী এ কারাগারের রক্ষী ছিল সালেহ বিন ওয়াসীফ। সে ২৫৬ হিজরীতে মুসা বিন বাগা কর্তৃক নিহত হয়। এ কারণে এ সম্ভবণা রয়েছে যে, ২৫৫ হিজরীতে মোহতাদী'র যুগে ইমামকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।

ইতিহাসে উল্লিখিত একটি বর্ণনায় আবু হাশিম জাফারী বলেছেন : মুহতাদী'র যুগে যখন কারাগারে ছিলাম তখন ইমাম আসকারী (আ.) কে কারাগারে আনা হয়। ২৫৬ হিজরীতে মুহতাদীর নিহত হওয়ার মাধ্যমে মহান আল্লাহ তাঁকে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়ে দেন। কেননা খলিফা তাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল।

ইমাম (আ.) কে যেস্থানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেস্থানের নাম ছিল জুসাক। পরবর্তী ঐ স্থানে স্বয়ং মুহতাদী ও সালেহ বিন ওয়াসীফের মত লোকদেরকে বন্দী এবং হত্যা করা হয়। সম্ভবত জুসাক ছিল একটি দূর্গের নাম। যে দূর্গকে কারাগার হিসেবে ব্যবহার করা হত।

এ কারাগারের অভ্যন্তর সম্পর্কে যা কিছু আমারা জানি তা হল :

(ক) ইমাম (আ.) কারাগারে প্রবেশ করে একজন অনারব লোকের দিকে ইশারা করে বলেন : যদি এ লোক না থাকতো তবে তোমাদেরকে বলে দিতাম যে কতদিন পর তোমরা মুক্তি পাবে। কেননা সে তোমাদেরকে চোখেচোখে রেখেছে এবং তোমাদের আচরণ ও কথাবার্তাকে খলিফার নিকট পৌঁছে দেয়। আবু হাশিম বলেন : একদিন আমরা ঐ লোকের অজ্ঞাতে তার পোশাকের মধ্য হতে আমাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে খলিফাকে দেওয়ার জন্য যে মিথ্যা প্রতিবেদন তৈরী করেছিল সে কাগজ বের করলাম।

(খ) কারাগারে ইমামের আচরণ বিশেষতঃ কারারক্ষীদের সাথে তাঁর আচরণ এমন ছিল যে, অনেক সময় তাঁরা নিজেরাই লজ্জায় পড়ে যেত। এ ধরণের আচরণের দৃষ্টান্ত ইমাম কাযিম (আ.) এর ক্ষেত্রেও বর্ণিত হয়েছে। সালেহ বিন ওয়াসিফ -কারাগারে ইমামের উপর দৃষ্টি রাখার দায়িত্ব যার উপর ছিল- ছিল আব্বাসীয়দের একজন এবং ইমামের সাথে কঠোর আচরণ ও কষ্ট দেওয়ার জন্য বনি আব্বাসের গন্যমান্য ব্যক্তিত্বদের পক্ষ হতে তাকে উত্সাহিত করা হত, সে তাদের উত্তরে বলেছিল :

قد وكّلت به رجلین شرّ من قدرت علیه فقد صارا من العبادة و الصّلاه إلى أمر عظیم.

‘এমন দু'জন লোককে তার জন্য নিয়োগ দিয়েছি যারা জনগণের মধ্যে আমার জানা মতে সবচেয়ে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। কিন্তু তারা এমনভাবে আসকারী'র প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে যে, উভয়েই ইবাদত ও নামাযের বিষয়ে উঁচু স্তরে পৌঁছে গেছে'।

বিভিন্ন সনদের ভিত্তিতে ইমাম (আ.) কারাগারে প্রত্যহ রোজা রাখতেন।

মু'তামিদ আব্বাসী'র যুগে (শাসনকাল ২৫৬ হতে ২৭৯) দ্বিতীয়বারের মত ইমাম (আ.) কে গ্রেফতার করে কারারুদ্ধ করা হয়। অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি (আ.) ২৫৯ হিজরীতে মু'তামিদ আব্বাসী'র কারাগারে ছিলেন এবং আলী বিন জাররীন ঐ কারাগারের রক্ষী ছিল। ইমামের বিষয়ে মু'তামিদ তাকে বিভিন্ন প্রশ্ন করলে সে উত্তরে বলেছিল : তিনি সর্বদা দিনের বেলা রোজা রাখেন এবং রাতের বেলা নামায আদায় করেন।

একইভাবে সামিরী তার ‘আল-আওসিয়া' গ্রন্থে মাহমুদী হতে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি বলেন : মু'তামিদের কারাগার থেকে আবু মুহাম্মাদ বিন আসকারী'র মুক্ত হওয়ার সময় আমি নিজেই তার হাতের লেখা পড়েছি, তিনি এ আয়াতটি লিখেছিলেন :

«یریدون لیطفئوا نور الله بأفواههم و الله متمّ نوره و لو كره الكافرون»

অনুবাদ : ‘তারা মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর আলো নিভিয়ে দিতে চায়। আল্লাহ তাঁর আলোকে পূর্ণরূপে বিকশিত করবেন যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে।' [সূরা আছ-ছফ : ৮]

শেইখ মুফিদ (রহ.) মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল আলাউই হতে বর্ণনা করেছেন : ইমাম আসকারী (আ.) আলী বিন তামাশ (অথবা বারমাশ)-এর নিকট বন্দী ছিলেন। লোকটি ছিলো আবু তালিবের সন্তানদের কঠোর শত্রুদের একজন। তাকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যেন ইমামের বিষয়ে যথাসাধ্য কঠোর আচরণ করে। কিন্তু সে ইমাম (আ.) কে দেখার পর... যখন তার হতে পৃথক হলো তখন অন্যদের তুলনায় সে ইমামের অধিক প্রশংসা করতে লাগলো।

প্রায় নিশ্চিতভাবে বলা যায় ইমামের এ কারাগারা যাওয়ার ঘটনাটি ২৫৯ সালে ঘটেছিল এবং এ দাবীর পেছনে যে সাক্ষ্য রয়েছে সে সমৃদ্ধ রেওয়ায়েতটি হচ্ছে এরূপ :

কেশশি স্বীয় রেজাল গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন : মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম সামারকান্দী বলেছেন : হজ্বের পথে ছিলাম, এ সময় সিদ্ধান্ত নিলাম আমার বুদাক বুশানজানীর (হেরাতের অন্তর্ভুক্ত একটি গ্রামের নাম বুশানজান) সাথে সাক্ষাত করবো। সত্যবাদীতা, শুভাকাঙ্খিতা, সত্কর্ম ইত্যাদি উত্কৃষ্ট গুণে সে ছিল বিখ্যাত। আমরা তার কাছেই ছিলাম এমন সময় ফাদ্বল বিন শাযানের কথা উঠলো, বুদাক বললে : সে পেটের -গ্যাসের- ব্যাথায় অত্যন্ত অসুস্থ হয়ে পড়েছে... বুদাক আরো বললো : এক সফরে আমি হজ্বের উদ্দেশ্যে মক্কায় যাওয়ার সময় আমি মুহাম্মাদ বিন ঈসা আল-উবাইদীর নিকট -যে ছিল একজন নিষ্ঠাবান লোক- গেলাম। তার বাড়ীতে শোকাহত ও বিষন্ন একদল লোককে বসে থাকতে দেখলাম। আমি এর কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা বললো : আবু মুহাম্মাদ (আ.) কে কারারুদ্ধ করা হয়েছে। আমি সফর অব্যাহত রাখলাম এবং ফেরার পথে পূনরায় মুহাম্মাদ বিন ঈসার সাথে সাক্ষাত করতে গেলাম। তাকে অত্যন্ত আনন্দিত দেখে কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে উত্তরে বললো : ইমাম (আ.) মুক্তি পেয়েছেন। আমি সামেররাতে গেলাম, এ সময় আমার কাছে ‘ইয়াওম ওয়া লাইলাহ' (দিন ও রাত) বইটি ছিল এবং সেখানে আমি আবু মুহাম্মাদ (আ.) এর সমীপে উপস্থিত হলাম। ঐ বইটি তাঁকে দেখিয়ে বললাম : আপনার উপর উত্সর্গ হই, এ বইটি দেখুন। ইমাম বইটির পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলেন আর বলছিলেন ঠিক আছে। (সকলের) এর উপর আমল করা উচিত। আমি বললাম : ফাদ্বল অত্যন্ত অসুস্থ। আমি শুনেছি আপনার বদদোয়াতে সে এই অসুস্থতায় পড়েছে। কেননা তার সম্পর্কে আপনাকে বলা হয়েছে যে, সে ইব্রাহিমকে আল্লাহর রাসূল (স.) এর ওয়াসি'র উপর প্রাধান্য দিয়ে থাকে। আসলে সত্য বিষয়টি তা নয় এবং তার উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা হয়েছে। ইমাম (আ.) বললেন : হ্যাঁ ফাদ্বলের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক। বুদাক বলেন : আমি ফিরে এসে বুঝতে পারলাম যে দিনগুলোতে ইমাম (আ.) বলতেন ‘ফাজলের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক' সে দিনগুলিতে ফজল দুনিয়া হতে বিদায় নিয়েছিল।

যদি এটা মেনে নেই যে, ফাজল বিন শাযান ২৬০ হিজরীতে ইন্তিকাল করেছিলেন, তখন স্বভাবতঃ এটা মেনে নিতে হবে যে, ইমাম (আ.) ২৫৯ হিজরী'র জিলহজ্ব মাসের পূর্বে কারারুদ্ধ ছিলেন।

(চলবে...)

 


source : www.abna.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমাতুয ...
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
Apabila ada sebagian hukum Islam yang nampaknya bertentangan serta kontradiktif dengan ...
আবতার কে বা কা’রা?
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কতিপয় খুতবা ও ...
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...
ইহুদি ধর্ম
দুই নামাজ একসাথে পড়ার শরয়ী দললি
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...

 
user comment