বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী (পর্ব -০১)

আহলে বাইত (আ.) বার্তা সংস্থা আবনা :

 

ইমামের জন্ম :

শিয়াদের ১১তম ইমাম হযরত ইমাম হাসান বিন আলী আসকারী (আলাইহিস সালাম), শেইখ কুলাইনী'র বর্ণনার ভিত্তিতে ২৩২ হিজরীর পবিত্র রমজান অথবা রবিউস সানী মাসে জন্মগ্রহণ করেন। শাহাদাতের সময় তাঁর বয়স ছিল ২৮ বছর। ইবনে খাল্লাকান বর্ণনা করেছেন ২৩১ হিজরীর কোন এক মাসের বৃহস্পতিবার তিনি জন্মগ্রহণ করেন। এছাড়া তাঁর জন্মের বিষয়ে আরো একটি মত রয়েছে; তিনি ২৩২ হিজরী'র ৬ই রবিউস সানী জন্মগ্রহণ করেন। শেইখ মুফিদ ও সায়াদ বিন আব্দুল্লাহ্ রবিউস সানী মাস শীর্ষক মতটিকে গ্রহণ করেছেন। মাসউদী'র বর্ণনা অনুযায়ী শাহাদাতের সময় তাঁর বয়স ছিল ২৯ বছর; অতএব, তার মতে ইমাম ২৩১ হিজরীতে জন্মগ্রহণ করেন।

অধিকাংশ রাভীদের (রেওয়ায়েত বর্ণনাকারী) বর্ণনার ভিত্তিতে ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ২৬০ হিজরীর ৮ই রবিউল আওয়াল শহীদ হন। এছাড়া অপর একটি মতও বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি ২৬০ হিজরীর জমাদিউল আওয়াল মাসে শহীদ হয়েছিলেন।

যেহেতু ১০ম ইমাম হযরত হাদী (আ.) ২৫৪ হিজরীতে শহীদ হয়েছিলেন -এর ভিত্তিতে শেইখ মুফিদ (রহ.) এর রেওয়ায়েতে ইমাম হাসান আসকারী (আ.) এর ইমামতের সময়কাল ছিল ৬ বছর এবং সায়াদ বিন আব্দুল্লাহর মতে ৫ বছর ৮ মাস।

 

পিতা-মাতা : তাঁর সম্মানিত পিতা ছিলেন ১০ম ইমাম হযরত ইমাম হাদী (আ.)। তাঁর সম্মানিত মা'য়ের নামের বিষয়ে ভিন্ন মতামত রয়েছে। কিছু কিছু গ্রন্থে ‘হাদীস' অথবা ‘হাদীসাহ', আবার অন্য কিছু গ্রন্থে তার নাম ‘সুসান' বলে উল্লেখ করা হয়েছে। উয়ুনুল মু'জিযাত গ্রন্থে তার প্রকৃত নাম ‘সালিল' বলে উল্লেখ করা হয়েছে, উক্ত গ্রন্থে ((کانت من العارفات الصالحات)) বাক্যের মাধ্যমে তাঁর প্রশংসা করা হয়েছে।

 

উপাধীসমূহ : তাঁর জন্য ‘আল-সামেত', ‘আল-হাদী', ‘আল-রাফিক', ‘আল-যাকী' ও ‘আল-নাকী' ইত্যাদি উপাধী উল্লেখ করা হয়েছে। কিছু কিছু ঐতিহাসিক ‘আল-খালেস'কে তাঁর উপাধী তালিকায় সংযুক্ত করেছেন।

 

কুনিয়া : তাঁর কুনিয়াহ ছিল ‘ইবনুর রেজা'; ইমাম জাওয়াদ (আ.) ও ইমাম আসকারী (আ.) উভয়েই এ কুনিয়াহ'তেই প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন। যেভাবে ইমাম হাদী এবং ইমাম আসকারী (আ.) ‘আসকারিয়াইন' কুনিয়া'তে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।

 

ইমামের শারীরীক গঠন : আহমাদ বিন উবাইদুল্লাহ বিন খাকান তার বাহ্যিক গঠনকে এভাবে বর্ণনা করেছেন যে, তিনি কালো চোখ, সুদর্শন, সুঠাম দেহ এবং মধ্যম উচ্চতার অধিকারী ছিলেন।

 

তাঁর ইমামতকাল

ইমাম হাদী (আ.) এর শাহাদাতের পর ২৫৪ হিজরীতে তাঁর নাসসের (ডিক্রি) ভিত্তিতে তাঁর সুযোগ্য পুত্র ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ১২ ইমামি শিয়াদের ইমাম হিসেবে অধিষ্ঠিত হন। ইমাম হাদী (আ.) এর ওসিয়ত এবং তাঁর সন্তানের ইমামতের বিষয়ে যে সকল রেওয়ায়েত উল্লিখিত হয়েছে, তা শিয়াদের বহু ইতিহাস ও হাদীস গ্রন্থে পরিলক্ষিত হয় এবং এ ওসিয়ত ও নাসসের ভিত্তিতে -যা শিয়াদের দৃষ্টিতে ইমামতের সঠিক হওয়ার অন্যতম নিদর্শন- শিয়ারা ইমাম হাসান আসকারী (আ.) কে ইমাম হিসেবে গ্রহণ করে।

 

সামেররা'তে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)

শেইখ মুফিদ (রহ.) এর ভাষ্য অনুযায়ী ১০ বছর ও কিছু সময় যাবত আসকার (সামেররা)-এ আব্বাসী খলিফাদের নজরবন্দী হয়ে জীবন-যাপন করেন। এ রেওয়াযেতের ভিত্তিতে স্পষ্ট হয় যে, ইমাম (আ.) এর তাঁর সন্তানের সাথে সামেররা'তে ২৪৩ অথবা ২৪৪ হিজরীতে এসেছিলেন। কিন্তু ইবনে খাল্লাকানের ঐ সময়কে ২০ বছর ৯ মাস বলে উল্লেখ করেছেন। এ কারণেই ঐ দুই ইমাম আসকারিয়াইন নামে প্রসিদ্ধি লাভ করেছেন।

এ বিষয়টি নিশ্চিত যে, ইমাম রেজা (আ.) কে নিজের শহরে আনার পেছনে মা'মুন যে উদ্দেশ্যে ছিল একই উদ্দেশ্যে এ দুই ইমাম (আলাইহিমাস সালাম) কে সামেররা -তত্কালীন আব্বাসীয় খলিফার শাসন কেন্দ্র- আনার পেছনে একই উদ্দেশ্য ছিল। কেননা ইমামের সাথে শিয়াদের সম্পর্ক এবং ইসলামি ভূখণ্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাসকারী ইমামের একান্ত ভক্ত ও হুকুমতের জন্য হুমকি এমন শিয়াদেরকে চিহ্নিত করণ ও তাদের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি এ কাজের মাধ্যমে সহজতর ছিল। যতদিন ইমাম (আ.) এ শহরে জীবন-যাপন করেছিলেন -কয়েক দফায় কারাবন্দী করে রাখার দিনগুলি ছাড়া- তিনি সাধারণ মানুষের ন্যায় সমাজে উপস্থিত ছিলেন এবং স্বভাবতই তাঁর সকল কর্ম ও আচরণ তত্কালীন শাসকের দৃষ্টির বাইরে ছিল না। কেননা ইমাম হাসান আসকারী (আ.)সহ অন্যান্য ইমামরা যদি পরিপূর্ণভাবে স্বাধিন থাকতেন তবে তাঁরা মদিনাকে জীবন-যাপনের জন্য বেছে নিতেন। এ কারণে ইমামের দীর্ঘ সময়ের জন্য সামেরাতে অবস্থান তত্কালীন খলিফা কর্তৃক তাকে গৃহবন্দী করে রাখা ছাড়া অন্য কোন ব্যাখ্যা এর পেছনে দাঁড় করানো যায় না। বিশেষভাবে শিয়াদের একটি সুসংগঠিত নেটওয়ার্ক, যা অনেকদিন পূর্ব হতে সংগঠিত হয়েছিল খলিফার দৃষ্টিতে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় বলে বিবেচিত হত এবং এ বিষয়ে খলিফা সন্ত্রস্ত ও উদ্বিগ্ন ছিল তাই সে যেকোনভাবে এর উপর নজরদারীর চেষ্টা চালায়।

এ কারণেই ইমামের উপর কড়া নির্দেশ ছিল যে, প্রায়শই যেন ইমামের উপস্থিতির বিষয়টি শাসকের সম্মুখে ঘোষণা করা হয়। ইমামের খাদেমদের একজনের বর্ণনামতে তিনি প্রতি শনি ও বৃহস্পতিবার দারুল খেলাফা'তে হাজিরা দিতে বাধ্য ছিলেন। যদিও এ ধরণের উপস্থিত প্রকাশ্যে তার জন্য সম্মান বলে মনে হত কিন্তু প্রকৃতঅর্থে এর মাধ্যমে খলিফা ইমামের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত এবং তার উপর নিয়ন্ত্রণ রাখার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হত। এ বিষয়ে খলিফা এতটাই সতর্ক ছিল যে, একদা খলিফা সাহেবুল বাসরার সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময় ইমামকেও নিজের সাথে নিয়ে গিয়েছিল এবং ইমাম (আ.) এর সাহাবীরা তার যাত্রা পথে তাঁর সাথে সাক্ষাতের জন্য নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছিল। এ ঘটনা হতে স্পষ্ট হয়ে যায় ইমাম (আ.) এর সাহাবীদের ইমামের সাথে সাক্ষাতের জন্য ঐ সামান্য সময়টুকু পেয়েছিল এবং তাঁর সাথে তাঁর বাড়ীতে সরাসরী সাক্ষাত করা কখনই সম্ভব ছিল না।

ইসমাঈল বিন মুহাম্মাদ বলেন : কিছু অর্থ গ্রহণের জন্য তাঁর (আ.) আসার পথে অপেক্ষায় বসে রইলাম এবং তিনি অতিক্রম করার সময় তার নিকট হতে আর্থিক সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিলাম।

আবু বাকর ফাহফাকী বলেন : একটি কাজে -ইমামের সাথে সাক্ষাতের জন্য- সামেররা ত্যাগ করলাম ‘মওকেবে'র দিন ইবনে কুতাইবাহ বিন দাউদ সড়কে ইমামের অপেক্ষায় বসে রইলাম যাতে তিনি দারুল আম্মাহ'র দিকে যাওয়ার সময় তাঁর সাথে সাক্ষাত করতে পারি।

মুহাম্মাদ বিন আব্দুল আযিয বালখিও ইমামে দারুল আম্মাহ'র দিকে যাওয়ার সময় ‘আল-গানাম' সড়কে তার সাথে সাক্ষাতের অপেক্ষায় ছিলেন।

মুহাম্মাদ বিন রাবী শাইবানী বলেন : ইমামের সাথে সাক্ষাতের জন্য আহমাদ বিন খুদ্বাইব ফটকে বসেছিলাম, তিনি উক্ত স্থান হতে অতিক্রম করার সময় তাঁকে দেখেছিলাম।

হালাবী হতে আলী বিন জাফার বর্ণনা করেছেন : ইমামের দারুল খেলাফাহ যাওয়ার জন্য নির্ধারিত দিনের কোন একটিতে আমরা আসকারে তার সাথে সাক্ষাতের আশায় অপেক্ষায় রইলাম, এমন সময় তাঁর পক্ষ হতে একটি চিঠি আমাদের নিকট এসে পৌঁছায়, তাতে লেখা ছিল :

ألّا یسلّمنّ علىّ أحد و لا یشیر إلىّ بیده و لا یؤمى فإنّكم لا تؤمنون على أنفسكم.

অনুবাদ : ‘তোমাদের মধ্যে হতে কেউ যেন আমাকে সালাম না করে, এমনকি আমার প্রতি ইশারাও করবে না, কেননা তোমরা (খলিফার অত্যাচার হতে) নিজেরাই নিরাপদ নও'।

এ রেওয়ায়েত হতে স্পষ্ট হয় যে, তত্কালীন শাসক কিভাবে ইমামের সাথে তাঁর অনুসারীদের যোগাযোগের বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণ করতো। অবশ্য ইমাম (আ.) ও তাঁর অনুসারীরা বিভিন্ন সময় পরস্পরের সাথে সাক্ষাত ও যোগাযোগ করতেন এবং এ সকল সাক্ষাত ও যোগযোগ যাতে ফাঁশ না হয় সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হত। ইমামের সাথে শিয়াদের যোগাযোগে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পথ ছিল চিঠি আদান-প্রদানের মাধ্যমে যোগাযোগ করা; বিভিন্ন গ্রন্থে এ সকল চিঠির কথা উল্লিখিত হয়েছে।

 

সামেররাতে ইমামের অবস্থান

যদিও ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ছিলেন অল্পবয়সী যুবক, তা সত্ত্বেও ইমামের ইলমি ও নৈতিক ব্যক্তিত্ব বিশেষতঃ শিয়াদের নেতৃত্ব দান এবং ইমামের প্রতি তাদের বিশ্বাস ও তাঁর প্রতি জনগণের সম্মানের কারণে তিনি ব্যাপক প্রসিদ্ধি লাভ করেছিলেন। যেহেতু তিনি সাধারণ জনগণ ও বিশেষ ব্যক্তিত্বদের সম্মানের পাত্র ছিলেন তাই আব্বাসী খলিফাও কয়েকটি ক্ষেত্র ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁর সাথে সম্মানজনক ব্যবহার করেছে।

যে দীর্ঘ রেওয়ায়েত প্রায় সকল গ্রন্থেই তাঁর অবস্থার বর্ণনা দিতে গিয়ে উল্লিখিত হয়েছে, তা হতে সামেররাতে ইমামের মহত্ব ও গুরুত্ব দিনের পর দিন বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি স্পষ্ট হয়। এ পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐ রেওয়ায়েতের কিছু অংশ পাঠকদের জন্য উল্লেখ করা হল :

বিশিষ্ট শিয়া আলেম সায়াদ বিন আব্দুল্লাহ আশআরী -সম্ভবত তিন ইমাম (আ.) এর সাথে সাক্ষাতের সৌভাগ্য তিনি অর্জন করেছেন- বলেন : ২২৮ হিজরী শাবান মাসের কোন একদিনে আমরা আহমাদ বিন উবাইদুল্লাহ বিন খাকানের -তখন সে কোমের রাজস্ব বিভাগের দায়িত্বে ছিল এবং আহলে বাইত (আ.) এর সদস্য ও কোমের জনগণের সাথে সে ব্যাপক শত্রুতা পোষণ করত- সভায় বসেছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে সামেররাতে বসবাসকারী ‘তালিবিয়্যূন'দের [আবু তালিবের বংশধর] মাযহাব এবং শাসকের নিকট তাদের অবস্থানের কথা উঠলো। আহমাদ বললো : আমি আলাভিদের মধ্যে হাসান বিন আলী বিন আসকারী [আ.] এর ন্যায় কাউকে দেখেনি এবং শুনিনি, তাঁর সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন সম্মানিত ও মার্জিত, সত, বিচক্ষণ, মহানুভব আর কেউ থাকতে পারে বলে আমার জানা নেই এবং তিনি শাসক ও বনি হাশিম উভয়েরই সম্মানের পাত্র। তাকে গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এমনকি আমির ও উজিরদের উপরও প্রাধান্য দেওয়া হত। একদা আমি আমার পিতার নিকট দাঁড়িয়ে ছিলাম, ঐ দিন আমার পিতা জনগণের সাথে সাক্ষাতের জন্য বসেছিলেন। হাজ্বীদের একজন প্রবেশ করে বললেন : ইবনুর রেজা দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে আছেন। আমার পিতা উচুস্বরে বললেন তাকে প্রবেশের অনুমতি দাও এবং তিনি প্রবেশ করলেন... আমার পিতা তাকে দেখে কয়েক কদম এগিয়ে এসে এমন আচরণ করলেন যা আমি আগে কখনও তাকে করতে দেখিনি, এমনকি কোন আমির বা শাসকের সাথেও না, আমার পিতা তার কাছে গিয়ে তার কাঁধে হাত রেখে তার চেহারা এবং কপালে চুম্বন করলেন। অতঃপর তার হাত ধরে নিজের আসনে বসালেন। অতঃপর আমার পিতা তাঁর সম্মুখে বসে তাঁর সাথে কথা বলতে শুরু করলেন। কথা বলার সময় তাঁকে তাঁর কুনিয়াহ ধরে সম্বোধন করছিলেন -কাউকে সম্মান প্রদর্শনের জন্য এভাবে সম্বোধন করা হয়- এবং বারংবার বলছিলেন : আমার পিতা-মাতা আপনার উপর উত্সর্গ হোক।

রাতে আমি বাবার কাছে গেলাম... আজ আপনি যাকে এত সম্মান দেখালেন তিনি কে ছিলেন যে, আপনি নিজের পিতা-মাতাকেও তার উপর উত্সর্গ করলেন? তিনি বললেন : তিনি ছিলেন ইবনুর রেজা; রাফেজীদের ইমাম। অতঃপর তিনি নিরব হয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ পর নিরবতা ভেঙ্গে বললেন : যদি কখনও বনি আব্বাস হতে খেলাফত সরে বনি হাশিমের হাতে যায় তবে বনি হাশিমের মধ্যে এ কাজের জন্য তারচেয়ে যোগ্য আর কেউ নেই। তিনি বদান্যতা, নফসের পবিত্রতা, দুনিয়াবিমূখতা, ইবাদত এবং উত্তম শিষ্টাচারের কারণে খেলাফতের জন্য শ্রেষ্ঠত্ব রাখে। যদি তার পিতাকে দেখতে, সেও ছিল মহান, বিচক্ষণ, সতকর্মকারী এবং সুশিক্ষিত। এ কথা শোনার পর আমার সমস্ত অস্তিত্বে ক্রোধের আগুন জ্বলে ওঠে, কিন্তু তা সত্ত্বেও তাকে চেনার কৌতুহল আমার মাঝে জেগে ওঠে। বনি হাশিমের যার কাছেই, গন্যমান্য ব্যক্তিত্বদের নিকট, বিচারকগণ, ফকীহগণ, এমনকি সাধারণ মানুষদের মধ্যে যার কাছেই জিজ্ঞেস করতাম তাঁকে তাদের নিকট মহানবুভব এবং আহলে বাইতের অপর সদস্যদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে পেয়েছি। সকলেই বলতো : তিনি রাফেজীদের ইমাম। এরপর হতে আমি তাঁকে অধিক গুরুত্ব দিতাম। কেননা শত্রু ও বন্ধু নির্বিশেষে সকলেই তাঁর প্রশংসা করতো।

যেহেতু এ রেওয়ায়েতটির বর্ণনাকারী স্বয়ং আহলে বাইত (আ.) এর কঠোর শত্রু ছিল, তাই এমন ব্যক্তি হতে বর্ণিত রেওয়ায়েত হতে তত্কালীন যুগে সমাজের সাধারণ ও বিশেষ লোকের মাঝে ইমাম (আ.) এর নৈতিক ও সামাজিক অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উপলব্ধি করা সম্ভব।

ইমাম আসকারী (আ.) এর খাদেম বলেন : যেদিনগুলোতে ইমাম (আ.) খলিফার দরবারে (তার উপস্থিতির কথা জানান দিতে) যেতেন সে দিনগুলোত রাস্তাগুলোতে লোকারণ্যে ভরে যেত। ইমাম যখন আসতেন তখন হঠাত সকল চিত্কার-চেচামেচি, হৈহুল্লোড় থেমে যেত এবং তিনি (আ.) জনগণের মাঝ হতে খলিফার দরবারের প্রবেশ করতেন।

বিভিন্ন সওয়ারীতে আরোহন করে দাঁড়িয়ে থাকা এ সকল লোকরা হলেন ইমামের অনুসারী (শিয়া), তারা কাছ ও দূরের বিভিন্ন অঞ্চল হতে ইমামকে দেখার জন্য সামেররাতে আসতেন। অবশ্য আল্লাহর রাসূল (স.) এর সন্তানের প্রতি অন্যান্য মুসলমানদের অনুরাগের কারণে তারাও ইমাম (আ.) এর যাওয়ার পথে উপস্থিত হত এবং এতে ভীড় আরো বেড়ে যেত। (চলবে...)

 

 


source : www.abna.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
Apabila ada sebagian hukum Islam yang nampaknya bertentangan serta kontradiktif dengan ...
আবতার কে বা কা’রা?
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কতিপয় খুতবা ও ...
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...
ইহুদি ধর্ম
দুই নামাজ একসাথে পড়ার শরয়ী দললি
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...
নামাজ : আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের ...

 
user comment