বিশ্বের মুসতাযাফ বা অসহায় যাদের উপর আমেরিকার আধিপত্য রয়েছে তারা অথবা যারা অন্যান্য বড় শক্তিগুলোর ক্ষমতার ছায়াতলে রয়েছে তারা, যদি সজাগ না হয় এবং একে অপরের হাতে হাত না দেবে আর জাগরণ সৃষ্টি না করবে, শয়তানি ক্ষমতা তাদের থেকে দুর হবে না।
সবার চেষ্টা করা উচিত যে কোন মতবাদ বা মাযহাবের হোক না কেন যেন মুসতাযাফদের মধ্যে ঐক্য বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আর খোদা না করুক যদি তাতে অবহেলা করা হয় পূর্ব - পশ্চিমের সাম্রাজ্যবাদীরা ক্যান্সারের মত সবাইকে ধ্বংস করে দেবে।
আমরা সমস্ত বড় অপশক্তিগুলোকে ধ্বংস করার জন্য প্রস্তুত রয়েছি তোমরাও বিভিন্ন জাতিকে সৎ পথে চলতে সহযোগিতা করো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে এই যে, তোমরা তোমাদের নিজেদের মাযহাবে এবং আমরা আমাদের মাযহাবে নিষ্ঠা ও এখলাসকে রক্ষা করার সাথে সাথে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের উপর নির্ভর করতে হবে। যাতে করে আমাদের উপর তার কৃপা হোক এবং আমাদের এই অপশক্তিগুলোর ছায়াতল হতে বের করে নিয়ে আসেন।(১)
** ইসলামকে উল্টো বা বিকৃত করে দেখানো
হে শক্তিশালী মুসলমানগণ ! নিজেদের মধ্যে ফিরে এসো, আর নিজেকে জানার চেষ্টা করো এবং বিশ্ব বাসির কাছে নিজেদের পরিচয় তুলে ধরো এবং ফেরকাগত ও আঞ্চলিক দ্বন্দ্বকে -যা বিশ্বের অপশক্তিগুলোর হাতে লাঞ্ছিত এবং তাদের ভ্রষ্ট দালালরা তোমাদের মনুষ্যত্ব ও ইসলামী মর্যাদাকে লুণ্ঠন ও পদদলিত করতে এসেছে,- খোদা ও পবিত্র কোরানের হুকুম মত দুরে ফেলে দাও। আর বিচ্ছিন্নতা ও অনৈক্য সৃষ্টিকারী দুধ পোষা মোল্লা ও ইসলাম ও মুসলমানদের কল্যাণ থেকে বেগানা জাতীয়তাবাদী লোকদেরকে নিজেদের কাছ হতে দুরে সরিয়ে দাও। কেননা বিশ্বকে যারা গিলে ফেলতে চাচ্ছে তাদের তুলনায় এদের থেকে ইসলামের ক্ষতি কম নয়। এরা ইসলামকে উল্টো ও বিকৃত করে দেখায় এবং লুটেরাদের জন্য পথ উন্মুক্ত করে দেয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইসলাম ও মুসলমানদের দেশগুলোকে বিশ্ব লুটেরা ও তাদের দোসরদের হাত থেকে রক্ষা করুন।(২)
আয়াতুল্লাহ খামেনেয়ী
** ইসলামী ঐক্যমত্যের এক ক্ষেত্র প্রস্তুত করতে হবে
বিশ্বে মুসলমানদেরকে অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে এবং একে অপরের সাথে শত্রুতা বাদ দিতে হবে, সবার কেন্দ্রবিন্দু হতে হবে পবিত্র কোরান, নবী করিমের (সা.) সুন্নাহ ও ইসলাম ধর্ম। মুসলমানদের জীবনের ধরণটা অবশ্যই ইসলাম ও কোরানের উপর প্রতিষ্ঠিত হতে হবে, যাতে জীবনের সব ক্ষেত্রে তারা সফল হতে পারে। ইতিহাসে যখনই মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে এবং সর্ব সম্মত ভাবে একত্রিত হয়েছে এবং ইসলাম ও কোরানকে কেন্দ্র করে কাজ করেছে শত্রুদের চক্রান্ত তাদের কাজে কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি এবং সাম্রাজ্যবাদীদের সকল ষড়যন্ত্রকে তারা ব্যর্থ করে দিয়েছে।
** অনৈক্য সৃষ্টিকারী রচনাবলী প্রচারের ক্ষেত্রে বাঁধা দিতে হবে
যে সকল কাজগুলোকে অবশ্যই আঞ্জাম দিতে হবে তার মধ্যে একটি হল এই যে, শিয়া ক্ষেত্রে হোক কিন্বা সুন্নি ক্ষেত্রে হোক না কেন অনৈক্য সৃষ্টিকারী রচনাবলী প্রচারের ক্ষেত্রে বাঁধা দিতে হবে। বর্তমানে হিংসা ও বিদ্বেষ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন রচনাবলী লেখা হচ্ছে এবং তার জন্য অনেক টাকাও খরচ করা হচ্ছে। যদি সম্ভব হয় এর পথরোধ করতে হবে। সারা পৃথিবী থেকে আমার জন্য বিভিন্ন বই পুস্তক আসে যা থেকে বুঝা যায় যে, আসলে এ সকল লোকদের চেষ্টাই হচ্ছে হিংসা, বিদ্বেষ, ক্রোধ ও উদ্বেগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে এ সব বই লেখা হয়েছে।
** মাযহাবগত মতপার্থক্য
ইতিহাসে মুসলমানদের জ্ঞানগত ও চিন্তাগত অনেক সামর্থ্য একে অপরের সাথে ঝগড়া বিবাদে ব্যয় হয়েছে ... শেষ পর্যন্ত যা আমার মনে পড়ে, মুসলমানদের মধ্যে মাযহাবগত ঝগড়া বিবাদ ক্ষমতাবান লোকদের মাধ্যমে পরিচালিত হয়েছে। বনী আব্বাসের যুগ হতে পরবর্তী যুগ পর্যন্ত কিছু অদৃশ্য হাত সব সময় ইসলামী বিভিন্ন আকিদা বিশ্বাসের লোকদেরকে দ্বন্দ্বে লিপ্ত করিয়েছ। যদি এ অদৃশ্য হাতগুলো না থাকতো বছরের পর বছর তারা একে অপরের সাথে শান্তিতে বসবাস করতো এবং কোন অসুবিধাই থাকতো না। বর্তমান যুগে মুসলমানরা যাতে ঐক্যবদ্ধ ও একমত হতে না পারে এবং একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে তার জন্য খুব বেশি চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ প্রচেষ্টা বিশেষ করে এমন সময়ে প্রচণ্ড আকার ধারণ করেছে যখন অন্যান্য সময়ের তুলনায় খুব বেশি মুসলমানদের ঐক্যের প্রয়োজন রয়েছে।
সূত্রসমূহ:
১। সাহিফেয়ে নুর, ১৭ তম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৪৭।
২। সাহিফেয়ে নুর, ৮ ম খন্ড, পৃষ্ঠা: ২৩৫ - ২৩৬ ও ১৯ তম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৯।
মূল: দ্বিমাসিক সাংস্কৃতিক ও সামাজিক অফাক্ব পত্রিকা, ৩১ - ৩২ তম সংখ্যা, কোম, ইরান।