বাঙ্গালী
Friday 27th of December 2024
0
نفر 0

পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইমাম মাহদী আ

ক)- কোরআন

 

পবিত্র কোরআন হচেছ ঐশী শিক্ষার দূর্লভ ঝর্ণাধারা, প্রতিষ্ঠিত হিকমত এবং মানুষের প্রয়োজনীয় জ্ঞান ভাণ্ডার৷ কোরআন সত্য ও ন্যায়ে পরিপূর্ণ কিতাব যাতে পৃথিবীর অতীত,

বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে সংবাদ দান করা হয়েছে এবং কোন কিছুই তা থেকে বাদ পড়ে নি৷ তবে এটা স্পষ্ট যে, পৃথিবীর ব্যাপক ঘটনাবলী কোরআনের ঐশী আয়াতের মধ্যে

নিহিত রয়েছে এবং কেবলমাত্র যারা তার গভীরে পৌঁছতে পারবে তারাই এসত্যকে উপলব্ধি করতে পারবে৷ তারাই হচেছন কোরআনের প্রকৃত কর্ণধার ও মোফাস্সের অর্থাৎ মহানবী

হযরত মুহাম্মদ (সা.) ও তাঁর পবিত্র আহলে বাইত (আ.) গণ৷

আল্লাহর শেষ প্রতিনিধি পৃথিবীর এক মহান সত্য যার প্রতি কোরআনের বিভিন্ন আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে এবং ওই সকল আয়াতের ব্যাখ্যায়ও বহু রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে নিম্নে

তার কিছু তুলে ধরা হল:

যেমন সূরা আম্বিয়ার ১০৫ নং আয়াতে বলা হচেছ:

لَقَدْ كَتَبْنَا فِي الزَّبُورِ مِن بَعْدِ الذِّكْرِ أَنَّ الْأَرْضَ يَرِثُهَا عِبَادِيَ الصَّالِحُونَ

নিশ্চয়ই আমরা তৌরাতের পর যাবুরে উল্লেখ করেছি যে, যোগ্যতা সম্পন্ন বান্দারা পৃথিবীর আমাদের উত্তরাধিকারী হবে৷

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.) ও তাঁর সাহায্যকারীরা হচেছন সেই যোগ্য বান্দা যারা পৃথিবীর উত্তরাধিকারী হবেন (তাফসীরে কুম্মী খণ্ড- ২, পৃ.-৫২)৷

সূরা কাসাসের ৫ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

وَنُرِيدُ أَن نَّمُنَّ عَلَى الَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا فِي الْأَرْضِ وَ نَجْعَلَهُمْ أَئِمَّةً وَ نَجْعَلَهُمُ الْوَارِثِينَ

এবং আমরা ইচছা করলাম যাদেরকে পৃথিবীর বুকে (বঞ্চিত) হীনবল করা হয়েছিল তাদেরকে নেতৃত্ব দান করতে এবং উত্তরাধিকারী করতে৷

ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

বঞ্চিত বা হীনবল বলতে রাসূল (সা.)-এর আহলে বাইতকে বোঝানো হয়েছে৷ অনেক প্রচেষ্টা ও কষ্টের পর আল্লাহ এই বংশের মাহদী (আ.)-কে প্রেরণ করবেন এবং তাকে উচচ

মর্যাদা দান করবেন এবং শত্রুদেরকে কঠিন ভাবে লাঞ্চিত করবেন (গাইবাতে শেখ তুসী হাদীস ১৪৩, পৃ.-১৮৪)৷

সূরা হুদের ৮৬ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

بَقِيَّةُ اللّهِ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আল্লাহর গচিছত সম্পদই তোমাদের জন্য যতেষ্ট যদি তোমরা মু'মিন হয়ে থাক৷

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.) আবির্ভূত হওয়ার পর কা'বা গৃহে হেলান দিয়ে প্রথমে উক্ত আয়াতটি তেলাওয়াত করবেন৷ অতঃপর বলবেন:

انا بقية الله فی ارضه و خليفته و حجته عليکم

আমিই পৃথিবীর বুকে আল্লাহর গচিছত সম্পদ, তোমাদের প্রতি তাঁর উত্তরাধিকারী এবং হুজ্জাত৷

অতঃপর যারা তাঁকে সালাম করবে তারা বলবে:

السلام عليک يا بقية الله فی ارضه

আপনার প্রতি সালাম, হে পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্র গচিছত সম্পদ (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১, বাব ৩২, হাদীস ১৬, পৃষ্ঠা ৬০৩)৷

সূরা হাদীদের ১৭ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে:

عْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ يُحْيِي الْأَرْضَ بَعْدَ مَوْتِهَا قَدْ بَيَّنَّا لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ

জেনে রাখ আল্লাহই ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ আমি নির্দশনগুলি তোমাদের জন্য বিশদভাবে ব্যক্ত করেছি যাতে তোমরা বুঝতে পার৷

উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

আল্লাহ তা'আলা ইমাম মাহদী (আ.)-এর নিষ্ঠার মাধ্যমে পৃথিবীকে পূনর্জীবিত করবেন৷ কেননা অত্যাচারিদের অত্যাচারের মাধ্যমে পৃথিবী মৃত্যুবরণ করেছিল (গাইবাতে নোমানী

পৃ.-৩২)৷

খ)- রেওয়ায়াত

ইমাম মাহদী (আ.)-এর বিষয়টি এমনই একটি বিষয়, যে সম্পর্কে বহু সংখ্যক রেওয়ায়াত বর্ণিত হয়েছে৷ ইমামের জীবনের বিভিন্ন পর্যায় যেমন: জন্ম, শৈশবকাল, স্বল্প ও

দ্বীর্ঘমেয়াদী অদৃশ্যকাল, আবির্ভাবের নিদর্শন, আবির্ভাবের পর এবং বিশ্বব্যাপী অনুশাসন সম্পর্কে ইমামগণ হতে পৃথক পৃথক হাদীস বর্ণিত হয়েছে৷ যেমনিভাবে তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য,

অদৃশ্যকালীন পরিস্থিতি, প্রতিক্ষাকারীদের পুরষ্কার সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত হয়েছে৷ আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হচেছ এই হাদীসসমূহ শিয়া-সুন্নি উভয় মাযহাবের গ্রন্থেই বর্ণিত হয়েছে

এবং ইমাম মাহ্দী সম্পর্কিত বহু হাদীসই মুতাওয়াতির৷

ইমাম মাহদী (আ.)-এর আর একটি বৈশিষ্ট্য হচেছ মাসূমগণ তাঁর সম্পর্কে অতি সুন্দর সুন্দর কথা বলেছেন৷ যার সমষ্টি থেকে ইমাম মাহদী (আ.)-এর ন্যায়নিষ্ঠ বিপ্লবের গুরুত্ব

প্রকাশ পায়৷ এখানে আমরা ইমাম মাহদী (আ.) সম্পর্কিত চৌদ্দ মাসুম (আ.) হতে বর্ণিত হাদীসসমূহকে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করেছি:

* রাসূল (সা.) বলেছেন:

"তার সৌভাগ্য, যে মাহ্দীকে দেখবে৷ তারও সৌভাগ্য, যে মাহদীকে ভালবাসবে এবং সেও সৌভাগ্যবান, যে তাঁর ইমামতকে গ্রহণ করবে" (বিহারুল আনওয়ার খণ্ড- ৫২,

পৃ.-৩০৯)৷

* ইমাম আলী (আ.) বলেছেন:

"আবির্ভাবের প্রতিক্ষায় থেকো এবং কখনোই আল্লাহর রহমত থেকে বিমুখ হয়ো না৷ এটা অতি সত্য যে, আবির্ভাবের প্রতিক্ষায় থাকা আল্লাহর নিকট সর্বোত্তম ইবাদত" (বিহারুল

আনওয়ার খণ্ড- ৫২, পৃ.-৩০৯)৷

* হযরত ফাতিমাতুয্ যাহরা (আ.)-এর কিতাবে বর্ণিত হয়েছে:

অতঃপর বিশ্ববাসীর প্রতি রহমতের জন্য আওলীগণের পর্যায়ক্রমকে ইমাম হাসান আসকারী (আ.)-এর সন্তানের মাধ্যমে পরিপূর্ণতা লাভ করবে৷ যার মধ্যে হযরত মুসার পূর্ণতা,

হযরত ঈসার সৌন্দর্য এবং হযরত আইয়ুবের ধৈর্য থাকবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড-১, বাব ২৮, হাদীস ১, পৃ.-৫৬৯)৷

* ইমাম হাসান মুজতাবা (আ.) বলেছেন:

আল্লাহপাক শেষ যামানায় একজন মহাপুরুষকে প্রেরণ করবেন এবং তাঁকে ফেরেশ্তাদের মাধ্যমে সাহায্য করবেন এবং তাঁর সাথীদেরকেও রক্ষা করবেন৷ তাঁকে পৃথিবীর সবকিছুর উপর

প্রাধান্য দেয়া হবে৷ তিনি দুনিয়াকে এমভাবে ন্যায়নীতি ও সাম্যে পরিপূর্ণ করবেন যেমনিভাবে পৃথিবী জুলুম অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল৷ সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে, তাঁকে দেখবে এবং

তাঁর নির্দেশ পালন করবে (ইহতিজাজা খণ্ড-২, পৃ.-৭০)৷

* ইমাম হুসাইন (আ.) বলেছেন:

আল্লাহ হযরত মাহ্দীর মাধ্যমে ধরিত্রীকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন৷ তাঁর মাধ্যমেই সত্য দ্বীনকে সকল দ্বীনের উপর প্রাধান্য দান করবেন যদিও মুশরিকরা তা পছন্দ করে

না৷ তিনি অদৃশ্যে থাকবেন অনেকেই দ্বীনচ্যুত হবে আবার অনেকেই দ্বীনের প্রতি প্রতিষ্ঠিত থাকবে৷ যে ব্যক্তি অদৃশ্যকালীন অবস্থায় বিভিন্ন অত্যাচার ও মিথ্যাচারে ধৈর্য ধারণ করবে

সে রাসূল (সা.)-এর সাথে থেকে মুশরিকেদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সমপরিমাণ সওয়াব পাবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১, বাব ৩০, হাদীস ৩, পৃষ্ঠা ৫৮৫)৷

* ইমাম সাজ্জাদ (আ.) বলেছেন:

আমাদের কায়েমের অদৃশ্যকালীন সময়ে যারা আমাদের প্রতি বিশ্বাসে অনড় থাকবে আল্লাহ তা'আলা তাকে বদর এবং ওহুদের যুদ্ধে শাহাদত প্রাপ্তদের মত সহস্র শহীদের পুরস্কার দান

করবেন (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড- ১, বাব ৩১, হাদীস পৃষ্ঠা ৫৯২)৷

* ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন:

মানুষের জন্য এমন সময় আসবে যখন তাদের ইমাম অদৃশ্যে থাকবে এবং সেই ব্যক্তি সৌভাগ্যবান যে, ঐ সময়ে আমাদের বেলায়াতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে (কামালুদ্ দ্বীন খণ্ড-

১, বাব ৩২, হাদীস-১৫, পৃষ্ঠা ৬০২)৷

* ইমাম জাফর সাদিক (আ.) বলেছেন:

আমাদের কায়েমের জন্য দৃ'টি অদৃশ্য রয়েছে একটি স্বল্পমেয়াদী অপরটি দীর্ঘমেয়াদী (গাইবাতে নোমানী বাব ১০, হাদীস ৫, পৃষ্ঠা ১৭৬)৷

* ইমাম কাযিম (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.) দৃষ্টির অন্তরালে থাকবেন কিন্তু মু'মিনরা তাঁকে কখনোই ভুলবেন না (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৪, হাদীস ৫৬, পৃষ্ঠা ৫৭)৷

* ইমাম মুসা রেযা (আ.) বলেছেন:

ইমাম মাহদী (আ.) যখন আবির্ভূত হবেন পৃথিবী তাঁর জ্যোতিতে আলোকিত হয়ে যাবে এবং তিনি ন্যায়বিচারের মানদণ্ড স্থাপন করবেন৷ সুতরাং তখন কেউই কারো প্রতি অত্যাচার

করবে না (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৫, হাদীস ৫, পৃষ্ঠা ৬০)৷

* ইমাম তাকি আল জাওয়াদ (আ.) বলেছেন:

আমাদের কায়েম তিনি যার অদৃশকালীন অবস্থায় তাঁর প্রতিক্ষায় থাকতে হবে এবং আবির্ভাবের পর তাঁর নির্দেশ পালন করতে হবে (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৬, হাদীস ১, পৃষ্ঠা

৭০)৷

* ইমাম হাদী আন্ নাকি (আ.) বলেছেন:

আমার পর ইমাম হচেছ আমার পুত্র হাসান এবং তার পর তার পুত্র মাহ্দী ইমাম হবে এবং তিনি দুনিয়াকে এমভাবে ন্যায়নীতি ও সাম্যে পরিপূর্ণ করবেন যেমনিভাবে পৃথিবী জুলুম

অত্যাচারে ভরে গিয়েছিল (গাইবাতে নোমানী বাব ৩৭, হাদীস ১০, পৃষ্ঠা ৭৯)৷

* ইমাম হাসান আসকারী (আ.) বলেছেন:

আল্লাহর প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যে, তিনি আমার মৃত্যুর পূর্বেই আমাকে আমার উত্তরাধিকারী দান করেছেন৷

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম মাহদী (আ. ফা.) এর সংক্ষিপ্ত ...
বুদ্ধিবৃত্তির দৃষ্টিতে ইমামের ...
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর আবির্ভাব কালের ...
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর ‘আবির্ভাব-পূর্ব ...
কুয়েত্তায় ইমাম মাহদি (আ.) পরিচিতি ...
পবিত্র কোরআন ও হাদীসের আলোকে ইমাম ...
আল্লাহকে কি চর্মচক্ষু দ্বারা ...
শিয়াদের মৌলিক বিশ্বাস ...
ইমাম মাহ্দী (আ.)-এর যুগে সংঘটিত ...
১৫ই শাবান রাত ও দিনের আমল

 
user comment