প্রশ্ন :আল্লাহকে কি চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব?
উত্তর দিয়েছেন আয়াতুল্লাহ্ নাসের মাকারেম সিরাজী
উত্তর : বুদ্ধিবৃত্তিক প্রমাণসমূহ হতে বোঝা যায়,মহান আল্লাহকে কখনও চর্মচক্ষু দ্বারা দেখা সম্ভব নয়। কারণ চক্ষু শুধু বস্তু বা বস্তুর কিছু প্রকৃতিকে অবলোকন করতে পারে। তাই যা বস্তু নয় এবং বস্তুর প্রকৃতিও ধারণ করে না তা কখনই চক্ষু দ্বারা দেখা যায় না। অন্যভাবে বলা যায় যে,যদি কোন কিছু দর্শনীয় হয় তাহলে অবশ্যই তার বস্তুপ্রকৃতি রয়েছে অর্থাৎ তা স্থান,কাল ও পাত্রের অধীন। কিন্তু মহান আল্লাহ্ এ সবের ঊর্ধ্বে। তিনি অসীম এক অস্তিত্ব। তিনি বস্তুর ঊর্ধ্বে। কারণ বস্তু জগতের সকল কিছু সীমিত।
ইমাম সাদেক (আ.)-এর এক শিষ্য মুয়াবিয়া ইবনে ওয়াহাব তাঁকে (ইমাম সাদেককে) প্রশ্ন করেন,“হে রাসূলের সন্তান! রাসূল (সা.) আল্লাহকে দেখেছেন-এ সম্পর্কিত হাদীস সম্পর্কে আপনি কি বলেন? কিভাবে তিনি তাঁকে দেখেছেন?”
ইমাম সাদেক (আ.) বললেন,“হে মুয়াবিয়া ইবনে ওয়াহাব! বিষয়টি কতটা দৃষ্টিকটু যে,মানুষ সত্তর-আশি বছর আল্লাহর রাজত্বে তাঁর নিয়ামত ভোগ করে তাঁকে সঠিকভাবে চেনে না। হে মুয়াবিয়া! মহানবী কখনও এই চর্মচক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখেন নি। দর্শন দু’ভাবে হতে পারে :
অন্তর্চক্ষু ও বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা। যদি কেউ বলে রাসূল অন্তর্চক্ষু দ্বারা আল্লাহকে দেখেছেন,তাহলে সে সত্য বলেছে। আর যদি কেউ বলে বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা দেখেছেন,তাহলে সে মিথ্যা বলেছে এবং আল্লাহ্ ও তাঁর আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। কারণ রাসূল বলেছেন : যদি কেউ আল্লাহকে তাঁর সৃষ্টির সদৃশ মনে করে সে কাফের। মহান আল্লাহ্ বলেছেন : ليس كمثله شيء কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়।”(সূরা শুরা : ১১)
অন্য এক রেওয়ায়েতে ইসমাঈল ইবনে ফযল হতে বর্ণিত হয়েছে,তিনি বলেন,“আমি ইমাম সাদেককে প্রশ্ন করলাম : আল্লাহকে কি কিয়ামতের দিন দেখা যাবে?” তিনি বললেন,“সুবহানাল্লাহ্! তিনি এ সব হতে পবিত্র ও ঊর্ধ্বে। কারণ চক্ষুসমূহ ঐ বস্তুসমূহকে দেখতে পায় যার রং ও প্রকৃতি রয়েছে। আল্লাহ্ রং ও প্রকৃতিসমূহের স্রষ্টা।”
বর্তমানে আমরা জানি পদার্থকে এর শোষিত রংয়ের কারণে দেখা যায়। যা কিছু রং ধারণ করে না তা দেখাও যায় না। তাই কিয়ামতে আল্লাহকে বাহ্যিক চক্ষু দ্বারা দেখার বিষয়টি অসঙ্গত। (( জ্যোতি ১ম বর্ষ, ৪র্থ সংখ্যা))