বাঙ্গালী
Sunday 24th of November 2024
0
نفر 0

সূরা আ'রাফ; (৪৬তম পর্ব)

সূরা আ'রাফ; আয়াত ২০৩-২০৬ সূরা আ'রাফের ২০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে- وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِمْ بِآَيَةٍ قَالُوا لَوْلَا اجْتَبَيْتَهَا قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِنْ رَبِّي هَذَا بَصَائِرُ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ "হে নবী, যখন আপনি তাদের সামনে কোনো নিদর্শন পেশ করেন না,তখন তারা বলে, আপনি নিজের জন্য কোনো নিদর্শন বেছে নেননি কেন? তাদেরকে বলে

সূরা আ'রাফ; আয়াত ২০৩-২০৬

সূরা আ'রাফের ২০৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِمْ بِآَيَةٍ قَالُوا لَوْلَا اجْتَبَيْتَهَا قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَى إِلَيَّ مِنْ رَبِّي هَذَا بَصَائِرُ مِنْ رَبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

"হে নবী, যখন আপনি তাদের সামনে কোনো নিদর্শন পেশ করেন না,তখন তারা বলে, আপনি নিজের জন্য কোনো নিদর্শন বেছে নেননি কেন? তাদেরকে বলে দিন, আমিতো কেবল সেই ওহীরই আনুগত্য করি যা আমার বর আমার কাছে পাঠান। এটিতো অন্তর্দৃষ্টির আলো তোমাদের রবের পক্ষ থেকে। হেদায়েত ও রহমত সেসব লোকের জন্য যারা ঈমান এনেছে।" (৭:২০৩)

আমরা জানি যে, প্রথমে একবার পুরো কোরআনের আয়াত রাসূল (সা.)'র অন্তরে নাজেল হয় এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৩ বছর ধরে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ঘটনা উপলক্ষে নাজেল হয় এ মহাগ্রন্থ। এই ২৩ বছরে কখনো কখনো দেখা গেছে কয়েক মাসেও কোন আয়াত নাজিল হয়নি। এ সময় রাসূলের বিরোধীরা এ প্রশ্ন করতো যে, কেন কোনো আয়াত বা মোজেজা নাজিল হচ্ছে না? তারা এও বলতো যে, তোমার আল্লাহ কি তোমার সঙ্গে রাগ করেছে?

এই আয়াতে আল্লাহতায়ালা ওই সব লোকদের এটা জানিয়ে দিতে বলেছেন যে, আমিতো কোনো আয়াত নিজে থেকে পেশ করি না যে, আপনারা চাইলেই আমি তা নাজিল করতে পারবো। আল্লাহ যখন যে আয়াত নাজিল করেন, আমি কেবল সেগুলোই আপনাদের সামনে তুলে ধরি। আমি কেবল আল্লাহর ওহি'র অনুসরণ করি। আর এসব ওহি কেবল ঈমানদারদের জন্য হেদায়েত ও রহমত ।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো :

এক. ইসলাম ধর্ম প্রচারের ক্ষেত্রে মানুষকে নানা পদ্ধতিতে বোঝাতে হবে। প্রয়োজনে কখনো পুরোপুরি নিরব থাকতে হবে। পরিবেশ-পরিস্থিতি বুঝে কথা বলতে হবে।

দুই. ইসলাম বিরোধী এবং অজুহাত সন্ধানীদের মাধ্যমে প্রভাবিত হলে চলবে না। নিজের পথই যে সত্য ও শাশ্বত,সে বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাতে অটল ও দৃঢ় থাকতে হবে।

সূরা আরাফের ২০৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآَنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنْصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

"যখন তোমাদের সামনে কুরআন পড়া হয়, তা শোনো মনোযোগ সহকারে এবং নীরব থাকো, যাতে তোমরাও আল্লাহর রহমত পেতে পারো।" (৭:২০৪)

মুমিনদের অন্তর্দৃষ্টি বৃদ্ধি এবং হেদায়েত ও রহমত পাওয়ার ক্ষেত্রে কোরানের ভূমিকা সম্পর্কে এর আগের আয়াতে আলোচনা করা হয়েছে। এ আয়াতে বলা হচ্ছে, যখন রাসূল (সা.) বা অন্য কেউ কুরআন পাঠ করে তখন তা বিনয়ের সঙ্গে মনোযোগ দিয়ে শোন এবং নীরব থাকো। এর ফলে তোমরাও আল্লাহর বিশেষ রহমত পেতে পারো। জামাতে নামাজ আদায়ের সময় ইমাম সাহেব যখন সুরা হামদ ও অন্য সূরা তেলাওয়াত করেন, তখন সবার উচিত নীরব থেকে অত্যন্ত মনোযোগের সাথে তা শোনা।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিক গুলো হলো:

এক. কোরআন আল্লাহর বাণী। এ কারণে যখন কেউ কুরআন তেলাওয়াত করেন,তখন তা বিনয় ও মনোযোগের সঙ্গে শুনতে হবে। কুরআন তেলাওয়াতের সময় কথা বলা উচিত নয়।

দুই. কুরআনকে সম্মান করলে মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহ লাভ করে। এর বিপরীতে কুরআনকে অসম্মান ও অশ্রদ্ধা করলে আল্লাহর গজব নেমে আসে। কুরআন তেলাওয়াতের সময় নীরব থাকাও কোরানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের অংশ।

সূরা আ'রাফের ২০৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَاذْكُرْ رَبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآَصَالِ وَلَا تَكُنْ مِنَ الْغَافِلِينَ

"হে নবী! তোমার রবকে স্মরণ করো সকাল-সন্ধ্যায় মনে মনে কান্নাজড়িত স্বরে ও ভীতি বিহ্বল চিত্তে এবং অনুচ্চ কণ্ঠে। যারা অমনোযোগী তুমি তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।" (৭:২০৫)

এর আগের আয়াতে কোরআন তেলাওয়াতের সময় নীরবে ও মনোযোগের সঙ্গে তা শুনতে বলা হয়েছে। এই আয়াতে আল্লাহকে সব সময় স্মরণ করার কথা বলা হয়েছে। মানুষকে সব সময় আল্লাহর কথা স্মরণে রাখতে হবে। এছাড়া, প্রতিদিনের কার্যাবলীর শুরুতে সকালে এবং দিনের শেষে সন্ধ্যায় আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে। মুখে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করতে হবে। তবে অন্যের বিরক্তির কারণ হয়,এমন জোরে চিতকার দিয়ে আল্লাহকে ডাকার প্রয়োজন নেই। আস্তে আস্তে এবং নম্র স্বরে বিনয়ের সাথে আল্লাহকে স্মরণ করতে হবে,যাতে আল্লাহর প্রতি সম্মান,শ্রদ্ধা এবং ভীতি ফুটে ওঠে।

এ আয়াতের শুরুতে রাসূল (স.) কে উদ্দেশ্য করা হলেও এখানে এটা স্পষ্ট যে, রাসূল (স.) এর সব অনুসারী ও মুমিন ব্যক্তিদেরকে এই অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। অবশ্যই আল্লাহকে মনে-প্রাণে স্মরণ করতে হবে ।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো :

এক. মুখে আল্লাহর জিকির করা তখনই ফলদায়ক, যখন তা অন্তর থেকে উতসারিত। এমনটি হলে চলবে না যে, আমরা মুখে আল্লাহ আল্লাহ করছি,কিন্তু চিন্তা-চেতনায় রয়েছে অন্যকিছু। যা বলছি,তা উপলব্ধি করে বলতে হবে।

দুই. শুধু লোক দেখানোর জন্য উচ্চ কণ্ঠে জিকির করলে তা আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আস্তে আস্তে সম্মান ও বিনয়ের সাথে ও কেঁদে কেঁদে আল্লাহর স্মরণ করা উচিত।

তিন. প্রতিটি দিন শুরু করতে হবে আল্লাহর নামে এবং আল্লাহর নামে তা শেষ করতে হবে। দিনের শেষে ভালো কাজ করার সুযোগ দেয়ার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে এবং আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করলে ও অন্যায় কাজ করলে সে জন্যে তওবা করতে হবে,ক্ষমা চাইতে হবে। অন্যায় কাজের পুণরাবৃত্তি না করার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হতে হবে।

সূরা আ'রাফের ২০৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

إِنَّ الَّذِينَ عِنْدَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ

"যারা তোমার রবের সান্নিধ্যে রয়েছে তারা তাঁর ইবাদত করাকে অবজ্ঞা জ্ঞান করে না। তারা তাঁর প্রশংসা করে এবং তাঁর সম্মুখে সেজদায় অবনত হয়।" (৭:২০৬)

গত আয়াতে আল্লাহর জিকির প্রসঙ্গে বলা হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় এই আয়াতে বলা হয়েছে, ফেরেশতাই হোক আর সত্যপন্থী ও আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্বরা হোক, তাদের কেউই আল্লাহর সামনে অহংকার করে না বরং তারা সব সময় মনে-প্রাণে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার এবাদত করে। সিজদাবনত হয়ে আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। কিন্তু যারা আল্লাহকে স্মরণ করে না এবং তার সামনে সিজদাবনত হয় না,তারা নিজেদেরকে খুব বড় মনে করে। তারা মনে করে, আল্লাহর কোনো প্রয়োজন তাদের নেই। এ কারণে তারা আল্লাহর কাছে কোনো কিছুই প্রার্থনা করে না।

এই আয়াতের শিক্ষণীয় দিকগুলো হলো :

এক. আল্লাহর সামনে অহঙ্কার একেবারেই অর্থহীন ও হাস্যকর বরং আল্লাহর সামনে নিজেকে নিঃস্ব ও অস্তিত্বহীন গণ্য করলেই তা সম্মান ও মর্যাদার উতস হতে পারে।

দুই. এবাদতের বিষয়েও অহঙ্কারী হওয়া যাবে না। এমনটি ভাবা উচিত নয় যে, আমি অনেক এবাদত করে ফেলেছি। কারণ আল্লাহর সান্নিধ্য লাভকারীরা কখনোই তাদের এবাদতের জন্য অহঙ্কার করে না। সবসময় নম্র ভাবে সিজদায় গিয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে।


source : alhassanain
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
মহানবী (স.) হতে বর্ণিত ৪০টি হাদীস (২)
গাদিরে খুম
কুরআনের দৃষ্টিতে নবী-রাসূলগণ
আল কুরআনের দৃষ্টিতে মানব জীবনের ...
রমজানে দোয়া ও মোনাজাত
পবিত্র কোরআন ও হাদিসের আলোকে ...
যুগের ইমাম সংক্রান্ত হাদীসের ওপর ...
ইহুদিবাদী ইসরাইলের অবৈধ জন্মের ...
হযরত আলীর (আ.) অভিষেক

 
user comment