বাঙ্গালী
Wednesday 15th of January 2025
0
نفر 0

সূরা আল আনফাল;(১৪তম পর্ব)

সূরা আল আনফাল; আয়াত ৬০-৬৪

সূরা আনফালের ৬০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَأَعِدُّوا لَهُمْ مَا اسْتَطَعْتُمْ مِنْ قُوَّةٍ وَمِنْ رِبَاطِ الْخَيْلِ تُرْهِبُونَ بِهِ عَدُوَّ اللَّهِ وَعَدُوَّكُمْ وَآَخَرِينَ مِنْ دُونِهِمْ لَا تَعْلَمُونَهُمُ اللَّهُ يَعْلَمُهُمْ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فِي سَبِيلِ اللَّهِ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تُظْلَمُونَ

"শত্রুদের হুমকি মোকাবেলার জন্য তোমরা যথাসাধ্য শক্তি ও অশ্ব প্রস্তুত রাখবে। এ দিয়ে তোমরা আল্লাহর শত্রুকে, তোমাদের শত্রুকে এবং এরা ছাড়া অন্যদের, যাদেরকে তোমরা জান না কিন্তু আল্লাহ জানেন সন্ত্রস্ত রাখবে, আর আল্লাহর পথে যা ব্যয় করবে ওর পূর্ণ প্রতিদান দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না।" (৮:৬০)

আগের পর্বে বলা হয়েছিল, মদিনার ইহুদিরা পয়গম্বর (দ.)এর সঙ্গে যে চুক্তি ও প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হয়েছিল, অল্প কিছু দিনের মধ্যেই তারা অবলীলায় সে চুক্তি ভঙ্গ করে এবং মক্কার মুশরিকদেরসঙ্গে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মুসলমানদের বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে মেতে ওঠে। ফলে আল্লাহর রাসূলও ঘোষণা করেন তোমরা যেহেতু চুক্তিভঙ্গ করেছো তাই আমরাও এখন আর ওই চুক্তি মেনে চলতে বাধ্য নই।

এই আয়াতে মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তার পয়গম্বর এবং মুসলমানদেরকে উদ্দেশ্য করে বলছেন, মুসলমানদের সামরিক শক্তি এমন অবস্থায় থাকতে হবে যাতে, শত্রু পক্ষের মনে সব সময় আতঙ্ক বিরাজ করে এবং মুসলমানদের ওপর আক্রমণের চিন্তাও যেন তাদের মাথায় না আসে। কাজেই এখানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মুসলমানদের আত্মরক্ষার জন্য সর্বোচ্চ সামরিক শক্তি সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে। যুদ্ধাস্ত্র সংগ্রহের ব্যাপারে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। আর এটা মনে রাখতে হবে ইসলামকে রক্ষার জন্য যে যত ব্যয় করবে মহান আল্লাহ তার পূর্ণ প্রতিদান দিবেন।

সূরা আনফালের ৬১ ও ৬২ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَإِنْ جَنَحُوا لِلسَّلْمِ فَاجْنَحْ لَهَا وَتَوَكَّلْ عَلَى اللَّهِ إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ (61) وَإِنْ يُرِيدُوا أَنْ يَخْدَعُوكَ فَإِنَّ حَسْبَكَ اللَّهُ هُوَ الَّذِي أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ

"আর যদি তারা সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে তাহলে তুমিও সন্ধির দিকে বুঁকবে এবং আল্লাহর ওপর নির্ভর করবে। নিশ্চয়ই তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” (৮:৬১)

“তারা যদি তোমাকে প্রতারিত করতে চায় তাহলে তোমার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট। তিনি তোমাকে স্বীয় সাহায্য ও বিশ্বাসীগণ দ্বারা শক্তিশালী করেছেন।"  (৮:৬২)

আগের আয়াতে মুসলমানদেরকে শত্রুর ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। এই আয়াতে বলা হচ্ছে-কেউ যেন মনে না করে যে, ইসলাম যুদ্ধ বা সহিংসতার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করে। আগে যা বলা হয়েছে তা সম্পূর্ণ আত্মরক্ষার জন্য বলা হয়েছে, মুসলমানদেরকে প্রথম হামলাকারী হতে নিষেধ করা হয়েছে। কাজেই ইসলামের শত্রুরা যদি মুসলমানদের ওপর হামলার চিন্তা বাদ দেয় এবং শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহ ব্যক্ত করে তাহলে মুসলমানদেরকে তা মেনে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, আল্লাহর ওপর পূর্ণ নির্ভর করতে।

তবে ইসলামের শত্রুরা যদি এতে প্রতারণার আশ্রয় নেয় তাহলেও ভয়ের কোনো কারণ নেই। কারণ মহান আল্লাহ মুসলমানদের সাথে রয়েছেন। তিনিই মুসলমানদেরকে প্রতারণার হাত থেকে রক্ষা করবেন। এই আয়াত থেকে এটাই বোঝা যায়, ইসলাম যুদ্ধের পক্ষে নয় বরং শক্তি প্রদর্শনের পরিবর্তে শান্তির পক্ষে উদ্বুদ্ধ কর।

পবিত্র কুরআনের এই আয়াতগুলো থেকে এটা সুস্পষ্ট যে, ইসলাম যুদ্ধ, সহিংসতাকে সমর্থন করে না। ইসলাম সব সময় শান্তিপূর্ণ উপায়কে প্রাধান্য দেয় তবে আক্রান্ত হলে কিংবা কোথাও অত্যাচার অবিচার ও বৈষম্য দূর করার জন্য সত্য, ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনে যুদ্ধ করাকে ইসলাম স্বাগত জানায়। পশাপাশি ইসলাম মুসলমানদের প্রতিরক্ষা শক্তি জোরদার করার উপদেশ দেয় যাতে শত্রুপক্ষ যুদ্ধ বা সহিংসতার পথ পরিহার করে শান্তি স্থাপনের ব্যাপারে আগ্রহী হয়।

সূরা আনফালের ৬৩ ও ৬৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ لَوْ أَنْفَقْتَ مَا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا مَا أَلَّفْتَ بَيْنَ قُلُوبِهِمْ وَلَكِنَّ اللَّهَ أَلَّفَ بَيْنَهُمْ إِنَّهُ عَزِيزٌ حَكِيمٌ (63) يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ (64)

"তিনি মুমিনদের পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন, পৃথিবীর যাবতীয় সম্পদ ব্যয় করলেও তুমি তাদের হৃদয়ে প্রীতি স্থাপন করতে পারতে না। কিন্তু আল্লাহ তাদের মধ্যে প্রীতি স্থাপন করেছেন। নিশ্চয়ই তিনি পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।” (৮:৬৩)

“হে নবী! তোমার জন্য ও তোমার অনুসারী বিশ্বাসীগণের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট।" (৮:৬৪)

আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এই আয়াতেও নবী করিম (সা.)এর প্রতি আল্লাহর বিশেষ রহমত ও সাহায্যের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। রাসুলে খোদা (সা.)কে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, মুসলমানদের এই বিশাল জামাত যারা আজ তোমার সাথে রয়েছে,  ইসলাম গ্রহণের আগে এরা একে অপরের প্রতি এত বেশি বিদ্বেষী ও হিংসা প্রবণ ছিল যে, তুমি যদি দুনিয়ার সমস্ত সম্পদও ব্যয় করতে তাহলেও তাদের মধ্যকার বৈরী সম্পর্কের অবসান করতে পারতে না। কিন্তু মহান আল্লাহ ইসলামের ছায়াতলে তাদের মধ্যকার শত্রুতাকে প্রীতি ও বন্ধুত্বে পরিণত করেছেন, তাদেরকে তোমার অনুগত করেছেন। কাজেই হে পয়গম্বর! তুমি শত্রুদের ছলচাতুরী বা প্রতারণার ব্যাপারে চিন্তিত হবে না। আল্লাহ এবং মুমিনরা সম্মিলিতভাবে তোমার পাশে রয়েছেন।

এই আয়াত থেকে আমরা এটা বুঝে নিতে পারি যে, মহান আল্লাহ ইমানের ছায়ায় মুমিনদেরকে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ করেন এবং তাদের মন থেকে বিদ্বেষ ও হিংসা দূর করে দেন। তাই ভালোবাসা ও প্রীতির সম্পর্ক এবং ঐক্য এসবই মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর দান। এটা মুমিনদেরই বৈশিষ্ট্য।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
সমাজবিমুখ ইবাদত আর ইবাদতবিমুখ ...
সূরা আল আনফাল;(১৪তম পর্ব)
হযরত মুসা (আ.)'র মু'জিজার কাছে ...
অর্থসহ মাহে রমজানের ৩০ রোজার দোয়া
শাবান মাসের ফজিলত ও করণীয়
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
তোরা দেখে যে আমিনা মায়ের কোলে
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কোরআনের গল্পের বৈশিষ্ট্য

 
user comment