বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

সূরা ইউনুস;(৩য় পর্ব)

সূরা ইউনুস;(৩য় পর্ব)



সূরা ইউনুস; আয়াত ১১-১৪

সূরা ইউনুসের ১১ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন,

وَلَوْ يُعَجِّلُ اللَّهُ لِلنَّاسِ الشَّرَّ اسْتِعْجَالَهُمْ بِالْخَيْرِ لَقُضِيَ إِلَيْهِمْ أَجَلُهُمْ فَنَذَرُ الَّذِينَ لَا يَرْجُونَ لِقَاءَنَا فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

"আল্লাহ যদি মানুষের শাস্তির ব্যাপারে তড়িঘড়ি করতেন, যেমনি তারা পার্থিব কল্যাণ লাভের জন্য তড়িঘড়ি করে, তাহলে তাদের মৃত্যু ঘটতো। সুতরাং যারা কেয়ামতের দিন আমার সাক্ষাতের আশা পোষণ করে না, তাদেরকে নিজেদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেই যেন (তারা) অবাধ্যতায় উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়।"(১০:১১)

এই আয়াতেও পাপী ও অসত মানুষের শাস্তি বা প্রতিদানের দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মানুষ তার কল্যাণ এবং বৈষয়িক স্বার্থ লাভের জন্য যেমন তাড়াহুড়ো করে তেমনিভাবে আল্লাহতায়ালাও যদি পাপী ও অসত মানুষদেরকে শাস্তি দেয়ার জন্য তড়িঘড়ি করতেন তাহলে তাদের অস্তিত্বই বিলীন হয়ে যেত। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ অত্যন্ত দয়াবান ও মেহেরবান। তিনি মানুষকে যেমন জ্ঞান বুদ্ধি দিয়েছেন তেমনি দিয়েছেন চিন্তার স্বাধীনতা। মানুষ তার পথ নির্ধারণের ক্ষেত্রে স্বাধীন। তবে অধিকাংশ মানুষই আল্লাহর দেয়া বিবেক বুদ্ধি ও চিন্তার স্বাধীনতাকে সঠিকভাবে কাজে লাগায় না, ভুল পথে পা বাড়ায় এবং পাপ-পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তারপরও মানুষের প্রতি অনুগ্রহ করেন এবং তাকে সুপথে ফিরে আসার সময় দেন। এরপরও যেসব মানুষ সতপথে ফিরে না এসে ভুলপথে চলা অব্যাহত রাখে, স্বাভাবিকভাবেই আল্লাহতায়ালা তাদেরকে নিজেদের অবস্থার ওপর ছেড়ে দেন এবং এভাবেই তাদের মৃত্যু হয়। এ ধরনের মানুষের জন্য মহান আল্লাহ পরকালে শাস্তির ব্যবস্থা রেখেছেন এবং তারা নিশ্চিতভাবে পরকালে তাদের অন্যায় কাজের শাস্তি ভোগ করবে।

এই আয়াত থেকে আমরা এটাই উপলব্ধি করতে পারি যে, মহান আল্লাহ মানুষকে তার পাপের শাস্তির জন্য তড়িঘড়ি করেন না বরং নিজেকে সুধরে নেয়ার জন্য তিনি মানুষকে সময় দেন। এছাড়া যারা আল্লাহর অবাধ্য হয় তারা আসলে জীবনে সুখি হয় না। তারা দিশাহীন উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়ায়।

এই সূরার ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন,

وَإِذَا مَسَّ الْإِنْسَانَ الضُّرُّ دَعَانَا لِجَنْبِهِ أَوْ قَاعِدًا أَوْ قَائِمًا فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُ ضُرَّهُ مَرَّ كَأَنْ لَمْ يَدْعُنَا إِلَى ضُرٍّ مَسَّهُ كَذَلِكَ زُيِّنَ لِلْمُسْرِفِينَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

"মানুষকে যখন দুঃখ দৈন্য স্পর্শ করে তখন সে শুয়ে, বসে কিংবা দাঁড়িয়ে আমাকে ডেকে থাকে, এরপর যখন আমি তার দুঃখ দৈন্য দূর করে দেই তখন সে এমন পথ অবলম্বন করে যেন দুঃখ দৈন্য অবস্থার জন্য কখনই আমাকে ডাকেনি। যারা সীমা লংঘন করে, তাদের কর্ম তাদের নিকট এভাবে শোভনীয় প্রতীয়মান হয়।” (১০:১২)

বস্তুগত ভোগ বিলাসিতা মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহর স্মরণ মুছে দেয়। ফলে মানুষ আল্লাহর ব্যাপারে উদাসীন হয়ে দুনিয়ার প্রতি মোহগ্রস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে বিপদাপদ এবং দুঃখ কষ্ট মানুষের অন্তরে আল্লাহর স্মরণকে জাগিয়ে তোলে। মানুষ যখন কোন দুর্যোগের মধ্যে পড়ে তখন সে তার দুর্বলতা ও অক্ষমতা উপলব্ধি করতে পারে। তাই দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সে তখন সৃষ্টিকর্তার স্মরণাপন্ন হয়। অন্তর থেকে তার সাহায্য কামনা করে। কিন্তু বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, দুর্যোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সে তা ভুলে যায় এবং আল্লাহর নির্দেশের অনুগত না হয়ে আবারও পাপে লিপ্ত হয়ে পড়ে।

মানুষ যখন কোন বিপদে পড়ে, তখন যে তার প্রতিপালকের কথা বেশি স্মরণ করে তার কাছে কায়মনোবাক্যে সাহায্য চায়। তাই মানুষের উচিত বিপদমুক্ত হওয়ার পর আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া, তার নির্দেশ মান্য করে চলা। কারণ এক্ষেত্রে অকৃতজ্ঞতা এবং উদাসীনতাই মানুষের পথভ্রষ্টতার প্রধান কারণ।

এই সূরার ১৩ ও ১৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَلَقَدْ أَهْلَكْنَا الْقُرُونَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَمَّا ظَلَمُوا وَجَاءَتْهُمْ رُسُلُهُمْ بِالْبَيِّنَاتِ وَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا كَذَلِكَ نَجْزِي الْقَوْمَ الْمُجْرِمِينَ (13) ثُمَّ جَعَلْنَاكُمْ خَلَائِفَ فِي الْأَرْضِ مِنْ بَعْدِهِمْ لِنَنْظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

“তোমাদের পূর্বে বহু মানবগোষ্ঠীকে আমি ধ্বংস করে দিয়েছি, যখন তারা সীমা অতিক্রম করেছিল। তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শনসহ রাসূল এসেছিল, কিন্তু তারা তা বিশ্বাস করেনি। এভাবেই আমি অপরাধী সম্প্রদায়কে প্রতিদান দিয়ে থাকি।” (১০:১৩)

“এরপর আমি তাদের পর পৃথিবীতে তোমাদেরকে স্থলাভিষিক্ত করেছি এটা দেখার জন্য যে, তোমরা কি ধরনের আচরণ কর?” (১০:১৪)

আগের আয়াতে যেমনটি বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা গুনাহগার পাপীদেরকে এ দুনিয়াতেই নাস্তানাবুদ করেন না, বরং তাদেরকে সংশোধনের জন্য সময় ও সুযোগ দিয়ে থাকেন। কিন্তু যারা জুলুম-অত্যাচারে লিপ্ত এবং সীমা লঙ্ঘনকারী তাদের কথা ভিন্ন। আল্লাহতায়ালা এ ধরনের সম্প্রদায়কে দুনিয়াতেই ধ্বংস করে দেন। অবশ্য আল্লাহর বিধান এবং নবী রাসূলদের প্রদর্শিত পথ থেকে দূরে সরে পড়ার কারণেই মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে এবং অত্যাচারী জালিমে পরিণত হয়। কাজেই অতীত ইতিহাস থেকে মানুষের শিক্ষা নেয়া উচিত। তা না হলে পূর্ববর্তীদের ভাগ্যে যা ঘটেছে তাদের জন্যেও তা ঘটতে পারে।

জুলুম ও অত্যাচার মানুষের জন্য ধ্বংস ও পতন ডেকে আনে। কাজেই সমাজের ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের এটা মনে রাখা উচিত যে, সব ক্ষমতার উতস হচ্ছেন আল্লাহ। তিনিই ক্ষমতা দেন এবং ক্ষমতা কেড়ে নেন। কাজেই কারো প্রতি জুলুম করা উচিত নয়। কারণ আল্লাহর কাছে সব মানুষই সমান।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি

 
user comment