বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

সূরা ইউনুস;(৮ম পর্ব)

সূরা ইউনুস;(৮ম পর্ব)



সূরা ইউনুস; আয়াত ৩৪-৩৮

সূরা ইউনুসের ৩৪ ও ৩৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন-

قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ قُلِ اللَّهُ يَبْدَأُ الْخَلْقَ ثُمَّ يُعِيدُهُ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ (34) قُلْ هَلْ مِنْ شُرَكَائِكُمْ مَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ قُلِ اللَّهُ يَهْدِي لِلْحَقِّ أَفَمَنْ يَهْدِي إِلَى الْحَقِّ أَحَقُّ أَنْ يُتَّبَعَ أَمَّنْ لَا يَهِدِّي إِلَّا أَنْ يُهْدَى فَمَا لَكُمْ كَيْفَ تَحْكُمُونَ

“হে পয়গম্বর মুশরিকদেরকে জিজ্ঞাসা করুন, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে সৃষ্টির সূচনা করেছে এবং পরে আবার এর পুনরাবর্তন ঘটায়? বলুন, কেবল আল্লাহই সৃষ্টির সূচনা করেন এবং পরে এর পুনরাবর্তন ঘটান। সুতরাং তোমরা কিভাবে সত্য থেকে বিচ্যুত হচ্ছে?” (১০:৩৪)

“তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তোমরা যাদেরকে শরীক কর তাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে, যে মহা সত্যের দিকে পথ দেখায়? বলুন, কেবল আল্লাহই এমন, যিনি সত্যের দিকে পথ দেখান। অতএব যিনি সত্যের পথ নির্দেশ করে তিনি আনুগত্য পাওয়ার বেশি অধিকারী, নাকি যাকে পথ না দেখালে পথ পায় না সে? তোমাদের কি হয়েছে, কি করে উল্টো রায় দিচ্ছো?” (১০:৩৫)

মুশরিকদের দৃষ্টিভঙ্গী খণ্ডন এবং প্রতিমা ও দেব-দেবীর অক্ষমতা বর্ণনা করার পর এই আয়াতে বলা হয়েছে, বিশ্ব প্রকৃতির দিকে গভীরভাবে মনোনিবেশ করলে এটা সহজেই প্রতীয়মান হবে যে, বিশ্বজগতের সৃষ্টি এবং এর পুনরাবর্তনের শক্তি ও সামর্থ আল্লাহ ছাড়া আর কারো নেই। তিনি এক ও একক সত্ত্বা এবং তার কোনো শরীক নেই। সমগ্র সৃষ্টিকে তিনিই অস্তিত্ব প্রদান করেছেন। প্রতিমা, দেব-দেবী এসবই মাখলুক বা সৃষ্ট, এদের জন্যই সৃষ্টিকর্তার প্রয়োজন। কাজেই এসব বিশ্বজগতের সৃষ্টিকর্তা বা নিয়ন্তা হতে পারে না।

প্রতিমা এবং দেব-দেবী মানুষের কল্যাণ ও অকল্যাণে কোন ভূমিকা রাখতে পারে না, মানুষকে সতপথে পরিচালিত করারও এদের শক্তি বা ক্ষমতা নেই। একমাত্র সৃষ্টিকর্তা আল্লাহই মানুষকে সুপথে পরিচালিত করতে পারেন। এজন্য তিনি যুগে যুগে হেদায়েতসহ পয়গম্বরদেরকে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন।

মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন জগতের সকল কিছু সৃষ্টি করে, বেহাল অবস্থায় ছেড়ে দেননি। তিনি সৃষ্টিজগতে নিয়ম প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং প্রত্যেক সৃষ্টিকেই তার পরিপূর্ণতার রাস্তা প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেছেন।

এ সূরার ৩৬ নম্বর আয়াতের মহান আল্লাহ বলেছেন-

وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ بِمَا يَفْعَلُونَ

“ওদের অধিকাংশই অনুমানের অনুসরণ করে, সত্যের পরিবর্তে অনুমান কোনো কাজে আসে না। ওরা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে সবিশেষ অবহিত।” (১০:৩৬)

এই আয়াতে মুশরিকদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হচ্ছে, তারা যে বিশ্বাসের কথা বলে তা নির্ভরযোগ্য জ্ঞানের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বরং তা সম্পূর্ণ অনুমান নির্ভর। এ ধরনের অনুমান ও কল্পনাপ্রসূত বিশ্বাসের কারণে তারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়েছে। প্রকৃত জ্ঞান ও যুক্তিনির্ভর বিশ্বাসই মানুষকে সত্য পথে পরিচালিত করতে পারে।

কুফর এবং শিরকের জ্ঞানগত ভিত্তি নেই, মানব রচিত সব বিধান কল্পনা এবং অনুমান নির্ভর। তাই এসব বিধান মানব জাতির কল্যাণের চেয়ে অকল্যাণই ডেকে আনে।

এই সূরার ৩৭ ও ৩৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে-

وَمَا كَانَ هَذَا الْقُرْآَنُ أَنْ يُفْتَرَى مِنْ دُونِ اللَّهِ وَلَكِنْ تَصْدِيقَ الَّذِي بَيْنَ يَدَيْهِ وَتَفْصِيلَ الْكِتَابِ لَا رَيْبَ فِيهِ مِنْ رَبِّ الْعَالَمِينَ (37) أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَاهُ قُلْ فَأْتُوا بِسُورَةٍ مِثْلِهِ وَادْعُوا مَنِ اسْتَطَعْتُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ

“এই কুরআন আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো রচনা নয়। পক্ষান্তরে এর পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে এই কুরআন তার সমর্থক এবং ঐশী বিধানসমূহের বিশদ ব্যাখ্যা। এই মহাগ্রন্থ যে বিশ্ব নিয়ন্তার পক্ষ থেকে এসেছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই।” (১০:৩৭)

“তারা কি বলে, পয়গম্বর নিজে এই কুরআন রচনা করেছেন? বলুন, তবে তোমরা এর অনুরূপ একটা সূরা রচনা কর এবং আল্লাহ ব্যাতীত অন্য যাকে পার সাহায্যের জন্য আহ্বান কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও ।" (১০:৩৮)

পবিত্র কুরআন এই চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে যে, কোনো মানুষ বা জ্বীনের পক্ষে অনুরূপ গ্রন্থ রচনা করা সম্ভব নয়। পুরো কুরআন দূরে থাক, কুরআনের একটি সূরার অনুরূপ সূরা রচনা করাও কারো পক্ষে সম্ভব নয়।

কুরআনের এই চ্যালেঞ্জের ১৪শ’ বছর পার হয়ে গেল, আজও আরবী সাহিত্যের কোনো পণ্ডিত এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করার সাহস করেনি।

অর্থের গভীর তাতপর্য, ভাষার অলংকার এবং মধুর ধ্বনী পবিত্র কুরআনকে অনন্য সাধারণ ঐশী গ্রন্থের মর্যাদায় ভূষিত করেছে।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি

 
user comment