বাঙ্গালী
Saturday 23rd of November 2024
0
نفر 0

আহকাম বা বিধিবিধান জানার পথ

আহকাম বা বিধিবিধান জানার পথ



মুকাল্লিফ দ্বীনি বিধান সম্পর্কে জানার ও সে অনুযায়ী আমল করার জন্য তিনটি কাজ ও পন্থা অবলম্বন করতে পারে:

১. ইজতিহাদ করা: ইজতিহাদ অর্থ ফকীহদের কাছে স্বীকৃত শরীয়তের নিশ্চিত উৎস ও দলিলের ভিত্তিতে ঐশী বিধান ও আইন বের করা।

২. ইহতিয়াত ও সতর্কতা অবলম্বন : ইহতিয়াত অর্থ হল এমনভাবে আমল (বিধান পালন) করা যে, মুকাল্লিফ নিশ্চিত হবে যে তার ওপর আরোপিত শরয়ী দায়িত্ব পালন করেছে। যেমন: কোন কোন কাজ যদি একদল মুজতাহিদ হালাল বলে থাকেন ও অপর একদল তা হারাম বলে থাকেন তবে তা সতর্কতামূলক ভাবে হারাম গণ্য করে পরিত্যাগ করবে। তেমনি কোন কাজ যদি একদল মুজতাহিদ ওয়াজিব ও অপর দল ওয়াজিব নয় (বরং মুস্তাহাব বা মুবাহ) বলেন তবে তাকে তা ওয়াজিব হিসাবে গ্রহণ করে পালন করতে হবে।

ইহতিয়াতের উদাহরণ:

ক. যে ব্যক্তি জানে না বিশেষ অবস্থায় তার নামাজ পূর্ণ্ করতে হবে, না কি কছর করবে, এক্ষেত্রে তার জন্য ইহতিয়াত হল একবার নামাজ পূর্ণ্ পড়বে ও একবার কছর হিসাবে পড়বে।

খ. যদি কেউ না জানে আজান ও একামাহ বলা নামাজের পূর্বে ওয়াজিব না মুস্তাহাব, তাকে অবশ্যই আজান ও একামাহ বলতে হবে।

গ. যদি মুকাল্লিফ জানে যে, কোন একটি আমল ওয়াজিব নয়, কিন্তু না জানে তা হারাম অথবা মাকরুহ অথবা মুস্তাহাব অথবা মুবাহ; তবে সে তা ত্যাগ করবে। কারণ সম্ভাবনা রয়েছে ঐ কাজে আল্লাহর অসন্তুষ্টি রয়েছে।   

৩. তাকলিদ : তাকলিদ অর্থ্ দ্বীনি বিধানের ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ্ যোগ্যতাসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হওয়া; অন্য ভাষায় শরয়ীতের সকল শাখার বিধান সম্পর্কে জ্ঞাত মুজতাহিদের সিদ্ধান্ত ও ফতওয়া অনুযায়ী আমল করা।

বি: দ্র:

১. তাকলিদ ওয়াজিব হওয়ার সপক্ষে হাদিসের দলিল ছাড়াও বুদ্ধিবৃত্তিও নির্দেশ করে যে, যে ব্যক্তি দ্বীনের বিধান সম্পর্কে অনবগত সে ইজতিহাদের সকল শর্তসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হবে।

২. যে ব্যক্তি নিজে দ্বীনি বিধিবিধানের বিষয়ে মুজতাহিদ নয় তাকে অবশ্যই মুজতাহিদের অনসরণ করতে হবে অথবা ইহতিয়াত ও সতর্কতার নীতি গ্রহণ করবে।

৩. যে সকল ক্ষেত্রে সতর্কতার নীতি অবলম্বনে বিষয় ও দৃষ্টান্ত নির্ণয় করা আবশ্যক হওয়ায় সতর্কতার পথটি বের করা সময়সাপেক্ষ হয় সেক্ষেত্রে উত্তম হল মুকাল্লিদ ইজতিহাদের সকল শর্তসম্পন্ন মুজতাহিদের শরণাপন্ন হবে।

মাসআলা সম্পর্কিত শরীয়তের কিছু পরিভাষা

১. হারাম : এমন কোন কাজ যা করলে অথবা যা ত্যাগ করলে পবিত্র কোরআন ও সুন্নাতে জাহান্নামের শাস্তির কথা বলা হয়েছে, যেমন: মিথ্যা বলা, গিবত করা, অন্যের অর্থ্ –সম্পদ আত্মসাৎ করা, জুলুম করা, ব্যভিচার ও মদপান করা, নামাজ ত্যাগ করা ইত্যাদি।

২. মুস্তাহাব : এমন কাজ যা করা আবশ্যক নয় কিন্তু করলে সওয়াব পাওয়া যায় ও করা উত্তম ও প্রশংসনীয়, যেমন: সদকা দান।

৩. মাকরূহ : এমন কাজ যা ত্যাগ করা ভাল, তবে করলেও গোনাহগার হবে না; যেমন উত্তপ্ত খাবার খাওয়া ও গরম পানীয় ও খাদ্যে ফু দিয়ে খাওয়া।

৪. মুবাহ : এমন কাজ যা করা বা না করা সমান এবং তা করলেও যেমন সওয়াব নেই আবার না করলেও গোনাহ নেই; যেমন : ওঠা-বসা ও চলা-ফেরা করা।

৫. আযহার (اظهر) : কোন ফতওয়ার ক্ষেত্রে ফকিহ اظهر পরিভাষা ব্যবহার করলে তার অর্থ্ হল তার দৃষ্টিতে এটা দলিলের সাথে অধিকতর সামঞ্জস্যশীল এবং মুকাল্লিদকে অবশ্যই এ ফতওয়া অনুযায়ী আমল করতে হবে।

৬. আক্বরাব ও আক্বওয়া (اقرب و اقوی) : যে মতটি ফকিহের দৃষ্টিতে সত্যের অধিক নিকটবর্তী ও অন্য সব দলিলের থেকে অধিক শক্তিশালী তা হল আক্বরাব ও আক্বওয়া। এক্ষেত্রে মুকাল্লিদ ঐ বিধানের জন্য অন্য মার্জার শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার রাখে না। বরং স্বীয় মার্জার মতানুযায়ী তাকে আমল করতে হবে।

৭. ইহতিয়াতে ওয়াজিব : যদি মার্জায়ে তাকলীদ কোন বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে নিজের ফতওয়া বর্ণনা না করে ইহতিয়াত (সতকতা) অবলম্বন করার আবশ্যকতার (ওয়াজিব হওয়ার) কথা বলেন, তবে এ ইহতিয়াতকে ইহতিয়াতে ওয়াজিব বলা হয়। এরূপ ক্ষেত্রে মুকাল্লিদকে অবশ্যই হয় বর্ণিত সতকতার নীতিটি ওয়াজিব বলে গ্রহণ করে পালন করতে হবে অথবা ঐ বিষয়ে অন্য যে মার্জার (স্বীয় মার্জার পর সবচেয়ে জ্ঞানী মার্জার ক্রম বজায় রেখে) স্পষ্ট ফতওয়া রয়েছে (অর্থাৎ যিনি সতকতার নীতি অবলম্বন না করে সরাসরি বিধান বর্ণ্ না করেছেন) তার অনুসরণ করতে পারে। অন্যভাবে বললে, এ বিষয়ে তার এখতিয়ার ও স্বাধীনতা রয়েছে যে, নিজের মার্জার ইহতিয়াতকে মেনে চলা অথবা অন্য মার্জার স্পষ্ট ফতওয়ার অনুসরণ করার তবে শর্ত্ হল সে মার্জা তার মার্জার পরে সবচেয়ে জ্ঞানী হতে হবে। ইহতিয়াতে ওয়াজিবের ক্ষেত্রে বর্ণিত উদাহরণ :

১. যদি কেউ মানত করে কোন নির্দিষ্ট ফকিরকে সদকা দিবে, তবে তা অন্য ফকিরকে দিতে পারবে না, কিন্তু যদি ঐ ফকির মারা যায়, সেক্ষেত্রে ইহতিয়াত হল তার (উদ্দিষ্ট ফকিরের) উত্তরাধিকারীদের হাতে দিবে।

২. যদি কেউ এমন কোন বস্তু বা অর্থ্ পড়ে পায় যার (মূল্য খুব বেশি নয় ও) মালিক অজ্ঞাত ও কোন চিহ্নও তাতে নেই যা দেখে তার খোঁজ পাওয়া যায়, তবে ইহতিয়াতে ওয়াজিব হল তার মালিকের পক্ষ থেকে তা সদকা দিয়ে দিবে।

বিশেষ দ্রষ্টব্য: কোন বিধান বর্ণনার ক্ষেত্রে যদি ফকিহ ‘যেন ইহতিয়াত ত্যাগ না করা হয়’ অথবা ‘এক্ষেত্রে সমস্যা আছে’ অথবা ‘বিষয়টি বিবেচনা সাপেক্ষ’ অথবা ‘বিষয়টি সমস্যাযুক্ত’ এরূপ পরিভাষা ব্যবহার করেন; তবে তার উদ্দেশ্য হল, বিষয়টি ইহতিয়াতে ওয়াজিব। আবার যখন কোন ফকিহ স্পষ্ট ফতওয়া দেয়ার জন্য শক্তিশালী প্রমাণ ও দলিল না পান এবং এ ক্ষেত্রে তার মতে উসূল শাস্ত্রের ইহতিয়াত ও সতকতার নীতি প্রয়োগ হওয়া বাঞ্ছনীয়, তিনি «احوط» পরিভাষা ব্যবহার করেন, সেক্ষেত্রেও বিষয়টি ইহতিয়াতে ওয়াজিব।

যখন কোন ফকিহর বর্ণিত বিধানের মধ্যে পূর্বে ও পরে ইহতিয়াত পরিভাষাটি ব্যবহার না করে (لا يَخْلوُ مِنْ قُوَّةٍ) ‘এ মতটি শক্তিশালী দলিলবিহীন নয়), «لا يَبْعُدُ» ‘এ মতটি সত্য থেকে দূরে নয়’, «الْاحْوَطُ الاقْوى» ‘এ মতটি ইহতিয়াতের দৃষ্টিতে অধিক শক্তিশালী’, «لا يَخْلُو مِنْ وَجْهٍ» ‘এ মতটি সঠিক হওয়া অসম্ভব নয়’ ইত্যাদি মন্তব্য থাকে, তবে তা ফকিহের স্পষ্ট ফতওয়া বলে গণ্য হবে, তা ইহতিয়াতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।    

৮. ইহতিয়াতে মুস্তাহাব : যে ক্ষেত্রে মার্জায়ে তাকলীদ প্রথমে নিজের মত ও ফতওয়া বর্ণনা করার পর ইহতিয়াত অবলম্বন পূর্ব্ক কিছু করতে বলেন, তবে এরূপ ইহতিয়াতকে ইহতিয়াতে মুস্তাহাব বলা হয়। এক্ষেত্রে মুকাল্লিদের জন্য ইহতিয়াতের বিষয়টি আমল করা উত্তম বলে গণ্য হবে ও তা করলে সওয়াবের অধিকারী হবে, তবে সেটা না করলেও গোনাহগার হবে না। ইহতিয়াতে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে মুকাল্লিদের অন্য মার্জার শরণাপন্ন হওয়ার অধিকার নেই। তাই হয় তাকে প্রথমেই তার মার্জা যে ফতওয়া দিয়েছেন সে অনুযায়ী কাজ করতে হবে অথবা ইহতিয়াত অবলম্বন পূর্ব্ ক যা করতে বলেছেন তা করতে হবে। ইহতিয়াতে মুস্তাহাবের ক্ষেত্রে উদাহরণ:

১. ইরতিমাসি বা ডুব দিয়ে গোসলের ক্ষেত্রে যদি কেউ গোসলের নিয়ত করে ধীরে ধীরে পানির মধ্যে নিজেকে এমনভাবে নিমজ্জিত করে যে সমগ্র দেহ পানির নিচে চলে যায়, তবে তার গোসল সঠিক ও সহিহ বলে গণ্য হবে; কিন্তু ইহতিয়াত হল সমস্ত দেহ একবারে পানিতে নিমজ্জিত করবে।

২. নামাজে জামাআতের ইমাম তাকবির বলার পর যদি প্রথম সারির মুক্তাদিরা নামাজের জন্য প্রস্তুত থাকে ও তাকবির বলার উপক্রম করে, পরবর্তী কাতার ও সারির লোকেরা তাকবির বলতে পারবে, তবে ইহতিয়াতে মুস্তাহাব হল প্রথম সারির লোকেরা তাকবির বলা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা।

বিশেষ দ্রষ্টব্য : যেক্ষেত্রে ফকিহ কোন বিষয়ে স্পষ্ট ফতওয়া দিলেও যেহেতু তার বিপরীত ফতওয়ার মধ্যে সতর্কতা রয়েছে সেহেতু তিনি «احوط» বা ‘অধিকতর সতর্ক্ তা হল’ পরিভাষাটি ব্যবহার করেন; এক্ষেত্রে তার উদ্দেশ্য ইহতিয়াতে মুস্তাহাব।(আল বাসাইর)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আখেরাতের ওপর বিশ্বাস
দুই নামাজ একসাথে পড়ার শরয়ী দললি
আল কোরআনের দৃষ্টিতে মুমিনের ...
সমাজ কল্যাণে আল-কুরআনের ভূমিকা
খলিফা নির্বাচনের পদ্ধতি
আদর্শ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) - ১ম ...
আলী (আঃ) এর দৃষ্টিতে এই ...
তাকওয়া হাসিলের উপায়
রহমতের উৎসব-১১
ইমাম হাসান আসকারী (আ) এর শাহাদাত

 
user comment