বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

তাকলিদ



যে কোন বুদ্ধিমান ও আকলসম্পন্ন মানুষ তার প্রাত্যহিক জীবনে যে সকল বিষয়ে নিজে অবগত নয় বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হয়ে থাকে; তেমনিভাবে ধর্মীয় বিষয়েও যেহেতু সে বিশেষজ্ঞ নয় সেহেতু তাকে এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞের (মার্জায়ে তাকলিদ) শরণাপন্ন হতে হয়। এরূপ শরণাপন্ন হওয়াকেই ‘তাকলিদ’ বা অনুসরণ বলা হয়। সুতরাং বুদ্ধিবৃত্তিক দৃষ্টিতেই এ বিষয়টি প্রমাণিত হয় যে, এমন ব্যক্তি যার পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহর ওপর পূর্ণ্ দখল নেই ও এগুলো থেকে বিধান বের করতে অক্ষম, তার জন্য উচিৎ এ সম্পর্কে অবহিত ফকিহর অনুসরণ করা। এরূপ না করলে তার কাজ কোন রোগের ক্ষেত্রে প্রেসকিপশান ছাড়া ঔষধ সেবনের মত হবে, যা তাকে আরোগ্য দানের পরিবর্তে আরো অসুস্থ করে ফেলবে। দ্বীনি বিধানের ক্ষেত্রে প্রত্যেক মুমিনকে এ বিষয়টি নিশ্চিত হতে হবে যে, মহান আল্লাহ তার কাছে ঐশী বিধিবিধান ঠিক যেভাবে চেয়েছেন সেভাবে তা পালিত হচ্ছে কি না? তাই পবিত্র কোরআন ও সুন্নাহ থেকে নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত, জিহাদসহ সকল বিষয়ে খুঁটিনাটি আহকাম বের করতে হলে অবশ্যই ব্যক্তিকে কোরআনের আয়াতসমূহের শানেনুযুল, নাসিখ ও মানসুখ (রহিত ও রহিতকারী আয়াত), সার্বিক ও বিশেষায়িত বিধান, শর্ত্ যুক্ত ও শর্ত্ হীন আয়াত, আরবি ভাষা ও এর ব্যাকরণগত বিভিন্ন দিক, হাদীস, দিরায়া ও রিজালশাস্ত্র (সঠিক ও নির্ভুল হাদিস নিরূপণ ও হাদিসের টেস্ট থেকে তার উদ্দেশ্য হস্তগত করা, বিপরীত অর্থ্ যুক্ত হাদিসগুলোর মধ্যে সমন্বয়ের পন্থা জানা) সম্পর্কে জানতে, মোটকথা ইজতিহাদের সকল যোগ্যতা থাকতে হবে। সেইসাথে মুজতাহিদকে তাকওয়ার অধিকারী ও ন্যায়পরায়ন হতে হবে, যা তাকে বিধান বের করার ক্ষেত্রে প্রবৃত্তির অনুসারী হওয়া থেকে বিরত রাখবে। ইমাম হাসান আসকারী (আ.) মার্জা হওয়ার জন্য আবশ্যক এ দুই বৈশিষ্ট্যের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেছেন :

امّا من كان من الفقها صائناً لنفسه حافظاً لدینه مخالفاً على هواه مطیعاً لامر مولاه فللعوام أن یقلّدوه

ফকিহদের (বিধিবিধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ আলেমদের) মধ্যে যারা আত্মসংবরণকারী (আত্মসংযমী), স্বীয় ধর্মের বিধানের সংরক্ষণে ব্রত, স্বীয় প্রবৃত্তির কামনার বিরোধিতায় সক্ষম এবং তার প্রভু আল্লাহর নির্দেশের অনুগত (ও তাঁর সামনে আত্মসমর্পিত); সাধারণ্যের জন্য তার অনুসরণ করা অপরিহার্য্।

এ হাদিসে সাধারণ মানুষ ফকিহ পরিভাষার বিপরীতে ব্যবহৃত হয়েছে তাই এক্ষেত্রে ‘সাধারণ মানুষ’ বলার উদ্দেশ্য যারা ইসলামী জ্ঞানের ক্ষেত্রে পাণ্ডিত্যের অধিকারী নয় ও বিধিবিধানের বিষয়ে বিশেষজ্ঞ নয়। এ অর্থে এমন সকল ব্যক্তি যারা ধর্মীয় বিষয়ে গভীর জ্ঞান ও পাণ্ডিত্য রাখে না - যদিও সে জ্ঞানের অন্য কোন শাখায় বিশেষজ্ঞ হয়- সাধারণের অন্তর্ভুক্ত এবং তাকে ফকিহ আলেমের অনুসরণ করতে হবে।

তাকলিদ ওয়াজিব হওয়ার শর্ত:

১. মুকাল্লিফ হওয়া

২. মুজতাহিদ না হওয়া

৩. মুহতাত না হওয়া

মুকাল্লিফকে অবশ্যই শরীয়তে নির্ধারিত প্রতিদিনের ধর্মীয় জীবনের জন্য প্রয়োজনীয় বিধিবিধান যেমন, নামাজ, রোজা, পবিত্রতা, হজ, লেনদেন ইত্যাদি সম্পর্কে জানতে হবে; বিশেষত ঐ সকল বিধান যা না জানলে কোন ওয়াজিব কাজ (যেমন নামাজ, রোজা, হজ, যাকাত ইত্যাদি) পরিত্যক্ত অথবা সঠিকভাবে সম্পাদিত না হওয়া অথবা হারামে (যেমন হারাম ব্যবসায়) পতিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তবে না শিখলে গুনাহগার হবে।

মুকাল্লিফ হল সেই ব্যক্তি যার মধ্যে নিম্নোক্ত তিনটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে:

১. প্রাপ্ত বয়স্ক (শরীয়তে নির্ধারিত বয়সে উপনীত) হওয়া

২. বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়া

৩. সক্ষম হওয়া

শরীয়তের দৃষ্টিতে বালেগ হওয়ার তিনটি চিহ্ন রয়েছে:

১. নাভির নিম্নভাগে (গুপ্তাঙ্গের চারিদিকে) পুরু লোম গজানো,

২. বীর্য্ স্খলন হওয়া,

৩. ছেলেদের ক্ষেত্রে ১৫ চন্দ্র বৎসর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৯ চন্দ্র বৎসর পূর্ণ্ হওয়া

এ লক্ষণগুলোর যে কোনটি দেখা গেলেই বালেগ বলে গণ্য হবে, একসঙ্গে তিনটি লক্ষণ দৃষ্ট হওয়ার প্রয়োজন নেই। যেমন কোন কিশোর পনের বছরে উপনীত না হলেও যদি তার বীর্যপাত হয় তবে সে বালেগ। তবে কোন কিশোরী যদি নয় বছরের পূর্বে ঋতুস্রাব হয় সে বালেগ হয়েছে বলা যাবে না। কারণ নয় বছর পূর্ণ্ হওয়া তার বালেগ হওয়ার ন্যূনতম শর্ত্। আর তাই যতক্ষণ পর্য্ ন্ত এ চিহ্নগুলোর কোন একটি প্রকাশিত না হবে তাকে শরীয়তের দৃষ্টিতে বালেগ বলা যায় না এবং তার ওপর আহকাম পালনের দায়িত্ব বর্তাবে না।    

যেহেতু শরীয়তের দৃষ্টিতে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার সময় নির্ণ্ য়ের মানদণ্ড হল চন্দ্র বৎসর, সেহেতু সৌর বৎসরে বয়স জানা থাকলে সৌর বৎসর ও চন্দ্র বৎসরের ব্যবধান হিসাব করে সৌর বছরে বয়স থেকে তা থেকে বাদ দিতে হবে। চন্দ্র বৎসর সৌর বৎসর থেকে ১০ দিন ও ২১ ঘন্টা কম। এ হিসাবে চন্দ্র বৎসরের ১৫ বছর সৌর বছরের ১৪ বৎসর ও ২৬৭ দিন এবং চন্দ্র বৎসরের ৯ বৎসর সৌর বৎসরের ৮ বছর ও ২০৩ দিনের সমান।

বুদ্ধিসম্পন্ন হওয়ার অর্থ মোটামুটি সুস্থমস্তিষ্ক হওয়া এবং নির্বোধ ও পাগল না হওয়া; এ অর্থে বোকা মানুষও মুকাাল্লিফ।

সক্ষমতার অর্থ আহকাম পালন ও দ্বীনি দায়িত্ব সম্পাদনের জন্য শারীরিক ও মানসিক ক্ষমতা থাকা।

মুহতাত তাকে বলা হয় যে এমনভাবে বিধানগুলো সম্পাদন করে যাতে এটা নিশ্চিত হয় যে শরীয়তে বান্দার জন্য (লওহে মাহফুযে) নির্ধারিত দায়িত্ব পালন করেছে। কোন কোন মার্জার (আয়াতুল্লাহ মাকারেম ও আয়াতুল্লাহ মাজাহেরী) মতে যেহেতু এ কাজটি সাধারণ মানুষের জন্য সম্ভব নয়, এমনকি যে ব্যক্তি ইজতিহাদের কাছাকাছি পৌছেছে তার জন্যও কঠিন সেহেতু মুজতাহিদ ব্যতীত সকলের জন্য তাকলীদ করা আবশ্যক।(আল বাসাইর)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১১তম পর্ব
যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর

 
user comment