(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি হযরত আলীর আরেকটি অসিয়ত
নিম্নোক্ত অসিয়তটি আমীরুল মুমিনীন ইমাম আলী (আ.),বিশেষ করে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর প্রতি করেছিলেন। মরহুম আলী ইবনে শুবাহ্ তাঁর রচিত গ্রন্থ ‘তুহাফুল উকূল’-এ তা বিস্তারিত বর্ণনা করেছেন। যেভাবে ‘তুহাফুল উকূল’গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে হুবহু সেভাবে এ অসিয়তটির বঙ্গানুবাদ নিচে দেয়া হলো :
“হে বৎস! আমি তোমাকে প্রাচুর্য ও দারিদ্র্য অবস্থায় মহান আল্লাহকে ভয় করতে,সন্তুষ্ট ও ক্রোধান্বিত অবস্থায় সত্য কথা বলতে,প্রাচুর্য ও দারিদ্র্য অবস্থায় আয়-ব্যয়ের ক্ষেত্রে মধ্য পন্থা অবলম্বন করতে,শত্রু-মিত্রের প্রতি ন্যায়পরায়ণতা অবলম্বন,প্রফুল্ল ও ক্লান্তিকর অবস্থায় (আখেরাতের জন্য) কাজ করতে এবং বিপদ ও সুখ-স্বচ্ছন্দে মহান আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট চিত্ত থাকতে অসিয়ত করছি।
হে বৎস! যে অমঙ্গলের পর জান্নাত রয়েছে তা প্রকৃত অর্থে অমঙ্গল নয়। যে মঙ্গলের পর দোযখের আগুন রয়েছে তা আসলে মঙ্গল হতে পারে না। জান্নাতের তুলনায় প্রতিটি নেয়ামতই আসলে অপাঙক্তেয়,ক্ষুদ্র ও মূল্যহীন। আর দোযখের আগুনের তুলনায় প্রতিটি বিপদাপদই আসলে মুক্তি।
হে বৎস! জেনে রেখো যে,যে ব্যক্তি তার নিজ দোষ-ত্রুটি প্রত্যক্ষ করে সে অন্যের দোষ-ত্রুটি অন্বেষণ করা থেকে বিরত থাকে;আর যে ব্যক্তি তাকওয়া-পরহেজগারীর পোশাক খুলে ফেলে সে আর কোন পোশাক দ্বারাই নিজেকে ঢাকতে পারে না। যে ব্যক্তি মহান আল্লাহর বণ্টনে সন্তুষ্ট হয় সে তার যে জিনিস হারিয়ে গেছে সেটির জন্য মনক্ষুণ্ণ হয় না। যে ব্যক্তি অন্যের ওপর জুলুম ও বিদ্রোহের তরবারী কোষমুক্ত করে সে আসলে ঐ তরবারী দ্বারাই নিহত হয়। যে তার ভাইয়ের জন্য গর্ত খুঁড়ে সে ঐ গর্তের মধ্যেই পতিত হয়। যে অন্যের মান-সম্ভ্রমের পর্দা বিদীর্ণ করে আসলে তার পরিবারের লজ্জাকর গোপণ বিষয়গুলো প্রকাশিত হয়ে পড়ে। যে ব্যক্তি তার নিজের ভুল-ভ্রান্তি ভুলে যায় সে অন্যের ভুল-ত্রুটিকে বড় করে দেখে। যে ব্যক্তি প্রস্তুতি ছাড়াই সমস্যা ও প্রতিকূল অবস্থার বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও প্রতিরোধে লিপ্ত হয় সে-ই আসলে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। আর যে ব্যক্তি (চিন্তা-ভাবনা না করে) নিজেকে বিপদাপদের উত্থাল তরঙ্গমালার মাঝে নিক্ষেপ করে আসলে সে-ই নিমজ্জিত হয়। যে ব্যক্তি একগুঁয়ে মনোবৃত্তির কারণে কেবল নিজের অভিমতের ওপরই নির্ভর করে আসলে সে-ই পথভ্রষ্ট হয়। আর যে ব্যক্তি তার নিজ বুদ্ধিমত্তা ও জ্ঞানের দ্বারা অমুখাপেক্ষী হতে চায় সে-ই পদস্খলিত হয়। যে ব্যক্তি মানুষের ওপর বড়াই করে সে অপদস্থ হয়। যে ব্যক্তি আলেমদের সাথে মেলামেশা করে সে-ই সম্মানিত হয়। আর যে ব্যক্তি হীন-নীচ ব্যক্তিদের সাথে মেলামেশা করে সে অপমানিত হয়। যে ব্যক্তি মানুষকে নির্বোধ বলে অভিহিত করে সে গাল-মন্দের শিকার হয়। যে ব্যক্তি মন্দ জায়গায় অর্থাৎ অপরাধস্থলে প্রবেশ করে সে অপরাধী সাব্যস্ত হয়। যে ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করে সে খুব হালকা ও তরলমতি সম্পন্ন বলে গণ্য হয়। যে ব্যক্তি কোন কাজ অধিক করে সে সেই কাজের দ্বারাই পরিচিত হয়। যার কথা বেশি তার দ্বারা ভুলও বেশি হয়;আর যার দ্বারা ভুল বেশি হয় তার লজ্জাও কমে যায়;যার লজ্জা কমে যায় তার তাকওয়া-পরহেজগারীও কমে যায়;যার তাকওয়া-পরহেজগারী কমে যায় তার অন্তঃকরণই মরে যায়;আর যার অন্তঃকরণ মারা যাবে সে জাহান্নামে প্রবেশ করবে।
হে বৎস! যে ব্যক্তি মানুষের দোষ-ত্রুটি ধরে এবং নিজের ব্যাপারে সম্পূর্ণ তুষ্ট থাকে (অর্থাৎ নিজের দোষত্রুটি উপেক্ষা করে এবং ভাবে যে সে দোষত্রুটি মুক্ত এবং এতে তার চিত্ত তুষ্ট থাকে) তাহলে সে-ই হচ্ছে প্রকৃত বোকা। যে চিন্তা করে সে-ই উপদেশপ্রাপ্ত হয়। আর যে উপদেশপ্রাপ্ত হয় সে নির্জনবাস করে;যে নির্জনবাস করে সে-ই নিরাপদ থাকে। যে প্রবৃত্তিকে বর্জন করে সে-ই আসলে প্রকৃত মুক্ত ও স্বাধীন হয়ে যায়। যে ব্যক্তি হিংসা-দ্বেষ ত্যাগ করে সে-ই মানুষের ভালোবাসার পাত্র হয়।
হে বৎস! মুমিনের সম্মান ও মর্যাদা হচ্ছে মানুষের প্রতি তার অমুখাপেক্ষী হওয়া। পরিমিতিতে সন্তুষ্ট থাকা হচ্ছে এমন এক সম্পদ যা ধ্বংস হয় না। যে ব্যক্তি মৃত্যুর কথা বেশি বেশি স্মরণ করে সে-ই আসলে দুনিয়ার সামান্য কিছুতে সন্তুষ্ট থাকে। আর যে ব্যক্তি জানবে যে,তার কথা ও বাণী তার কাজেরই অন্তর্ভুক্ত তখন তার কথাও কমে যাবে তবে যে ক্ষেত্র তার জন্য উপকারী সে ক্ষেত্র ব্যতীত।
হে বৎস! খুবই আশ্চর্যজনক যে,যে ব্যক্তি শাস্তির ভয় করে,অথচ সে (পাপাচার থেকে) বিরত হয় না এবং পুণ্য প্রার্থণা করে,কিন্তু তওবা করেনি এবং এ ব্যাপারে কোন কাজও করেনি!
হে বৎস! চিন্তা আলো আনয়নকারী। আর গাফিলতি আঁধার আনয়নকারী। অজ্ঞতা-মূর্খতা হচ্ছে পথভ্রষ্টতা। ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে সৌভাগ্যবান যে অন্যের কাছ থেকে উপদেশ গ্রহণ করে। আদব বা শিষ্ঠাচার হচ্ছে সর্বোত্তম মীরাস (উত্তরাধিকার)। সৎ চরিত্র হচ্ছে সর্বোত্তম সঙ্গী;নিকটাত্মীয়তার বন্ধন ছিন্নকারীর কখনই কোন উন্নতি হয় না। আর পাপ ও অপরাধের সাথে কোন প্রাচুর্য ও প্রকৃত অমুখাপেক্ষিতা নেই।
হে বৎস! বিপদাপদ থেকে নিরাপদ থাকার দশটি অংশ রয়েছে যার নয়টি অংশই মৌনতা ও নীরবতার মধ্যে,কেবল মহান আল্লাহর যিকির দ্বারা কথা বলা ব্যতীত এবং বাকী অংশটি (দশম অংশ) বোকাদের সঙ্গদান পরিত্যাগ করার মধ্যে নিহিত।
হে বৎস! যে ব্যক্তি প্রকাশ্যে সভাস্থলে মহান আল্লাহর বিরুদ্ধাচরণের পোশাকে নিজেকে সজ্জিত করবে মহান আল্লাহ্ তাকে অপদস্থ ও অপমানিত করবেন;আর যে জ্ঞানান্বেষণ করবে সে-ই জ্ঞানী হবে।
হে বৎস! মানুষের সাথে সদ্ভাব বজায় রাখা ও সদাচার করাই হচ্ছে জ্ঞানের মূল কথা এবং তাদের সাথে কঠিন আচরণ ও দুর্ব্যবহার করাই হচ্ছে জ্ঞানের বিপদ;বিপদাপদে ধৈর্য ঈমানের গুপ্তধনসমূহের অন্তর্ভুক্ত;শালীনতা ও সতীত্ব হচ্ছে দারিদ্র্যের সৌন্দর্য;কৃতজ্ঞতা হচ্ছে অমুখাপেক্ষিতার সৌন্দর্য;অধিক দেখা-সাক্ষাৎ বিমর্ষতা আনয়ন করে;পরীক্ষা ও যাচাই-বাছাই করার আগে আস্থা স্থাপন ও নিশ্চিত হওয়া আসলে বিচক্ষণতা,দূরদর্শিতা ও সতর্কতার পরিপন্থি;আত্ম ও নিজকে নিয়ে বিস্ময়বোধ প্রকাশ করা আসলে দুর্বল বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক।
হে বৎস! কত দৃষ্টি-ই না পরিতাপ ও আফসোস আনয়ন করেছে আর কত কথা-ই না নিয়ামতসমূহ ছিনিয়ে নিয়েছে!!
হে বৎস! ইসলামের চেয়ে উচ্চ আর কোন সম্মান ও মর্যাদা নেই;আর তাকওয়া-পরহেজগারীর চেয়ে অধিক সম্মানিত কোন বস্তু নেই;খোদাভীরুতার চেয়ে অধিকতর মজবুত আশ্রয়স্থলও আর নেই;তওবা ও অনুশোচনার চেয়ে অত্যধিক সফল সুপারিশকারীও আর নেই;শারীরিক সুস্থতার চেয়ে অত্যধিক সুন্দর আর কোন পোশাক নেই;খোদাপ্রদত্ত জীবিকার প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশের চেয়ে অত্যধিক দারিদ্র্য বিমোচনকারী সম্পদ আর নেই;যে ব্যক্তি পর্যাপ্ত পরিমাণ রুজির ব্যাপারে সন্তুষ্ট থাকবে ও নির্ভর করবে সে খুব দ্রুত শান্তি লাভ করবে এবং সে তার নিজের জন্য জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ প্রস্তুত করতে সক্ষম হবে।
হে বৎস! লোভ-লালসা সকল ক্লান্তির চাবি,সকল দুরবস্থার বাহন এবং মানুষের পাপাচারের মধ্যে নিমজ্জিত হওয়ার কারণ;অত্যধিক লোভ-লালসা সকল দোষ-ত্রুটির সমাবেশ ঘটায়;অন্যদের যা কিছু তুমি অপছন্দ কর সেটাই তোমার শিক্ষার জন্য যথেষ্ট;অন্যের ওপর যেরূপ তোমার অধিকার আছে ঠিক তোমার ওপরও অন্যের তেমন অধিকার আছে। যে ব্যক্তি ভবিষ্যৎ ফলাফল ও পরিণতির কথা চিন্তা না করেই বিভিন্ন বিষয়ে নিজেকে নিয়োজিত করে আসলে সে বিপদাপদের শিকার হয়। কাজ শুরু করার আগে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তাভাবনা করা তোমাকে অনুতাপ করা থেকে নিরাপদ রাখবে। যে ব্যক্তি বিভিন্ন ধরনের অভিমত,পরামর্শ ও দৃষ্টিভঙ্গিকে স্বাগত জানায় আসলে সে ভুল-ভ্রান্তি সংঘটিত হওয়ার ক্ষেত্রগুলো সনাক্ত করতে সক্ষম হয়। ধৈর্য দারিদ্র্যের বিপক্ষে রক্ষাকারী ঢালস্বরূপ। কৃপণতা চরম দারিদ্র্য ও রিক্ততার ভূষণ;লোভ-লালসা দারিদ্র্যের নিদর্শন;দরিদ্র মিশুক ব্যক্তিগণ ধনবান খিটখিটে মেজাজের দানশীল ব্যক্তিগণ অপেক্ষা উত্তম। প্রতিটি বস্তুরই নির্দিষ্ট পরিমাণ রুজী রয়েছে। আর আদম সন্তান হচ্ছে মৃত্যুর আহার্য বা খাদ্যস্বরূপ (অর্থাৎ সকল মানুষকেই মরতে হবে)।
হে বৎস! কোন পাপীকেই নিরাশ করো না;কারণ অনেক ব্যক্তি যারা পাপাচারে অভ্যস্ত হয়ে গেছে তাদের শেষ পরিণতি শুভ হয়েছে;আর অনেক ব্যক্তি যারা সৎ কর্ম করত তারা তাদের জীবন-সায়াহ্নে পাপাচারী ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীতে পরিণত হয়েছে এবং পরিণতিতে জাহান্নামে আপতিত হয়েছে। আমরা এ ধরনের পরিণতি বরণ করা থেকে মহান আল্লাহর কাছে পানাহ্ চাচ্ছি।
হে বৎস! কত পাপীই না মুক্তি পেয়েছে আর কত সৎ কর্মশীল ব্যক্তিই না (জীবন সায়াহ্নে ধ্বংস ও দুর্ভাগ্যের অতল গহ্বরে) তলিয়ে গেছে! যে ব্যক্তি সত্যবাদিতা ও সততাকে নিজ জীবনের ব্রত হিসাবে গ্রহণ করেছে তার জীবনের যাবতীয় সমস্যার সমাধান হয়ে গেছে। প্রবৃত্তির বিরুদ্ধাচরণের মধ্যেই তার সুষ্ঠু বিকাশ ও উন্নতি নিহিত রয়েছে। সময় মানুষের জীবন ও আয়ুষ্কালকে কমিয়ে দেয়। তাই শ্রেষ্ঠ বিচারক এবং গোপনকারীদের চিত্তের সকল গোপন বিষয় সম্পর্কে জ্ঞাত মহান স্রষ্টার বিরুদ্ধাচরণকারীদের ওপর আক্ষেপ।
হে বৎস! পরকালের জন্য সবচেয়ে নিকৃষ্ট পাথেয় হচ্ছে মহান আল্লাহর বান্দাদের প্রতি সীমালঙ্ঘন ও তাদের প্রতি শত্রুতামূলক আচরণ। প্রতিটি চুমুকেই শ্বাস বন্ধ হওয়া এবং প্রতিটি লোকমাতেই গলায় খাদ্য আটকানোর সম্ভাবনা আছে। অন্য একটি নেয়ামত হাতছাড়া করা ব্যতীত কখনই আরেকটি নেয়ামত অর্জিত হয় না। ক্লান্তির চেয়ে প্রশান্তি,আনন্দ ও নেয়ামতসমূহের চেয়ে দুরবস্থা,জীবনের চেয়ে মৃত্যু এবং শারীরিক সুস্থতার চেয়ে রোগ ও অসুস্থতা কতই না নিকটবর্তী! তাই ঐ ব্যক্তির অবস্থা কতই না উত্তম যে কেবল মহান আল্লাহর জন্যই তার সকল কর্মকাণ্ড,জ্ঞান-বিদ্যা,প্রেম-ভালোবাসা,ঘৃণা,গ্রহণ,বর্জন,কথা ও মৌনতা একনিষ্ঠ করে নিয়েছে;ঐ জ্ঞানীকে অভিনন্দন ও সাধুবাদ যে পরিশ্রম ও চেষ্টা সহকারে সৎ কাজ করেছে এবং মৃত্যুর অতর্কিত আক্রমণকে ভয় করে নিজেকে সর্বাবস্থায় প্রস্তুত করে রেখেছে;তাকে প্রশ্ন করা হলে সদুপদেশ দেয় এবং ত্যাগ করা হলে (প্রশ্ন করা না হলে) মৌনতা অবলম্বন করে। তার কথা সঠিক এবং যদিও সে কথা বলতে অপারগ নয় তবুও তার নীরবতাও (তার পক্ষ থেকে প্রদত্ত) উত্তরস্বরূপ। আর ঐ ব্যক্তির জন্য আক্ষেপ যে বঞ্চনা,অপদস্থতা ও পাপাচার কবলিত এবং পরিণামে ঐ জিনিস তার নিজের জন্য পছন্দ করে ও উত্তম বলে মনে করে যা অন্যদের ক্ষেত্রে অপছন্দ করে এবং অন্যান্য মানুষের ক্ষেত্রে যা কিছু দোষ বলে গণ্য করে নিজেই তা আঞ্জাম দেয়।
হে বৎস! জেনে রাখ,নিশ্চয়ই যে ব্যক্তির কথা নরম ও মিষ্টি তাকে ভালোবাসাই অপরিহার্য হয়ে যায়। মহান আল্লাহ্ তোমাকে উন্নতি,বিকাশ ও মুক্তি পাবার সামর্থ্য দিন এবং তোমাকে তাঁর অনুগত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। কারণ নিশ্চয়ই তিনি অত্যন্ত দানশীল ও দয়ালু।”১
হযরত আলী (আ.) আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার পর ১৯ রমযানের দিন,২০ রমযানের দিন ও রাত এবং ২১ রমযানের রাতের প্রথম এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত জীবিত ছিলেন। এরপর তিনি এ নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করে মহান আল্লাহর সাথে মিলিত হন। ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন (আ.) হযরত আলী (আ.)-এর নির্দেশ মোতাবেক তাঁর জানাযার গোসল দেন ও কাফন পড়ান। এরপর তাঁরা তাঁর পবিত্র লাশ কুফার নাজাফের দিকে নিয়ে যান এবং সেখানে দাফন করেন এবং তাঁর পবিত্র কবর গোপন রাখেন। এতদপ্রসঙ্গে হাইয়ান ইবনে আলী আনযী বলেছেন,“হযরত আলী (আ.)-এর একজন দাস আমাকে বলেছে : যখন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে আসে তখন তিনি ইমাম হাসান ও হুসাইনকে ডেকে বলেছিলেন : যখন আমি এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যাব তখন আমার লাশ একটি কফিনের মধ্যে নিয়ে তা ঘর থেকে বাইরে বহন করে নিয়ে যাবে। তোমরা কফিনের পেছন দিকটা ধরবে। কারণ কফিনের সম্মুখভাগ বহন করানো হবে এবং তোমাদেরকে কফিনের সম্মুখভাগ বহন করার কষ্ট থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে। অতঃপর আমাকে তোমরা গাররায়াইনে (গাররায়াইন হচ্ছে ঐ স্থানের নাম যেখানে এখন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিবের পবিত্র কবর অবস্থিত। কেউ কেউ বলেছেন,গাররায়াইন দু’টি ইমারতের নাম যা নাজাফে রয়েছে।)নিয়ে যাবে এবং সেখানে একটি উজ্জ্বল সাদা রংয়ের পাথর দেখতে পাবে। সে জায়গাটি খনন করবে এবং সেখানে একটি ফলক দেখতে পাবে। অতঃপর সেখানেই আমাকে দাফন করবে।”
উক্ত দাস বলেছে : হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) যখন মৃত্যুবরণ করলেন তখন আমরা তাঁর পবিত্র দেহ বহন করে বাড়ীর বাইরে নিয়ে গেলাম। আমরা কফিনের পশ্চাদ্ভাগ ধরলাম এবং তখন কফিনের সম্মুখভাগ উঠানো হলো। আমরা ভূমির ওপর গাছ টেনে নিয়ে গেলে যেমন শব্দ হয় সে রকম একটি ক্ষীণ শব্দ শুনতে পেলাম। অবশেষে আমরা গাররায়াইনে পৌঁছলাম। সেখানে একটি উজ্জ্বল শ্বেত পাথর দেখতে পেলাম। আমরা ঠিক ঐ জায়গায় কবর খনন করলে একটি ফলক দেখতে পেলাম যাতে লিখা ছিল : এ সেই জায়গা যা নূহ (আ.) আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর জন্য প্রস্তুত করে রেখেছেন। অতঃপর আমরা তাঁকে ঐ স্থানে দাফন করে কুফায় প্রত্যাবর্তন করলাম।”
মুহাম্মদ বিন আম্মারাহ্ নিজ পিতা (আম্মারাহ্) থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি জাবির বিন ইয়াযীদ জুফী থেকে বর্ণনা করেছেন। তিনি (জাবির বিন ইয়াযীদ জুফী) বলেছেন : আমি ইমাম মুহাম্মদ বাকের ইবনে আলী (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করেছিলাম : হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-কে কোথায় দাফন করা হয়েছিল? তিনি বলেছিলেন : ফজর হওয়ার আগেই গাররায়াইন এলাকায় তাঁকে দাফন করা হয়েছিল। ইমাম হাসান,ইমাম হুসাইন,মুহাম্মদ ইবনে হানাফীয়াহ্ ও আবদুল্লাহ্ ইবনে জাফর (ভাতিজা) এ চারজন তাঁর কবরে প্রবেশ করেছিলেন (এবং তাঁর পবিত্র দেহ কবরে শায়িত করেছিলেন)।
ইয়াকুব ইবনে ইয়াযীদ বর্ণনা করেছেন : ইমাম হুসাইন (আ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: আপনারা হযরত আমীরুল মুমিনীনকে কোথায় দাফন করেছিলেন? তিনি বলেছিলেন : আমরা রাতের বেলাই তাঁকে আশআসের মসজিদের দিক থেকে কুফার পেছনে গাররায়াইনের পাশে বহন করে নিয়ে যাই এবং সেখানেই দাফন করি।”২
হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.)-এর কবর গোপন রাখার কারণ এটি ছিল যে,হযরত আলী (আ.) জানতেন তাঁর খিলাফতের পরপরই বনি উমাইয়্যারা শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে এবং তারা তাঁর প্রতি চরম শত্রু মনোভাবাপন্ন ছিল। তিনি তাদের ভবিষ্যৎ কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ছিলেন এবং বেশ ভালো করেই জানতেন যে,অসদুদ্দেশ্য ও আত্মিক পঙ্কিলতার কারণে এরা পাপাচার ও অসৎ কাজ আঞ্জাম দেয়া থেকে বিরত থাকবে না এবং তারা তাঁর পবিত্র লাশ ও কবরের অবমাননা করতেও কুণ্ঠাবোধ করবে না।
একাধিক কবর খনন করা প্রসঙ্গে ‘ফারহাতুল গাররা’গ্রন্থে বর্ণিত আছে : হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) থেকে সনদসূত্রে বর্ণিত হয়েছে : তিনি নিজ পুত্র ইমাম হাসান (আ.)-কে তাঁর জন্য ৪টি স্থানে কবর খনন করার অসিয়ত করেছিলেন। এ স্থান চারটি হচ্ছে :
১. কুফার মসজিদ
২. গাররা অর্থাৎ নাজাফ (এখানেই ইমাম আলীর মাযার অবস্থিত)
৩. জাদাহ্ বিন হুবাইরার বাড়ি
৪. রাহবাহ (কুফার একটি স্থান)
আর এটি এ কারণেই করা হয়েছিল যাতে করে শত্রুরা হযরত আমীরুল মুমিনীনের কবর সম্পর্কে কোন সঠিক তথ্য লাভ করতে না পারে।৩
হযরত আলী ইবনে আবি তালিবের শাহাদাত দিবসে ইমাম হাসানের বক্তৃতা
হযরত আলী (আ.)-এর শাহাদাত দিবসে ইমাম হাসান (আ.) বক্তৃতা করলেন এবং মহান আল্লাহর প্রশংসা করার পর বললেন,
“হে জনগণ! এ রাতে পবিত্র কোরআন অবতীর্ণ হয়েছিল;এ রাতে ঈসা ইবনে মরিয়মকে ঊর্ধ্বলোকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছিল;এ রাতে ইউশা ইবনে নূন নিহত হয়েছিলেন। আর এ রাতেই আমার পিতা আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) মৃত্যুবরণ করেছেন। মহান আল্লাহর শপথ,তাঁর আগে যাঁরা ওয়াসী (নবীদের উত্তরাধিকারী) হয়েছিলেন তাঁদের মধ্য থেকে কেউই জান্নাতে প্রবেশের ক্ষেত্রে আমার পিতার চেয়ে অগ্রগামী হতে পারবেন না,ঠিক তদ্রূপ তাঁর পরবর্তী ওয়াসিগণও। আর যদি মহানবী (সা.) তাঁকে কোন যুদ্ধাভিযানে প্রেরণ করতেন তাহলে তাঁর ডান পাশে জিবরাইল ও তাঁর বাম পাশে মীকাঈল (আ.) যুদ্ধ করতেন;তিনি সাতশ দিরহাম ব্যতীত আর কোন স্বর্ণ ও রৌপ্য মুদ্রা রেখে যাননি। আর এ সাতশ দিরহাম তিনি তাঁর পরিবারের জন্য একজন খাদেম ক্রয় করার জন্য যে অর্থ দিয়েছিলেন তা থেকে উদ্বৃত্ত থেকে গেছে।”৪
কেন হযরত আমীরুল মুমিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (আ.)-এর খিলাফত ও প্রশাসনের বিরোধিতা করা হয়েছিল-এ প্রশ্নটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এর সঠিক উত্তর দেয়া প্রয়োজন। আর এ প্রশ্নের উত্তর হযরত ইমাম হুসাইনের আন্দোলন এবং কারবালায় সঙ্গী-সাথী ও প্রিয়জনদেরসহ তাঁর হৃদয়বিদারক শাহাদাত বরণের পটভূমিকা তৈরিকারী কারণ অনুধাবন করার জন্য সহায়ক হবে।
হযরত আলী ইবনে আবি তালিব (আ.) কেবল নিকটাত্মীয়তার সূত্রেই নয়,বরং মহানবী (সা.)-এর আদর্শ,পথ ও মতের একনিষ্ঠ অনুসারী হওয়ার কারণেই তাঁর সবচেয়ে প্রিয়পাত্র ছিলেন। আর এটি সর্বজনবিদিত। এতদপ্রসঙ্গে হযরত আয়েশার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ দলিল হিসাবে উল্লেখ করা যায়। যখন তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল,নারীদের মধ্যে কে মহানবীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন? তখন তিনি বলেছিলেন,“ফাতেমা।” এরপর পুরুষদের মধ্যে কে সবচেয়ে প্রিয় ছিলেন মহানবী (সা.) এর কাছে-এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেছিলেন,“ফাতেমার স্বামী আলী”।৫ বলার অপেক্ষা রাখে না যে,হযরত আলী ও ফাতেমা (আ.) মহানবী (সা.)-এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হয়েছিলেন। মহানবী ছিলেন তাঁদের দু’জনেরই শিক্ষক। হযরত আলী শৈশব থেকে মহানবীর সাথে বসবাস করতে থাকেন। তিনি সর্বক্ষণ মহানবীর সাথে থাকতেন। এ প্রসঙ্গে তিনি নিজেই বলেছেন,“উটশাবক যেমনভাবে তার মাকে অনুসরণ করে ঠিক তেমনি আমি মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করতাম।”৬ মহানবী তাঁকে খাবার খাইয়ে দিতেন এবং নিজ বিছানায় তাঁকে শোয়াতেন।৭ মহানবী তাঁকে প্রতিদিন তাঁর পবিত্র চরিত্র থেকে নতুন নতুন চারিত্রিক ও নৈতিক গুণ শিক্ষা দিতেন এবং তিনি তা শিখতেন এবং আত্মস্থ করে নিতেন।৮
এভাবে হযরত আলী মহানবী (সা.)-এর কাছে প্রতিপালিত হয়েছেন এবং মহানবীর মহান নৈতিক চরিত্র পূর্ণরূপে হযরত আলীর মধ্যে প্রতিফলিত হয়েছিল যা অন্য কোন ব্যক্তির ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি। হযরত আলী মহানবীর ব্যক্তিত্ব ও চরিত্রের যাবতীয় দিক সম্পর্কে শুধু অবগতই ছিলেন না,বরং সেগুলো পূর্ণরূপে নিজ জীবন ও চরিত্রের মাঝে রূপায়িত ও বাস্তবায়িত করেছিলেন। তাই তিনি হতে পেরেছিলেন অন্য সকলের চেয়ে মহানবীর সুন্নাহ্,আদর্শ,নীতি-নৈতিকতা ও চরিত্রের খাঁটি অনুসারী। এ কারণেই তিনি হতে পেরেছিলেন মহানবীর সবচেয়ে মনোযোগী শিষ্য। মহানবীর সাথে তাঁর আত্মিক-আধ্যাত্মিক বন্ধন ও সম্পর্ক এতটা গভীর ছিল যে,আনুষ্ঠানিকভাবে নবুওয়াতের ঘোষণা দেয়ার বহু আগে হেরা গুহায় মহানবী (সা.) যখন মহান আল্লাহর ধ্যান ও ইবাদত করার জন্য নির্জনবাস করতে শুরু করেছিলেন তখনও তিনি নবীকে দেখতে যেতেন এবং তাঁর সাথে থাকতেন। একমাত্র তিনি ব্যতীত অন্য কোন ব্যক্তি রাসূলুল্লাহর সাথে ঐ সময় সাক্ষাৎ করতে বা মিলিত হতে পারেনি,এমনকি যে দিন ওহীর ফেরেশতা হযরত জিবরাইল (আ.) প্রথম ওহী নিয়ে মহানবীর কাছে এসে তাঁর নবুওয়াতের ঘোষণা দিলেন সেদিন ও সে মুহূর্তে হযরত আলী মহানবীর সান্নিধ্যে উপস্থিত ছিলেন এবং ওহী অবতীর্ণ হওয়া প্রত্যক্ষ করেছিলেন এবং হতাশ ইবলিসের ক্রন্দনধ্বনিও হৃদয়ের কর্ণ দিয়ে শুনেছিলেন। শয়তানের ক্রন্দনের ব্যাপারে তিনি মহানবী (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেছিলেন,“হে আলী! আমি যা দেখি,তুমি তা দেখ এবং আমি যা শুনি,তা তুমি শুনতে পাও। কিন্তু তুমি নবী নও। তবে তুমি নবীর ওয়াযীর (সাহায্যকারী)।”৯ মহানবী (সা.) বলেছেন,“হে আলী! তুমি ও আমি একই বৃক্ষ থেকে উদ্ভূত এবং সকল মানুষ ভিন্ন ভিন্ন বৃক্ষ (উৎসমূল) থেকে উদ্ভূত।” তিনি আরো বলেছেন,“আলী আমা থেকে আমি আলী থেকে।”১০
হযরত আলী (আ.) নিজের সম্পর্কে বলেছেন,“আমিই সিদ্দীক-ই আকবর (সর্বশ্রেষ্ঠ সিদ্দীক)। আমার পরে কেবল মিথ্যাবাদীই এরূপ বলবে। আমি লোকদের মাঝে ৭ বছর বয়সের পূর্বেই সালাত আদায় করেছি। (সকল মানুষের নামায পড়ারও সাত বছর পূর্বে আমি নামায পড়েছি)।”১১
মহানবী (সা.) আলী (আ.) সম্পর্কে আরো বলেছেন,“আলী সত্যের সাথে,সত্য আলীর সাথে। হে আল্লাহ্! আলী যে দিকে ঘোরে সত্যকে সেদিকে ঘুরিয়ে দাও।” মহানবীর এ হাদীস থেকে প্রতিপন্ন হয় যে,আলী সত্যের মাপকাঠি এবং সত্যকে আলীর মাধ্যমেই চিনতে হবে।
“আলী পবিত্র কোরআনের সাথে এবং কোরআনও আলীর সাথে। হাউযে কাওসারে আমার কাছে পৌঁছা পর্যন্ত এতদুভয় কখনও পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”১২ এ হাদীস থেকে প্রতিপন্ন হয় যে,হযরত আলীই পবিত্র কোরআনের সত্যিকার ভাষ্যকার ও ব্যাখ্যাকারী। খাঁটি কোরআনী জ্ঞানসমূহের উৎসও তিনি। সে সাথে সাথে তাঁর নিষ্পাপ হওয়া এবং তাঁর কথা,কাজ,আচার-আচরণ,নীতি ও পদক্ষেপ সব কিছুই যে পবিত্র কোরআনসম্মত ও নির্ভুল তা প্রমাণিত হয়ে যায়।
“আমি জ্ঞানের নগরী ও আলী তার তোরণ।”১৩ এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে,পবিত্র কোরআন,মহানবীর সুন্নাহ্,শরীয়তের বিধি-বিধান এবং বিভিন্ন ধরনের জ্ঞান ও শাস্ত্রের বৈধ প্রামাণিক উৎস হযরত আলী।
“আলী সর্বোত্তম বিচারক।”১৪ এ হাদীস থেকেও প্রমাণিত হয় যে,আলী কখনও অন্যায়,অত্যাচার ও ভুল ফয়সালা করতে পারেন না বা তিনি এমন ফয়সালা দিতে পারেন না যা সত্য ও ন্যায়পরায়ণতার পরিপন্থি।
“আর আপনার সবচেয়ে নিকটবর্তী জ্ঞাতি ও গোত্রকে (বনি হাশিম) ভয় প্রদর্শন করুন”-এ আয়াতটি অবতীর্ণ হওয়ার পর মহানবী (সা.) বনি হাশিমকে ভোজে নিমন্ত্রণ করে আপ্যায়ন করার পর তাদেরকে এক-অদ্বিতীয় স্রষ্টা ও উপাস্য মহান আল্লাহ্য় বিশ্বাস,ইসলাম ধর্ম গ্রহণ এবং এ মহান ধর্ম ও রিসালত প্রচার করার ক্ষেত্রে সাহায্য-সহযোগিতা করার আহ্বান জানালে উপস্থিত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে একমাত্র বালক হযরত আলীই তাঁর আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিলে মহানবী (সা.) বলেছিলেন,“হে আলী! তুমি বস। অতএব,তুমি আমার ওয়াসী,আমার সহকারী,আমার পর আমার উত্তরাধিকারী ও আমার খলীফা।”১৫
গাদীরে খুম দিবসে বিদায় হজ্ব সমাপন করে মদীনায় প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে পবিত্র মক্কার অদূরে খুমের জলাশয়ের কাছে লক্ষাধিক জনতার সম্মুখে মহানবী (সা.) ঐতিহাসিক ভাষণে বলেছিলেন,“আমি যার মাওলা (বৈধ কতৃপক্ষ,তত্ত্বাবধায়ক ও অভিভাবক) এ আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ্! যে তাকে ভালোবাসে,তাকে তুমি ভালোবাস এবং যে তার সাথে শত্রুতা পোষণ করে,তার সাথে তুমিও শত্রুতা পোষণ কর।”১৬ (এ হাদীসটি ‘গাদীরে খুমের হাদীস’বলে প্রসিদ্ধ এবং এটি মুতাওয়াতির।)
মহানবী (সা.) আলী (আ.)-কে তাঁর আহলে বাইতের অন্তর্ভুক্ত করেছেন যাঁদেরকে মহান আল্লাহ্ পবিত্র কোরআনে পুতঃপবিত্র বলেছেন (সূরা আহযাব : ৩৩) এবং যাঁদেরকে মহানবী (সা.) ‘হাদীসে সাকালাইন’-এ পবিত্র কোরআনের (প্রথম সাকাল) পাশাপাশি দ্বিতীয় সাকাল (অত্যন্ত ভারি ও গুরুত্বপূর্ণ বস্তু) হিসাবে উম্মতের হেদায়েতস্বরূপ রেখে গেছেন যেন উম্মত এ দু’টিকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরে। উল্লেখ্য ‘হাদীসে সাকালাইন’মুতাওয়াতির হাদীস।
প্রাগুক্ত হাদীসসমূহ ও তাঁর শানে বর্ণিত মহানবী (সা.)-এর অগণিত হাদীসের আলোকে প্রমাণিত হয় যে,মহানবী (সা.)-এর সাথে হযরত আলী (আ.)-এর যে আত্মিক-আধ্যাত্মিক সম্পর্ক বিদ্যমান ছিল ঠিক সেরূপ সম্পর্ক মহানবীর সাথে অপর কোন সাহাবীর ছিল না। আর এ থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে,মহানবীর পর হযরত আলী ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার অধিকারী যার কাছে কোন শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি,এমনকি নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতাও পৌঁছতে পারবে না। বলার অপেক্ষা রাখে না যে,মহানবী (সা.) মহান আল্লাহর নির্দেশেই দশম হিজরীতে বিদায় হজ্ব থেকে প্রত্যাবর্তনকালে পথিমধ্যে গাদীরে খুম নামক স্থানে লক্ষাধিক জনতার সামনে হযরত আলীকে মুসলিম উম্মাহর মওলা নিযুক্ত করেছিলেন এবং এ ব্যাপারে ঐতিহাসিক ঘোষণা দিয়েছিলেন যা মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস ও ইতিহাসের প্রামাণ্য গ্রন্থসমূহে বর্ণিত হয়েছে (এ বিষয়টি আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি)।
কিন্তু তখন থেকেই ইসলামের চিরশত্রু মুনাফিকচক্র,বনি উমাইয়্যাহ্ (আবু সুফিয়ান ও তার দলবল),তুলাকা (মক্কার কুরাইশগণ যারা সব সময় ইসলাম ধর্ম ও মহানবীর বিরোধিতা করেছে। অবশেষে মক্কা বিজয়ের দিনে তাদের প্রতিরোধ ও প্রকাশ্য বিরোধিতার সকল পথ বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করার জন্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিল তারা তুলাকা অর্থাৎ সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্তগণ নামে পরিচিত) ও ইহুদীচক্র যাতে করে মহানবী (সা.) কর্তৃক প্রবর্তিত এ সঠিক নেতৃত্ব-ধারা প্রতিষ্ঠিত এবং এর মাধ্যমে মুসলিম উম্মাহ্ পরিচালিত হতে না পারে সে জন্য ধ্বংসাত্মক তৎপরতা শুরু করে দেয় যার ফলশ্রুতিতে মহানবীর নির্দেশ অমান্য করার প্রবণতা তাঁর জীবনের শেষ দিনগুলোতে প্রকটভাবে পরিলক্ষিত হতে থাকে। তাই ভীষণ অসুস্থাবস্থায় মহানবী (সা.) যখন সকল আনসার ও মুহাজিরকে উসামাহ্ ইবনে যায়দের নেতৃত্বাধীন সেনাদলে যোগ দিয়ে অনতিবিলম্বে মদীন ত্যাগ করে সিরিয়া সীমান্তে রোমানদের বিরুদ্ধে জিহাদে গমন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন তখন নানা ধরনের ঠুনকো অজুহাত ও খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে এ সেনাদলে যোগদান ও যুদ্ধে গমন করা থেকে সবাই বিরত থেকেছিল। উপরন্তু আঠার বছরের যুবক উসামাকে এ সেনাদলের সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করার কারণে বংশকৌলিন্য ও আভিজাত্যের গর্বকারীরা মহানবীর এ পদক্ষেপের তীব্র সমালোচনা করলে তিনি খুবই ক্ষুব্ধ ও অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন এবং তীব্র অসুস্থ হয়েও এ ব্যাপারে মর্মস্পর্শী ভাষণ দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। এতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে,এ বিরোধিতা ও সমালোচনা এই প্রথমবার করা হয়নি,বরং এর আগেও উসামার পিতা যায়েদকে সৈন্যাধ্যক্ষ নিযুক্ত করার সময়ও করা হয়েছিল!!১৭ উল্লেখ্য যে,উসামার নেতৃত্বাধীন এ সেনাদলে হযরত আবু বকর ও হযরত উমরও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।১৮
যাহোক,সাহাবীদের নিস্পৃহতা ও সেনাদলে যোগদান করা থেকে বিরত থাকার কারণে শেষ পর্যন্ত মহানবী (সা.)-এর জীবদ্দশায় এ সেনাবাহিনীকে জিহাদে প্রেরণ করা আর সম্ভব হয়নি। রাসূলের নির্দেশ অমান্য করার আরেকটি জাজ্বল্যমান দৃষ্টান্ত হচ্ছে রাসূলকে তাঁর শেষ অসিয়ত লিখতে বাধা দান। মৃত্যুর তিন দিন পূর্বে মুসলিম উম্মাহ্ যাতে তাঁর অবর্তমানে কখনও বিচ্যুত ও পথভ্রষ্ট না হয় সেজন্য মহানবী মুসলিম উম্মাহর উদ্দেশ্যে তাঁর অন্তিম অসিয়ত লিখতে চাইলে ‘তিনি প্রলাপ বকছেন’,‘রোগযন্ত্রণা তাঁর ওপর প্রবল হয়েছে’এ ধরনের অবমাননাকর উক্তি করার মাধ্যমে মহানবীর সামনে তীব্র হট্টগোল,হৈ-চৈ,ঝগড়া,বাক-বিতণ্ডা ও উত্তপ্ত বাক্য-বিনিময় করা হলে তিনি অত্যন্ত ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং বিবাদকারীদেরকে তাঁর নিকট থেকে বের হয়ে যেতে বলেছিলেন। আর এভাবে মহানবীকে অন্তিম অসিয়ত লিখতে বাধা দেয়া হলো এবং মুসলিম উম্মাহ্ মহানবীর লিখিত অসিয়ত থেকে বঞ্চিত হলো। এ কারণেই হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস এ ব্যাপারে আজীবন আক্ষেপ করেছেন এবং কেঁদে বুক ভাসিয়েছেন।১৯
পবিত্র কোরআনে মহানবী (সা.)-এর সামনে উচ্চৈঃস্বরে কথা বলতে নিষেধ করা হয়েছে,অথচ পবিত্র কোরআনের এ আদেশ লঙ্ঘন করে রাসূলের জীবনের শেষ দিনগুলোতে তাঁর সামনে উত্তপ্ত তর্ক-বিতর্ক,ঝগড়া-বিবাদ এবং তাঁর প্রতি মর্যাদাহানিকর অশালীন উক্তি করা হয়েছিল। যেখানে রাসূলের সাথে এ ধরনের আচরণ করা হচ্ছে,তাঁর আদেশ-নিষেধ অমান্য করা হচ্ছে সেখানে তাঁর ওফাতের পর তাঁর আহলে বাইতের সাথে কিরূপ আচরণ করা হবে তা বলাই বাহুল্য। তাই আমরা প্রত্যক্ষ করি যে,মহানবী (সা.)-এর ওফাতের পর মহানবীর আহলে বাইত ও বনি হাশিমকে উচ্চ প্রশাসনিক পদসমূহ থেকে দূরে রাখা এবং তাঁদের প্রতি উপেক্ষা ও অবিচার প্রদর্শন করা হয়েছিল।২০ অথচ ইসলামের সাথে আজীবন শত্রুতা পোষণকারী বনি উমাইয়্যাকে প্রথম খলীফার আমল থেকেই উচ্চ প্রশাসনিক পদ ও প্রভূত রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অধিকারী করা হয়েছিল।২১
মহানবীর ওফাতের পর নতুন নতুন বিপজ্জনক পরিস্থিতি ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর অস্তিত্বের জন্য প্রত্যক্ষ হুমকিস্বরূপ ছিল। মহানবীর ওফাতের পরই ভণ্ড নবীদের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। আরব উপদ্বীপে তাদের বিপজ্জনক কার্যকলাপ শক্তিশালী হয়ে পড়ে। ঠিক তেমনি মুনাফিকচক্রের অপতৎপরতাও বৃদ্ধি পায়। ওদিকে রোমান ও পারস্য শক্তি মুসলমানদের জন্য ওত পেতে বসেছিল। এ সব নব নব পরিস্থিতি সকীফায় বাইআতের কারণে মুসলিম সমাজে যে রাজনৈতিক গোষ্ঠীসমূহের আবির্ভাব হয়েছিল সেগুলো ছাড়াও আরো বাড়তি সমস্যা ও বিপদ। তবে অনৈক্য ও বিভেদ থেকে ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম উম্মাকে রক্ষা করার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ছিল হযরত আলী (আ.) ঠিক ততটুকু সহযোগিতা খিলাফতের সাথে করেছেন।
তৃতীয় খলীফা হযরত উসমানের আমলে বনি উমাইয়্যাহ্ খলীফার দুর্বল শাসন-ব্যবস্থা ও তাঁর আপন জ্ঞাতি-গোত্রের প্রতি অত্যধিক টান থাকার সুবাদে খিলাফতের প্রশাসনিক ক্ষমতা পূর্ণ মাত্রায় কুক্ষিগত করে ফেলে। অর্থনীতিও তাদের হাতে চলে যায়। নিরঙ্কুশ প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার কারণে তারা সমগ্র মুসলিম উম্মার ওপর আধিপত্য ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়। যার ফলে তারা খিলাফত ও প্রশাসনকে স্থায়ীভাবে দখল করার স্বপ্ন দেখতে থাকে। তাদের চরম দুর্নীতির কারণে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তৃতীয় খলীফার বিরুদ্ধে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভ দেখা দেয় এবং শেষ পর্যন্ত খলীফা উসমান বিদ্রোহীদের হাতে নিহত হন। মুসলিম উম্মাহ্ হযরত আলীর হাতে বাইআত করার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করে। জনতা উত্থাল আবেগের সাথে তাঁর দিকে ছুটে আসে। কিন্তু তিনি জনতার এ পদক্ষেপ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন,“আমাকে ছেড়ে অন্য কাউকে অনুরোধ কর।” কারণ তিনি ভালোভাবেই জানতেন যে,তৃতীয় খলীফার আমলে অত্যাচারী উমাইয়্যাহ্ বংশীয় প্রাদেশিক শাসনকর্তা ও কর্মচারীদের কুশাসন,দুর্নীতি ও অত্যাচারে অতিষ্ঠ জনগণ মুক্তির আশায় বিদ্রোহ করেছে এবং উদ্ভূত এ জটিল পরিস্থিতিতে উপায় না দেখে তাঁর শরণাপন্ন হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ন্যায়পরায়ণতাভিত্তিক শাসন-ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে তারা আসলে মহানবীর ওফাতোত্তর পরিস্থিতি ও সামাজিক ব্যবস্থায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। তাই তিনি খলীফা হয়ে যখন সকল পর্যায়ে ইসলামী আদালত প্রতিষ্ঠা করতে চাইবেন তখন জনগণ তাঁর ন্যায়পরায়ণতাকে সহ্য করতে না পেরে তাঁর অবমাননা শুরু করবে। তাই তিনি জনগণের আবেগের কাছে বন্দি হতে চান নি,বরং তিনি চেয়েছিলেন যে,মুসলিম উম্মাহ্ স্বেচ্ছায় অর্থাৎ আবেগতাড়িত না হয়ে সজ্ঞানে যেন তাঁর প্রতি আনুগত্য ও বাইআত করে। তবে তাঁর হাতে বাইআত করার মুসলিম উম্মার অব্যাহত চাপের কারণে তিনি খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করার ব্যাপারে তাঁর পক্ষ থেকে জনগণের কাছে শর্ত আরোপ করেন। তিনি বলেছিলেন,
“আর তোমরা জেনে রাখ যে,যদি আমি তোমাদের প্রতি সাড়া দিই,তাহলে আমার জ্ঞান অনুসারে আমি তোমাদেরকে পরিচালিত করব এবং এ ব্যাপারে আমি কারো বক্তব্য শ্রবণ করব না এবং কোন নিন্দুকের নিন্দারও পরোয়া করব না।”২২
জনগণ আলী (আ.)-এর শর্ত মেনে নিলে তিনি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করার পর হযরত আলীর কাছে সবচেয়ে অগ্রাধিকারযোগ্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল মুসলিম উম্মার ওপরে আরোপিত বিচ্যুতিসমূহ নিরসন এবং মূল খোদায়ী জীবন পদ্ধতির দিকে উম্মার প্রত্যাবর্তন। তিনি মুসলিম উম্মার সমস্যাবলী সমাধান করার জন্য নিম্নোক্ত দু’টি প্রধান ক্ষেত্রে তাঁর প্রশাসনের সংস্কার কার্যক্রম চালু করেছিলেন। যথা :
১. অর্থনীতির ক্ষেত্রে ও
২. রাজনীতি ও প্রশাসনের ক্ষেত্রে।
(চলবে)
তথ্যসূত্র :
১. তুহাফুল উকূল,পৃ. ৮৮-৯১।
২.শেখ মুফীদ প্রণীত কিতাবুল ইরশাদ,১ম খণ্ড,পৃ. ২২-২৩।
৩.ফারহাতুল গাররা,পৃ. ২২-২৩।
৪.শেখ সাদুক প্রণীত আল আমালী,পৃ. ১৯২।
৫.জামে আত তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৮১০,পৃ. ৪০৬,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার,ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত;হাদীসটি নিম্নরূপ :
জুমায়্যি ইবনে উমাইর আত-তাইমী (র) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,আমি আমার ফুফুর সাথে আইশা (রা)-র কাছে গেলাম। তখন তিনি তাকে জিজ্ঞেস করেন,কোন লোকটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সর্বাধিক প্রিয়? তিনি বলেন,ফাতিমা (রা)। আবার জিজ্ঞেস করা হল,পুরুষদের মধ্যে কে? তিনি বলেন,তার স্বামী এবং তিনি ছিলেন অধিক পরিমাণে রোযা পালনকারী এবং অধিক পরিমাণে (রাতে) নামায পাঠকারী।
৬. নাহজুল বালাগাহ্,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯২।
৭. নাহজুল বালাগাহ্,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯২।
৮. নাহজুল বালাগাহ্,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯২।
৯. নাহজুল বালাগাহ্,আল খুতবাতুল কাসেয়াহ্,খুতবা নং ১৯২।
১০. সুনানু ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,হাদীস নং ১১৯,পৃ. ৮৫,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;জামে আত তিরমিযী,৬ষ্ঠ খণ্ড,হাদীস নং ৩৬৫০,পৃ. ৩১৪-৩১৫,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার কর্তৃক প্রকাশিত।
১১. সুনানু ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,হাদীস নং ১২০,পৃ. ৮৫,বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত।
১২. আল্লামা আল হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা,পৃ. ১৭৪,দারুল কালাম আল আরাবী,হালাব (আলেপ্পো) থেকে মুদ্রিত।
১৩. প্রাগুক্ত,পৃ. ১৭২;মুস্তাদরাকুস সাহীহাইন,৩য় খণ্ড,পৃ. ১২৬;কানযুল উম্মাল,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৪০১;উসদুল গাবাহ্,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ২২;আল খাতীব আল বাগদাদী প্রণীত তারীখে বাগদাদ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ৩৪৮।
১৪. ইবনে সাদ আবু হুরাইরা থেকে বর্ণনা করেছেন : তিনি (আবু হুরাইরা) বলেছেন,হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব বলেছেন : আলী আমাদের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ বিচারক। (দ্র. আল্লামা সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা,পৃ. ১৭২,দারুল কালাম আল আরাবী,হালাব (আলেপ্পো) থেকে মুদ্রিত।)
১৫. ইবনে আসীর প্রণীত আল কামিল,২য় খণ্ড,পৃ. ২৪;বিহারুল আনওয়ার,১৮তম খণ্ড,পৃ. ৬৪ এবং ড. মুহাম্মদ গাজ্জালী প্রণীত ফিকহুস সীরাহ্,পৃ. ১০২।
১৬. আল্লামা আল হাফেয জালালুদ্দীন সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা,পৃ. ১৭১,দারুল কালাম আল আরাবী,হালাব (আলেপ্পো) থেকে মুদ্রিত;সুনানু ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ৮৪,বা.ই.ফা. কর্তৃক প্রকাশিত।
১৭. মুহাম্মদ হুসাইন হায়কল প্রণীত মহানবীর (সা.) জীবন চরিত,পৃ. ৬২৩-৬২৪,বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত;সীরাতে ইবনে হিশাম,পৃ. ৩৪০,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা কর্তক প্রকাশিত।
১৮. মুহাম্মদ হায়কল প্রণীত হযরত আবু বকর (রা),পৃ. ৬২,আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত।
১৯. মেশকাত শরীফ,১১তম খণ্ড,হাদীস নং ৫৭১৪,পৃ. ৮৪-৮৫,ইমদাদীয়া পুস্তকালয়,বাংলাবাজার,ঢাকা কর্তৃক প্রকাশিত;বুখারী,৫ম খণ্ড,হাদীস নং ৫২৫৮,পৃ. ২৮৫-২৮৬,আধুনিক প্রকাশনী কর্তৃক প্রকাশিত।
২০. মুহাম্মদ আহসান উল্লাহ প্রণীত খিলাফতের ইতিহাস,পৃ. ৭৯,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত।
২১. যখন খলীফা আবু বকর শামে সেনাবাহিনী প্রেরণ করলেন তখন মুয়াবিয়া তার নিজ ভ্রাতা ইয়াযীদ ইবনে আবু সুফিয়ানের সাথে শাম গমন করেন। অতঃপর ইয়াযীদের মৃত্যু হলে খলীফা আবু বকর মুয়াবিয়াকে শামের শাসক নিযুক্ত করেন। এরপর দ্বিতীয় খলীফা উমর এবং তারপর তৃতীয় খলীফা উসমান তাঁকে শামের গভর্ণরের পদে বহাল রাখেন। সমগ্র শাম তাঁর শাসনাধীনে দেয়া হয়। মুয়াবিয়া ২০ বছর আমীর এবং ২০ বছর খলীফা ছিলেন। (দ্র. আল্লামা আল হাফেয জালালুদ্দীন আস সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা,পৃ. ১৯৪,দারুল কালাম আল আরাবী আলেপ্পো সিরিয়া কর্তৃক মুদ্রিত)
২২. নাহজুল বালাগাহ্,পৃ. ১৩৬।
(জ্যোতি,২য় বর্ষ,৩য় সংখ্যা)
source : alhassanain