সূরা হুদ; আয়াত ৮৭-৮৯
সূরা হুদের ৮৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
قَالُوا يَا شُعَيْبُ أَصَلَاتُكَ تَأْمُرُكَ أَنْ نَتْرُكَ مَا يَعْبُدُ آَبَاؤُنَا أَوْ أَنْ نَفْعَلَ فِي أَمْوَالِنَا مَا نَشَاءُ إِنَّكَ لَأَنْتَ الْحَلِيمُ الرَّشِيدُ
"(হযরত শোয়াইব (আ.)এর জবাবে মাদিয়ানবাসীরা বললো) তোমার নামায কি তোমাকে নির্দেশ দেয় যে, আমাদের পিতৃপুরুষেরা যার উপাসনা করতো আমাদের তা বর্জন করতে হবে এবং আমরা ধনসম্পদ সম্পর্কে যা খুশী তা করতে পারবো না? নিশ্চয়ই তুমি সহিষ্ণু ও সদাচারী।" (১১:৮৭)
হযরত শোয়াইব (আ.) মাদিয়ানবাসীকে হালাল হারাম মেনে চলার এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অন্যকে না ঠকানোর ব্যাপারে সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি জনগণকে বলেছিলেন, হারাম উপায়ে অর্থাৎ অসৎভাবে উপার্জিত অঢেল সম্পদের চেয়ে বৈধ পন্থায় অর্জিত অল্প সম্পদই শ্রেয়। কাজেই লেনদেনের সময় অন্যকে যে কোনো উপায়ে ঠকানো বা ওজনে কম দেয়া অত্যন্ত গর্হিত কাজ। কিন্তু, দুঃখজনক ব্যাপার হলো, মাদিয়ানবাসী আল্লাহর নবীর উপদেশ এবং সাবধানবাণীতে কর্ণপাত করলো না বরং উল্টো তারা বলতে লাগলো, হে শোয়াইব! আপনাকে আমরা একজন বুদ্ধিমান ও বিচক্ষণ ব্যক্তি হিসেবেই জানি, তাই আপনার কাছ থেকে এ ধরনের অদ্ভুত কথা আমাদের প্রত্যাশিত নয়। আপনি কি চান আমরা আমাদের সম্পদ যথেচ্ছ ব্যবহার না করি এবং আমরা পূর্ব পুরুষদের ধ্যান-ধারণা পরিত্যাগ করি?
এ সূরার ৮৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
قَالَ يَا قَوْمِ أَرَأَيْتُمْ إِنْ كُنْتُ عَلَى بَيِّنَةٍ مِنْ رَبِّي وَرَزَقَنِي مِنْهُ رِزْقًا حَسَنًا وَمَا أُرِيدُ أَنْ أُخَالِفَكُمْ إِلَى مَا أَنْهَاكُمْ عَنْهُ إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ
"হযরত শোয়াইব বললেন, হে আমার সম্প্রদায়! আমি যদি আমার প্রতিপালক প্রেরিত স্পষ্ট নিদর্শনে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকি এবং তিনি যদি তাঁর নিকট হতে আমাকে উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করে থাকেন তবে কি করে আমি আমার কর্তব্য হতে বিরত থাকবো? আমি তোমাদেরকে যা নিষেধ করি আমি নিজে তা করতে চাই না। আমি আমার সাধ্যমত সংস্কার করতে চাই, আমার কার্যসাধন তো আল্লাহরই সাহায্যে। আমি তারই ওপর নির্ভর করি এবং আমি তারই অভিমুখী।" (১১:৮৮)
মাদিয়ানবাসীর আচরণের জবাবে হযরত শোয়াইব (আ.) বললেন, আমি তোমাদেরকে সম্পদের যথেচ্ছ ব্যবহারের ব্যাপারে বারণ করেছি তোমাদেরকে সংশোধন করতে এবং তোমাদের অরক্ষিত সমাজকে সংস্কার করার উদ্দেশ্যে, হিংসা বা সংকীর্ণতার বশবর্তী হয়ে নয়। সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ আমাকে প্রেরণ করেছেন সুস্পষ্ট যুক্তির মাধ্যমে তোমাদেরকে পথ প্রদর্শনের জন্য, আমি আমার দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে একমাত্র তারই ওপর নির্ভর করি এবং তারই প্রদর্শিত পথে পদক্ষেপ গ্রহণ করি। তোমরা গ্রহণ কর আর নাই বা কর আমি কখনো আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবো না।
পয়গম্বরদের একমাত্র উদ্দেশ্য হচ্ছে সমাজ ও মানুষকে পরিশুদ্ধ করা, তারা আল্লাহর নির্দেশেই কাজ করেন, তার সন্তুষ্টিই পয়গম্বরদের একমাত্র কামনা। মানুষের উচিত পয়গম্বরদের প্রদর্শিত পথ অবলম্বন করা কারণ এ পথেই রয়েছে ইহ ও পরকালের কল্যাণ ও মুক্তি।
সূরা হুদের ৮৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,
وَيَا قَوْمِ لَا يَجْرِمَنَّكُمْ شِقَاقِي أَنْ يُصِيبَكُمْ مِثْلُ مَا أَصَابَ قَوْمَ نُوحٍ أَوْ قَوْمَ هُودٍ أَوْ قَوْمَ صَالِحٍ وَمَا قَوْمُ لُوطٍ مِنْكُمْ بِبَعِيدٍ
"হে আমার জাতি! আমার সঙ্গে জিদ করে তোমরা নূহ, হুদ বা সালেহ (আ.)এর সম্প্রদায়ের মত নিজেদের ওপর ঐশী শাস্তি ডেকে আনবে না, আর লুতের জাতি তো তোমাদের থেকে খুব দূরে নয়।" (১১:৮৯)
হযরত শোয়াইব (আ.) তার সম্প্রদায়ের মানুষকে সত্য ও একত্ববাদের প্রতি আহ্বানের পর তাদেরকে সতর্ক করে দেন এবং অতিত ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয়ার কথা বলেন। তিনি লুত (আ.)এর জাতির পরিণতির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, এ ঘটনা তো আর অনেক পুরানো কোন ঘটনা নয়। নবী-রাসূলদের কথা অমান্য করার কী যে পরিণতি তা হযরত হুদ, হযরত সালেহ (আ.)এর জাতির ভাগ্যে যা ঘটেছে তা থেকেই উপলব্ধি করা যায়।
মানব ইতিহাসে যুগে যুগে সংঘটিত সকল ঘটনাই মানুষের জন্য শিক্ষণীয়। মানুষের উচিত অতীত ইতিহাস থেকে শিক্ষা গ্রহণ করা, সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহর নির্দেশ অমান্যকারী ব্যক্তি বা জাতি এ জগতেই কোন না কোন উপায়ে প্রায়শ্চিত্য ভোগ করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে অধঃপতিত গোটা জাতিই নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে।