বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

পবিত্র কুরআনের সুরাগুলোর অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য

এই কুরআন মানুষকে এমন পথ বা ধর্মের দিকে প্রদর্শন করে, যা সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বা মজবুত।’ (ইকো) (সুরা বনি ইসরাইল-৯) কুরআন মানুষকে অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকার থেকে নিয়ে আসে আলোর অশেষ বন্যায় এবং এনে দেয় পরিপূর্ণতা। এ মহাগ্রন্থ মানুষকে দেয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সৌভাগ্য ও শান্তির দিশা। সুরা ফুসিলাতের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
পবিত্র কুরআনের সুরাগুলোর অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বৈশিষ্ট্য

এই কুরআন মানুষকে  এমন পথ বা ধর্মের দিকে প্রদর্শন করে, যা সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বা  মজবুত।’ (ইকো) (সুরা বনি ইসরাইল-৯)
 
কুরআন মানুষকে অজ্ঞতার ঘোর অন্ধকার থেকে নিয়ে আসে আলোর অশেষ বন্যায় এবং এনে দেয় পরিপূর্ণতা। এ মহাগ্রন্থ মানুষকে দেয় জীবনের সব ক্ষেত্রে সৌভাগ্য ও শান্তির দিশা। সুরা ফুসিলাতের ৪১ ও ৪২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
 
 
 
এটি অবশ্যই এক সম্মানিত বা অপরাজেয় গ্রন্থ। এতে মিথ্যার  বিন্দুমাত্র প্রভাব নেই, সামনের দিক থেকেও নেই এবং পেছন দিক থেকেও নেই। কারণ, এটা প্রজ্ঞাময়, প্রশংসিত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। কুরআনের যুক্তি বলিষ্ঠ ও অকাট্য। এর অর্থ গভীর। এর শিক্ষাগুলো সমৃদ্ধ ও চিরন্তন সত্য হিসেবে চিরস্থায়ী। এতে রয়েছে মহান ও প্রজ্ঞাময় আল্লাহর নানা বিধান যা পরিবেষ্টন করে আছে বিশ্ব জগত ও মানুষকে। পবিত্র কুরআন তার অনুসারীদের জীবনে যত গভীর প্রভাব ফেলেছে এবং মানুষের অন্তরকে বিনম্র করতে যতটা সফল হয়েছে অন্য কিছুই ততটা প্রভাবিত করতে পারেনি তাদেরকে। কুরআন খুব অল্প সময়েই অজ্ঞতার আঁধার দূর করে প্রজ্বলিত করেছে জ্ঞানের ও একত্ববাদের প্রদীপ্ত মশাল।
 
 
 
পবিত্র কুরআনের প্রত্যেক সুরার রয়েছে নিজস্ব পরিচিতি ও বৈশিষ্ট্য। সাইয়্যেদ কুতুব লিখেছেন: সব মানুষের মধ্যে হাত-পা ও নানা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের মিল থাকার সত্ত্বেও তাদের যেমন রয়েছে পৃথক ব্যক্তিত্ব, পবিত্র কুরআনের ক্ষেত্রেও তা সত্য।
 
 
 
নাজিল বা অবতীর্ণ হওয়ার সময়ের দিক থেকে কুরআনের সুরাগুলো দুই ভাগে বিভক্ত: মাক্কি ও মাদানি। ইসলামের ইতিহাস,  কুরআনের আয়াতের অর্থ ও ইসলামী বিধি-বিধান বোঝা, চেনা বা জানার জন্য এই দুই শ্রেণীর সুরার পার্থক্য বোঝা খুবই জরুরি।
 
 
 
যেসব সুরা হিজরতের আগে নাজিল হয়েছে সেইসব সুরাকে বলা হয় মাক্কি সুরা। আর হিজরতের পরে নাজিল হওয়া সুরাগুলোকে বলা হয় মাদানি সুরা। অবশ্য অনেক মুফাসসির সময় নয়, বরং নাজিল হওয়া স্থানের ভিত্তিতে সুরাগুলোকে মাক্কি ও মাদানি সুরায় বিভক্ত করেন।
 
 
 
বিখ্যাত গবেষক ডক্টর হাশিমজাদেহ হারিসির মতে মাক্কি ও মাদানি সুরার পার্থক্য বোঝার জন্য সুরার বিষয়বস্তু, অর্থ ও লক্ষ্য সম্পর্কে জানতে হবে। তার মতে, এমনকি সম্বোধনের ধরন দেখেও এই পার্থক্য বোঝা সম্ভব।  ‘কুরআন পরিচিতি’ শীর্ষক বইয়ে তিনি লিখেছেন: যেসব সুরায় ‘হে মানুষ বা হে আদমের সন্তানরা’ শীর্ষক সম্বোধন রয়েছে সেইসব সুরা সাধারণত মাক্কি হয়ে থাকে। কারণ, সে সময়ও মক্কায় হাতে গোণা কয়েকজন ছাড়া আর সবাই ছিল কাফির বা মুশরিক।
 
 
 
অন্যদিকে যেসব সুরায় ‘হে ঈমানদার বা বিশ্বাসীরা’ শীর্ষক সম্বোধন রয়েছে সেইসব সুরা সাধারণত মাদানি হয়ে থাকে। কারণ, মদিনার অধিবাসীরা ছিলেন বিশ্বাসী বা মুমিন। তবে বিখ্যাত মুফাসসির আল্লামা তাবাতাবায়ির মতে, কেবল বিষয়বস্তু নিয়ে ভাবনা এবং হিজরতের আগের ও পরের পরিবেশ পরিস্থিতির সঙ্গে আয়াতের মিল দেখেই কোনো সুরা মাক্কি না মাদানি তা নির্ধারণ করা সম্ভব।
 
 
 
মক্কায় বিশ্বনবী (সা.)’র অবস্থানের সময় তথা ১৩ বছরে কুরআনের ৮৬ টি সুরা নাজিল হয়েছিল। মাক্কি সুরাগুলো সাধারণত ছোট এবং সেসবের আয়াতের পরিসরও ক্ষুদ্র। এইসব সুরায় মহান আল্লাহ মুশরিক বা অংশীবাদীদের নানা ভুল চিন্তাধারা ও সন্দেহের জবাব দিয়েছেন। তাদের শির্কযুক্ত নানা চিন্তাধারা এবং আল্লাহ ও পরকাল সম্পর্কিত নানা উদ্ভট কল্পনা নাকচ করা হয়েছে এইসব সুরায়। মাক্কি সুরায় রয়েছে কাব্যময় গদ্য। একত্ববাদ বা তাওহিদ, নবুওত, পরকাল এবং নৈতিক নানা গুণ ও অস্তিত্ব জগতের পরিচিতিমূলক নানা বিষয় আলোচিত হয়েছে এইসব সুরায়।  
 
 
 
পবিত্র কুরআনের বিপুল সংখ্যক আয়াত নাজিল হয়েছে মদীনায় বিশ্বনবী (সা.)’র হিজরতের পর। মদীনার সমাজ ও জন-জীবনের পরিস্থিতি ছিল মক্কা থেকে ভিন্ন। মদীনায় ইসলামী বিধি-বিধান অনুযায়ী গঠিত হয়েছিল একটি রাষ্ট্র। মুসলমানরা ছিল এক নতুন বা উদীয়মান শক্তি। ধীরে ধীরে তাদের দুর্বলতাগুলো রূপান্তরিত হচ্ছিল শক্তিতে। মদীনায় ছিল আহলে কিতাব তথা ইহুদি ও মুনাফিক গোষ্ঠী। তাদের চিন্তাধারা, রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া ও আচার-আচরণ ছিল মক্কার মুশরিকদের চেয়ে ভিন্ন ধরনের। ফলে মদীনা হয়ে পড়ে নানা ঘটনা ও পরিবর্তনের প্রাণকেন্দ্র।
 
 
 
মদীনার শিশু ইসলামী রাষ্ট্র ও নানা ধর্মের অধিবাসীদের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান এবং গোটা আরব উপদ্বীপে ইসলামের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান শত্রুতার ফলে মাদানি সুরাগুলোর বিষয়বস্তু হত মাক্কি সুরা থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন। এ জন্যই কোনো কোনো মাদানি সুরার আয়াতে কাফির ও মুশরিকদের বিরুদ্ধে মহানবী (সা.)’র চিন্তাগত বা আদর্শিক লড়াই এবং মুসলিম মুজাহিদদের সঙ্গে ইসলামের চরম শত্রুদের যুদ্ধ ও সংঘাত সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ইঙ্গিত স্থান পেয়েছে। এ ছাড়াও স্থান পেয়েছে মুনাফিকদের নানা চক্রান্ত এবং কখনও কখনও তাদের সঙ্গে মহানবী(সা.)’র সংঘাত সম্পর্কিত বিষয়। ফলে মাদানি সুরাগুলো হয়েছে যুদ্ধ আর সন্ধির বিধানসহ সামাজিক ও রাজনৈতিক নানা বিধি-বিধানের উৎস। মাদানি সুরাগুলো সাধারণত দীর্ঘ এবং এর আয়াতগুলোও দীর্ঘ বাক্যের হয়ে থাকে।
 
 
 
ছোট ও মাঝারি পরিসরের সুরাগুলো সাধারণত একবারেই অবতীর্ণ হয়েছে এবং এইসব সুরার মধ্যে রয়েছে একই ধরনের বিষয়বস্তু ও বর্ণনা। কিন্তু মাদানি সুরাগুলোর নানা অংশ কয়েক পর্যায়ে নানা ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে  নাজিল হয়েছে। কখনও কখনও বড় বড় সুরার মধ্যেও  কয়েকটি মাক্কি আয়াত সংযুক্ত হয়েছে। আবার এর উল্টোটাও ঘটেছে।  এ ধরনের সুরাকে বলা হয় মিশ্রিত সুরা।
 
 
 
পবিত্র কুরআনের সুরাগুলোর শিক্ষা ও বক্তব্যের বিরুদ্ধে ইসলামের সেই প্রাথমিক যুগ থেকে আজ পর্যন্ত নব্য-জাহেলিয়াতের শত্রুতা সত্ত্বেও এ মহাগ্রন্থের অনন্য সুন্দর আয়াতগুলো যুগে যুগে মানুষের জন্য সবচেয়ে বড় আকর্ষণের আধার হয়ে আছে।  বর্তমান যুগের কুরআন ঠিক সেই কুরআনেরই অবিকৃত রূপ যা নাজিল হয়েছিল বিশ্বনবী (সা.)’র কাছে। বিশ্বনবী (সা.)’র পবিত্র আহলে বাইতের (আ.) সদস্যরাও অনন্য-সুন্দর ও চির-আকর্ষণীয় এ মহাগ্রন্থের শিক্ষাগুলোকে সর্বশ্রেষ্ঠ নীতিমালা বা আইন এবং সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্যকারী বলে উল্লেখ করেছেন।#


source : irib
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি

 
user comment