বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

সূরা হুদ;(২২তম পর্ব)

সূরা হুদ;(২২তম পর্ব)



সূরা হুদ; আয়াত ৯০-৯৫

সূরা হুদের ৯০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَاسْتَغْفِرُوا رَبَّكُمْ ثُمَّ تُوبُوا إِلَيْهِ إِنَّ رَبِّي رَحِيمٌ وَدُودٌ

"তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন কর, নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়।" (১১:৯০)

হযরত শোয়াইব (আ.) ও মাদিয়ানবাসীদের কার্যকলাপ সম্পর্কে আগের কয়েকটি আয়াতে বলা হয়েছে-যা আমরা গত দুই পর্বে আলোচনা করেছি। মাদিয়ানবাসী হযরত শোয়াইব (আ.)-এর আহ্বানে সাড়া না দিয়ে বরং আল্লাহর নবীর বিরুদ্ধাচরণে লিপ্ত হয়ে ছিল। কিন্তু হযরত শোয়াইব (আ.)এর মনে নবী হিসেবে মানুষের প্রতি মমত্ব ও ভালোবাসা ছিলো, ফলে তিনি মাদিয়ানবাসীর অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণে অসহিষ্ণু হলেন না। তিনি তাদের বিশ্বাস ও কার্যকলাপের পরিণতির ব্যাখ্যা দিলেন এবং তাদেরকে সতর্ক করলেন। ৯০ নম্বর আয়াতেও আমরা দেখতে পাচ্ছি হযরত শোয়াইব (আ.) তাদেরকে অনুশোচিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করতে এবং সৃষ্টিকর্তার আদেশ মেনে নেয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি তাদেরকে উৎসাহ দিয়ে এটাও বলেছেন, যে আল্লাহ অত্যন্ত দয়ালু এবং তিনি মানুষকে খুব ভালোবাসেন।

হ্যাঁ, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন অনুতপ্ত ক্ষমা প্রার্থীকে শুধু ক্ষমাই করেন না তিনি তওবাকারী অনুশোচিত বান্দাকে অত্যন্ত ভালোবাসেন।

এ সূরার ৯১ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالُوا يَا شُعَيْبُ مَا نَفْقَهُ كَثِيرًا مِمَّا تَقُولُ وَإِنَّا لَنَرَاكَ فِينَا ضَعِيفًا وَلَوْلَا رَهْطُكَ لَرَجَمْنَاكَ وَمَا أَنْتَ عَلَيْنَا بِعَزِيزٍ

"তারা বললো, হে শোয়াইব! আপনি যা বলেছেন, তার অনেক কথাই আমরা বুঝি না এবং আমরা তো আপনাকে আমাদের মধ্যে দুর্বল ব্যক্তিরূপে মনে করি। আপনার স্বজনবর্গ না থাকলে আমরা আপনাকে প্রস্তরাঘাতে হত্যা করতাম। আমাদের দৃষ্টিতে আপনি কোনো মর্যাদাবাদ ব্যক্তি নন!" (১১:৯১)

মাদিয়ানবাসীদের প্রতি হযরত শোয়াইব (আ.) এর বিনত উপদেশ কোনো কাজে আসলো না। তারা আল্লাহর নবীর বিনয়কে দুর্বলতা ভেবে বসলো, তারা হযরত শোয়াইব (আ.)এর আহ্বান প্রত্যাখ্যান করে উদ্ধত হয়ে উঠলো এবং তাকে হত্যার হুমকি দিল। পয়গম্বরের কথা সুস্পষ্ট ও যুক্তিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও তারা তাচ্ছিল্যের সাথে বলতে লাগলো, হযরত শোয়াইব কি বলতে চায়-তা আমাদের বোধগম্য নয়। তারা হযরত শোয়াইব (আ.)কে অত্যন্ত দুর্বল মনে করলো এবং আল্লাহর এই নবীর সাথে তাদের আচরণ হয়ে উঠলো অত্যন্ত অপমানজনক। ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে নবী রাসূলদেরকে সবচেয়ে বেশি অপমান ও কটুক্তি সহ্য করতে হয়েছে। সত্য বিমুখ, বিরুদ্ধবাদীদের কোনো যুক্তি ছিল না। হত্যা, নির্যাতন ও কটুক্তি ছিল তাদের হাতিয়ার।

এ সূরার ৯২ ও ৯৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

قَالَ يَا قَوْمِ أَرَهْطِي أَعَزُّ عَلَيْكُمْ مِنَ اللَّهِ وَاتَّخَذْتُمُوهُ وَرَاءَكُمْ ظِهْرِيًّا إِنَّ رَبِّي بِمَا تَعْمَلُونَ مُحِيطٌ (92) وَيَا قَوْمِ اعْمَلُوا عَلَى مَكَانَتِكُمْ إِنِّي عَامِلٌ سَوْفَ تَعْلَمُونَ مَنْ يَأْتِيهِ عَذَابٌ يُخْزِيهِ وَمَنْ هُوَ كَاذِبٌ وَارْتَقِبُوا إِنِّي مَعَكُمْ رَقِيبٌ

"শোয়াইব (আ.) বললেন, হে আমার জাতি! তোমাদের নিকট আমার স্বজনবর্গ আল্লাহর চেয়ে বেশি প্রিয়? আর এজন্যই কি তাকে বিস্মৃত হয়ে পেছনে ফেলে রেখেছ, নিশ্চয় তোমাদের কার্যকলাপ আমার প্রতিপালকের আয়ত্বে রয়েছে।” (১১:৯২)

“হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যেমন করছো করে যাও, আমিও আমার কাজ করছি। তোমরা শীঘ্রই জানতে পারবে কার ওপর আসবে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি এবং কে মিথ্যাবাদী। সুতরাং তোমরা প্রতীক্ষা কর আমিও তোমাদের সাথে প্রতীক্ষা করছি।" (১১:৯৩)

কাফির ও বিরুদ্ধবাদীদের কঠোর মনোভাবের কারণে হযরত শোয়াইব (আ.) যখন নিশ্চিত হলেন যে এই জাতি কখনো সত্যকে গ্রহণ করবে না তখন তিনি অবাধ্য জাতিকে উদ্দেশ করে বললেন, তোমাদের যা খুশী তাই করতে থাক, আমিও আমার পথে চলছি। অল্প কিছু দিনের মধ্যেই প্রমাণিত হবে কারা সত্য পথে রয়েছে। তবে এটা মনে রাখবে আমি আমার স্বজন-পরিজনের ওপর নির্ভর করি না যে তাদের খাতিরে তোমরা আমার অনিষ্ট করবে না। আমি একমাত্র বিশ্ব স্রষ্টা আল্লাহর ওপর নির্ভর করি, যিনি তোমাদের অবস্থা সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।

৯৪ ও ৯৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে,

وَلَمَّا جَاءَ أَمْرُنَا نَجَّيْنَا شُعَيْبًا وَالَّذِينَ آَمَنُوا مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِنَّا وَأَخَذَتِ الَّذِينَ ظَلَمُوا الصَّيْحَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دِيَارِهِمْ جَاثِمِينَ (94) كَأَنْ لَمْ يَغْنَوْا فِيهَا أَلَا بُعْدًا لِمَدْيَنَ كَمَا بَعِدَتْ ثَمُودُ

"যখন আমার নির্দেশ এল তখন আমি শোয়াইব ও তার সঙ্গী ঈমানদারগণকে নিজ রহমতে রক্ষা করি, অতঃপর যারা সীমালঙ্ঘন করেছিল মহানাদ তাদেরকে আঘাত করলো, ফলে তারা নিজ নিজ গৃহে নতজানু অবস্থায় শেষ হয়ে গেল।” (১১:৯৪)

“যেন তারা সেখানে কখনোই বসবাস করেনি। জেনে রাখ, ধ্বংসই ছিল মাদিয়ানবাসীদের পরিণাম-যেভাবে ধ্বংস হয়েছিল সামুদ সম্প্রদায়।" (১১:৯৫)

মাদিয়ানবাসীও শেষ পর্যন্ত অন্যান্য উদ্ধত ও অবাধ্য জাতির মত একই পরিণতির শিকার হয়েছিল। তারা আল্লাহর রোষানলে ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল, যারা আল্লাহর অফুরন্ত নেয়ামত বা কল্যাণের কৃতজ্ঞতা স্বীকারের পরিবর্তে তা অস্বীকার করে। তাদের মৃত্যুও হয় মর্মন্তুদভাবে। তাদের মৃত্যু সংঘটনে সৃষ্টিকর্তার পক্ষ থেকে কোনো দয়া বা অনুগ্রহের স্পর্শ থাকে না।

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus

 
user comment