لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّـهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّـهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّـهَ كَثِيرًا
তোমাদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ । (সূরা আহযাব:২১)
আমরা ঐক্যবদ্ধ মুসলমানরা, ভেতর থেকে ও বিরোধপূর্ণ বিষয়ের পথে নিজের সাথে বিবাদে লিপ্ত হয়েছি এবং ইসলামের শত্রুরা বাইরে থেকে ও আমাদের অজানা পথে আমাদের ঐক্যকে বিভক্তিতে পরিণত করেছে; আর এভাবে আমাদের মর্যাদাকে দুর্বল করে দিয়েছে । একইভাবে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রেও আমাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে । ফলে আমাদের মাঝে ফাটল ধরেছে । অথচ মহান আল্লাহ বলেন:
আর অনুগত্য কর আল্লাহ তা’আলার এবং তাঁর রাসূলের। আর তোমরা পরস্পরে বিবাদে লিপ্ত হইও না। যদি তা কর, তবে তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের প্রভাব প্রতিপত্তি বিলুপ্ত হবে । (সূরা আনফাল:৪৬)
হ্যাঁ,
তোমাদের উপর যেসব বিপদ-আপদ পতিত হয়, তা তোমাদের কর্মেরই ফল এবং তিনি তোমাদের অনেক গোনাহ ক্ষমা করে দেন । (সূরা শূরা:৩০)
সুতরাং এখন থেকে প্রতিদিন আমরা ‘কুরআন ও সুন্নাতে’-র দিকে প্রত্যাবর্তন করব এবং ‘কোরআন ও সুন্নাতের’ ভিত্তিতে আমাদের ঐক্যকে প্রতিষ্ঠিত করব । কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন :
কোন বিষয়ে যদি তোমরা বিবাদে লিপ্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের কাছে উপস্থাপন কর । (সূরা নিসা:৫৯)
আমরাও এ ধারাবাহিক আলোচনায় ‘কুরআন ও সুন্নাহর’ দিকে প্রত্যাবর্তন করব এবং বিরোধপূর্ণ বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে আমাদের পথের স্পষ্টকারী উপকরণকে ‘কোরআন ও সুন্নাহ’ থেকে গ্রহণ করব (যাতে আল্লাহর অনুমতিতে) তা আমাদের মাঝে পুনরায় ঐক্য ও বন্ধনের কারণ হয় ।
প্রত্যাশা এটুকুই যে, মুসলিম মনীষী ও চিন্তাবিদগণ এ ক্ষেত্রে আমাদের সাথে থাকবেন এবং নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ করবেন ।
মহানবী (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য কাদতে উৎসাহিত করেছেন
ক-মহানবী (সা.) মৃত ব্যক্তির জন্য কাদতে উৎসাহিত করেছিলেন এমন হাদীসসমূহ :
সাদ ইবনে উবাদার অসুস্থতায় মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
সহীহ মুসলিমে আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন: সাদ ইবনে উবাদা অসুস্থ হয়েছিলেন । আল্লাহর রাসূল (সা.) আব্দুর রহমান ইবনে আওফ, সাদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদকে নিয়ে তাকে দেখতে গেলেন । সাদ ইবনে উবাদার শিয়রে পৌছুলে তিনি বেহুশ হয়ে পেড়লেন । মহানবী (সা.) জিজ্ঞেস করলেন: ‘সে কি মৃত্যুবরণ করেছে?’ কেউ বললেন না, হে রাসূল (সা.) । তখন মহানবী (সা.) কাদলেন । রাসূল (সা.) কে কাদতে দেখে লোকজনও কাদতে লাগলো । তিনি (সা.) বললেন: ওহে তোমরা কি শুনতে পাওনা? মহান আল্লাহ মৃতব্যক্তির কারণে ক্রন্দনের জন্য শাস্তি দেন না বা ভারাক্রান্ত হৃদয়ের ওপরও শাস্তি দেন না । কিন্তু এর (নিজ জিহ্বার দিকে ইঙ্গিত করে) জন্য শাস্তি কিংবা পুরস্কার দেন।১
পুত্র ইব্রাহীমের জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে ইবনে আবি দাউদ ও সুনানে ইবনে মাজাহ-তে আনাস ইবনে মালেক থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেনঃ২ আল্লাহর রাসূলের (সা.) সাথে প্রবেশ করলাম-ইব্রাহীম মুমূর্ষ অবস্থায় । মহানবীর চোখ অশ্রুসজল হলো । আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল, আপনিও ? তিনি বললেন, আউফের পুত্র ! এটি হলো রহমত । এরপর আরো বলেন, (তুমি কি ঠিক দেখতে পাচ্ছ)? আমাদের চোখগুলো কাদছে, হৃদয় ভারাক্রান্ত, কিন্তু যা কিছু মহান আল্লাহকে তুষ্ট করে তা ছাড়া অন্য কিছু কখনোই মুখে আনবো না । হে ইব্রাহীম! সত্যিই আমরা তোমার বিরহে ব্যথাতুর ।৩
এ হাদীসটি সুনানে ইবনে মাজাতে এভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ আনাস ইবনে মালেক বলেনঃ যখন রাসূলের (সা.) পুত্র ইব্রাহীম মৃত্যুবরণ করেন তখন তিনি (সা.) উপস্থিত লোকদের বলেন, তাকে কাফনে ঢেকে দিওনা, (শেষ বারের মত) তাকে দেখবো ।’ এরপর তার শিয়রে আসলেন ও তার ওপর ঝুকে পড়ে তিনি (সা.) কাদলেন ।৪
সুনানে তিরমিযিতে বর্ণিত হয়েছেঃ জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ বলেনঃ মহানবী (সা.) আব্দুর রহমান ইবনে আউফের হাত ধরে তার সাথে নিজ ছেলে ইব্রাহীমের মাথার কাছে আসলেন এবং মুমূর্ষ শিশুকে কোলে তুলে নিলেন ও কাদতে শুরু কললেন । আব্দুর রহমান ইবনে আউফ বললেনঃ আপনি কাদছেন ! আপনিও কাদতে নিষেধ করেননি? তিনি বললেনঃ ‘না আমি দু‘দল পাপাচারী ও নির্বোধের আর্তনাদ ও আর্তচিৎকারে বাধা দিয়েছিলাম, যারা মুসিবতের সময় মুখ আচড়ায় এবং জামার কলার ছিড়ে ফেলে ও শয়তানী চিৎকারে লিপ্ত হয়’।৫
স্বীয় নাতির জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, সুনানে ইবনে আবি দাউদ ও সুনানে নাসাঈ-তে বর্ণিত হয়েছেঃ মহানবীর (সা.) কন্যা তার নিকট সংবাদ পাঠালেন যে, আমাদের কাছে আসুন । আমার একটি সন্তান মুমূর্ষ অবস্থায় । মহানবী (সা.) উঠে দাড়ালেন এবং সা‘দ ইবনে উবাদাহসহ কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে তাদের কাছে আসলেন । মুমূর্ষ শিশুকে হযরতের (সা.) কাছে নিয়ে আসা হল । মহানবীর দু’চোখ বেয়ে অশ্রু ঝরতে লাগলো । সা’দ বললোঃ হে আল্লার রাসূল! আমরা একি দেখছি ? মহানবী (সা.) বললেন “এটি হল সেই রহমত ও মমতা যা মহান আল্লাহ তার বান্দার অন্তরে স্থাপন করেছেন । আর মহান আল্লাহ একমাত্র নিজের দয়ালু ও মেহেরবান বান্দাদেরকেই রহমত ও ক্ষমা করে থাকেন ।৬”
স্বীয় চাচা হযরত হামযার জন্য হযরত মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
তাবাকাতে ইবনে সা’দ, মাগাযীয়ে ওয়াকেদী, মুসনাদে আহমদসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য কিতাবে বর্ণিত হয়েছেঃ
আল্লাহর রাসূল (সা.) ওহুদ যুদ্ধের পর যখন আনসারদের ঘর থেকে তাদের শহীদদের জন্য কান্নার শব্দ শুনতে পেলেন তখন রাসূলের (সা.) চোখও অশ্রু সজল হল । রাসূল (সা.) কেদে বললেনঃ হায় আফসোস ! হামযার জন্য কোন ক্রন্দনকারী নেই ! সা’দ ইবনে মায়ায একথা শুনতে পেলেন এবং বনি আব্দুল আশহালের নারীদের নিকটে ছুটে গেলেন । তনি মহানবীকে (সা.) সমবেদনা জানাতে ও তাদেরকে হামযার জন্য কাদতে আহবান জানালেন । মহানবী (সা.) তার জন্য দোয়া করলেন এবং তাদেরকে ফিরিয়ে দিলেন । এ ঘটনার পর আনসারদের নারীরা প্রথমে হামযার জন্য কাদতো, অতঃপর নিজেদের মৃতদের জন্য কাদতো ।৭
মুতার যুদ্ধে শহীদদের জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
মুতার যুদ্ধে শহীদদের জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দনের ঘটনা সহীহ বুখারীতে বর্ণিত হয়েছে
মহানবী (সা.) যায়েদ, জাফর ও ইবনে রাওয়াহা শহীদ হওয়ার পূর্বেই (কিভাবে শহীদ হবেন) তাদরে শাহাদতের সে খবর মানুষকে দিয়েছিলেন । তিনি (সা.) বলেন, “যায়েদ পতাকা তুলে নিলেন, আঘাত পেলেন ও শহীদ হলেন । অতঃপর ইবনে জা’ফর পতাকা তুলে নিলেন । তিনিও শহীদ হলেন! অতঃপর ইবনে রাওয়াহা পতাকা তুলে নিলেন ও শহীদ হলেন । মহানবী (সা.) এ কথাগুলো যখন বলছিলেন তখন তার চোখ খেকে অশ্রুধারা ঝরছিলো ।৮
জাফর ইবনে আবি তালিবের জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
ইসতিয়াব, উসদুল গাবা, ইসাবা, তারিখে ইবনে আসির এবং অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে,(সংক্ষেপে)ঃ
যখন জাফর এবং তার সাথীরা শহীদ হলেন মহানবী (সা.) তার গৃহে গেলেন ও তার সন্তানদের ডাকলেন । তিনি (সা.) (অশ্রুসিক্ত অবস্থায়) জাফরের সন্তানদের কাছে টেনে নিলেন ও মাথায় হাত বুলালেন । জাফরের স্ত্রী আসমা বললেনঃ
আমার পিতা-মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, কি আপনাকে কাদালো ? জাফর ও তার বন্ধুদের কোন খবর কি আপনার কাছে পৌছেছে ? তিনি (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ আজ শহীদ হয়েছেন ।” আসমা বললেনঃ আমি উঠে দাড়ালাম ও উঠে আর্তনাদ করলাম ও অন্যান্য নারীদের একত্রিত করে হযরত ফাতেমার গৃহে গেলাম, দেখলাম হযরত ফাতেমা (সা.আ.) কাদছেন এবং বলছেনঃ হায় আমার চাচা ! আল্লাহর রাসূল (সা.) (এ অবস্থা দেখে) বললেনঃ প্রকৃতপক্ষে ক্রন্দনকারীদের জাফরের মত ব্যক্তির জন্যই কাদা উচিৎ ।৯
মা আমিনার কবরে মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
সহীহ মুসলিম, মুসনাদে আহমাদ, সুনানে আবি দাউদ ও নাসাঈ এবং ইবনে মাযাতে বর্ণিত হয়েছেঃ১০
আবু হুরায়রা বলেনঃ মহানবী (সা.) তার মায়ের কবর যিয়ারত করলেন এবং আশেপাশের সবাইকে কাদালেন ।১১
ইমাম হুসাইনের (আ.) জন্য মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
নাতি হুসাইনের (আ.) জন্য বিভিন্ন উপলক্ষে মহানবী (সা.) এর ক্রন্দন
১. উম্মুল ফাযলের হাদীসঃ
মুসতাদরাকে সহীহাইন, তারিখে ইবনে আসাকির, মাকতালে খাওয়ারিযমীসহ আহলে সুন্নাতের বিভিন্ন গ্রন্থে১২ বর্ণিত হয়েছেঃ
হারিসের কন্যা উম্মুল ফাযল থেকে বর্ণনা করেন যে, তিনি মহানবী (সা.) এর কাছে গেলেন ও বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.) আমি গত রাতে দুঃখজনক এক স্বপ্ন দেখলাম ! বললেনঃ কী দেখেছো ? জবাব দিলেনঃ খুব কঠিন ! তিনি বললেনঃ কী হয়েছে ? তখন বললেনঃ আমি দেখলাম আপনার শরীরের একটি টুকরা আপনার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আমার আচলে এসে পড়লো!
আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেন তুমি খুব ভাল স্বপ্ন দেখেছো; আল্লাহর ইচ্ছায় ফাতেমার একটি ছেলে জন্ম গ্রহণ করবে এবং তোমার আচলে জায়গা নিবে।” এর কিছুদিন পরই ইমাম হুসাইন (আ.) এর জন্ম হল [যেমনটি মহানবী (সা.) বলেছিলেন] এবং তিনি আমার আচলে স্থান নিলেন । একদিন মহানবী (সা.)এর নিকট গেলাম এবং হুসাইনকে তার কোলে রাখলাম, এর কিছুক্ষণ পর আমার থেকে তার দৃষ্টি অন্য দিকে গেল । হটাৎ দেখলাম মহানবী (সা.) এর দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরছে! তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর নবী (সা.) ! আমার পিতা মাতা আপনার জন্য উৎসর্গ হোক, আপনার কি হয়েছে ? তিনি বললেনঃ ‘জিবরাঈল (আ.) আমার সাক্ষাতে এসে আমাকে এ খবর দিলেন যে, আমার উম্মত খুব শীঘ্রই আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে ।’ বললাম, এই শিশুকে ?!’ তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, সে (জিব্রাঈল) আমার জন্য রক্তিম কিছু মাটিও এনেছেন ।”
মুসতাদরাকে সহীহাইনের লেখক হাকিম বলেনঃ এ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ । কিন্তু তারা এটি বর্ণনা করেন নি ।১৩
২.যয়নাব বিনতে যাহাশের বর্ণনাঃ
তারিখে ইবনে আসাকির, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, তারিখে ইবনে কাসিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে১৪ যয়নাব বলেনঃ একদিন মহানবী (সা.) আমার ঘরে ছিলেন, সবে হাটতে শেখা হুসাইনকে (আ.) আমি নজরে রাখছিলাম । হটাৎ আমি অন্য মনস্ক হয়েছিলাম । এ সুযোগে হুসাইন (আ.) আল্লাহর রাসূলের (সা.) নিকট গেলেন । তিনি বললেনঃ তাকে ছেড়ে দাও । (এরপর বলা হয়) অতঃপর হাত ওপরে তুললেন । এরপর মহানবী (সা.) নামায শেষ করলে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল (সা.), আমি আপনাকে আজ একটি কাজ করতে দেখলাম যা এ পর্যন্ত কখনোই দেখিনি ? তিনি বললেনঃ ‘জিবরাঈল এসে আমাকে এ খবর দিলেন যে, আমার উম্মত আমার এ বংশধরকে হত্যা করবে ।’ বললামঃ তাহলে আমাকে ঐ মাটি দেখান । তিনি আমার জন্য রক্তিম মাটি আনলেন ।১৫
৩. হযরত আয়েশার (রা.) বর্ণনাঃ
তারিখে ইবনে আসাকির মাকতালে খাওয়ারেযমী, মাজমাউয যাওয়ায়িদসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে আবি সালমা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত হয়েছেঃ১৬
হযরত আয়েশা বলেন আল্লাহর রাসূল (সা.) হুসাইনকে (আ.) তার উরুতে বসিয়েছিলেন । জিবরাঈল (আ.) তার নিকট এসে বললেনঃ ‘এ আপনার বংশধর?’ মহানবী (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ,। জিবরাঈল বললেনঃ কিন্তু শীঘ্রই আপনার উম্মত (আপনার পরে) তাকে হত্যা করবে । মহানবী (সা.)-এর চোখ দু’টি অশ্রুসিক্ত হল । জিবরাঈল বললেনঃ যদি আপনি চান তাহলে যে মাটিতে তিনি (ইমাম হুসাইন) শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি ।তিনি বললেনঃ তাই করুন ।” জিবরাঈল (আ.) তাফ (কারবালা) থেকে মাটি এনে হযরত (সা.)-কে দেখালেন ।
অপর এক বর্ণনায় এসেছেঃ জিবরাঈল ইরাকের তাফের (কারবালা) দিকে ইঙ্গিত করলেন এবং লাল রংয়ের মাটি তাকে দেখিয়ে বললেনঃ এ হল তার শাহাদত স্থলের মাটি ।১৭
এ বিষয়ে অন্যান্য বর্ণনাও এসেছে যা থেকে ফেরেশতা কর্তৃক আল্লাহর রাসূলকে (সা.) ইমাম হুসাইন (আ.) এর শাহাদতের খবর দানের বিষয়টি সমর্থিত । যেমনঃ
১. উম্মে সালমার বর্ণনাঃ
মুসতাদরাকে সহীহাইন, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, তারিখে ইবনে আসাকিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে১৮ যে বর্ণনাকারী বলেনঃ উম্মে সালমা (রা.) আমাকে সংবাদ দিলেন যে, এক রাতে মহানবী (সা.) ঘুমানোর জন্য বিছানায় শুলেন এবং (কিছুক্ষণ) পরে বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে উঠলেন, পুনরায় ঘুমিয়ে গেলেন ও নীরব হলেন । দ্বিতীয়বার প্রথমবারের চেয়ে আরও বেশী বিষন্ন অবস্থায় ঘুম থেকে জেগে উঠলেন । আবার ঘুমিয়ে পড়লেন । পুনরায় রক্তিম বর্ণের মাটি হাতে নিয়ে তাতে চুম্বনরত অবস্থায় জেগে উঠলেন । আমি বললাম ! হে আল্লাহর রাসূল ! এ মাটি কিসের ? তিনি বললেনঃ “জিবরাঈল আমাকে সংবাদ দিল যে, সে (হুসাইন) ইরাকের মাটিতে শহীদ হবে । আমি জিবরাঈলকে বললাম যে মাটিতে শহীদ হবে তা আমাকে দেখাও । আর এ হল সেখানকার মাটি ।”
হাকিম বলেনঃ এ হাদীস প্রসিদ্ধ দুই হাদীসবেত্তার (বুখারী ও মুসলিম) শর্তানুসারে সহীহ বলে গণ্য কিন্তু তারা এটি তাদের নিজেদের গ্রন্থে বর্ণনা করেন নি ।১৯
২. আনাস ইবনে মালিকের বর্ণনাঃ
মুসনাদে আহমাদ, আল-মো’জামূল কাবির তাবরানী, তারিখে ইবনে আসাকিরসহ আহলে সুন্নাতের অন্যান্য গ্রন্থে বর্ণিতঃ২০
আনাস ইবনে মালিক বলেনঃ ‘ক্বাতর’ নামক এক ফেরেশতা আল্লাহর কাছে মহানবী (সা.) এর সাথে দেখা করার অনুমতি চাইলেন । মহান আল্লাহ তাকে অনুমতি দিলেন এবং সে ফেরেশতা রাসূলের ‘উম্মে সালমার’ গৃহে অবস্থানের দিবসে আসলেন । মহানবী (সা.) উম্মে সালমাকে বললেনঃ সাবধান থেকো, কেউ যেন আমাদের মজলিসে প্রবেশ না করে । এমন সময় তিনি যখন কক্ষে অবস্থান করছিলেন হটাৎ হুসাইন ইবনে আলী (আ.) দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলেন । ঐ ফেরেশতা বললোঃ তাকে ভালবাসেন ? তিনি (সা.) বললেনঃ হ্যাঁ । বললোঃ ‘আপনার উম্মত খুব শীঘ্রই তাকে হত্যা করবে । যদি আপনি চান তবে যে স্থানে তিনি শহীদ হবেন তা আপনাকে দেখাতে পারি’। তিনি বললেনঃ হ্যাঁ, দেখতে চাই । (উম্মে সালমা) বলেনঃ ঐ ফেরেশতা (ইমাম হুসাইনের) শাহাদতের স্থান থেকে এক মুষ্ঠি মাটি এনে হযরত (সা.) কে দেখালেন । কিছুক্ষণ পর রক্ত মিশ্রিত কিছু বালি বা রক্তিম মাটি আনলেন । উম্মে সালমা তা গ্রহণ করলেন এবং নিজের কাপড়ে রাখলেন । হাদীসের বর্ণনাকারী সাবিত বলেনঃ আমরা (ঐ সময়) বলতামঃ এ হল কারবালা !২১
যেসব রেওয়ায়েতে বলা হয় যে মহানবী (সা.) কাদতে নিষেধ করেছেন
খ. যেসব রেওয়ায়েতে বলা হয় যে মহানবী (সা.) কাদতে নিষেধ করেছেন সেগুলোর উৎসঃ
সহীহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈতে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, হযরত হাফসা হযরত ওমরের জন্য কন্নাকাটি করেছিলেন । হযরত ওমর বললেনঃ ‘শান্ত হও আমার কন্যা । তুমি কি জাননা যে, মহানবী (সা.) বলেছেনঃ মৃত্র ব্যক্তি তার জন্য স্বজনদের কন্নাকাটির কারণে শাস্তি ভোগ করবে ?!’২২
অপর এক রেওয়ায়েতে এসেছেঃ হযরত ওমর বলেনঃ মহানবী (সা.) বলেছিলেনঃ মৃত ব্যক্তি তার কবরে তার জন্য অন্যদের বিলাপ ও কান্নাকাটির কারণে শাস্তি পায় ।২৩
আরও একটি বর্ণনায় বলা হয়েছেঃ আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর বলেনঃ যখন হযরত ওমর আঘাত প্রাপ্ত হয়েছিলেন তখন তিনি বেহুশ হয়ে পড়েছিলেন । এ কারণে তার জন্য আর্তচিৎকার ও বিলাপ করা হচ্ছিল । যখন তার জ্ঞান ফিরে আসলো তিনি বললেনঃ তোমরা কি জাননা যে, রাসূল (সা.) বলেছেনঃ “মৃত ব্যক্তি তার জন্য জীবিতদের কান্নাকাটির কারণে শাস্তি ভোগ করে ?!২৪
হযরত আয়েশার মাধ্যমে হাদীসের ভুল ব্যাখ্যার অপনোদন
সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও সুনানে নাসাঈতে বর্ণিত হয়েছেঃ ইবনে আব্বাস বলেনঃ “মদিনায় যখন পৌছলাম আমীরুল মুমিনীন (হযরত ওমর) তখনও সফরের গ্লানি কাটিয়ে উঠেননি । এ অবস্থায় আততায়ী কর্তৃক আঘাত প্রাপ্ত হন । সাহিব ‘হায় আমার ভাই ! হায় আমার সাথী!’ বলে আর্তনাদ করতে করতে তার শিয়রে আসলো । হযরত ওমর বললেনঃ তোমরা কি শুননি যে, মহানবী (সা.) বলেছেনঃ ‘মৃত ব্যক্তি কোন কোন ক্ষেত্রে তার জন্য আত্মীয়-স্বজনদের ক্রন্দনের কারণে শাস্তি ভোগ করে ?!’
ইবনে আব্বাস বলেনঃ আমি উঠে দাড়ালাম ও হযরত আয়েশার নিকট গেলাম এবং যা ঘটেছে সে সম্পর্কে হযরত আয়েশাকে জানালাম । হযরত আয়েশা বললেনঃ না, আল্লাহর কসম! আল্লাহর রাসূল (সা.) কখনোই বলেননি যে, ‘মৃতু ব্যক্তি কারো কান্নাকাটির জন্য শাস্তি ভোগ করে ।’ বরং তিনি বলেছেনঃ
إنّ الکافر یزیده الله ببکاء اهله عذابا و إنّ الله لهو اضحک و ابکی..و لا تزرة وزر اخری
মহান আল্লাহ কাফেরদেরকে তাদের স্বজনদের কান্নার জন্য বেশী শাস্তি দেন এবং মহান আল্লাহই হাসান ও কাদান এবং কেউই অন্য কারো পাপের বোঝা বহন করে না ।”
কাসেম ইবনে মোহাম্মদ বলেনঃ তোমরা আমার নিকট কেন এমন কারো খবর দিচ্ছ যিনি না মিথ্যাবাদী এবং না মিথ্যাচারী, তথাপি (সে যাই হোক) মানুষ ভুল শুনে থাকে ।২৫
সহীহ মুসলিম, সহীহ বুখারী, সুনানে তিরমিযি ও মুয়াত্তায়ে মালিকে বর্ণিত হয়েছেঃ
হিশাম বিন উরওয়াহ তার পিতার কাছ থেকে বর্ণনা করেনঃ হযরতদ আয়েশার নিকট বলা হলো যে, ইবনে ওমর বলেছেনঃ মৃত ব্যক্তি তার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনের কান্নার ফলে শাস্তি ভোগ করে । হযরত আয়েশা বললেনঃ মহান আল্লাহ আবা আব্দুর রহমানকে ক্ষমা করুন; তিনি কিছু শুনেছেন তবে ভাল করে বুঝতে পারেন নি । (ঘটনাটি ছিল এরকম যে,) কোন এক ইহুদী ব্যক্তির মরদেহ(তার জন্য ক্রন্দনরত অবস্থায়) মহানবীর (সা.) নিকট দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল । হযরত নবী (সা.) বললেনঃ “তোমরা কাদছো, আর সে শাস্তি পাচ্ছে ।”২৬
ইমাম নাবাভী (মৃত্যু৬৭৬ হিঃ) সহীহ মুসলিমের ব্যাখ্যায়, মৃ্তের জন্য ক্রন্দন নিষেধ সম্পর্কে রাসূল (সা.) থেকে যে হাদীসগুলো বর্ণনা করা হয়েছে সেগুলো সম্পর্কে বলেনঃ এ হাদীসটি শুধুমাত্র হযরত ওমর ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে । হযরত আয়েশা সেগুলোকে অস্বীকার করেছেন এবং এটিকে তাদের দু’জনের ভ্রান্তি বলে মনে করেছেন । এছাড়া মহানবী (সা.) থেকে এরূপ বর্ণনাকেও তিনি অস্বীকার করেছেন ।২৭
আল্লাহর রাসূল (সা.) হযরত ওমরকে (ক্রন্দনে) নিষেধ করতে বারণ করেছেন
সুনানে নাসঈ, সুনানে ইবনে মাযাহ ও মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে২৮ যে, সালমা ইবনে আযরাক বলেনঃ আল্লাহর রাসূলের (সা.) কোন এক আত্মীয় পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছিলেন । নারীরা সমবেত হয়ে তার জন্য ক্রন্দন করছিলো । হযরত ওমর উঠে দাড়ালেন এবং তাদেরকে এ কাজে নিষেধ করছিলেন ও সভা ভেঙ্গে দিচ্ছিলেন । আল্লাহর রাসূল (সা.) বলেনঃ ওমর তাদেরকে তাদের মত থাকতে দাও, যে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত, হৃদয় মুসিবতে দগ্ধ আর এ হারানোর ব্যথা সদ্য ।২৯
মুসনাদে আহমাদে ওহাব ইবনে কায়সান সূত্রে মোহাম্মদ ইবনে আমর থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, সালমা ইবনে আযরাক আব্দুল্লাহ ইবনে ওমরের সাথে বাজারে যাচ্ছিল ও মৃতের জন্য ক্রন্দন করছিল । আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর এ কাজটিকে অপছন্দনীয় মনে করতেন বলে তাদের এরূপ আচরণে মৌখিক প্রতিবাদ জানালেন । সালমা ইবনে আযরাক তাকে বললেনঃ এমনটি বলবেন না! কারণ আমি স্বয়ং সক্ষী ছিলাম ও আবু হুরায়রাকে এরূপ কাজে বাধা দিতে নিষেধ করতে দেখেছি । মারওয়ানের পরিবারের এক মহিলা মৃত্যুবরণ করেছিলো এবং মারওয়ান যেসব মহিলারা তার জন্য কান্নাকাটি করছিল তাদেরকে সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়ার আদেশ দিচ্ছিল । আবু হুরায়রা সেখানে উপস্থিত ছিলেন এবং বললেনঃ হে আব্দুল মালেকের পিতা, তাদেরকে তাদের মত থাকতে দাও । কারণ একবার এক জানাযা(মৃতদেহ) মহানবীর (সা.) সামনে দিয়ে অতিক্রম করছিল । আমি ও ওমর ইবনে খাত্তাব হযরত (সা.) এর পাশে ছিলাম । ওমর ঐ মৃত বক্তির জানাযার নিকট থেকে তার জন্য ক্রন্দনরত নারীদের ছত্রভঙ্গ করে তাড়িয়ে দিচ্ছিলেন । আল্লাহর রাসূল (সা.) বললেনঃ হে খাত্তাবের পুত্র, তাদেরকে তাদের মত থাকতে দাও । তাদের অন্তরগুলো স্বজন হারানোর শোকে বিদগ্ধ, তাদের চোখগুলো অশ্রুসিক্ত এবং তাদের হৃদয়গুলো ব্যথাতুর ।৩০
বর্ণনাগুলোর তুলনা ও ফলাফল
গ. বর্ণনাগুলোর তুলনা ও ফলাফল
প্রথম অংশের বর্ণনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, মৃত্যু পথযাত্রী ও মৃতদের মাযারে (শহীদ অথবা অন্য কোন ব্যক্তি) তাদের জন্য ক্রন্দন করা মহানবী (সা.) এর আদর্শের অর্ন্তভুক্ত ।
দ্বিতীয় অংশের বর্ণনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল (সা.) একাধিকবার তার শহীদ বংশধর হুসাইন (আ.) এর জন্য কান্নাকাটি করেছিলেন । আর এ প্রমাণের ভিত্তিতে হুসাইন (আ.) এর জন্য নবীর (সা.) কান্নাকাটি প্রথম অংশের বর্ণনার সদৃশ এবং মহানবীর (সা.) সুন্নত ও কর্মরীতির অর্ন্তভুক্ত বলে পরিগণিত হয়।
তৃতীয় অংশের বর্ণনাগুলোতে প্রমাণিত হয়েছে যে, মৃত ব্যক্তির ওপর কান্নাকাটি নিষিদ্ধ সম্পর্কিত বর্ণনা কেবল দ্বিতীয় খলিফা ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত হয়েছে । অপরদিকে উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা তাদের ভুল ধরিয়ে দিয়ে বলেছিলেনঃ “মহান আল্লাহ আবা আব্দুর রহমানকে ক্ষমা করুন, তারা কিছু শুনেছে, কিন্তু অনুধাবন করতে পারে নি ।” এছাড়া অন্যান্য সাহাবার বক্তব্য যেমনঃ আবু হুরায়রা ও ইবনে আব্বাস যখন বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেনঃ মৃতের জন্য ক্রন্দন সম্পর্কে দ্বিতীয় খলিফা ও তার পুত্র আব্দুল্লাহ মহানবী (সা.) থেকে যা বর্ণনা করেছেন, তা ছিল ভুল তখন নিঃসন্দেহে বলা যায় মৃত্যু পথযাত্রী এবং মৃতের জন্য ক্রন্দন করা, এমন কি সুন্নাত ও জীবনচরিতেই বিদ্যমান । ফলে হুসাইন (আ.) এর জন্য কান্নাকাটি করাও আল্লাহর রাসূলের (সা.) সুন্নাত বলেই গণ্য ।
তথ্যসূত্র :
১.সহীহ মুসলিম, ৬ষ্ঠ অধ্যায়, ২য় খণ্ড, কিতাবুল জানায়িয, পৃ.৬৩৬ ।
২.সহীহ বুখারীর বর্ণনা থেকে উদ্ধৃত ।
৩.সহীহ মুসলিম, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮০৮, কিতাবুস সাবিয়ান; সুনানে আবি দাউদ, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৯৩, আলবুকা আলাল মাইয়্যেত; ইবনে মাযা, ১ম খণ্ড, পৃ.৫০৭; সহীহ বুখারী, ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৮ ।
৪.সুনানে ইবনে মাযা, ১ম খণ্ড, পৃ.৪৭৩, কিতাবুল জানায়িয ।
৫.সুনানে তিরমিযি, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.২২৬, কিতাবুল জানায়িয ‘আর রুখসাতু ফিল বুকা আলাল মাইয়্যেত অধ্যায় । এ হাদীসটি আহলে সুন্নাতের হাদীস বিশারদ ও আলেমগণের কাছে হাসান হাদীস হিসেবে পরিগণিত ।
৬.সহীহ বুখারী, কিতাবুল জানায়িয, কাউলুন নবী (সা.) অধ্যায়, কিতাবুল মারদ্বা, ইবাদাতুস সাবিয়ান অধ্যায় ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৩ ও ১৯১, কিতাবুত তাওহীদ, “ইন্না রাহমাতাল্লাহি ক্বারিবুম মিনাল মুহসিনীন, অধ্যায়; সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, “আলবুকা আলাল মাইয়্যেত” অধ্যায় ২য় খণ্ড, পৃ.৬৩৬, হাদীস নং-১১; সুনানে আবি দাউদ, ৩য় খণ্ড, পৃ.১৯৩, আলবুকা আলাল মাইয়্যেত; সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.২২, কিতাবুল জানায়িয,“আল আমর বিল ইহতিসাব ওয়াস সাবর” অধ্যায়; মুসনাদে আহমাদ, ৫ম খণ্ড, পৃ.২০৪, ২০৬, ২০৭ ।
৭. এ ঘটনাটি “তাবাকাতে ইবনে সা’দ”-এর ৩য় খণ্ডে হযরত হামযার জীবনী অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে, পৃ.১১, প্রকাশকাল ১৩৭৭ হিজরীতে বৈরুতের দারুস সাদির প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত । বর্ণনাটি মাগাযীয়ে ওয়াকেদী’ ১ম খণ্ড, পৃ. ৩১৫-৩১৭ এ আরও বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে । এছাড়াও মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ.৪০; তারিখে তাবারী, ৩য় খণ্ড, পৃ.৫৩২ মিশর থেকে প্রকাশিত ।
‘সিরাতে ইবনে হিশাম ৩য় খণ্ড, পৃ.৫০ ইবনে আব্দুল বার “ইস্তিয়াব গ্রন্থে এবং ইবনে আসির “উসদুল গাবা” গ্রন্থেও সংক্ষিপ্তাকারে হযরত হামযার জীবনীতে ঘটনাটি উল্লেখ করেছেন ।
৮. সহীহ বুখারী, ২য় খণ্ড, পৃ.২০৪ কিতাবে ফাযায়েলুস সাহাবা মানাকিবু খালেদ, ইবনে কাসিরের আল বেদায়া ওয়ান নিহায়া ৪র্থ খণ্ড, পৃ.২৫৫, বায়হাকির সুনানুল কুবরা, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৭০, আনসাবুল আশরাফ ২য় খণ্ড, পৃ.৪৩ শারহে ইবনে আবিল হাদীদ আলা নাহজুল বালাগা, ১৫তম খণ্ড, পৃ.৭৩ ।
৯. তারিখে ইবনে আসির , ২য় খণ্ড, পৃ. ৯০, এছাড়া অন্যান্য গ্রন্থে জাফরের জীবনী অধ্যায়ে এ বর্ণনাটি এসেছে ।
১০.সহীহ মুসলিমের বর্ণনা মতে ।
১১.সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ.৬৭১, কিতাবুল জানায়িয,অধ্যায়-৩৬, হাদীস নং-১০৮;মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ.৪৪১, সুনানে নাসাঈ,৪র্থ খণ্ড, পৃ.৯০,কিতাবুল জানায়িয, সুনানে ইবনে মাযা, ১ম খণ্ড, পৃ. ১৫৭২ ।
১২.মুসতাদরাক গ্রন্থ থেকে ।
১৩.মুসতাদরাকে সহীহাইন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ১৭৬, এবং এর সার সংক্ষেপ ১৭৯ পৃষ্ঠায়, তারিখে ইবনে আসাকির, হাদীস-৬৩১ এবং এর নিকটবর্তী বর্ণনার হাদীস ৬৩০; মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ম খণ্ড, পৃ.১৭৯; মাকতালে খাওয়ারিযমী, ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৯ ও ১৬২, তারিখে ইবনে আসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২৩০, ৮ম খণ্ড, পৃ.১৯৯-ও এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছে । আমালীয়ে শাজায়ী, পৃ.১৮৮, ফুসুলুল মুহিম্মাহ, ইবনে সাব্বাগ মালেকী পৃ.১৪৫ । রাওদান নাদ্বির ১ম খণ্ড, পৃ.৮৯, সাওয়ায়েক্ব পৃ.১১৫ এবং অন্য সংস্করণে পৃ.২, ১৯০; কানযুল উম্মাল, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২২৩ (প্রথম সংস্করণ) । আল খাসায়েসুল কুবরা ২য় খণ্ড, পৃ.১২৫ । আহলে বাইতের (আ.) অনুসারীদের গ্রন্থসমূহে, মুসিরুল আহযান, পৃ.৮ লুহুফ, ইবনে তাউস, পৃ.৬ ও ৭ এ বর্ণিত হয়েছে ।
১৪.ইবনে আসাকিরের ইতিহাসে বিষয়টি সংক্ষেপে উপস্থাপন করা হয়েছে ।
১৫.তারিখে ইবনে আসাকির, ইমাম হুসাইনের (আ.) সম্পর্কিত বর্ণনায়, হাদীস নং-৬২৯, মাজমাউয যাওয়ায়িদ,৯ম খণ্ড, পৃ.১৮৮, কানযূল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃ.১১২, ইবনে কাসিরও তার ইতিহাস গ্রন্থের ৮ম খণ্ড, পৃ.১৯৯ এ ব্যাপারে ইঙ্গিত দিয়েছেন । আহলে বাইতের (আ.) অনুসারীদের গ্রন্থ, আমালিয়ে শেখ তুসী, ১ম খণ্ড, পৃ.৩২৩, মুসিরুল আহযান, পৃ.৭-১০, বর্ণনাটির শেষে গুরুত্বপূর্ণ একটি উপসংহার রয়েছে, বর্ণনা লুহুফ ৭-৯ পৃ ইত্যাদি । উম্মুল মুমিনীন যয়নাব বিনতে জাহশ রাসূলের (সা.) পত্নী ।
১৬.খাওয়ারিযমীর বর্ণনানুসারে ।
১৭.তাবাকাতে ইবনে সা’দ, হাদীস ২৬৯, তারিখে ইবনে আসাকির ইমাম হুসাইন (আ.) সম্পর্কিত বর্ণনা, হাদীস নং-৬২৭, মাকতালে খাওয়ারিযমী, ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৯, মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ম খণ্ড, পৃ.১৮৭ ও ১৮৮, কানযূল উম্মাল, ১৩তম খণ্ড, পৃ.১০৮ (নতুন সংস্করণ) ও ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২২৩ (পুরাতন সংস্করণ) । আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ইবনে হাজার, পৃ.১১৫, খাসায়েসুস সুয়ূতি, ২য় খণ্ড, পৃ.১২৫ ও ১২৬, জাওহারাতুল কালাম আল কুররাতু গাউলি পৃ. ১১৭ এবং আমালি শেখ তুসী, ১ম খণ্ড, পৃ.৩২৫ ও আমালিয়ে শাজারী, পৃ.১৭৭ বিস্তারিত জানতে দেখুন ।
১৮. মুসতাদরাকের বর্ণনা অনুসারে ।
১৯.মুসতাদরাকে সহীহাইন, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৩৯৮,আল মো’জামূল কাবির, তাবরানী হাদীস নং-৫৫, তারিখে ইবনে আসাকির, হাদীস নং-৬১৯, তাবাকাতে ইবনে সা’দ, গবেষণা ও প্রকাশনা, আব্দুল আজীজ তাবাতাবায়ী, পৃ.৪২-৪৪, হাদীস নং-৬২৮, তারিখুল ইসলামে যাহাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ.১১। সিয়ারু আলামুন নুবালা এ লামুনন্নব ৩য় খণ্ড, পৃ.১৯৪ ও ১৯৫ । মাকতালে খাওয়ারিযমী, ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৮-১৫৯, যাখায়েরুল ওক্ববা, মুহিব আত তাবারী, পৃ.১৪৮-১৪৯, তারিখে ইবনে কাসির, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২৩০, কানযূল উম্মাল, মুত্তাকী, ১৬তম খণ্ড, পৃ.২৬৬ ।
২০.মুসনাদে আহমাদ ইবনে হাম্বলের বর্ণনা অনুসারে ।
২১.মুসনাদে আহমাদ,৩য় খণ্ড, পৃ.২৪২ ও ২৬৫ । তারিখে ইবনে আসাকির, ইমাম হুসাইন (আ.) এর জীবনী অধ্যায়, হাদীস নং-৬১৫ ও ৬১৭ এবং তাহযীবে তারিখে ইবনে আসাকির ৪র্থ খণ্ড, পৃ.৩২৫, আল মো’জামূল কাবির, তাবরানী, হুসাইন (আ.) এর জীবনী অধ্যায়, হাদীস নং-৪৭, মাকতালে খাওয়ারিযমী, ১ম খণ্ড, পৃ.১৬০-১৬২ । তারিখে ইসলামে যাহাবী, ৩য় খণ্ড, পৃ.১০, সিয়ারু আলামুন নুবালা ৩য় খণ্ড, পৃ.১৯৪, যাখায়েরুল ওক্ববা, পৃ.১৪৬ ও ১৪৭,মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ৯ম খণ্ড, পৃ.১৮৭-১৯০ ও ভিন্ন সনদে বর্ণিত । তারিখে ইবনে কাসির, অধ্যায়: আল আখবার বিমামাক্বতালিল হুসাইন ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২২৯ এর বর্ণনাটি এরূপ : “আমরা শুনলাম যে তিনি কারবালায় শহীদ হবেন” । এবং ৮ম খণ্ড, পৃ.১৯৯ । কানযূল উম্মাল, ১৬তম খণ্ড, পৃ.২৬৬ । আস সাওয়ায়িকুল মুহরিকা ইবনে হাজার, পৃ.১১৫, আদ দালায়েল, আবি নাইম, ৩য় খণ্ড, পৃ.২০৩, আর রাওযাননাদির, ১ম খণ্ড, পৃ.১৯২ । আল মাওয়াহিবুল লাদুননিয়া কাসতালানী ২য় খণ্ড, পৃ.১৯৫, খাসায়েসু সূয়ুতী, ২য় খণ্ড, পৃ.২৫, মাওয়ারেদু দামআন বিযওয়ায়েদ সহীহে ইবনে হাব্বান, আবু বাকর হাইতামী, পৃ.৫৫৪ আহলে বাইতের গ্রন্থসমূহেও এরূপ বর্ণনা এসেছে: আমালীয়ে শেখ তুসী (৩/৪৬০হি) ১ম খণ্ড, পৃ.২২১ যার বিষয়বস্তু এরূপ (মহান ফেরেশতাদের মধ্যে এক মহান ফেরেশতা......)
২২. সহীহ মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, “আল মায়্যিতু ইউআজ্জাবু বিবুকায়ী আহলিহি আলাইহী” অধ্যায়, সুনানে নাসাঈ ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: আন নাহি আনিল বুকাউ আলাল মায়্যিত ।
২৩.সহীহ মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ.৬৩৯, সহীহ তিরমিযি, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.২২২, কিতাবুল জানায়িয ২৪তম অধ্যায়, সুনানে ইবনে মাযা ১ম খণ্ড, পৃ.৫০৮, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায় : “আল মায়্যিতু ইউআজ্জাবু বিমা নুহিয়া আলাইহি আলাইহী” ।
২৪.,সহীহ মুসলিম,২য় খণ্ড, পৃ.৬৩৯, সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮ ।
২৫.সহীহ,মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়-৯, হাদীস, ২২ ও ২৩, সহীহ বুখারী, কিতাবুল জানায়িয, “ইউআজ্জাবুল মায়্যিতু বিবুকায়ী আহলিহি আলাইহী” অধ্যায় ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৫ ও ১৫৬,সুনানে নাসাঈ, ৪র্থ খণ্ড, পৃ.১৮, কিতাবুল জানায়িয, “আন্নিয়াহাতু আলাল মায়্যিত” আল ইজাবাতুল লা ইয়ুরাদুশ ইসতাদরাকাতহু আয়িশা আলাস সাহাবা, যারকাশী পৃ. ৮২, ইসতাদরাকুহ আলা উমর ইবনিল খাত্তাব ।
২৬. সহীহ,মুসলিম, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়-৯, হাদীস, ২৫, সহীহ বুখারী, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: ““আল মায়্যিতু ইউআজ্জাবু ইউআজ্জাবুল বিবুকায়ী বা’দ্বী আহলিহি” ১ম খণ্ড, পৃ.১৫৬ । সহীহ তিরমিযি, কিতাবুল জানায়িয, ৪র্থ খণ্ড, ২৫তম অধ্যায়, পৃ.২২৬ ও ২২৭, মুয়াত্তায়ে মালিক, ১ম খণ্ড, পৃ.২৩৪, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: আন নাহি আনিল বুকাউ আলাল মায়্যিত ।
২৭.শারহে সহীহ,মুসলিম, আল ইমাম আন নাবাভী, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ.২২৮, কিতাবুল জানায়িয ।
২৮.বিষয়বস্তু নাসায়ির বর্ণনা অনুসারে ।
২৯. সুনানে নাসায়ি ২য় খণ্ড, পৃ.১৯, “আর রুখসাতু ফিলবুকায়ি আলাল মায়্যিত” অধ্যায় । মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ.১১০,২৭৩,৪০৮,৪৪৪, সুনানে ইবনে মাযা, ১ম খণ্ড, পৃ.৫০৫, কিতাবুল জানায়িয, অধ্যায়: মাজায়া ফিল বুকা আলাল মায়্যিত, হাদীস নং-১৫৮৭ ।
৩০.মুসনাদে আহমাদ, ২য় খণ্ড, পৃ.১৭৩ ও ৪০৮ এবং এর কাছাকাছি অর্থের বর্ণনা পৃ.৩৩৩।