(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় কারবালায় তাঁর ও তাঁর সঙ্গীসাথীদের হৃদয় বিদারক শাহাদাত এবং স্বৈরাচারী উমাইয়্যা শাসনের বিরুদ্ধে তাঁর আন্দোলন সঠিকভাবে বুঝতে হলে প্রথম চার খলীফা ও আমীর মুয়াবিয়ার শাসনামল বিশেষ করে হযরত উসমানের শাসনামলের গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাপ্রবাহ সূক্ষ্মভাবে অধ্যয়ন ও পর্যালোচনা করা প্রয়োজন।
হযরত উসমানের শাসনামল
হযরত উসমানের শাসনামলে বনী উমাইয়্যাগণ,প্রশাসনের বিভিন্ন পদে ও বিভিন্ন প্রদেশের গভর্নরের পদে নিযুক্ত হওয়ার ফলে রাজনৈতিক,প্রশাসনিক ও অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী হয়ে যায়। তারা তাদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য প্রশাসনযন্ত্র,খিলাফত ও বাইতুল মাল অবৈধভাবে ব্যবহার করতে থাকে। তাদের দুঃশাসন,অপকীর্তি ও দুর্নীতির কারণে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে চরম বিশৃঙ্খলা,অরাজকতা,বিদ্রোহ এবং তীব্র গণ-অসন্তোষ দেখা দেয় যা তৃতীয় খলীফা সমাধান করতে এবং জ্ঞাতী উমাইয়্যা বংশীয়দের নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হন।
এখানে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাসের সাথে খলীফা উমর খিলাফতের ভবিষ্যৎ এবং সম্ভাব্য কোন ব্যক্তি খলীফা হতে পারে এতদ্প্রসঙ্গে কথোপকথন করার সময় হযরত উসমান সম্পর্কে যে মন্তব্য করেছিলেন তা প্রণিধানযোগ্য। আল্লামাহ্ বালাযুরী প্রণীত আনসাবুল আশরাফ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে,ইবনে আব্বাস (জিজ্ঞেস করলেন),“তবে ওসমান সম্পর্কে আপনার মত কি?”
হযরত উমর (বললেন),“যদি তাকে খলীফা করা হয়। তবে আবু মুইত গোত্রের লোকেরা অন্যদের গর্দান নিবে;আর তাই যদি হয়,তবে তারা একদিন তাকেও শেষ করবে।”১
হযরত উসমান পুরাতন গভর্নর ও সেনাপতিদের অপসারণ এবং এ নতুন ব্যক্তিদের এ সব পদে নিয়োগ দেন। এ সব নব নিযুক্ত গভর্নর এবং সেনাপতিদের অধিকাংশই ছিল উমাইয়্যা বংশীয় অথবা তাদেরই দলভুক্ত কুরাইশ। জেলা-প্রশাসক ও মধ্যবর্তী সামরিক কর্মচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে তারা নিজেদের ইচ্ছা মতো লোক নির্বাচন করত। আর এই নির্বাচনের বেলায় তাদের অনেকেই বিশেষ করে উমাইয়্যা বংশীয় কুরাইশগণ নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করত। সাধারণত তারা নিজেদের আত্মীয়-স্বজনদের দ্বারা তাদের অধীনস্ত শূন্য পদগুলো পূরণ করত।২
এতদ্প্রসঙ্গে History of The Saracens গ্রন্থের ৪৬-৪৭ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছে,ইত্যবসরে খলীফার (হযরত উসমান) দুর্বলতা এবং তাঁর প্রিয়ভাজন ব্যক্তিদের দুর্নীতি জনগণের মাঝে তীব্র অসন্তোষ ও ক্ষোভের সৃষ্টি করে। তাঁর গভর্নরদের শোষণ ও অত্যাচার সংক্রান্ত জোরালো প্রতিবাদ ও অভিযোগসমূহ রাজধানীতে আসতে লাগল। খলীফা উসমান যেভাবে প্রশাসন ও সরকারকে তাঁর অনুপযুক্ত প্রিয়পাত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যেতে দিচ্ছিলেন সে কারণে হযরত আলী (আ.) বহু বার খলীফা উসমানকে ভর্ৎসনা ও প্রতিবাদ করেছিলেন। কিন্তু খলীফা উসমান দুষ্টবুদ্ধি মারওয়ানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে (হযরত আলীর) সদুপদেশের প্রতি মোটেও গুরুত্ব দেন নি।
প্রজাদের আক্ষেপের আরও একটি কারণ ছিল,নবীর দুঃখের দিনে যাঁরা সঙ্গী ছিলেন এবং সকল দুঃখ-কষ্টে অংশ গ্রহণ করেছিলেন সে সব মুহাজির ও আনসার এখন উপেক্ষিত,আর তাঁদের পরিবর্তে এখন ক্ষমতাসীন হচ্ছে ঐ সব লোক যারা নবীর মক্কা বিজয়ের পূর্ব পর্যন্ত তাঁর বিরোধিতা করেছে এবং ইসলামকে দুনিয়া থেকে মুছে ফেলার জন্য সাধ্যমত চেষ্টা করেছে।৩
মদীনায় ক্ষুদ্র একটি দল ছিল,যারা উমাইয়্যা পক্ষীয় কুরাইশদের প্রতি হযরত উসমানের ব্যবহার ও আচরণ সমর্থন করত। সাহাবীরা প্রায় সকলেই হযরত উসমানের কাজের বিরূপ সমালোচনা করতেন এবং তাঁকে পক্ষপাতিত্বের দোষে দোষী মনে করতেন।৪
হযরত উসমান উমাইয়্যা বংশীয় গভর্নর-কর্মচারীদের দৌরাত্ম,অপকর্ম,অত্যাচার ও দুর্নীতির কারণে আনসার ও মুহাজির সাহাবীদেরও সমর্থন হারান এবং বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ হওয়ার পরেও তাঁরা সাহায্য করেন নি তা আল্লামাহ্ সুয়ূতীর ‘তারীখুল খুলাফা’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে। বর্ণনাটি হলো আবু তুফাইল আমের বিন ওয়াসিলাহ্ আস্ সাহাইর নিকট থেকে ইবনে আসাকির বর্ণনা করেছেন,তিনি (আবু তুফাইল) মুয়াবিয়ার কাছে গেলে মুয়াবিয়া তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন,“তুমি কি উসমানের হত্যাকারীদের অন্তর্ভুক্ত নও?” তখন তিনি বললেন,“না,তবে আমি তাদের অন্তর্ভুক্ত যারা তার কাছে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাঁকে সাহায্যে করে নি।” তখন মুয়াবিয়া জিজ্ঞেস করলেন,“তাঁকে সাহায্য করতে তোমাকে কোন জিনিস বাধা দিয়েছিল? তখন তিনি বললেন,“মুহাজির ও আনসারগণ তাঁকে সাহায্য করেন নি।” তখন মুয়াবিয়া বললেন,“তাঁদের (আনসার ও মুহাজিরদের) ওপর তাঁর হক ওয়াজিব হয়ে গিয়েছিল যে,তাঁরা তাঁকে সাহায্য করবেন।” তখন আবু তুফাইল বললেন,“হে আমীরুল মুমিনীন! আপনার সাথে শামবাসীরা থাকা সত্ত্বেও আপনাকে কোন জিনিস তাঁকে সাহায্য করা থেকে বিরত রেখেছিল?!” তখন মুয়াবিয়া বললেন,“তবে তাঁর রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণ সংক্রান্ত আমার দাবীটিই হচ্ছে তাঁর জন্য সাহায্যস্বরূপ।” এ কথা শুনে আবু তুফাইল হেসে বললেন,“আপনি এবং উসমান ঠিক তদ্রূপ যেমনটি কবি বলেছেন :
لَا ألْفِيَنَّكَ بَعْدَ مَوْت تنْدُبُنِيْ وَ فِيْ حَيَاتيْ مَا زَوَّدْتنِيْ زَاداً
মৃত্যুর পর যেন অবশ্যই আমি না দেখি তোমাকে আমার জন্য বিলাপ করতে,
অথচ আমার জীবদ্দশায় আমাকে দাও নি তুমি (জীবন ধারণের) কোন পাথেয়।”৫
এ বর্ণনাটি থেকে আরো প্রমাণিত হয়ে যায় যে,মুয়াবিয়া স্বীয় দুরভিসন্ধি চরিতার্থ করার জন্য অর্থাৎ খিলাফতের মসনদ নিজ করায়ত্ত্বে আনার জন্য হযরত উসমানের ঘোর দুর্দিনে সামর্থ্য ও ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের দ্বারা অবরুদ্ধ খলীফাকে সাহায্য করেন নি। খলীফা নিহত হলে খিলাফত দখলের রঙিন স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে দেখে তিনি খলীফা হত্যার বদলা গ্রহণের ধূয়ো তোলেন যা তিনি উপরোক্ত বর্ণনাতেও বলেছেন যে,খলীফা উসমানের রক্তের প্রতিশোধ গ্রহণের দাবী তাঁর জীবদ্দশায় তাঁকে সাহায্য করারই সমতুল্য!!
যে পাঁচ ব্যক্তি হযরত উমর কর্তৃক “মজলিসে শুরা” বা (খলীফা) নির্বাচন কমিটির সদস্য নিযুক্ত হয়েছিলেন এবং যাঁদের নির্বাচনে হযরত উসমান খলীফা নিযুক্ত হয়েছিলেন,তাঁরা পর্যন্ত হযরত উসমানের কার্যকলাপে নিরাশ হয়ে পড়েছিলেন।৬
মজলিসে শুরার সভাপতি আবদুর রহমান বিন আউফ,যিনি নির্বাচন-দ্বন্দ্বে প্রসন্ন চিত্তে হযরত উসমানকে বিজয়ী ঘোষণা করেছিলেন তিনিও শেষ পর্যন্ত তাঁর সম্বন্ধে দারুণ নৈরাশ্যে পতিত হয়েছিলেন। কথিত আছে খলীফার শোচনীয় দুর্বলতা ও তৎজনিত বিশৃঙ্খলাসমূহ দর্শনে আবদুর রহমান ব্যথিত হয়ে একদিন হযরত আলীকে বলেছিলেন,“তুমি তোমার তরবারি নাও এবং আমি আমার তরবারি নিই,তারপর তার পালা শেষ করে আসি।” অবশ্য এই বৃদ্ধ সাহাবী হযরত উসমানকে হত্যা করার বাসনা করেন নি। তবে হয়তো অতিরিক্ত মনের খেদেই উপরোক্ত কথা বলে থাকবেন।৭
মজলিসে শুরার অন্যতম সদস্য সাহাবী সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাস নির্বিকার ছিলেন। মজলিসে শুরার দ্বিতীয় সদস্য যুবাইর ইবনুল আওয়ামকে হযরত উসমান খলীফা হয়েই ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য বায়তুল মাল থেকে বিস্তর অর্থ ঋণ দান করেছিলেন এবং পুরাতন দেনা মওকুফ করে দিয়েছিলেন। যুবাইরের সম্পত্তির পরিমাণ কেউ আন্দাজ করতে পারত না। মিসরের নতুন রাজধানী ফুসতাত ও পুরানো রাজধানী আলেকজান্দ্রিয়ায় তাঁর প্রভূত সম্পত্তি ছিল। শুধু মদীনাতেই তাঁর এগারোটি বাড়ী ছিল। এ ছাড়া মক্কায়ও তাঁর ঘরবাড়ী ও বিরাট ব্যবসায় ছিল। তিনি খলীফা উসমানের সাথে সদ্ভাব রেখে চলতেন। এ ধরনের প্রভাব প্রতিপত্তিশালী লোকেরা ইচ্ছা করলে বিপ্লবের সময় হযরত উসমানের সমর্থনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করতে পারতেন এবং তার ফল হতো গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দেখা গেছে,যুবাইর বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে জনমত গঠনের চেষ্টা তো দূরের কথা,জোরের সাথে প্রতিবাদ পর্যন্ত করেন নি।৮
মজলিসে শুরার তৃতীয় সদস্য তালহা ইবনে উবাইদুল্লাহ্ হযরত উসমানের শাসনামলে প্রজাস্বত্বের হন্তাস্তর ও জমিদারী প্রথার উদ্ভব হলে খলীফার সাথে ভূমি বদল করেন এবং অন্যদের জমি ক্রয় করে ইরাকে বিরাট জমিদারীর মালিক হয়েছিলেন। কিন্তু বিপ্লবের সময় তাঁকেও হযরত উসমানের পাশে দেখা যায় নি। কোন কোন রাবীর বর্ণনা এই,খলীফার গৃহ অবরোধ হলে বিদ্রোহীদের সাথে তিনি সহযোগিতা করেছিলেন এবং এই কারণে জঙ্গে জামালে মারওয়ান তাঁর ওপর প্রতিশোধ গ্রহণ করে এবং তার নিক্ষিপ্ত তীরে তালহার মৃত্যু হয়।৯
মজলিসে শুরার অন্যতম সদস্য ও খিলাফত নির্বাচনে হযরত ওসমানের প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী হযরত আলী স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে খলীফা উসমানকে ন্যায়ের পথে চলার জন্য উপদেশ দিতেন,অথচ তিনি কখনও হযরত উসমানের কাছে অর্থ সাহায্যের জন্য আবেদন করেন নি। বাইতুল মাল হতে তিনি যে সামান্য ভাতা পেতেন তা দিয়েই কোন মতে সংসার চালাতেন। তিনি উপদেশ দিতে গিয়ে বারবার হযরত উসমান কর্তৃক উপেক্ষিত হয়েছেন,এমনকি তিরস্কৃত হয়েছেন। কারণ হযরত উসমান মনে করতেন তাঁর দোষ উদ্ঘাটনই আলীর উদ্দেশ্য। কুটকৌশলী মারওয়ান হযরত উসমানকে হযরত আলীর এ সব সদুপদেশ শুনে তদনুযায়ী কাজ করা থেকে বিরত রাখত যা আমরা ইতোমধ্যে উল্লেখ করেছি।১০
হযরত উসমানের সময় শক্তিশালী ও প্রভাব বিস্তারকারী জমিদার শ্রেণীর উদ্ভব হয়। আর তাদেরই অধীনস্ত হয়ে যায় সমাজের দুর্বল,অসহায়,দরিদ্র ও সাধারণ মানুষ। এ সব নব্য প্রতিষ্ঠিত জমিদারগণ বিলাসবহুল জীবন যাপন করত। তাদের জীবনধারা ছিল মূলত অনৈসলামিক। তাদের আয়েশী জীবনধারা বজায় রাখার জন্য নিরীহ প্রজাসাধারণের ওপর চাপ সৃষ্টি ও অত্যাচার করত। এর ফলে সাধারণ জনগণের ওপর নেমে আসে দুঃসহ অন্যায়-অত্যাচার,দুর্ভোগ এবং দুঃখের অমানিষা। তাদের জীবন হয়ে ওঠে চরম দুর্বিসহ।
এ জমিদার শ্রেণীর মধ্যে উমাইয়্যাগণেরই মুখ্য ভূমিকা ছিল। খলীফা উসমান তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও গোত্রীয় লোকদের অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা মিটানোর জন্য সরকারী খাস হিসেবে সংরক্ষিত ভূমিও তাদের মধ্যে বিতরণ করতেন। কথিত আছে সিরিয়ার সমুদয় খাস জমি এবং ইরাকের খাস জমিরও কিছু অংশ আমীর মুয়াবিয়াকে দেয়া হয়েছিল। চালদিয়ার অন্তর্গত সোয়াত এলাকার ভূমি অতিশয় উর্বর। হযরত উসমান আত্মীয়দের অনুরোধ ফেলতে না পেরে তাও তাঁর এক নিকটাত্মীয়কে দান করেন।
খলীফা উসমানের খিলাফত কালে শাসন কার্যে প্রবীণদের স্থলে নবীনদের নিযুক্ত করা হচ্ছিল এবং মক্কার কুরাইশরা যারা শুধু নিরাপত্তা অর্জনের উদ্দেশ্যে ইসলাম কবুল করেছিল তারাই (যারা তুলাকা [নবীর সাধারণ ক্ষমাপ্রাপ্ত] বলে অভিহিত হতো) সরকারী পদসমূহে বহাল হচ্ছিল।
হযরত উসমান ধনী ব্যবসায়ী ছিলেন। তিনি স্বচ্ছল জীবন যাপন করতেন। মদীনার মুহাজির পল্লীতে তাঁর প্রাসাদ ছিল সর্বাপেক্ষা সুদৃশ্য। খলীফা হবার পর তাঁর দানের ক্ষেত্র বেড়ে যায়। নিজের অর্থে সকল দান সম্ভব না হলে তিনি সরকারী তহবিল ও কোষাগার হতে ইচ্ছে মত দান করতেন। হযরত উসমান শুধু বিপন্নদের সাহায্যে বাইতুল মাল হতে অর্থ প্রদান করেন নি;ধনী ব্যক্তিদেরও ব্যবসায় পরিচালনা অথবা ভূমি খরিদ বাবদ অর্থ দান করেছেন। বিশেষ বিশেষ সাহাবীকে তিনি অনেক সময় নির্ধারিত ভাতার ওপরেও অতিরিক্ত সাহায্য মঞ্জুর করতেন।
হযরত উসমান যে সমস্ত লোককে ব্যবসায়ের মূলধন হিসেবে বাইতুল মাল হতে অর্থ সাহায্য করেছেন তাদের ভেতর তালহা ও যুবাইরের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। ইবনে সা’দ থেকে বর্ণিত,হযরত উসামান তালহা ও যুবাইরের সাহায্যার্থে সরকারের নিকট তাঁদের পূর্বেকার সমস্ত দেনা মাফ করে দেন। তাছাড়া অতিরিক্ত আরো দুই লক্ষ দিরহাম তালহাকে এবং ছয় লক্ষ দিরহাম যুবাইরকে বাইতুল মাল থেকে প্রদান করেন। তাঁরা উভয়ে তা থেকে প্রয়োজনীয় অর্থ ব্যবসায়ে নিয়োগ করে অবশিষ্টাংশ দিয়ে জমি ও ঘরবাড়ী ক্রয় করেছিলেন।
খলীফা উসমানের নিযুক্ত প্রদেশিক গভর্নরদেরও তিনি বাইতুল মাল থেকে প্রয়োজনমত দান বা কর্জ প্রদান করতেন। কুফার গভর্নর ওয়ালীদ ইবনে উকবার বাইতুল মাল থেকে ঋণ গ্রহণ এবং তা পরিশোধ না করার কারণে কুফার কোষাধ্যক্ষ প্রবীণ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ ঋণ পরিশোধের ব্যাপারে ওয়ালীদের ওপর চাপ প্রয়োগ করেছিলেন। কিন্তু ওয়ালীদ বিষয়টি খলীফাকে জানালে তিনি আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদকে ভর্ৎসনা করেছিলেন। এ কারণেই আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ ইস্তেফা দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। ক্ষমতাসীন ব্যক্তিদের এভাবে ঋণ বা দান গ্রহণ জনসাধারণের ভেতর দারুণ অসন্তোষের সৃষ্টি করেছিল। কারণ বাইতুল মালের তহবিল শূন্য হলে ঘাটতি পূরণের জন্য খাজনা ও ট্যাক্স আদায়ের কড়াকড়ি অত্যধিক বেড়ে যেত।১১
হযরত উসমান তাঁর নিজ চাচা হাকাম বিন আল-আস বিন উমাইয়্যাহ্ ও তার সন্তানদের প্রতি যে প্রকার অনুগ্রহ প্রদর্শন করেছিলেন তা নিয়ে সাহাবীদের ভেতর বিশেষ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছিল। কারণ এই হাকাম মহানবী (সা.)-এর মক্কা বিজয়ের পর ইসলাম গ্রহণ করেছিল শুধু প্রাণ বাঁচাবার জন্য। তার প্রমাণ,ইসলাম গ্রহণের পরও সে মহানবীকে তীব্র কষ্ট ও যাতনা দিত,রাস্তায় মহানবীর পিছু নিত। চোখ দিয়ে ব্যঙ্গসূচক ইঙ্গিত করত এবং নবীর পথ চলার ভঙ্গি অনুকরণ করে বিদ্রূপ করত। একদিন সে সরাসরি মহানবীর কামরায় ঢুকে পড়ে। নবী এতে খুব বিরক্ত হন এবং তাকে ও তার পুত্র মারওয়ানকে মদীনা হতে বহিষ্কার করেন এবং তাদেরকে তায়েফে নির্বাসন দেন। রাসূলের ওফাতের পর মদীনায় হাকামকে ফিরিয়ে আসার জন্য হযরত উসমান খলীফা আবু বকরকে অনুরোধ করেছিলেন। কিন্তু তিনি রাজী হন নি এবং উসমানকে বলেছিলেন,“আমি মহানবী কর্তৃক বিতাড়িত ব্যক্তিদের অবশ্যই আশ্রয় দেব না।” হযরত উমরের শাসনামলে হযরত উসমান হাকামকে মদীনায় ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দিলে তিনিও খলীফা আবু বকর যা বলেছিলেন ঠিক তাই বললেন। এরপর হযরত উসমান যখন নিজে খলীফা হন তখন তিনি নিজের বিচারবুদ্ধি অনুসরণ করে হাকাম ও তার পুত্র মারওয়ানকে মদীনায় ফিরিয়ে আনেন। সাহাবিগণ হযরত উসমানের এই কাজকে নবী ও পূর্ববর্তী খলীফাদ্বয়ের মতের প্রকাশ্য খেলাফ বলে প্রচার করেন। হযরত উসমান যে হাকাম ও তার সন্তানদের রাজনৈতিক সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে আগ্রহী ছিলেন,তাঁর কতিপয় আচরণ থেকে তা প্রমাণিত হয়। হাকাম-গোষ্ঠী নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হলে হযরত উসমানের বাহু সুদৃঢ় হবে,অনেকে তাঁর ব্যাপারে এরূপ বক্তব্য আরোপ করে। হাকাম ছিল হতদরিদ্র। হযরত উসমান হাকাম ও তার পুত্র হারিসকে প্রচুর অর্থ ও সম্পদ দান এবং তাকে খুযাআহ্ গোত্রের যাকাত আদায়কারীর পদে অধিষ্ঠিত করেন। উক্ত গোত্রের যাকাত বাবদ আদায়কৃত অর্থের পরিমাণ ৩০০০০০ দিরহাম হলে তিনি তা হাকামকে দিয়ে দেন।১২ তিনি হাকাম ও তৎপুত্র হারিসকে বাইতুল মাল থেকে ৩০০০০০ দিরহাম দান করেছিলেন। হাকামের মৃত্যুর পর তার কবরের ওপর খলীফা উসমান একটি তাঁবু খাটিয়ে দিয়েছিলেন। হারিসকে তিনি মদীনার বাজারের কর্তৃত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু সততা ও ধর্মের প্রতি নিষ্ঠার অভাবে হারিস ক্ষমতার অপব্যবহার করেছিল।
অন্যত্র উল্লেখ আছে,হযরত উসমান মারওয়ানকে আফ্রিকার যুদ্ধলব্ধ আয়ের এক-পঞ্চমাংশ (খুমস) এবং ফাদাক এলাকা দিয়েছিলেন যা মহানবী (সা.) হযরত ফাতেমাকে হিবা (দান) করেছিলেন। খলীফা উসমান মারওয়ানকে তাঁর সহকারী ও প্রধান সচিব হিসেবে নিয়োগ করেছিলেন।
প্রাদেশিক গর্ভনর ও শাসকদের প্রতি হযরত উসমানের নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের নীতি-বিরুদ্ধ কার্যকলাপ প্রশ্রয় দেয়ার কারণে রাসূলের কয়েকজন সাহাবীর সাথে তাঁর তীব্র বিরোধ হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ নিম্নোক্ত কয়েকটি ঘটনা উল্লেখ করা যায় :
প্রবীণ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ কতিপয় ঘটনার পর খলীফা উসমানের বিরোধী হন। ওয়ালীদ ইবনে উকবা ইবনে আবু মুয়ীত কুফার গভর্নর হওয়ার পর খলীফার অনুমতিক্রমে বাইতুল মাল থেকে ঋণ গ্রহণ করে। ঋণ পরিশোধের সময় পার হয়ে গেলে কোষাধ্যক্ষ আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ তাকে ঋণ পরিশোধ করার জন্য বার বার চাপ দিতে থাকেন। কিন্তু ওয়ালীদ সময় নিতে থাকে,ঋণ পরিশোধ করে না। ওয়ালীদ আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের কড়াকড়িতে ক্রুদ্ধ হয়ে তাঁর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ করে খলীফার কাছে পত্র প্রেরণ করে। খলীফা ইবনে মাসউদকে লিখেন “তুমি আমার খাজাঞ্চী মাত্র;বাইতুল মাল থেকে ওয়ালীদ যে ঋণ গ্রহণ করেছে তার জন্য তুমি কোন রকম পীড়াপীড়ি করো না।” এতে আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ অসন্তুষ্ট হলেন এবং বাইতুল মালের চাবি বুঝিয়ে দিয়ে ঘরে চলে গেলেন। এরপর তিনি জনগণের হেদায়েতের জন্য বক্তৃতা ও ওয়াজ-নসীহত করে বেড়াতে লাগলেন। বক্তৃতার সময় রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় উত্থাপিত হলে নির্ভীক ভাবে খলীফার কাজের ওপর মন্তব্য করতেন।
গভর্নর ওয়ালীদ খলীফাকে পত্র লিখে উল্লেখ করেছিল যে,আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদের বিভিন্ন উক্তি ও বক্তৃতা খলীফার প্রতি অবমাননাস্বরূপ। খলীফা উসমান তাঁকে মদীনায় পাঠিয়ে দিতে বললেন। ইবনে মাসউদকে সেই অনুসারে মদীনায় প্রেরণ করা হলো। ইবনে মাসউদ মদীনায় পৌঁছে যখন মসজিদে নববীতে প্রবেশ করলেন তখন খলীফা উসমান মিম্বারে দাঁড়িয়ে খুতবা দিচ্ছিলেন। ইবনে মাসউদকে আসতে দেখেই তিনি বলে উঠলেন,“ঐ দেখ! নষ্টের কীট আসছে। সে যে পাতে খায় সেখানেই বমি করে এবং মলত্যাগও করে।”১৩ ইবনে মাসউদ এ কথা শুনে বললেন,“আমি নিশ্চয়ই এরূপ নই। আমি বাইয়াতে রিদওয়ানে এবং বদরের যুদ্ধে রাসূলুল্লাহর সঙ্গী ছিলাম।” হযরত আয়েশা উচ্চৈঃস্বরে বললেন,“হে উসমান! আপনি রাসূলুল্লাহর সাহাবীকে এরূপ বলছেন?” ইবনে মাসউদকে জোরপূর্বক মসজিদ থেকে বহিষ্কৃত করা হলো। তাঁকে সজোরে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। সেই আঘাতে তার পশ্চাদভাগের হাড় ভেঙ্গে যায়। এ দেখে হযরত আলী উঠে দাঁড়িয়ে খলীফাকে প্রতিবাদ করে বললেন,“আপনি ওয়ালীদের কথায় এ সব করছেন?” খলীফা বললেন,“না,আমি ওয়ালিদের কথায় এ সব কাজ করছি না। আমি যুবাইদ ইবনে কসীরকে পত্র প্রেরণ করেছিলাম। সে শুনেছে,ইবনে মাসউদ আমার খুন বৈধ সাব্যস্ত করেছে।” হযরত আলী বললেন,“যুবাইদ নির্ভরযোগ্য লোক নয়।” অতঃপর হযরত আলী ইবনে মাসউদকে ঘরে পৌঁছে দেবার হুকুম দিলেন।১৪
এ ঘটনার পর আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ ২/৩ বছর বেঁচে ছিলেন। এ সময় তিনি খলীফার বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়েছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। ইবনে মাসউদ যখন শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তখন খলীফাকে কেউ সে সংবাদ জানায় নি। আম্মার ইবনে ইয়াসির তাঁর জানাযার নামায পড়িয়েছিলেন এবং খলীফার অগোচরে তাঁর দাফন কাজ সমাধা করা হয়।১৫
সাহাবী হযরত আবু যার (রা.)-কে নির্বাসনে প্রেরণ
হযরত আবু যার গিফারী মহানবী (সা.)-এর একজন নিবেদিত প্রাণ সাহাবী ছিলেন। তিনি মুসলমানদের মধ্যে চতুর্থ অথবা পঞ্চম ব্যক্তিত্ব যিনি মহানবীর প্রতি ঈমান আনয়ন করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন১৬ এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করতে গিয়ে অবর্ণনীয় অত্যাচার ও নির্যাতনের সম্মুখীন হয়েছিলেন,এমনকি এ পথে তাঁর জীবনও বিপন্ন হয়েছিল১৭। সাহাবী আবু যার গিফারী ছিলেন ধর্মভীরুতা,তাকওয়া-পরহেজগারী,সত্যবাদিতা,জ্ঞান এবং পার্থিবতার প্রতি নিরাসক্তির অত্যুজ্জ্বল নিদর্শন। মহানবীর নিকট থেকে তাঁর প্রসঙ্গে মুতাওয়াতির সূত্রে হাদীস বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন,
مَا أَظَلَّت الْخَضْرَاءُ وَ لَا أَقَلَّت الْغَبْرَاءُ عَلَى ذِيْ لَهْجَةٍ أَصْدَقَ مِنْ أَبِيْ ذَرّ,مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَنْظُرَ إِلَى زُهْدِ عِيْسَى بْنِ مَرْيَمَ فَلْيَنْظُرْ إِلَى أَبِيْ ذَرٍّ.
“আবু যারের চেয়ে অধিকতর সত্যবাদী কোন ব্যক্তির ওপর না আসমান ছায়া ফেলেছে,আর না পৃথিবী ধারণ ও বহন করেছে। যদি কোন ব্যক্তি হযরত ঈসা ইবনে মারিয়মের যুহদ (কৃচ্ছ্রতা সাধনা এবং দুনিয়া ত্যাগী বৈশিষ্ট্য) দেখতে চায় সে যেন আবু যারের দিকে দৃষ্টিপাত করে।...”১৮
মহানবী থেকে নিম্নোক্ত হাদীসটিও মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে :
إِنَّ اللهَ عَزَّ وَ جَلَّ أَمَرَنِيْ بِحُبِّ أَرْبَعَةٍ وَ أَخْبَرَنِيْ أَنَّهُ يُحِبُّهُمْ : قِيْلَ : يَا رَسُوْلَ اللهِ مَنْ هُم؟ قَالَ : عَلِيٌّ مِنْهُمْ يَقُوْلُ ذالِكَ ثَلاَثاً وَ أَبُوْ ذَر وَ سَلْمَان وَ المقداد
“মহান আল্লাহ্ আমাকে চার ব্যক্তিকে ভালবাসতে আদেশ করেছেন এবং আমাকে জানিয়েছেন,তিনিও তাদেরকে ভালবাসেন। জিজ্ঞেস করা হলো : হে রাসূলুল্লাহ্! তারা কারা? তিনি বললেন,“আলী তাদের একজন।” এ কথাটি তিনি তিন বার বললেন। “(অন্য তিন জন) আবু যার,সালামান ও মিক্দাদ।”১৯
মহানবীর নিকট থেকে বর্ণিত হয়েছে :اَلْجَنَّةُ تشْتاقُ إِلَى ثَلاَثَةٍ : عَلِيٌّ وَ عَمَّار وَ أَبُوْ ذَر “জান্নাত তিন ব্যক্তির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে;তারা হলো আলী,আম্মার ও আবু যার।”২০
পবিত্র ইসলাম ধর্মকে রক্ষা করতে গিয়ে আবু যারকে যে সব বিপদাপদ,বঞ্চনা ও লাঞ্চনা সহ্য করতে হবে সে দিকে ইঙ্গিত করে মহানবী (সা.) বলেছিলেন,
رَحِمَ اللهُ أَبَا ذَرّ,يَمْشِي وَحدَهُ وَ يَمُوْت وَحْدَهُ وَ يُبْعَثُ وَحْدَهُ
“মহান আল্লাহ্ আবু যারের ওপর দয়া করুন;কারণ সে একা হাঁটবে (পথ চলবে),একাকী মৃত্যু বরণ করবে এবং একাকী পুনরুত্থিত হবে।”২১
আবু যার যিনি এতসব সম্মানের অধিকারী এবং যাঁর গুটিকতক ফজীলত এখানে উল্লেখ করা হয়েছে তিনি তৃতীয় খলীফা হযরত উসমানের বাইতুল মালের অর্থ ও সম্পদ লাগামহীন ভাবে ও বিনা হিসেবে ব্যাপক দয়া-দাক্ষিণ্য ও দান এবং প্রশাসন যন্ত্রের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সীমাহীন দুর্নীতি ও শরীয়ত বিরোধী কার্যকলাপের তীব্র সমালোচনা করতে থাকেন। সত্য ভাষণ ও বস্তুনিষ্ঠ সমালোচনা করার কারণে হযরত আবু যারকে তৃতীয় খলীফা প্রথমে শামে এবং এরপর শুষ্ক ও উত্তপ্ত মরুভূমি রাবযায় নির্বাসন দিয়েছিলেন। আবু যারকে রাবযায় নির্বাসন করার সময় তৃতীয় খলীফা হযরত উসমান নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন মদীনার কোন অধিবাসী আবু যারকে বিদায় না জানায় এবং তাঁর সাথে কথা না বলে। খলীফা তাঁর প্রধান সহকারী ও সচিব মারওয়ানকে এ ব্যাপারে সার্বিক দায়িত্ব প্রদান করেন।
কিন্তু আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) হযরত আবু যারের ইসলামে উচ্চ মর্যাদা ও সম্মানের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য খলীফার নির্দেশ উপেক্ষা করে নিজ পুত্রদ্বয় ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন,ভ্রাতা আকীল,ভ্রাতুষ্পুত্র ও জামাতা আবদুল্লাহ্ ইবনে জাফর এবং আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.)-কে সাথে নিয়ে এ সাধক পুরুষকে বিদায় জানানোর জন্য বের হলেন এবং তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। এ সময় ইমাম হাসান অগ্রসর হয়ে হযরত আবু যারের সাথে কথোপকথন করতে থাকেন।
মারওয়ান যখন ইমাম হাসানকে দেখতে পেল তখন তাঁর দিকে তাকিয়ে বলল,“হাসান! তোমার কি জানা নেই,উসমান এ ব্যক্তির সাথে কথা বলা নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছেন? যদি তা জেনে না থাকো তাহলে এখন জেনে নাও।”
আমীরুল মুমিনীন আলী মারওয়ানের ঔদ্ধত্যপূর্ণ উক্তি শুনে সামনে এগিয়ে গেলেন এবং মারওয়ানের সওয়ারী পশুর কানে চাবুক মেরে তার সামনে উচ্চ কণ্ঠে বললেন,
تنَحِّ نَحَّاكَ اللهُ إِلَى النَّارِ “দূর হ! মহান আল্লাহ্ তোকে দোযখের দিকে তাড়িয়ে নিয়ে যাক।”
মারওয়ান এ অবস্থা প্রত্যক্ষ করে সেখান থেকে সরে পড়ল এবং খলীফা উসমানের কাছে পৌঁছে পুরো ঘটনা সবিস্তারে বর্ণনা করল।
আমীরুল মুমিনীন আলী হযরত আবু যারের কাছে গেলেন এবং তাঁকে বিদায় জানালেন। বিদায় জানানোর সময় আবু যারকে আলী তাঁর বেদনাক্লিষ্ট হৃদয় থেকে উৎসারিত নিম্নোক্ত অতি তাৎপর্যপূর্ণ কথাগুলো বলেছিলেন,
يَا أَبَا ذَرّ إِنَّكَ غَضَبْت لِلَّهِ فَارْجُ مَنْ غَضَبْت لَهُ. إِنَّ الْقَوْمَ خَافُوْكَ عَلَى دُنْيَاهُمْ,وَ خِفْتهُمْ عَلَى دِيْنِكَ. فَاترُكْ فِيْ أَيْدِيْهِمْ مَا خَافُوْكَ عَلَيْهِ,وَ اهْرُبْ مِنْهُمْ بِمَا خِفْتهُمْ عَلَيْهِ,فَمَا أَحْوَجَهُمْ إِلَى مَا مَنَعْتهُمْ,وَ مَا أَغْنَاكَ عَمَّا مَنَعُوْكَ وَ سَتعْلَمُ مَنِ الرَّابِحُ غَداً وَ الْأَكْثَرُ حُسَّداً,وَ لَوْ أَنَّ السَّمَاوَات وَ الْأَرْضِيْنَ كَانَتا عَلَى عَبْدٍ رَذقاً ثُمَّ اتّقَى اللهَ لَجَعَلَ اللهُ مِنْهُمَا مَخْرَجاً,لَا يُوْنِسَنَّكَ إِلَّا الْحَقُّ وَ لَا يُوْحِشَنَّكَ إِلَّا الْبَاطِلُ فَلَوْ قَبِلْت دُنْيَاهُمْ لَأَحَبُّوْكَ,وَ لَوْ قَرَضْت مِنْهَا لَأَمِنُوْكَ.
“হে আবু যার! আপনি মহান আল্লাহর জন্য ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন। তাই যার জন্য আপনি আপনার ক্রোধ প্রকাশ করেছেন কেবল তাকেই চান। এ সব লোক (বনু উমাইয়্যা ও প্রশাসনের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তা ও প্রদেশিক শাসনকর্তাগণ) তাদের দুনিয়ার ভবিষ্যতের ব্যাপারে আপনাকে ভয় করেছে;আর আপনি আপনার দীনের ব্যাপারে তাদের থেকে শঙ্কিত ছিলেন। তাই যে ব্যাপারে তারা আপনাকে ভয় করেছে তা তাদের হাতে ছেড়ে দিন;আর যে ব্যাপারে আপনি তাদেরকে ভয় করেছেন তার জন্য আপনি তাদের নাগাল থেকে দূরে চলে যান। আপনি যে জিনিস থেকে এদের বাধা দিয়েছেন সে জিনিসের প্রতি এরা কতই না মুখাপেক্ষী! আর এরা আপনাকে যে জিনিস থেকে বঞ্চিত করেছে সে জিনিসটির প্রতি আপনি কতই না অমুখাপেক্ষী! আর অতিশীঘ্রই আগামীকাল কিয়ামত-দিবসে আপনি জানতে পারবেন,কে সবচেয়ে বেশি লাভবান আর অধিকাংশই তো মুনাফা অর্জনকারী কে এবং কার হিংসুকরা সবচেয়ে বেশি।
সমগ্র আকাশ এবং পৃথিবীও যদি কোন বান্দার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে রুদ্ধ ও বদ্ধ হয়ে যায় এবং ঐ বান্দা যদি মহান আল্লাহকে ভয় করে,তাহলে মহান আল্লাহ্ অবশ্যই ঐ বান্দার নাজাতের পথ বের করে দেবেন।
(হে আবু যার!) কেবল সত্য ব্যতীত আর কিছুই যেন আপনার সঙ্গী না হয় এবং বাতিল ব্যতীত আর কিছুই যেন আপনাকে ভীত ও শঙ্কিত না করে। আপনি যদি এদের দুনিয়া গ্রহণ করতেন (এবং আপনি যদি তাদের সাথে সহযোগিতা করতেন) তাহলে তারা আপনাকে ভালবাসত;আর আপনি যদি আপনার জন্য দুনিয়া থেকে কিছু গ্রহণ করতেন তাহলে তারা আপনাকে নিরাপদে থাকতে দিত।”২২
আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী অতি মূল্যবান এ বক্তব্য প্রদান করার পর সকলের দিকে তাকিয়ে বললেন,“তোমাদের চাচাকে বিদায় দাও।”
এরপর আকীলকে লক্ষ্য করে হযরত আলী বললেন,“আপনার ভাইকে বিদায় দিন।” তখন আকীল হযরত আবু যারের উদ্দেশ্য কিছু কথা বললেন এবং তন্মধ্যে নিম্নোক্ত উক্তিটিও ছিল :
“হে আবু যার! আমরা আর কি বা বলতে পারি,আপনি তো জানেনই,আমরা আপনাকে ভালবাসি এবং আপনিও আমাদের ভালবাসেন। আপনি আল্লাহকে ভয় করুন;কারণ তাকওয়াই মুক্তির একমাত্র পথ।”
এরপর ইমাম হাসান হযরত আবু যারের উদ্দেশ্যে বললেন,“হে চাচাজান! বিদায় দানকারীর মৌনতা অবলম্বনই যদি যথার্থ এবং তার প্রত্যাবর্তনই যদি শ্রেয় হতো তাহলে কথা সংক্ষিপ্ত হতো যদিও আক্ষেপ ও পরিতাপ দীর্ঘস্থায়ী হয়ে যেত। এ গোষ্ঠীটি আপনার সাথে যে আচরণ করেছে তা তো আপনি নিজেই প্রত্যক্ষ করেছেন। তাই এ জগৎ থেকে বিচ্ছেদ ও এ জগতের পরে যে (অসীম-অবিনশ্বর) জগৎ আছে তা পাওয়ার আশায় এ জগতের সকল গ্লানি,দুঃখ-কষ্ট ও যাতনার তীব্রতার কথা স্মরণ করেই এ (নশ্বর-পার্থিব) জগৎ ত্যাগ করুন। আর মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আপনার প্রতি সন্তুষ্ট থাকাবস্থায় তাঁর সাথে আপনার সাক্ষাৎ করা পর্যন্ত ধৈর্য ধারণ করুন।”
এরপর ইমাম হুসাইন (আ.)* হযরত আবু যার গিফারীকে বললেন,“হে চাচা! আপনি যে অবস্থা প্রত্যক্ষ করেছেন নিশ্চয় মহান আল্লাহ্ তা পরিবর্তন করতে সক্ষম। মহান আল্লাহ্ প্রতিদিনই কাজ করে যাচ্ছেন। এই সম্প্রদায় আপনাকে তাদের দুনিয়া থেকে বঞ্চিত করেছে আর আপনি তাদের আপনার দীন থেকে বঞ্চিত করেছেন। তারা যা থেকে আপনাকে বঞ্চিত করেছে তার প্রতি আপনি কতই না অমুখাপেক্ষী! আর আপনি তাদের যা থেকে বঞ্চিত করেছেন তার প্রতি তারা কতই না মুখাপেক্ষী! অতএব,মহান আল্লাহর কাছে ধৈর্য ও সাহায্য প্রার্থনা করুন এবং তাঁর কাছে লোভ-লালসা ও ভয়-ভীতি থেকে আশ্রয় গ্রহণ করুন। কারণ ধৈর্য ধর্ম ও মহানুভবতারই অন্তর্ভুক্ত। আর লোভ-লালসা রিযিক (জীবিকা) আনয়ন করে না এবং ভয়-ভীতিও মানুষের অন্তিম মুহূর্তকে (মৃত্যুকাল) পিছিয়ে দেয় না।
এরপর বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসির (রা.) ক্ষোভ ও ক্রোধ প্রকাশ করে এমন সব কথা বললেন যা খলীফার এ পদক্ষেপের প্রতি তাঁর তীব্র অসন্তোষ ও দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়ারই প্রমাণ।২৩
বৃদ্ধ আবু যার (রা.) তাঁদের এ সব কথা ও বক্তব্য শুনে কাঁদলেন এবং তাদের লক্ষ্য করে বললেন,“হে রহমতের নবীর আহলে বাইত! আপনাদের ওপর মহান আল্লাহ্ দয়া করুন,যখনই আমি আপনাদের দেখি তখনই আমার রাসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর কথা স্মরণ হয়। আপনারা ব্যতীত মদীনায় আমার কোন আত্মীয়-স্বজন ও প্রিয় বন্ধু-বান্ধব নেই। আমি যেমন শামে মুয়াবিয়ার জন্য ভারী-বোঝা হয়ে গিয়েছিলাম ঠিক তেমনি হিজাযে খলীফা উসমানের জন্যও ভারী বোঝা হয়ে গিয়েছি। অন্য দু’টি শহরে২৪ তাঁর ভ্রাতা এবং খালাত ভাইয়ের পাশে আমার থাকাটিও সে (খলীফা উসমান) অপছন্দ করেছে এই কারণে যে,হয়তো আমি জনগণকে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে পারি। তাই সে আমাকে এমন এক স্থানে নির্বাসন দিয়েছে যেখানে মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আমার আর কোন সাহায্যকারী ও বিপদাপদ প্রতিহতকারী নেই। মহান আল্লাহর শপথ! আমি একমাত্র মহান আল্লাহ্ ব্যতীত আর কাউকে বন্ধু হিসেবে চাই না। আর মহান আল্লাহর সান্নিধ্যে আমি কোন কিছুতেই ভীতসন্ত্রস্ত নই।”
এরপর আমীরুল মুমিনীন আলী (আ.) এবং তাঁর সঙ্গীরা হযরত আবু যার গিফারীকে বিদায় দিয়ে নিজ গৃহে প্রত্যাবর্তন করেন।
খলীফা উসমান এ ঘটনাটি জানতে পেরে ইমাম আলীর কাছে কাউকে পাঠিয়ে আপত্তি জানিয়ে বললেন,“কেন আপনি আমার নির্দেশ উপেক্ষা করেছেন এবং মারওয়ানকে তিরস্কার করেছেন?” ইমাম আলীও খলীফা উসমানের উক্ত বক্তব্যের জবাব দিয়েছিলেন।২৫
হযরত আবু যার গিফারীকে রাবযায় নিয়ে যাওয়া হলো। যেখানকার আবহাওয়া ছিল নিকৃষ্ট,শুষ্ক ও উত্তপ্ত। সেখানে তিনি বসবাস শুরু করলেন। কিছু দিন পরে তিনি অসুস্থ হয়ে গেলেন এবং ঐ অসুস্থতার মধ্যেই মৃত্যুবরণ করেন। সেখানেই তাঁকে দাফন করা হয়।
ইবনে আবদুল বার ইস্তিয়াব গ্রন্থে ‘জুন্দুব’ (جندب) অধ্যায়ে হযরত আবু যারের ওফাত ও লাশ দাফন করা সংক্রান্ত একটি হাদীস বর্ণনা করেছেন যা অন্যান্য হাদীসবেত্তাও বর্ণনা করেছেন। হাদীসটি হলো :
যখন আবু যারের অন্তিম মুহূর্ত ঘনিয়ে আসলো তখন তাঁর স্ত্রী উম্মে যার কাঁদতে লাগলেন। হযরত আবু যার তাঁকে বললেন,“তুমি কেন কাঁদছ?” উম্মে যার বললেন,“আমি কেন কাঁদব না যখন আপনি একটি শুষ্ক ও উত্তপ্ত মরু এলাকায় মৃত্যুবরণ করছেন,অথচ আপনাকে কাফন দেয়ার মত পর্যাপ্ত পরিমাণ বস্ত্র আমার কাছে নেই এবং আপনাকে অবশ্যই কাফনের কাপড় পড়াতে ও সৎকার করতে হবে?”
আবু যার তখন বলেছিলেন,“সুসংবাদ গ্রহণ কর এবং কেঁদো না;কারণ আমি মহানবীকে কয়েকজন ব্যক্তিকে লক্ষ্য করে বলতে শুনেছি যাদের মধ্যে আমিও ছিলাম,তোমাদের মধ্য থেকে একজন অবশ্যই একটি শুষ্ক ও উত্তপ্ত মরুভূমিতে প্রাণ ত্যাগ করবে যার কাছে তখন একদল মুমিন উপস্থিত থাকবে। ঐ কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে একজন ব্যতীত সবাই গ্রামে ও জনপদে মারা গেছে। আর বেঁচে থাকা ব্যক্তিটি হলাম আমি। মহান আল্লাহর শপথ,আমি মিথ্যা বলি নি এবং আমাকে মিথ্যা বলা হয় নি। অতএব,এখন পথের ওপর দৃষ্টি রাখ।”
উম্মে যার আবু যারকে বললেন,“কোথা থেকে কখন কে আসবে? কারণ হাজীরা সবাই গেছে এবং পথও বন্ধ হয়ে গেছে।” আবু যার বললেন,“আবার যাও এবং ভালো করে দেখতে থাক।” উম্মে যার বলেন,“আমি নিকটস্থ একটি বালুর ঢিবির ওপর কয়েকবার উঠলাম এবং পুনরায় ফিরে এসে মৃত্যুপথযাত্রী আবু যারের সেবা শুশ্রুষা করতে লাগলাম। ইত্যবসরে দূর থেকে কয়েকজন আরোহীকে দেখতে পেলাম যারা ঈগল পাখীর মত অশ্বের ওপর সওয়ার ছিল। আর তাদের ঘোড়াগুলো দ্রুত ছুটে চলছিল। তারা দ্রুত আমার কাছে পৌঁছে জিজ্ঞেস করল : হে আল্লাহর দাসী! এখানে আপনি কি করছেন?
তখন আমি বললাম : একজন মুসলমান এখানে মৃত্যু শয্যায় শায়িত। আপনারা এসে তাকে কাফন পড়ান।
তারা জিজ্ঞেস করল : তার নাম কি? আমি বললাম : আবু যার। ওরা জিজ্ঞেস করল : মহানবীর সাহাবী আবু যার? আমি বললাম : হ্যাঁ। তারা বলল : আমাদের পিতা-মাতা তাঁর জন্য উৎসর্গীকৃত হোক। এরপর তারা খুব দ্রুত আবু যারের কাছে গেল। হযরত আবু যার তাদেরকে বললেন : আপনারা সুসংবাদ গ্রহণ করুন। একদা কয়েকজন ব্যক্তি যাদের মধ্যে আমিও ছিলাম তাদেরকে লক্ষ্য করে মহানবীকে বলতে শুনেছি,তোমাদের মধ্যে এক ব্যক্তি শুষ্ক মরুপ্রান্তরে মৃত্যু বরণ করবে এবং তার মৃত্যুর সময় একদল মুমিন তার কাছে উপস্থিত হবে। ঐ কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে কেবল একজন ব্যতীত বাকী সবাই গ্রামে ও জনপদে মৃত্যুবরণ করেছে। আর ঐ ব্যক্তি হলাম আমি। মহান আল্লাহর শপথ,আমি মিথ্যা বলি নি এবং আমাকেও মিথ্যা বলা হয় নি। যদি আমার ও আমার স্ত্রীর কাছে আমার অথবা তার কোন বস্ত্র থাকত তাহলে ঐ কাপড় ছাড়া অন্য কোন কাপড়ে আমাকে কাফন দেয়ার ব্যাপারে আমি সম্মত হতাম না। আর আমি আপনাদের মহান আল্লাহর শপথ করে বলছি,আপনাদের মধ্যে সেই আমাকে কাফন দেবে যে আমীর অথবা কোন দল বা গোষ্ঠীর নেতা অথবা দূত নয়।”
যারা ঐ কাফেলায় ছিল তাদের প্রত্যেকেই উক্ত পদসমূহের কোন একটির অধিকারী ছিল। কেবল একজন আনসার যুবক ব্যতীত। সে বলল : হে চাচাজান! আমি আমার এ আবা এবং এ দু’টি জামা দিয়ে আপনাকে দাফন করব যা আমার একমাত্র সম্বল এবং যা আমার মা আমার জন্য সেলাই করেছেন।”
আবু যার বললেন : ঠিক আছে তুমি আমাকে কাফন পড়াবে। এরপর আবু যার মৃত্যু বরণ করলেন। ঐ কাফেলার লোকেরা তাঁকে গোসল দিল এবং উক্ত আনসার যুবকটি তাঁকে কাফনের কাপড় পড়াল এবং সকলে মিলে তাঁকে দাফন করলেন।
স্মর্তব্য,ঐ কাফেলার মধ্যে সাহাবী হুজুর ইবনে আদী ছিলেন যাঁকে মুয়াবিয়া হত্যা করেছিলেন এবং মালিক ইবনে হারেস আল-আশতারও ছিলেন যাঁকে মুয়াবিয়ার নির্দেশে বিষ প্রয়োগ করে হত্যা করা হয়েছিল।
(চলবে)
তথ্যসূত্র :
১. ইবনে আবদুল বার,আল ইস্তিয়াব,২য় খণ্ড,পৃ. ৪৬৭;ড. ত্বাহা হোসেন (মিসরী) প্রণীত ‘হযরত ওসমান’-এর মৌলানা নূরুদ্দীন আহমদ কৃত অনুবাদ ১৮৪-১৮৫ পৃষ্ঠা এবং মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ্ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ৮৩-৮৪,আহমদ পাবলিশিং হাউস কর্তৃক প্রকাশিত
২. তাবাকাতে ইবনে সা’দ ৩য় খণ্ড,পৃ. ৬৪,৫ম খণ্ড,পৃ. ৩৬;মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ৮১।
৩. মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ৮২।
৪. খিলাফতের ইতিহাস,পৃ. ৬৯,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ৮৪।
৫. আল্লামাহ্ সুয়ূতী প্রণীত তারীখুল খুলাফা,পৃ. ১৯৭,দারুল কালাম আল-আরাবী,আলেপ্পো সিরিয়া কর্তৃক প্রকাশিত।
৬. খিলাফতের ইতিহাস,পৃ. ৬৮,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১২১।
৭. ড. ত্বাহা হোসেন প্রণীত ‘হযরত ওসমান’-এর মৌলানা নূরুদ্দীন আহমদ কৃত অনুবাদের ১৮৩-৮৪ পৃ. এবং মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১২৪।
৮. মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১২১।
৯. খিলাফতের ইতিহাস,পৃ. ৬৯ ও ৮৭,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১২২।
১০. খিলাফতের ইতিহাস,পৃ. ৬৪,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১২২।
১১. ড. ত্বাহা হোসেন (মিসরী) প্রণীত ‘হযরত ওসমান’-এর মৌলানা নূরুদ্দীন আহমদ কৃত অনুবাদ,২১০-২২৬ পৃষ্ঠা এবং মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১০২।
১২. আল বালাযুরী প্রণীত আনসাবুল আশরাফ,৫ম খণ্ড,পৃ. ২৪;আল আসকালানী প্রণীত আল-ইসাবাহ্ ফী তাময়ীযিস্ সাহাবা,১ম খণ্ড পৃ. ৩৪৫।
১৩. মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ্ প্রণীত হযরত ওসমান পৃ. ১০৫।
১৪. ড. ত্বাহা হোসেন মিসরী প্রণীত ‘হযরত ওসমান’-এর মৌলানা নূরুদ্দীন আহমদ কৃত অনুবাদ ১৭৮-১৮৮ পৃষ্ঠা।
১৫. মুহাম্মদ বরকতুল্লাহ প্রণীত হযরত ওসমান,পৃ. ১০৬।
১৬. উসদুল গাবাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০১ এবং ৫ম খণ্ড পৃ. ১৮৭;তাবাকাতে ইবনে সা’দ,৪র্থ খণ্ড,পৃ. ১৬১।
১৭. মুসনাদে আহমদ ইবনে হাম্বল,৫ম খণ্ড,পৃ. ১৭৪;মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ,৯ম খণ্ড পৃ. ৩২৯।
১৮. সুনানে ইবনে মাজাহ্,১ম খণ্ড,পৃ. ৯৬,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত;জামে তিরমিযী,আওয়াবুল মানাকিব,৬ষ্ঠ খণ্ড,পৃ. ৩৬৯,বাংলাদেশ ইসলামিক সেন্টার ঢাকা;উসদুল্ গাবাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ৩০১।
১৯. সুনানে ইবনে মাজাহ্,৯ম খণ্ড,পৃষ্ঠা ৯৩-৯৪,ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত।
২০. মাজমাউয্ যাওয়ায়েদ,৯ম খণ্ড,পৃ. ৩৩০।
২১. সীরাতে ইবনে হিশাম।
২২. নাহজুল বালাগাহ্,খুতবা নং ১২৮।
২৩. হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসিরের বক্তব্য সম্পর্কে ব্যাপকভাবে জানতে হলে দেখুন ইবনে আবীল হাদীদ কর্তৃক প্রণীত ‘শারহু নাহজিল বালাগা’র ২য় খণ্ড;পৃ. ৩৭৫।
২৪. দুই শহর বলতে তিনি বসরা ও মিসরকে বুঝিয়েছেন। হযরত উসমানের মামাতো ভাই আবদুল্লাহ্ ইবনে আমের বসরার শাসনকর্তা ছিল এবং তার বৈপিত্রেয় ভ্রাতা আবদুল্লাহ্ ইবনে আবী সারাহ্ মিসর শাসন করত।
২৫. ইবনে আবীল হাদীদ প্রণীত শারহু নাহজিল বালাগাহ্,২য় খণ্ড,পৃ. ৩৭৫-৩৭৬,বাকের শরীফ প্রণীত হায়াতুল ইমাম হাসান,১ম খণ্ড,পৃ. ২৮৫।
source : alhassanain