বাঙ্গালী
Saturday 18th of May 2024
0
نفر 0

বিশ্বনবী (সা.)র একাধিক বিয়ে করার কারণ কি?

রাসূলুল্লাহ (সা.) যখন প্রথমবার বিয়ে করেন তখন তাঁর বয়স ছিল ২৫ বছর এবং তাঁর স্ত্রী বিবি খাদিজার বয়স ছিল ৪০ বছর। যতদিন হযরত খাদিজা (সালামুল্লাহি আলাইহা) জীবিত ছিলেন ততদিন রাসূলুল্লাহ (সা.) অন্য কোন বিয়ে করেননি। হযরত খাদিজার প্রতি বিশ্বনবীর (সা.) ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল প্রবল। কারণ, আমৃত্যু তিনি রাসূল (সা.) এর পক্ষে ইসলামের জন্য কাজ করেছেন। এমনকি তিনি নিজের বিপুল ধন-সম্পদ ইসলামের জন্য বিলিয়ে দিয়েছেন।

হযরত খাদিজার মৃত্যুর পর রাসূলুল্লাহ (সা.) শুধু যে সারাক্ষণ তাঁর নাম উচ্চারণ করতেন তাই নয়, সেইসঙ্গে হযরত আয়েশার ভাষ্যমতে, রাসূল (সা.) হযরত খাদিজাকে আদর্শ স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করাতেন। তবে হযরত খাদিজার মৃত্যুর পর বিশ্বনবী (সা.) আবার বিয়ে করেন। ঐতিহাসিকরা রাসূল (সা.)র ৯ জন স্ত্রীর কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁরা হলেন হযরত হাফসা, হযরত আয়েশা, হযরত সাওদা, হযরত মায়মুনা, জেহেশের কন্যা হযরত জয়নাব, হযরত উম্মে সালমা, হারেসের কন্যা হযরত জুয়াইরা, হযরত মারিয়া ও হযরত সুফিয়া।

তবে এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূলুল্লাহ (সা.)’র জীবনে দুনিয়াবি ভোগ-বিলাস বা ঋপুর তাড়নার কোনো স্থান ছিল না। সাধারণত রাসূল (সা.) কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যে বিয়েগুলো করেছিলেন। বিশ্বনবীর স্ত্রীদের বেশিরভাগই ছিলেন বিধবা নারী এবং ইয়াতিম ও অবহেলিত শিশুদের রক্ষা করার জন্যই মূলত তিনি এসব বিয়ে করেন। এ ছাড়া, যেসব সম্ভ্রান্ত নারী সারাজীবন সম্মানিত জীবনযাপন করেছেন এবং স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় ও হতদরিদ্র হয়ে পড়েন তাদেরকে মূলত নিরাপত্তা দেয়া ও ঈমানের সঙ্গে জীবনযাপনের সুযোগ করে দেয়ার জন্য বিয়েগুলো করেছিলেন রাসূলে খোদা। স্বামীর মৃত্যুর পর এসব নারীর গোত্রের অধিপতিরা তাদেরকে আবার কুফুরি জীবনে ফিরে যেতে বাধ্য করছিল।

যেমন, হযরত সাওদা যখন স্বামীর মৃত্যুর পর অসহায় হয়ে পড়েন তখন রাসূল (সা.) তাকে বিয়ে করেন। এই মহিয়সী নারী যখন হাবশায় (বর্তমান ইথিওপিয়া) হিজরত করেন তখন তাঁর স্বামী মারা যান। এ অবস্থায় তার গোত্রের লোকেরা তাকে জোর করে কুফরির দিকে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল।

রাসূলুল্লাহ (সা.) আবার কিছু বিয়ে করেছিলেন ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা এবং অন্ধ বিশ্বাস দূর করতে। তার মধ্যে একটি হল জেহেশের কন্যা হযরত জয়নাবের সঙ্গে রাসূলের বিয়ে। হযরত জয়নাব বিশ্বনবী (সা.)র এর ফুফাতো বোন ছিলেন। হযরত জয়নাবকে প্রথমে রাসূল (সা.)এর পালকপুত্র জায়েদ বিন হারেস বিয়ে করেছিলেন এবং ওই বিয়েটি রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নির্দেশেই সম্পন্ন হয়। হযরত জয়নাব ছিলেন কুরাইশ বংশের অধিপতি আব্দুল মুত্তালিবের নাতি। অন্যদিকে জায়েদ বিন হারেস বংশগত দিক দিয়ে ছিলেন একজন ক্রীতদাস যাকে রাসূল (সা.) মুক্ত করে নিজের পালকপুত্রের সম্মান দিয়েছিলেন।

হযরত জয়নাব উচ্চ বংশ মর্যাদার কারণে সব সময় অহংকার করতেন যার কারণে ক্রীতদাস পরিবার থেকে উঠে আসা জায়েদের সঙ্গে তার সবসময় ঝগড়া-বিবাদ লেগে থাকত। এমনকি এ ব্যাপারে বিশ্বনবী (সা.)র পরামর্শও কোনো কাজে আসেনি। এক পর্যায়ে জায়েদ হযরত জয়নাবকে তালাক দেন। এ অবস্থায় আরব সমাজে প্রচলিত একটি কুসংস্কার দূর করার লক্ষ্যে আল্লাহর নির্দেশে রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত জয়নাবকে বিয়ে করেন।

আরব সমাজে তখন পর্যন্ত কোনো ধরনের ধর্মীয় দলিল-প্রমাণ ছাড়াই পালকপুত্রকে আপন সন্তানের মর্যাদা দেয়া হত এবং পালক পুত্রের তালাক দেয়া স্ত্রীকে কেউ বিয়ে করত না। এ ধরনের যুক্তিহীন ও অজ্ঞতাপূর্ণ প্রথা বাতিল করতে রাসূলুল্লাহ (সা.) হযরত জয়নাবকে বিয়ে করেন।

মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মাদ (সা.) ক্রীতদাস ও যুদ্ধবন্দীদের মুক্ত করার জন্যও কখনও কখনও বিয়ে করেছেন। যেমন তিনি বনি মোস্তালাক গোত্রের নারী হজরত জুয়াইরিয়াকে বিয়ে করেছিলেন। জুয়াইরিয়া মুসলিম বাহিনীর বিরুদ্ধে তার গোত্রের মানুষের যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর হাতে বন্দী হয়েছিলেন। হজরত জুয়াইরিয়া বিশ্বনবীর সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর যুদ্ধবন্দীদের অনেকেই রাসূলুল্লাহ’র আত্মীয় হয়ে যান। ফলে মুসলমানরা ওই যুদ্ধে আটক প্রায় সব বন্দীকে মুক্ত করে দেন। এ সম্পর্কে ইবনে হিশাম বলেন: “রাসূল (সা.)এর এ বিয়ের কারণে বনি মুস্তালাক গোত্রের শতাধিক বন্দি পরিবার মুক্তি পেয়ে যায়।”

রাসূলুল্লাহ (সা.)’র একাধিক বিয়ে করার আরেকটি কারণ ছিল শত্রু ভাবাপন্ন বড় গোত্রগুলোর মধ্যে হৃদ্যতার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করা। অজ্ঞতার যুগে বিভিন্ন শত্রু ভাবাপন্ন গোত্র যুগের পর যুগ ধরে নিজেদের মধ্যে শত্রুতা জিইয়ে রাখতো এবং রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে প্রাণহানি ঘটাতো। বিশ্বনবী এর অবসান ঘটাতেও একাধিক বিয়ে করেন। এ ধরনের বিয়ের উদাহরণ হিসেবে হজরত আয়েশা ও হজরত হাফসার সঙ্গে রাসূলুল্লাহর (সা.) বিয়ের কথা উল্লেখ করা যায়।

একমাত্র হজরত আয়েশা ছাড়া রাসূলুল্লাহ (সা.)র বাকি সব স্ত্রীই বিধবা ছিলেন। সেইসঙ্গে তাদের প্রায় সবাই ছিলেন বৃদ্ধা। আর এ থেকেই প্রমাণিত হয়, রাসূল (সা.) কখনই দুনিয়ার ভোগ-বিলাসিতার জন্য বিয়ে করেননি; বরং তিনি নানা মহৎ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য এসব বিয়ে করেছিলেন যার কয়েকটি এখানে উল্লেখ করা হল।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

সালাতে তারাবী না তাহাজ্জুদ ?
আকাশ, পৃথিবী ও হযরত আদম (আ.) সৃষ্টি ...
দুঃখ-কষ্ট মোকাবেলার উপায়
কোরআনের দৃষ্টিতে : আহলে নাজাত্ ...
আদর্শ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) - ১ম ...
আমীরুল মু’মিনীন হযরত আলী (আ.) এর ...
মানব জীবনে নেতার গুরুত্ব
বাস্তবতার দর্পনে ওহাবি মতবাদ ...
পবিত্র হাদিসে দোয়া
নারীকুল শিরোমণি হযরত ফাতেমা ...

 
user comment