মহানবী (সাঃ) যে রেসালাতের দায়িত্ব পালন করে গিয়েছেন, আল্লাহ তার বান্দার কাছ থেকে তাঁর রেসালাতের পারিশ্রমিক বাবদ মহানবী (সাঃ) -এর আহলে বাইত-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালোবাসা) ফরয করে দিয়েছেন। যদি আমরা আহলে বাইতকে প্রাণাধিক ভালো না বাসি, আনুগত্য না করি, তাহলে আল্লাহর হুকুম অকার্যকর থেকে যাবে বা মানা হবে না, তাই হুকুম হচ্ছে।
“বলুন, আমি আমার রিসালাতের পারিশ্রমিক তোমাদের কাছে কিছুই চাই না, শুধু আমার কুরবা (আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা) ব্যতিত।” (সূরা-শুরা, আয়াত-২৩) ।
হযরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) বর্ণনা করেছেন যে, যখন এই আয়াত নাযিল হলো তখন সাহাবাগণ জিজ্ঞেস করলেন, “ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কাঁরা আপনার নিকট আত্মীয়? যাদের মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা) পবিত্র কোরআনে উম্মতের উপর ফরজ করা হয়েছে। উত্তরে নবী (সাঃ) বললেন-আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্য)।” সূত্রঃ- কোরআন শরীফ (শুরা,২৩) (আশরাফ আলী থানভী), পৃঃ-৬৯২;তাফসীরে মাজহারী, খঃ-১১, পৃঃ-৬৩ (ই,ফাঃ); তাফসীরে নুরুল কোরআন (মাওলানা আমিনুল ইসলাম),খঃ-২৫, পৃঃ-৬৭; মাদারেজুন নাবুয়াত, খঃ-৩, পৃঃ-১১৭, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী তাফসীরে দূররে মানসুর, খঃ-৬, পৃঃ-৭ (মিশর); তাফসীরে যামাখশারী, খঃ-২, পৃঃ-৩৯৯, (মিশর); তাফসীরে তাবারী, খঃ-২৫, পৃঃ-২৫ (মিশর); তাফসীরে কাশশাফ, খঃ-৩, পৃঃ-৪০২; খঃ-৪, পৃঃ-২২০ (মিশর); তাফসীরে কাবীর, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৬ (মিশর); তাফসীরে বায়যাভী, খঃ-৪, পৃঃ-১২৩ (মিশর); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-৪, পৃঃ-১১২ (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২ (মিশর); তাফসীরে নাসাফী, খঃ-৪, পৃঃ-১০৫ (মিশর); তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-১, পৃঃ-৬৬৫; তাফসীরে জামে উল বায়ান, (তাবারী), খঃ-২৫, পৃঃ-৩৩; তাফসীরে আল আকাম, খঃ-২, পৃঃ-১২১; তাফসীরে বাহরুল মুহিয়াত (ইবনে হাইয়্যান), খঃ-৯, পৃঃ- ৪৭৬; তাফসীরে বিহার আল মাদিদ (ইবনে আজি), খঃ-৫, পৃঃ-৪৩১; তাফসীরে আবু সাউদ, খঃ-৬, পৃঃ-৮০; তাফসীরে কাবীর, খঃ-১৩, পৃঃ-৪৩২; তাফসীরে বাইদাবী, খঃ-৫, পৃঃ-১৫৩; তাফসীরে আল নাসাফী, খঃ-৩, পৃঃ-২৮০; তাফসীরে আল নিশাবুরি, খঃ-৬,পৃঃ-৪৬৭; ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-১৭৩, (উর্দ্দু); আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-১০২, ৫৮৭, (উর্দ্দু) ।
আরো এরশাদ হচ্ছে: “বলুন, যে পারিশ্রমিকেই আমি তোমাদের কাছ চেয়ে থাকি না কেন, তা তো তোমাদেরই জন্য।” (সূরা-সাবা, আয়াত-৪৭)
হযরত আবু বকর (রাঃ) ও সে কথাটি বলেছেন যে, “মহানবী (সাঃ)-এর সন্তুষ্টি তাঁর আহলে বাইতের ভালবাসার মধ্যে নিহিত। ” সূত্রঃ- সহীহ্ বোখারী, খঃ-৬, হাঃ-৩৪৪৭, ৩৪৭৯, (ই. ফাঃ); তাফসীরে ইবনে কাসির, খঃ-১৬, পৃঃ-৫২৬; (হুসাইন আল মাদানী প্রকাশনী, আহলে হাদীস)।
“আল্লামা যামাখশারী ও আল্লামা ফাখরে রাজী আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের প্রখ্যাত দুজন তাফসীরকারক” ও বিজ্ঞ আলেম, তারা তাদের সুবিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থদ্বয় “আল কাশশাফ ও আল কাবীর” তাফসিরদ্বয়ে এভাবে লিপিবদ্ধ করেছেন যখন উক্ত আয়াত নাযিল হলো (সূরা-শুরা-আয়াত-২৩) তখন রাসূল (সাঃ) বলেন:-
(১) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে শহিদী মর্যাদা পায়। (২) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নাজাত প্রাপ্ত হয় ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৩) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে তওবাকারী হিসাবে ইহজগৎ ত্যাগ করে। (৪) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে পূর্ণ ঈমানের সঙ্গে ইহজগৎ ত্যাগ করে । (৫) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে মালাকুল মউত, মুনকীর ও নকীর ফেরেশতারা সুসংবাদ দেয়। (৬) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তাকে এমন ভাবে বেহেশতে নিয়ে যাওয়া হবে যেমন বিবাহের দিন কন্যা তার শ্বশুরালয়ে যায়। (৭) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, তার কবরে জান্নাত মুখী দু’টি দরজা খুলে দেয়া হবে। (৮) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, আল্লাহ তার কবরকে রহমতের ফেরেশতাদের জিয়ারতের স্থানের মর্যাদা দেন। (৯) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের ভালবাসা নিয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করে, সে নবীর সুন্নত ও খাঁটি-মুসলমানদের দলভুক্ত হয়ে ইহজগৎ ত্যাগ করলো।
(*) সাবধান যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিনে তার কপালে লেখা থাকবে সে আল্লাহ পাকের রহমত হতে বঞ্চিত। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। (*) যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আপনার “আ’ল” আহলে বাইত, কারা? “নবীজি বললেন, আলী, ফাতেমা, হাসান, ও হোসেইন, তিনি আরো বলেন, আল্লাহর কসম যার হস্তে আমার জীবন, যে ব্যক্তি আমার আহলে বাইতকে শত্রু মনে করবে, সে জাহান্নামী।” সূত্রঃ- তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর); এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৬; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮; সাওয়ায়েক মোহরিরকা, পৃঃ-১০৪; ইয়া নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৫, ৫৯৯।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ও তাঁর আহলে বাইতের চির শত্রু বনী উমাইয়াদের প্রাপাগাণ্ডায়, আহলে বাইতের ভক্তদের বা প্রেমিকদের “রাফেযী” নামে ডাকা হতো।
এ প্রসঙ্গে ইমাম শাফেয়ী বলেন, যদি কেবল মুহাম্মদ (সাঃ)-এর আহলে বাইতের প্রতি ভালবাসা রাখলেই মানুষ রাফেযী হয়ে যায়, তবে বিশ্ব জগতের সমস্ত জ্বীন ও মানব সাক্ষী থাকুক, আমিও রাফেযী। সূত্রঃ- কোরআনুল করিম-(মাওলানা মহিউদ্দিন খান), পৃঃ-১২১৫; শেইখ সুলাইমান কান্দুযী-ইয়ানাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৭৭; ওবাইদুল্লাহ ওমরিতসারী-আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৮৮৬।
আহলে সুন্নাতের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা জালাল উদ্দিন সূয়ুতী বর্ণনা করেন যে, পবিত্র কোরআন ও নবী (সাঃ)-এর হাদীস হতে এটা প্রমাণিত হয় যে, আহলে বাইত আলী, ফাতেমা, হাসান ও হোসাইন (আঃ)-এর মুয়াদ্দাত (আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা) দ্বীনের ফরায়েজে গণ্য; সুতরাং ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) এটার সমর্থনে এরূপ সনদ দিয়েছেন যে, “ইয়া আহলে বাইত-এ রাসূল, আল্লাহ তাঁর নাজিল করা পবিত্র কোরআনে আপনাদের মুয়াদ্দাতকে ফরজ করেছেন, যারা নামাজে আপনাদের উপর দরুদ পড়বে না, তাদের নামাজই কবুল হবে না”। সূত্রঃ- ইবনে হাজার মাক্কীর, সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, পৃঃ-১০৩।
হযরত আলী (আঃ) থেকে বর্ণিত, যিনি বীজ হতে চারা গজান ও আত্মা সৃষ্টি করেন, সেই আল্লাহর কসম, নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল আমাক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, ‘প্রকৃত মুমিন ছাড়া আমাক কেউ ভালবাসবেনা এবং মুনাফিকগণ ছাড়া কেউ আমার প্রতি ঘৃণা প্রদর্শন করবে না’।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)‘র সাহাবাগণ, ইমাম আলীর প্রতি ভালবাসা অথবা ঘৃণা দ্বারা কোন লোকের ঈমান ও নিফাক পরখ করতেন। আবু যার গিফারী, আবু সাঈদ খুদরী, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ, জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, ‘আমরা সাহাবাগণ আলী ইবনে আবি তালিবের প্রতি ঘৃণা দ্বারা মুনাফিকদের খুঁজে বের করতাম’। সূত্র:-সহীহ্ মুসলীম, খঃ-১, হাঃ-১৪৪, (ই,ফাঃ); জামে আত তিরমিযী, খঃ -৬, হাঃ- ৩৬৫৪-৩৬৫৫ (ই, সেন্টার); মেশকাত, খঃ-১১, হাঃ-৫৮৪১ (এমদাদীয়া); কাতবীনে ওহি, পৃঃ-২১২, (ই,ফাঃ); আশারা মোবাশশারা, পৃঃ-১৯৭ (এমদাদীয়া); হযরত আলী, পৃঃ-১৪ (এমদাদীয়া)।
কিন্তু অতি দুঃখের সাথে বলতে হচ্ছে, যাঁদের উপর দরুদ শরিফ না পড়লে নামাজ কবুল হয় না, (আহযাব-৫৬) যাঁদের আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা পবিত্র কোরআনে ফরজ করা হয়েছে, (শুরা-২৩)। সেই পাক পবিত্র আহলে বাইত-এর প্রথম সদস্য হযরত আলী (আঃ)-এর সাথে মহানবী (সাঃ)-এর ইহজগৎ ত্যাগ করার পর, কতইনা জালিমের মত ব্যবহার করা হয়েছে তা এখন পাঠকদের সামনে তুল ধরবো:
৪১ হিজরিতে আমির মুয়াবিয়া যখন কোরআন পরিপন্থি আইন রাজতন্ত্র কায়েম করলো, তখন “মুসলিম সাম্রাজ্যের ৭০ হাজারেরও অধিক মসজিদ জুম্মার খোৎবায় হযরত আলী ও রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ)-এর উপর অভিসম্পাত প্রদানের হুকুম কার্যকর করে, তার আদেশটি ছিল এরূপ, আল্লাহর কসম। কখনও আলীকে অভিসম্পাত দেয়া বন্ধ হবে না যতদিন শিশুগণ যুবক এবং যুবকগণ বৃদ্ধে পরিণত না হয়। সারা দুনিয়ায় আলীর ফজিলত বর্ণনাকারী আর কেউ থাকবে না, মুয়াবিয়া নিজে এবং তার গভর্নররা মসজিদে, রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র রওজা মোবারকের পার্শ্বে মিম্বরে রাসূল দাড়িয়ে, তাঁর প্রিয় আহলে বাইতদের অভিসম্পাত দেয়া হতো, হযরত আলীর সন্তানরা ও নিকট আত্মীয়রা তা শুনতে বাধ্য হতেন, আর নীরবে অশ্রুপাত করতেন। কারণ তারা নিরীহ (মাজলুম) ছিলেন।” মুয়াবিয়া তার সমস্ত প্রদেশের গভর্নরদের উপর এ নির্দেশ জারি করে, যেন সকল মসজিদের খতীবগণ মিম্বরে রাসূল (সাঃ)-এর উপর দাঁড়িয়ে, আলীর উপর অভিসম্পাত করাকে যেন তাদের দায়িত্ব মনে করেন।
পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, তিনি “সেই আলী, যিনি মহানবী (সাঃ) -এর স্থলাভিষিক্ত ও সর্বপ্রথম নবুয়্যতের সাক্ষ্য প্রদানকারী (শোয়ারা-২১৪)। আল্লাহ যাদেরকে পবিত্র কোরআনে পবিত্র বলে ঘোষণা করেছেন (আহযাব -৩৩) এবং যাদের আনুগত্যপূর্ণ ভালাবাসা ব্যতিত ঈমান পরিপূর্ণ হয় না, (শুরা-২৩) নামাজে নবীজির সাথে যাঁদের উপর দরুদ শরিফ ও সালাম না পাঠালে নামাজ কবুল হয় না, (আহযাব-৫৬)।”
সেই আহলে বাইত (আঃ)-কে অভিসম্পাত-এর প্রথা প্রচলন করে কি মুয়াবিয়া জঘন্য অপরাধ (মুনাফেকি) করে নি? “প্রায় ৮৩ বৎসরেরও অধিক সময় ধরে মুসলিম জাহানের প্রতিটি মসজিদে আহলে বাইত (আঃ) ও আহলে বাইত-এর প্রধান সদস্য হযরত আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত-এর প্রথা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল যে, যখন ওমর বিন আব্দুল আজিজ-এর শাসনামল শুরু হলো, তখন তিনি এই জঘন্য পাপ ও বেঈমানী কর্মকাণ্ড রহিত করেন।” তখন রাসূল (সাঃ)-এর আহলে বাইত (আঃ) বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি (মুনাফিকগণ) চারদিকে নিম্নোক্ত বাক্য উচ্চারণ করে হৈ চৈ এর রব তুললো।
‘ওমর বিন আব্দুল আজিজ, সুন্নাত তরক করে দিলেন’, (রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত-এর প্রধান সদস্য আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত দেওয়া) !
অতঃপর ওমর বিন আব্দুল আজিজ, জুমার খোৎবা থেকে মুয়াবিয়ার প্রতিষ্ঠিত (রাসূল (সাঃ)-এর পবিত্র আহলে বাইত (আঃ)-এর প্রধান সদস্য আলী (আঃ)-কে) অভিসম্পাতের অংশটি পরিবর্তন করে, পবিত্র কোরআনের এ আয়াতটি পাঠের আদেশ দন।
“নিশ্চয় আল্লাহ্ তোমাদেরককে সুবিচার এবং সৌজন্যের নির্দেশ দেন আর নির্দেশ দেন, নিকট আত্মীয়দের দান করার আর বারণ করেন অশ্লীল জঘন্য কাজ ও সীমালংঘন করতে। তিনি তোমাদেরকে সদুপদেশ দেন যাতে তোমরা উপদশ গ্রহণ কর”। (সূরা-নাহল, আয়াত-৯০)।
এখন পাঠকদের জন্য সেই সূত্র উল্লেখ করছি, যেখান হযরত আলী (আঃ)-কে অভিসম্পাত দেওয়া হতো। সূত্রঃ- খিলাফতের ইতিহাস, পৃঃ-১৩৯, (ইফাঃ); আরব জাতির ইতিহাস, পৃঃ-১২২, ১৬৮, (বাংলা একাডমী); খেলাফত ও রাজতন্ত্র, পৃঃ-১৪২, ১৪৯; মাসিক জিজ্ঞাসা, পৃঃ-১৩-১৭ (আগস্ট, সেপ্টেম্বরও,৯৫); জামে আত তিরমিজী, খঃ-৬, হা:-৩৬৬২ (ই,সেন্টার); কারবালা ও মুয়াবিয়া (
সৈয়দ গালাম মোরশেদ), পৃঃ-৪৬-৪৮; কারবালা, পৃঃ-২১৪ (মুহাম্মাদ বরকত উল্লাহ); ইসলামের ইতিহাস (কে আলী), পৃঃ, ২৮১; ইসলামের ইতিহাস, পৃঃ-১৪৭, ১৪৯ (
সৈয়দ মাহমুদুল হাসান); শাহাদাতে আহলে বাইয়ত, পৃঃ-১৪৩-১৪৬ (খানকাহ আবুল উলাইয়াহ); সহীহ্ মুসলিম, খঃ-৭, হা:-৬০৪১, ৬০৪৯ (ই,সেন্টার);আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, খঃ-৭, পৃঃ-৩৪১, খঃ-৮, পৃঃ-৫০, ৫৫; তারিখে তাবারি, খঃ-৪, পৃঃ-১২২, ১৯০, ২০৭; আল কামিল, খঃ- ৩, পৃঃ-২০৩, ২৪২; জামেউস সিরাত, পৃঃ-৩৬৬ (ইমাম ইবনে হাযম); তাতহিরুল জিনান ওয়াল লিসান (ইবনে হাজার মার্কিক), পৃঃ-৪, পৃঃ-৮; আত তাকারীর লিত-তিরমিজি, পৃঃ-১৯ (মাওলানা মাহমুদুল হাসান); ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ), খঃ- ২, পৃঃ-৫০, ৩০৬।
হযরত উম্মে সালমা (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি আলীক অভিসম্পাত দিল, সে যেন আমাকেই অভিসম্পাত দিলো” (আর যে ব্যক্তি মহানবী (সাঃ)-কে অভিসম্পাত দিল, সে এবং তার সঙ্গীরা নিশ্চিত জাহান্নামী, যা আমরা পবিত্র কোরআনের মাধ্যমে পড়েছি, তাই নয় কি?)। সূত্রঃ- মেশকাত, খঃ-১১, হাঃ-৫৮৪২; ইযাযাতুল খিফা (শাহ ওয়ালিউল্লাহ), খঃ-২, পৃঃ-৫০৪; মুয়াদ্দাতুল কুরবা, পৃঃ-৪৪; মুসনাদে হাম্বাল, খঃ-৬, পৃঃ-৩২৩,; মুস্তাদরাকে হাকেম, খঃ-৩, পৃঃ-১৩০; সুনানে নাসাঈ, খঃ-৫, পৃঃ-১৩৩; মাজমা আজ জাওয়াইদ, খঃ- ৯, পৃঃ-১৩০।
রাসূল (সাঃ) বলেছেন, সাবধান! “যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, কিয়ামতের দিন তার কপালে লেখা থাকবে, সে আল্লাহপাকের রহমত হতে বঞ্চিত। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, সে কাফের হয়ে মারা যায়। যে ব্যক্তি আলে মুহাম্মাদের শত্রুতা নিয়ে মত্যুবরণ করে, সে বেহেশতের সুগন্ধও পাবে না।” সূত্রঃ- তাফসীরে আল কাশশাফ ওয়াল বায়ান, খঃ-৩, পৃঃ-৬৭,(মিশর);তাফসীরে কাবির, খঃ-২৭, পৃঃ-১৬৫, (মিশর); তাফসীরে কুরতুবি, খঃ-১৬, পৃঃ-২২, (মিশর); এহইয়াউল মাইয়াত, পৃঃ-৬; আরজাহুল মাতালেব, পৃঃ-৪১৮; সাওয়ায়েক মোহরিকা, পৃঃ-১০৪; ইয়া-নাবিউল মুয়াদ্দাত, পৃঃ-৫৫, ৫৯৯।
শুধু তাই নয়! ওমর বিন আব্দুল আজিজ, হযরত ফাতেমা (আঃ)-এর কাছ থেকে অবৈধ ভাবে কেড়ে নেওয়া সেই “বাগে ফিদাক বাগান” ও ফেরত দেন আহলে বাইতের সদস্যদের কাছে। যেটা এতদিন বনী উমাইয়ার পান্ডারা ভোগ করছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এ কাজগুলো করেছিলেন ওমর বিন আব্দুল আজিজ। (দেখুন:- খাতুন জান্নাত ফাতেমা যাহরা, পৃঃ-১০৯, ১১০, ১১২, ১১৯ (রাহমানিয়া লাইঃ) হযরত ফাতেমা যাহরা, পৃঃ-১৭৭, ১৮০, ১৮৯, ১৯০ (হামিদিয়া লাইঃ) হযরত ফাতেমা জাহরা,পৃঃ-,৫৯, ৬১, ৬২, ৬৭, ৬৮ (তাজ কোং) তারিখে খোলফা, পৃঃ-১১৯; হযরত আবু বকর (রাঃ) পৃঃ-৮৬-৯১, (মুহাম্মদ হুসাইন হায়কাল) (আধুঃ); নাহাজ আল বালাগা (অনুবাদ, জেহাদুল ইসলাম), পৃঃ, ৩৬৪-৩৭৫, ২০০১,ইং; মারেফাতে ইমামাত ও বেলায়েত পৃঃ-১২৭-১৩৮; মোহাম্মাদ নাজির হোসেইন।
তাই এখন ভাবুন, যারা আহলে বাইত (আঃ)-এর ফজিলত বর্ণনা করেন না, তারা মুয়াবিয়া ও এজিদ দ্বারা কোরআন পরিপন্থি রাজতন্ত্র, রাজা-বাদশাদের অনুসারী বা ভক্ত। যা বর্তমান অনেক দেশে অব্যাহত রয়েছে, যে যার অনুসারী সে তারই পদ্ধতিকে অনুসরণ করবে, এটাই বাস্তব। উম্মতে মুহাম্মাদী আর কতদিন বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতার বেড়াজালে নিজেদেরকে আবদ্ধ করে রাখবেন? তাই, কোরআন ও হাদীস-এর ভিত্তিতে একটু বিচার-বিশ্লেষণ করে দেখুন, বিবেককে জাগ্রত করুন, দেখবেন সত্য বেরিয়ে আসবে। মনে রাখবেন অন্ধ বিশ্বাসের নাম ধর্ম নয়, সত্যকে বাস্তব দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে উপলব্ধি করার নামই হচ্ছে ধর্ম।
(এই প্রবন্ধটি কোরআন ও হাদীসের আলোকে আহলে বাইত(আ.)-ই নাজাতের তরী বা ত্রাণকর্তা গ্রন্থ থেকে সংকলিত)