নিশ্চয়ই, আল্লাহর আদেশাবলী আকাশ থেকে বৃষ্টিবিন্দুর মতে পৃথিবীতে নেমে আসে। এতে পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য-লিপি অনুযায়ী কারো জন্য বেশি কারো জন্য কম রহমত ও নেয়ামত আসে। সুতরাং যদি কেউ তার ভাইয়ের সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের প্রাচুর্য আসতে দেখে, তবে তার হতাশাগ্রস্ত বা উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। এমনকি নিজের সন্তান-সন্ততি ও সম্পদের প্রাচুর্যের জন্য গর্ববোধ করার কিছু নেই। নিচ লোকেরাই এসব নিয়ে আত্ম-অহম বোধ করে। সম্পদের প্রাচুর্য দেখলে যতদিন পর্যন্ত একজন মুসলিম (লজ্জায়) চক্ষুবন্ধ না করবে ততদিন পর্যন্ত সে একজন জুয়াড়ি সদৃশ; যে প্রথমবারের তীর নিক্ষেপেই লাভবান হয়ে পূর্বের লোকসান পুষিয়ে নেয়ার আশা পোষণ করে।
একইভাবে যে মুসলিম খেয়ানত মুক্ত সে দুটো ভাল জিনিসের একটা আশা করতে পারে। জিনিস দুটো হলো-(এক) আল্লাহর আহবান এবং সেক্ষেত্রে আল্লাহর কাছ থেকে যা কিছু আসে তাই তার জন্য সর্বোত্তম ধরে নেয়া; (দুই) আল্লাহর রেজেক। তার সন্তান-সন্ততি ও বিষয়-সম্পদ যতই থাকুক না কেন তার ইমান ও সম্মান তার সাথেই থাকবে। নিশ্চয়ই, সন্তান-সন্ততি ও ঐশ্বর্য ইহজগতের চাষাবাদ এবং আমলে সালেহা পরকালের চাষাবাদ। কখনো কখনো মহিমান্বিত আল্লাহ এর উভয়ই কোন কোন কওমিকে একত্রে দান করে থাকেন।
যেসব বিষয়ে আল্লাহ তোমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন সেসব বিষয়ে সাবধান থেকো এবং আল্লাহকে ভয় কর। কারণ এ বিষয়ে কোন ওজর কার্যকর হবে না। বে-রিয়া (লোক দেখানোর জন্য নয়) আমল কর: বাহবা শোনার জন্য করো না। কোন মানুষ যদি গায়রুল্লাহর আমল করে তবে যার উদ্দেশ্যে সে আমল করেছে তার কাছে আল্লাহ্ তাকে ন্যস্ত করেন। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাদেরকে শহিদের মর্যাদা, পরহেযগারগণের সাথে জীবন যাপন ও রাসূলগণের বন্ধুত্ব প্রদান করেন।
হে জনমাণ্ডলী, কেউ তার আপনজনের সহায়তা ব্যতীত চলতে পারে না (যদি সে ঐশ্বর্যবানও হয়)। তাদের সহায়তা হস্ত দ্বারা অথবা মুখের কথায়ও হতে পারে। শুধুমাত্র আপনজনই পিছন থেকে সমর্থনকারী এবং আপদে-বিপদে পক্ষ বিস্তার করে রক্ষাকারী। দুঃখ-দুর্দশায় নিপতিত হলে আপনজনই সদয় দৃষ্টিতে তাকায়। কোন মানুষের মঙ্গলময় স্মৃতি, যা মানুষের মাঝেই আল্লাহ সংরক্ষণ করে রাখেন, যেকোন ঐশ্বর্য থেকে উত্তম।
মনে রেখো, তোমরা যদি তোমাদের আপনজনকে অভাবগ্রস্ত অবস্থায় অথবা উপোস করতে দেখ তাহলে তাদের সাহায্য করা থেকে একথা ভেবে বিরত থেকো না যে, তুমি সাহায্য না করলে তাদের অভাব বেড়ে যাবে না অথবা তোমার সাহায্যে তাদের দুঃখ-দুর্দশা সামান্যই লাঘব হবে। যারা আপনজনকে সাহায্য করা থেকে হাত গুটিয়ে রাখে তারা প্রয়োজনের সময় অনেক হাত গুটানো দেখতে পাবে। যে কেউ মিষ্টি স্বভাবের হবে তার প্রতি জনগণের শ্রদ্ধা-ভালবাসা চিরস্থায়ী হয়ে থাকে।
(জেহাদুল ইসলাম কর্তৃক অনূদিত নাহজ আল বালাঘার ২৩তম খুৎবা থেকে সংকলিত)