“তোমাদের নিকট জ্ঞান পৌঁছানোর পর যে কেহ এই বিষয়ে তোমার সাথে বিতর্ক করে,তা’হলে তাকে বলঃ’এস,আমরা আহবান করি আমাদের সন্তানদেরকে আর তোমরাও তোমাদের সন্তানদেরকে,আমরাও আমদের নারীদেরকে আর তোমরাও তোমাদের নারীদিগকে,আমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের নিজদিগকে;অতঃপর আমরা(আল্লাহর কাছে) বিনীত ফরিয়াদ জানাই এবং মিথ্যাবাদীদের উপর দেই আল্লাহর লা’নত”(সুরা আলে ইমরানঃ৬১)।
এ আয়াতখানি নবযুগের সুচনা সৃষ্টিকারী একটি ঘটনার প্রতি ইঙ্গিত করে।সকল ঐতিহাসিক ও তাফসিরকার এই ঘটনা বর্ণনা করেছেন।এ ঘটনা পরম মহিমান্বিত আল্লাহর নিকট রাসূল(সা.)এর পরিবার(আহলে বাইত) কত আপন আর কত প্রিয় মুসলমানদের কাছে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
এ ঘটনা রাসূল(সা.)এর আহলে বাইতের সুনির্দিষ্ট মযাদাকে সুষ্পষ্টভাবে চিহ্নিত করেছে যা ইসলামের ইতিহাসে মুবাহেলা (অর্থাৎ মিথ্যাবাদীদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রার্থনা করা)নামে পরিচিত। ঐতিহাসিক ও তাফসিরকারকগন ঘটনাটিকে নিম্নরুপে বর্ণনা করেছেনঃ
নাজরানের খৃষ্টানগনদের একটি প্রতিনিধিদল তাদের ধর্ম বিশ্বাসের সপক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপনের জন্য পয়গাম্বরে ইসলাম(সা.)এর কাছে এসেছিল।নবীপাক(সা.) তাদের কাছে উপস্থাপন করলেন যে, মরিয়মের পুত্র ঈসা(আ.) ছিলেন একজন মানব সন্তান ও একজন নবী এবং তাঁকে আল্লাহর পুত্র গণ্য করা আল্লাহর পবিত্রতার বিষয়ে ঠাট্টা করার শামিল; কারন পরম মহিমান্বিত আল্লাহ এ ধরনের সকল মানবীয় বৈশিষ্ঠের অনেক উর্ধ্বে।রাসূল(সা.) যখন তাঁর বিষয় পরিপূর্ণ রূপে যুক্তি প্রমানের সাহায্যে দৃঢ়তার সাথে উপস্থাপন করছিলেন, তখন দেখা গেল তারা উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে ঈসা(আ.)কে ঈশ্বর হিসেবে বিবেচনা করার তাদের মিথ্যা বিশ্বাসের উপর অনঢ় অবস্থান গ্রহন করল।অতঃপর সেই সময় আল্লাহপাক এই আয়াত নাজিল করেন।এটা খৃষ্টানগনদের প্রতি চ্যালেঞ্জ-আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা এবং ফরিয়াদ জানানো যেন তাঁর লা’নত সেই দলটিকে ধ্বংস করে দেয় যারা মিথ্যাকে আকড়ে ধরেছে ( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল-ফুসুল আল-মুহিম্মা,গ্রন্থকারের মুখবন্ধ)।
পরের দিন জিলহজ্জ মাসের ২৪ তারিখে সকালে আল্লহর আদেশ অনুসারে রাসূল(সা.) নির্দিষ্ট মাঠে আগমন করলেন;হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানকে তাঁর হাত ধরে(আমাদের ছেলেদের),তাঁকে অনুসরন করে পিছনে পিছনে এলেন তাঁর প্রিয়তমা কন্যা ফাতিমা (সা.আ.)(আমাদের নারীগন),তাঁর পিছনে আলী (আ.)(নিজদিগকে)ইসলামের পতাকা বহন করে এলেন।রাসূল(সা.)এর সাথে তাঁর পরিবারকে আসতে দেখে এবং মুহাম্মদ (সা.)যে সত্যবাদী এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে যায়, তা-না হলে এই প্রেক্ষাপটে তিনি তাঁর সাথে তাঁর প্রিয়তম নিকট আত্নীয়দের নিয়ে আসতে সাহস করতে না, খৃষ্টানগন পরস্পরকে লা’নত দেয়ার মুখোমুখি দ্বন্দ্ব থেকে পিছু হটে গেল এবং এর পরিবর্তে জিজিয়া কর দিতে রাজী হলো।
জামাখশারী তার রচিত ‘আল-কাশশাফ’ গ্রন্থে বলেনঃ(যখন এই আয়াতটি নাজিল হয়) তখন মহানবী(সা.) খৃষ্টানদের কাছে জানতে চাইলেন তারা মিথ্যাবাদীদের উপর লা’নত বর্ষণ করার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা জানাতে একটি মুবাহেলা করতে রাজি আছে কিনা। সেই রাতেই খৃষ্টানগন তাদের নেতা নিজেদের মধ্যে একটি আলোচনা সভায় মিলিত হলো। সেই সভায় তাদের নেতা আব্দুল মসিহ তার মতামত ব্যাক্ত করেছিল এইভাবেঃ “আল্লাহর কসম, হে খৃষ্টানগন!তোমরা জানো যে,মুহাম্মাদ আল্লহর প্রেরিত নবী যিনি তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালক প্রভুর নিকট হতে চুড়ান্ত পয়গাম নিয়ে এসেছেন। আল্লাহর কসম! কোন জাতিই আজ পযন্ত কখনো একজন নবীর সাথে লা’নত দেয়ার চ্যালেঞ্জ করতে সাহস করেনি, কেননা তাতে তাদের উপর দুর্দশা নিপতিত হতো। লা’নত দ্বারা শুধুমাত্র তারাই ধংস হয়ে যাবে না বরং তাদের সম্প্রদায়ও ধ্বংশ হবে”। এর মাধ্যমে তিনি একথা বুঝাতে চাইলেন যে,
এর মাধ্যমে তিনি একথা বুঝাতে চাইলেন যে তাঁর সত্যকে চ্যালেঞ্জ করার ও তার ফলে ধ্বংশ হয়ে যাওয়ার পরিবর্তে বরং রাসূল(সা.)এর সাথে একটি আপোষ মীমাংসায় উপনীত হওয়া অধিকতর মঙ্গলজনক। খৃষ্টান নেতা আব্দুল মাসীহ তার দলকে শত্রুতা ও বিবাদ-বিসংবাদ বন্দ্ব করার ও রাসূল (সা.)প্রদত্ত শর্তগুলো মেনে নিয়ে তাদের নিজেদের ধর্মকে রক্ষা করার পরামর্শ দান করলো।“সুতরাং তোমরা যদি(মুখোমুখি হওয়ার জন্য)অবিচল থাকো, তাহলে আমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবো।কিন্তু যদি তোমাদের ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে চাও তাহলে চরম শক্তি পরীক্ষা হতে তোমাদের বিরত থাকা উচিৎ;কাজেই তোমরা যেমন আছো তেমনটি থাকো। অতঃপর তোমরা সেই মানুষটির(মহানবী)সাথে সন্ধ্বি কর এবং তোমাদের দেশে ফিরে যাও”।
জামাখশারী আরো বলেনঃ
“পরের দিন রাসূল(সা.) হুসাইনকে কোলে নিয়ে এবং হাসানের হাত ধরে,তাঁর পিছনে পিছনে কন্যা ফাতিমা আর তাঁর পিছনে আলী(আ.) সেই নির্ধারিত স্থানে এলেন; আহলে বাইতের(আ.)উদ্দেশ্যে তিনি বললেনঃ “যখন আমি আল্লাহর কাছে মোনাজাত করব, তখন তোমরা সকলেই বলবেঃ আমীন”।
মহানবী(সা.)কে এবং তাঁর পরিবারকে দেখে নাজরানের প্রধান ধর্ম যাজক খৃষ্টানদের সম্বোধন করে বললেনঃ
“হে খৃষ্টানগন,আমি এমন সব চেহারা দেখতে পাচ্ছি যে,যদি আল্লাহ চান তো তাদের জন্য পর্বতমালা তার নিজ স্থান থেকে সরিয়ে দেবেন। মুবাহেলার জন্য তাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহন করোনা, কেননা যদি তোমরা তাই করো তাহলে তোমরা সকলে ধ্বংশ হয়ে যাবে এবং পুনরুথান দিবস পযন্ত আর কোন খৃষ্টান পৃথিবীর বুকে থাকবে না”।
তাঁর উপদেশের মর্ম বুঝে খৃষ্টানগন রাসূল(সা.)কে বললোঃ”হে আবুল কাসিম,আমরা আপনার সাথে মুবাহেলা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আপনি আপনার ধর্মে পথে চলুন এবং আমরা আমাদের ধর্মের পথে চলি”।
রাসূল(সা.) তাদের বললেনঃ “যদি তোমরা মুবাহেলা করতে অস্বিকার করো তাহলে তোমরা ইসলাম কবুল করো;অতঃপর মুসলমানগন যা পায় তোমরাও তাই পাবে,আর তোমরাও তাই দিবে মুসলমানগন যা দেয়”।
খৃষ্টানগন আরবদের সাথে মুবাহেলার ব্যাপারে তাদের অনাগ্রহের কথা জানালো। অতঃপর শান্তির জন্য ও বলপ্রয়োগের দরুন নিজ ধর্ম ত্যাগ না করানোর এবং স্বাধীনতার জন্য তারা সন্ধির প্রস্তাব দিল।বিনিময়ে তারা মুসলমানদের ২০০০ মুদ্রা বার্ষিক জিজিয়া কর প্রদান করতে সম্মত হলো, যার ১০০০ হাজার মুদ্রা সফর মাসে এবং বাকী ১০০০ রজব মাসে পরিশোধ করবে। এছাড়াও এই সন্ধির আওতায় তারা ৩০টি লৌহ বর্ম প্রদান করবে।
এই প্রস্তাব গ্রহন করে রাসূল(সা.) মন্তব্য করলেনঃ
“সেই একক সত্বার কসম যার হাতে রয়েছে আমার প্রাণ। নাজরানের লোকদের উপর মৃত্যূ আবিভূত হয়াছিল।(মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ যদি তারা গ্রহনের ধৃষ্টতা প্রদরশন করতো তাহলে)তাদেরকে বানর ও শুকরে রুপান্তরিত করা হতো এবং(নাজরান) উপত্যকাকে জ্বালিয়ে দেয়া হতো। আল্লাহ নাজরানকে তার লোকজনসহ ধ্বংশ করে ফেলতেন। গাছের মাথায় বসে থাকা পাখিও নিস্তার পেতো না এবং বছর শেষ হওয়ার আগেই খৃষ্টানগন সকলেই মৃত্যুমুখে পতিত হতো”( ইবনে সাবাক্ক মালেকী,আল-ফুসুল আল-মুহিম্মা, গ্রন্থকারের মুখবন্ধ)।
জামাখশারী আয়াতে মুবাহেলার তাফসীর সম্পর্কে আরো গভীরে অগ্রসর হন।এ ব্যাপারে তিনি আহলে বাইতের মযাদা উপস্থাপন করার জন্য রাসূল(সা.)এর স্ত্রী হজরত আয়েশা থেকে বর্ণিত নীচের উদ্বৃতটি বর্ণনা করেছেনঃ “তিনি তাদের কাছে ‘নফস’(অর্থাৎ নিজদিগকে) শব্দটিকে উল্লেখ করার আগে আহলে বাইতের কথা উল্লেখ করেছেন; ইহা করেছিলেন আহলে বাইতের মযাদা ও আল্লাহর কাছে তাঁদের নৈকটের অবস্থানকে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরার উদ্দেশ্যে,এবং ‘নফস’-এর (নিজদিগের) কাছে তাঁদের অগ্রাধিকারের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করার জন্য।‘আহলে কিসা’র
(আহলে কিসা একটি পরিভাষা।এর দ্বারা তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যাঁরা রাসূলুল্লাহ(সা.)এর চাদরের নীচে তখন একত্রিত যখন তাঁদের উদ্দেশ্য করে আয়াতে তাতহির নাজিল হয়েছিল। তাঁরা হলেনঃআলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন।)মযাদা সম্পর্কে এর চেয়ে অধিকতর জোরালো প্রমান আর নেই।এটা রাসূল(সা.)এর নবুয়তি মিশনের সত্যতার প্রমান। কেননা কেউ যত পক্ষপাতদুষ্টই থাকুক না কেন খৃষ্টানগন মুবাহেলার চ্যালেঞ্জ গ্রহন করতে সাহস দেখিয়ে ছিল এটা কেউ কখনই বর্ণনা করেনি”(জামাখশারী,তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইমরানঃ৬১ এর তাফসীর)।
ফখরুদ্দিন রাজী তাঁর ‘তাফসীর আল কাবির’ কেতাবে অভিন্ন বর্ণনা উদ্বৃত করেছেন, এবং জামাখশারীর উল্লেখিত বর্ণনা উদ্বৃত করার পর বলেছেনঃ “তোমরা মনে রেখো,(কুরআনের)সকল তাফসীরকারকগন এবং (হাদিছের) সকল বর্ণনাকারীগন এই বর্ণনার প্রামানিকতা সম্পর্কে সর্বসম্মতভাবে একমত পোষন করেছেন”(তাফসীর আল কাশশাফ,সুরা আলে ইমরানের তাফসীর।মুযাহিদ ও কুলাইবির সনদের ভিত্তিতে তাফসীরে সালাবী-তেও এই একই বিষয় বর্ণিত হয়েছে)।
আধুনিক কালের প্রখ্যাত তাফসীরকার আল্লামা মুহাম্মাদ হোসাইন তাবাতাবাই রচিত ‘তাফসীর আল-মিজানে’ এই আয়াতের এর তাফসীর প্রসঙ্গে বলেনঃরাসুলুল্লাহ(সা.),আলী,ফাতিমা,হাসান এবং হুসাইন ছাড়া এই ব্যাক্তিবগ আর কেউ নন।তিনি আরও বলেন,’….সকল হাদিছ বর্ণনাকারীগন এই হাদিছ বর্ণনা করেছেন এবং সকল হাদিছ সংগ্রাহক তাদের সংকলনে ইহা লিপিবদ্ধ করেছেন, যেমন-মুসলিম কর্তৃক তার সহীহ-তে ও তিরমিজি কর্তৃক তার সহীহ-তে এই ঘটনাকে নিশ্চিত করেছেন।
সুচনালগ্ন থেকে আজ পযন্ত সকল তাফসীরকার এবং তাবারী, আবুল ফিদা, ইবনে কাছির, সয়্যুতি প্রমুখের মত প্রখ্যাত হাদিছবেত্তা ও ঐতিহাসিকগন কোনরুপ আপত্তি বা সন্দেহ ছাড়াই এটা উল্লেখ করেছেন।
এভাবে উক্ত আলোচনার আলোকে ইহা সুষ্পষ্ট যে, সকল তাফসীরকার সর্ব সম্মতভাবে আহলে বাইত হিসেবে আলী, ফাতিমা, হাসান ও হুসাইনকে নির্দেশ করেছেন।
মুবাহেলার আয়াতে তাঁদেরকে উল্লেখ করার ফলে তাঁরা আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনার উসিলায় পরিনত হয়েছেন; ইহা(এই আয়াতে তাঁদের উল্লেখ)তাঁদের সুউচ্চ ও পবিত্র মানসিক ও নৈ্তিক গুনাবলীর একটি সুস্পষ্ট নির্দেশক। আর এই ঘটনা তথা মুবাহেলার ময়দানে এই সকল পুতঃপবিত্র ব্যাক্তিবর্গকে আনয়নের জন্য আল্লাহ কর্তৃক তাঁর রাসূল(সা.)কে প্রদত্ত নির্দেশনা তাঁদের(আহলে বাইতের)পুতঃপবিত্র থাকার আরও একটি সুস্পষ্ট প্রমান হয়ে দাড়ায়।আর শত্রুদের উপর আল্লাহর লা’নত প্রার্থনা করার জন্য রাসূলের(সা.) এই চ্যালেঞ্জ আল্লাহর কাছে তাঁরা কত সুউচ্চ মযাদার অধিকারী তা প্রকাশ করে দেয়।
যেহেতু দ্বন্দ্ব ছিল সত্য এবং মিথ্যা এ দুটো সরাসরি বিপরীতমুখী স্রোত ধারার মধ্যে, সেহেতু ইসলামের সমগ্র অবকাঠামো যাদের উপর দাড়িয়ে ছিল এরুপ সর্বোত্তম ব্যাক্তিবর্গের মাধ্যমে ধর্ম বিশ্বাসের উপস্থাপনই ছিল সেই সময়ের পরিস্থিতির দাবী।মুবাহেলায় মহানবী(সা.)এর সঙ্গী হওয়ার মত আহলে বাইত ছাড়া এমন যোগ্যতার অধিকারী আর কেউ ছিল না যাদের উপর ইসলামের ভাগ্য নির্ভর করা সম্ভব ছিল। তাঁরা ছিলেন আহলে বাইত হেদায়াত ও সৎকর্মের আলোকবর্তিকা।সবশক্তিমান আল্লাহ নিজে আল-কুরআনে তাঁদেরকে পবিত্রতার আধার হিসেবে মযাদা প্রদান করেছেন।এটা তাঁদেরকে পুনরায় সকল দৃষ্টিকোন হতেই পরিনত করেছিল সবশ্রেষ্ট আকর্ষনীয় ব্যাক্তিত্বে।তাঁরা ছিলেন ইসলামের মহাসত্যের হুজ্জাত(অকাট্য প্রমান)।
প্রকৃ্তপক্ষে,মহাজ্ঞানী আল্লাহ মুসলমানদেরকে নির্দেশ করেছেন যে, খোদায়ী মিশনের ধারাবাহিকতা খাতামুন নাবিয়ীনের পর থেমে যাবে না,বরং তাঁর মাসুম(নিষ্পাপ) বংশধরদের মাধ্যমে তা অব্যাহত থাকবে।তাঁদের কোনও প্রার্থনা নামঞ্জুর থাকবে না এবং তাঁদের কোনও কথা বিভ্রান্ত হবে না।তাঁদের কথায় পর্বত পযন্ত স্থনান্তর হতে পারে,মুবাহেলায় খৃষ্টানরা যা অনুধাবন করতে পেরেছিল।
এসব নিষ্কলুষ(মাসুম)ব্যাক্তিবর্গের ব্যাপারে শত শত বছরের মুনাফেকীর ফসল হিসেবে উম্মাহর কিছু অংশের মধ্যে ভ্রান্ত ধারনা সুদীর্ঘকাল ধরে প্রতিষ্ঠিত থেকে যায়।অসংখ্য মানুষ এর দ্বারা বিভ্রান্ত হয়।তবে,এই বিভ্রান্তি দূর করার জন্য শুধুমাত্র এই আয়াতটিই যথেষ্ঠ।কুয়াশা কেটে যাওয়ার সাথে সাথে আহলে বাইত প্রদর্শিত পথ আরও সুস্পষ্ট হতে থাকবে । তাঁদের সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে যে, যারা তাঁদেরকে প্রত্যাখান করে তারা মিথ্যাবাদী ছাড়া আর কিছুই নয়, তারা অভিশপ্ত ।
এই আয়াতে ভাষা সম্পকীয় কয়েকটি বিষয় রয়েছে যা পযবেক্ষনের জন্য মনোযোগের দাবী রাখে।এই দল(আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন) বিশেষ একটি ‘আমাদের নারীদেরকে’ আর ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যায় নবীজী শব্দটি এখানে কর্তা(একটি কারক সম্বন্ধীয় পদ)হিসেবে ব্যাবহার করা হয়েছে।
রাসূল(সা.) যদি ফাতিমাকে(আ.) না নিতেন তাহলে লোকেরা ‘আমাদের নারীদেরকে’ বলতে উম্মুল মোমেনিনদেরকে ভাবতো,’আমাদের সন্তান্দেরকে’ বলতে ফাতিমা(আ.)কে উল্লেখ করতো যদিও তিনি মাত্র একজন মহিলা এবং ‘আমাদের নিজদিগকে’ বলতে কেবলমাত্র তাঁর পবিত্র সত্বাকে নির্দেশ করতো।
কিন্তু কেবলমাত্র এই ৪ জনকে সাথে নিয়ে,এবং এর বাহিরে আর অন্য কাউকে না নিয়ে,মহানবী(সা.) মুসলমানদের দেখাচ্ছিলেন যে,নারীদের জন্য সর্বোত্তম আদর্শ ফাতিমা(আ.),বালকদের জন্য হাসান ও হুসাইন(আ.);কুরআনের বাক্য প্রকাশের ধারা অনুসারে আরও সূক্ষভাবে আলী(আ.)এর জন্য ‘আমাদের নিজদিগকে’ শব্দটিকে ব্যাবহার করা হয়েছে যা দ্বারা মহানবী(সা.)এর সাথে তাঁর ঘনিষ্ট নৈকট্যের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করা হয়েছে এবং উত্তরাধিকারের প্রশ্নটির সমাধান চিরতরে করে দেয়া হয়েছে।(সংগৃহীত)