বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

মহান আল্লাহর পথে দান

মহান আল্লাহর পথে দান

মূল আরবী থেকে মো. মুনীর হোসেন খান কর্তৃক অনূদিত

মহান আল্লাহর পথে ব্যয় ও দান যা রেওয়ায়েতসমূহে কখনো কখনো সাদাকাহ্ বলা হয়েছে তা মুস্তাহাব (কাম্য ও পছন্দনীয়)। আর সম্ভবত এমন বিষয় খুব কমই আছে যেগুলোতে সাদাকার মতো এতটা গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে সাদাকাহ্ জান ও মাল সংরক্ষণ করার এবং সর্বোপরি মহান আল্লাহর রহমত আনয়ন করার অন্যতম কার্যকর কারণ। মহানবী (সা.) বলেছেন,

کلّ أمرء فی ظلّ صدقته حتی یقضی بین الناس

“কিয়ামত দিবসে যে পর্যন্ত মানব জাতির মাঝে বিচার ও ফয়সালা করা না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজ সাদাকার ছায়াতলে অবস্থান করবে।”

صدقة السّرّ تطفئ غضب الرّب

“গোপনে দান মহাপ্রভু আল্লাহর ক্রোধ প্রশমিত করে।”

ইমাম সাদেক (আ.) বলেছেন,

من کسا مؤمنا ثوبا من غنی لم یزل فی ستر من الله ما بقی من الثّوب خرقة

“যে ব্যক্তি কোন মুমিন বান্দাকে কাপড় পড়াবে (পরিধেয় বস্ত্র প্রদান করবে) যতদিন পর্যন্ত ঐ কাপড়ের এক টুকরাও বিদ্যমান থাকবে ততদিন পর্যন্ত সে মহান আল্লাহর হেফাজতে থাকবে।”

داووا مرضاکم بالصّدقة...استنزلوا الرّزق بالصّدقة...و هی تقع فی ید الرّبّ تعالی قبل أن تقع فی ید العبد

“সাদাকার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের রোগীদের চিকিৎসা কর... সাদাকার মাধ্যমে তোমরা তোমাদের রুযী (রিযিক) আনয়ন কর... আর সাদাকাহ্ বান্দার হাতে পৌঁছানোর পূর্বেই মহাপ্রভু আল্লাহর হাতে পৌঁছে যায়।”

ইমাম বাকের (আ.) বলেছেন,

البرّ و الصدقة ینفیان الفقر و یزیدان فی العمر و یدفعان عن صاحبهما سبعین میتة سوء

“মহান আল্লাহর পথে পুণ্য ও সাদাকাহ্ (করা) দারিদ্র্য দূর করে দেয়,আয়ু বৃদ্ধি করে এবং দাতা (সাদাকাহ্ প্রদানকারী) থেকে ৭০ প্রকার অপমৃত্যু দূর করে দেয়।”

কতই না উত্তম হবে যদি মানুষ মৃত্যুবরণ করার সময় দান-সাদাকার জন্য অসিয়ত করার পরিবর্তে তার সুস্বাস্থ্য ও নীরোগ অবস্থায় স্বেচ্ছায় পুণ্য কাজ ও দান করে। এজন্য যখন মহানবী (সা.)-কে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে,কোন্ ধরনের সাদাকাহ্ উত্তম,তখন তিনি বলেছিলেন,

 أن تتصدّق و أنت صحیح ثحیح تأمّل البقاء و تخشی الفاقة و لا تمهل حتّی إذا بلغت الحلقوم قلت لفلان کذا و لفلان کذا

“যখন তুমি পরিপূর্ণ সুস্থ-সবল স্বাস্থ্যবান,তোমার বেঁচে থাকার আশা আছে,অভাব ও দারিদ্র্যকে যখন তুমি ভয় পাবে তখন তুমি যে দান কর সেটাই হবে সর্বোত্তম দান। আর তোমার প্রাণ ওষ্ঠাগত হওয়া পর্যন্ত দান বিলম্বিত কর না;তাই মৃত্যুকালে তোমাকে যেন বলতে না হয়,অমুকের জন্য এত;অমুকের জন্য এত।” মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

لَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّـهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

“যারা মহান আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে,অতঃপর তারা যা দান ও ব্যয় করেছে তার জন্য কষ্ট ও খোটা দেয় না,তাদের প্রভুর কাছে রয়েছে তাদের পুরস্কার,তাদের কোন ভয় নেই এবং তাদের নিরাশ হওয়ারও কোন কারণ নেই।” মহান আল্লাহ্ বলেছেন,

يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا وَاللَّـهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّـهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ وَاللَّـهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ

“হে ঈমানদারগণ! তোমরা দয়া ও অনুগ্রহের খোটা ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতগুলো বরবাদ করে দিও না ঐ ব্যক্তির ন্যায় যে লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে,অথচ সে মহান আল্লাহ্ ও শেষ বিচার দিবসে বিশ্বাসী নয়। তাই এ ব্যক্তির দৃষ্টান্ত একটি মসৃণ পাথরের মতো যার ওপর কিছু মাটি রয়েছে। অতঃপর এর ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত হলে তা ওপরের মাটি সম্পূর্ণ ধুয়ে মুছে এ নিরেট পাথরটিকে একেবারে পরিষ্কার করে দিল;তারা যা উপার্জন করেছে তা থেকে তারা কোন পুণ্যই অর্জন করতে পারে না;আর মহান আল্লাহ্ কাফির সম্প্রদায়কে হেদায়েত করেন না। আর যারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন এবং নিজেদের অন্তঃকরণকে সুদৃঢ় করার জন্য নিজেদের সম্পদ ব্যয় করে তাদের দৃষ্টান্ত হচ্ছে টিলার ওপর অবস্থিত একটি বাগানের ন্যায় যার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে,এর ফলে তাতে দ্বিগুণ শস্য উৎপাদিত হয়েছে;আর যদি তার ওপর প্রবল বৃষ্টিপাত না-ও হয় তবু হালকা বৃষ্টিপাতই যথেষ্ট। আর তোমরা যা করছ তা মহান আল্লাহ্ প্রত্যক্ষ করছেন।”

সংক্ষিপ্ত এ আলোচনা থেকে মহান আল্লাহর পথে দান করার অপরিসীম গুরুত্ব আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়ে যায়।

তথ্যসূত্র:

১. জামেউস্ সাআদাত,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৩।

২. জামেউস্ সাআদাত,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৪।

৩. উসূলে কাফী,পৃ. ৪১২।

৪. জামেউস্ সাআদাত,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৪।

৫. জামেউস্ সাআদাত,২য় খণ্ড,পৃ. ১৪৪।

৬. সূরা বাকারাহ্ : ২৬২।

৭. সূরা বাকারাহ্ : ২৬৪-২৬৫।

(জ্যোতি বর্ষ ২ সংখ্যা ৩)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর পবিত্র মাথা ...
১০ ই মহররমের স্মরণীয় কিছু ঘটনা ও ...

 
user comment