পৃথিবীতে এমন কোন প্রাণী নেই যার জীবিকার ভার আল্লাহ্র উপরে নয়, (সূরা হুদ,আয়াত নং-৬)। কিন্তু তিনি জীবিকার নিশ্চয়তাদানকারী অর্থ হলো যে,তিনি প্রত্যেকের জন্য জীবিকা উপার্জনের পথ করে দিয়েছেন এবং প্রত্যেককে বনে,পর্বতে,খনিতে,নদীতে ও বিশাল পৃথিবীতে জীবিকা মঞ্জর করেছেন। তিনি প্রত্যেককে তাঁর নেয়ামত ভোগ করার অধিকার দিয়েছেন। না তার নেয়ামত কোন ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্ধারিত;না তার খাদ্য উপাদানের দরজা কারো জন্য বন্ধ। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেনঃ
তোমার প্রতিপালক তাঁর নেয়ামত দ্বারা এদেরকে ও ওদেরকে সাহায্য করেন এবং তোমার প্রতিপালকের নেয়ামত অবারিত (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত নং-২০)
যদি কোন ব্যক্তি অলসতা ও আরাম-আয়েশের কারণে নিঃচেষ্ট হয়ে বসে থাকে। তবে জীবিকা কখনো তার দরজায় পৌছবে না। আল্লাহ বিবিধ খাদ্য সামগ্রী ছড়িয়ে রেখেছেন। কিন্তু এগুলো পেতে হলে হস্ত-পদ সঞ্চালন করা প্রয়োজন। তিনি সমুদ্রের তলদেশে মুক্তা সঞ্চিত রেখেছেন। কিন্তু এগুলো পেতে হলে ডুব দিতে হবে। তিনি পর্বতকে চুনি ও মূল্যবান পাথর দ্বারা পরিপূর্ণ করেছেন। কিন্তু খনন করা ছাড়া এগুলো পাওয়া যায় না। তিনি ফসল ফলানোর সকল প্রকার উপাদন মাটিতে দান করেছেন। কিন্তু বীজ বপন না করলে এসব উপাদানের সুফল ভোগ করা যায় না। খাদ্যদ্রব্য পৃথিবীর চতুর্দিকে ছড়িয়ে আছে কিন্তু ভ্রমণের কষ্ট স্বীকার না করলে এসব খাদ্যদ্রব্য সংগ্রহ করা যায় না। আল্লাহ বলেনঃ অতএব তোমরা দিক-দিগন্তে বিচরণ কর এবং তাঁর প্রদত্ত জীবনোপকরণ থেকে আহার্য গ্রহণ কর (সূরা মুলক, আয়াত নং-১৫) |
আল্লাহ জীবিকা দানকারী। এর অর্থ এ নয় যে,জীবিকা অন্বেষণের জন্য কোন চেষ্টার প্রয়োজন নেই বা ঘরের বাইরে বের হবার প্রয়োজন নেই;জীবিকা নিজের থেকেই অনুসন্ধানকারীর কাছে হাজির হবে। তিনি জীবিকা দানকারী,একথার অর্থ হলো,তিনি মাটিকে উৎপাদনের সকল গুণাগুণ দান করেছেন,অঙ্কুরিত হবার জন্য বৃষ্টি দিয়েছেন,শস্য-কণা,ফল-ফলাদি ও শাক-সবজি সৃষ্টি করেছেন। এসব কিছুই আল্লাহ প্রদত্ত কিন্তু এগুলো সংগ্রহ করা মানুষের চেষ্টার সাথে সম্পৃক্ত। যে কেউ সংগ্রহে চেষ্টা করবে। সে তার চেষ্টার ফল পাবে,আর যে চেষ্টা করা থেকে বিরত থাকবে সে তার অলসতার ফল ভোগ করবে। আল্লাহ বলেনঃ মানুষ চেষ্টা ছাড়া কিছুই পায় না (সূরা আন-নাজম, আয়াত নং-৩৯)
বিশ্বের সকল মানুষ একটা প্রবাদের শৃঙ্খলে বাঁধা;প্রবাদটি হলো,“যেমন কর্ম তেমন ফল।” বপন না করে অঙ্কুরের আশা বা চেষ্টা ছাড়া ফলাফলের আশা করা একটা ভ্রম। অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দেয়া হয়েছে কর্মঠ রাখার জন্য। আল্লাহ মরিয়মকে সম্বোধন করে বলেনঃ
তুমি তোমার দিকে খেজুর গাছের কান্ডে নাড়া দাও,এটা তোমার ওপর সুপক্ক তাজা খেজুর ফেলবে । তখন আহার কর,পান কর ও চক্ষু শীতল কর (সূরা মারিয়াম, আয়াত নং-২৫-২৬)
আল্লাহ মরিয়মের জীবিকার সংস্থান করেছিলেন। কিন্তু তিনি খেজুর পেড়ে তার হাতে তুলে দেননি। তিনি গাছকে সবুজ রেখে খেজুর উৎপাদন করার ব্যবস্থা করেছেন এবং সেই খেজুর সুপক্ক হবার ব্যবস্থাও করেছেন। কিন্তু যখন খেজুর পাড়ার প্রয়োজন হলো তখন আর হস্তক্ষেপ না করে মরিয়মকে তার কাজ মনে করিয়ে দিলেন অর্থাৎ তার হস্তদ্বয় সঞ্চালন করে খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
আবার,আল্লাহ জীবিকার সংস্থান করেন বলতে যদি এটা বুঝায় যে,যা কিছু দেয়া হয়েছে ও গৃহীত হয়েছে এবং মানুষ যা কিছু উপার্জন ও আহার করে তা আল্লাহ থেকে প্রাপ্ত । তাহলে হালাল ও হারাম বিষয়ে কোন প্রশ্ন উঠতনা। চুরি,ডাকাতি,ঘুষ,নিপীড়ন,লুট-যেভাবে পাওয়া যাক না কেন তা আল্লাহর কাজ এবং অন্যায়ভাবে প্রাপ্ত বস্তু আল্লাহর সংস্থান বলে বুঝা যাবে। এতে মানুষের ইচ্ছার কোন স্বাধীনতা নেই বলেই মনে করা হবে। আসলে তা নয়। যেহেতু প্রতিটি কাজে হালাল ও হারামের প্রশ্ন জড়িত সেহেতু কর্মে মানুষের ইচ্ছার স্বাধীনতা রয়েছে। সকল সম্ভাবনা আল্লাহ্ কর্তৃক চালিত কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে বাস্তবায়িত করা মানুষের দায়িত্ব ও ইচ্ছাধীন। এ বাস্তবায়নে হালাল ও হারামের প্রশ্ন জড়িত। হালাল উপায়ে বাস্তবায়ন অনুমোদিত এবং হারাম উপায়ে বাস্তবায়ন পাপে জড়িত যার জন্য জবাবদিহি করতে হবে। ভ্রুণ যখন মায়ের গর্ভে থাকে তখন তার প্রয়োজন মতো খাদ্য আল্লাহ তাকে পৌছে দিচ্ছেন। কিন্তু এ ভ্রুণ যখন পৃথিবীর আলোতে আসে তখন তার ঠোঁট দিয়ে না চুষলে খাদ্য পায় না। আবার বয়স হলে তার অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ব্যবহার না করলে খাদ্য যোগাড় করতে পারে না। কাজেই খাদ্যের সংস্থান আল্লাহ করে রেখেছেন। মানুষকে নিজের চেষ্টা দ্বারা হালাল কর্মের মাধ্যমে আল্লাহর সংস্থানকে কাজে লাগিয়ে খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হয়। খাদ্য আপনা আপনি মানুষের হাতে এসে পৌছায় না।
জেহাদুল ইসলাম কর্তৃক অনূদিত নাহজুল বালাঘা থেকে সংকলিত
সম্পাদনা ও সঙ্কলন: এম এফ বারী