বাঙ্গালী
Friday 22nd of November 2024
0
نفر 0

ধর্ম বিশ্বাস প্রশান্তির প্রধান উৎস

ধর্ম বিশ্বাস প্রশান্তির প্রধান উৎস

সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনের জন্য মানসিক প্রশান্তির কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য সুস্থ সমাজ ও নিরাপত্তার অনুভূতিও অপরিহার্য। কেবল প্রশান্তির মধ্যেই মানুষের উন্নত গুণগুলোর বিকাশ এবং পরিপূর্ণতা অর্জন সম্ভব হয়। আধুনিক যুগে মানুষের মধ্যে আধ্যাত্মিক ও মানসিক সংকট এবং আধ্যাত্মিক শুন্যতা ব্যাপক মাত্রায় বিরাজ করছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে শারীরিকভাবে অসুস্থ লোকদের শতকরা ৮০ জনই শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি মানসিক ও আত্মিক সমস্যা বা চাপেও ভুগছেন।
মানব জাতি আজ ব্যক্তি ও সমাজ জীবনসহ জীবনের সব ক্ষেত্রে শান্তির জন্য হন্য হয়ে উঠেছে। কিন্তু কিভাবে কাঙ্ক্ষিত শান্তি ও সুখ অর্জন করা যায় তা জানা না থাকায় তারা ব্যাপক হতাশা বা দুশ্চিন্তার শিকার। বিজ্ঞানের উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে বাহ্যিক কিছু আরাম-আয়েশের অনেক উপকরণ তৈরি করা সত্ত্বেও মানুষ তার আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম বা উপকরণগুলোর যোগান দিতে পারছে না।
খোদায়ী বা ঐশী ধর্ম মানুষের আত্মিক ও মানসিক প্রশান্তির অন্যতম প্রধান উৎস। সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ ধর্ম ইসলাম পরিপূর্ণ মানসিক প্রশান্তির গ্যারান্টি দেয়। ইসলামের দৃষ্টিতে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস সব ধরনের নিরাপত্তার উৎস। এ বিশ্বাস এনে দেয় মানসিক সুখ। দূর করে সব ধরনের ভয়, উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তা।
ইসলাম তথা মহান আল্লাহর কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ মানুষের জীবনে হতাশা ও উদ্বেগের ঘন কালো মেঘ দূর করে তাদের জীবনে নিয়ে আসে প্রশান্তির নির্মল স্বচ্ছ আকাশ এবং আশার প্রাণবন্ত আলো-বাতাস মানব জীবনকে করে ফুলে ফলে সুশোভিত ও বিকশিত। মহান আল্লাহর স্মরণের অমৃত ঝর্ণাধারাই মানুষের অতৃপ্ত মরুময় মনে প্রশান্তির এই সবুজ উদ্যান গড়ে তোলে। পবিত্র কুরআনের সুরা রা'দের ২৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ
"জেনে রাখ, কেবল আল্লাহর স্মরণেই অন্তরগুলো শান্তি পায়।"
এই আয়াতের মর্মার্থ হল, মহান আল্লাহই নির্ভরতার একমাত্র উৎস। কারণ, সব কিছু তাঁরই কর্তৃত্বাধীন। বৈষয়িক ও প্রাকৃতিক শক্তিগুলোর উর্ধ্বে মহান আল্লাহর চিরন্তন, অশেষ এবং অক্ষয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস বিশ্ব জগত সম্পর্কে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলে দেয়। মহান আল্লাহর শক্তি ও ক্ষমতা অশেষ হওয়ায় তা অনন্য। এই শক্তির ওপর নির্ভরতার কারনে মুমিন সমস্যার পাহাড় বা সাগরকেও তুচ্ছ মনে করে এবং বিন্দুমাত্রও মনোবল হারায় না।
বিশিষ্ট আলেম ও তাফসিরকারক আল্লামা তাবাতাবায়ীর মতে, মানসিক প্রশান্তি ঈমানের একটি উচ্চতর পর্যায়ের নিদর্শন। এ ধরনের মানুষ হন দৃঢ়চেতা ও প্রজ্ঞার অধিকারী। প্রশান্তি কেবল পবিত্র অন্তরে ও খোদাভীরু ব্যক্তির হৃদয়েই নেমে আসে। আর এই প্রশান্তি ক্রমেই তার ঈমানকে দৃঢ় করে এবং বৃদ্ধি করে খোদাভীতি বা তাকওয়া। আল্লামা তাবাতাবায়ির মতে মানুষ যতক্ষণ পর্যন্ত তার বিবেক বুদ্ধি খাটিয়ে সৎ পথে চলে এবং অসৎ পথ বর্জন করে ও কুপ্রবৃত্তিকে দমন করে ততক্ষণ তার মধ্যে প্রশান্তি বিরাজ করে। কিন্তু মানুষ যখনই কুপ্রবৃত্তির দাসে পরিণত হয় এবং হারিয়ে ফেলে ন্যায়বিচারবোধ তখন এই প্রশান্তিও হারিয়ে যায়। তাই প্রশান্তি অর্জনের জন্য পাপাচার থেকে দূরে থাকতে হবে। পাপ মানুষের মধ্যে জন্ম দেয় হতাশা, দুশ্চিন্তা ও সন্দেহ।
মানুষের মনে প্রশান্তির মাত্রা নির্ভর করে তার ঈমানের গভীরতার ওপর। মানুষ যত বেশি আল্লাহর অনুগত হয় এবং অন্য সব শক্তির কর্তৃত্ব থেকে বেশি স্বাধীন হয় ততই তার মধ্যে ঈমান জোরদার হয় ও প্রশান্তিও বাড়তে থাকে। মহান আল্লাহর প্রতি ঈমান মানুষের মধ্যে জাগিয়ে তোলে আশার অফুরন্ত আলো ও দৃঢ় আত্মবিশ্বাস। মার্কিন মনোবিজ্ঞানী উইলিয়াম জেমস বলেছেন, যতই দিন যাচ্ছে ততই আমার এ বিশ্বাস দৃঢ় হচ্ছে যে, আল্লাহর সহায়তা ছাড়া জীবনযাত্রা সচল রাখা অসম্ভব এবং ঈমানবিহীন মানুষের পতন অনিবার্য।
বিশিষ্ট আলেম ও দার্শনিক মরহুম আল্লামা তাবাতাবায়ী বলেছেন, "যারা আল্লাহকে ভুলে যায়, তারা পার্থিব বিষয় বা ইহকালকেই আঁকড়ে ধরে এবং একমাত্র দুনিয়ার জীবনই তাদের কাছে মধুর মনে হয়। ফলে বৈষয়িক বা বস্তুগত উপায় উপকরণেই পিছনে লেগে থাকে তারা। যত পায় তারা আরও তত চায়। কিন্তু এসব বস্তুগত উপকরণ মানুষের মানসিক চাহিদাকে শান্ত করতে পারে না। এ ধরনের মানুষের বস্তুগত চাওয়া-পাওয়ার কোনো শেষ নেই। তাই তারা সব সময়ই অস্থির, পেরেশান ও হতাশায় ডুবে থাকে।"
মহান আল্লাহর ওপর নির্ভরশীল মানুষের মধ্যে কষ্ট-সহিষ্ণুতা ও বিপদ বা সংকট মোকাবেলার ধৈর্য থাকে অসাধারণ মাত্রায়। এ জন্যই ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনও হতাশ হন না এবং ভীত-সন্ত্রস্ত হন না। এই শ্রেণীর মানুষকেই মহান আল্লাহ নিজের আওলিয়া বা বন্ধু বলে উল্লেখ করেছেন এবং তাদের কাছে আল্লাহ ছাড়া অন্য সব কিছুর শক্তিই তুচ্ছ। যে মহাসাগর দেখেছে সে এক ফোঁটা পানিকে গুরুত্ব দেয় না এবং যে সূর্যের আলো দেখেছে সে একটি মোমবাতির আলোকে নগণ্য মনে করে। অবশ্য আল্লাহর সাথে মানুষের সম্পর্কের প্রভাব এই সম্পর্কের গভীরতার ওপর নির্ভর করে। কেউ কেউ বলেন, আল্লাহর প্রতি পুরোপুরি অবিশ্বাসী বা ধর্মহীন হওয়া কোনো মানুষের পক্ষেই সম্ভব নয়। উইলিয়াম জেমসের মতে, যে এমন দাবি করে সে আসলে নিজেকেই ধোঁকা দেয়।
পার্থিব সব কিছু পাবার পরও বা সাত রাজার ধন পাবার পরও মানুষ আল্লাহর মুখাপেক্ষি এবং তার সাথে সম্পর্কের অভাব অনুভব করতে বাধ্য। প্রাচুর্য্যে ডুবে থাকা মানুষের মধ্যে মহান আল্লাহকে স্মরণ করার প্রবণতা কমে যায় বা তাদের মধ্যে আল্লাহর স্মরণ খুব কমই জাগ্রত হয়। কিন্তু বিপদে পড়লে তারাও আল্লাহকে স্মরণ করতে বাধ্য হয়। পবিত্র কোরআনের সুরা আনকাবুতের ৬৫ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে, " তারা যখন নৌকা বা কিশতিতে ওঠে তখন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহকে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন স্থলে এনে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শরীক করতে থাকে।"
আয়াতুল্লাহ মুর্তাজা মোতাহারি বলেছেন, "আল্লাহর স্মরণ স্রষ্টার বাস্তবতার প্রতি মানুষের স্বীকৃতির প্রমাণ। মানুষ মহান আল্লাহর কর্তৃত্বের মুঠোয় রয়েছে বলে অনুভব করে বলেই আল্লাহকে স্মরণ করে। আল্লাহর স্মরণের অর্থ স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির শরণাপন্ন হওয়া। এ বিষয়টি মানুষের অন্যতম আত্মিক চাহিদা। এ বিষয়কে অগ্রাহ্য করা হলে মানবাত্মা তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে।"
অ্যালেক্সিক কার্লের মতে, মানুষ প্রার্থনার মাধ্যমে নিজের সীমিত শক্তিকে মহান আল্লাহর অসীম শক্তির সাথে যুক্ত করে। প্রার্থনাকারী জানে সমগ্র সৃষ্টি জগত বা অস্তিত্বে জগত আল্লাহর কর্তৃত্বাধীন।(রেডিও তেহরান)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ফাদাক সম্পর্কে “প্রথম খলিফার ...
পবিত্র কুরআন ও সুন্নাতের আলোকে ...
কোমে হযরত ফাতেমা মাসুমার (আ.) জন্ম ...
শ্রেষ্ঠ নারী হযরত ফাতিমাতুয ...
ইমাম হাসান (আ.) এর শাহাদাত
নবী রাসূল প্রেরণের প্রয়োজনীয়তা
Apabila ada sebagian hukum Islam yang nampaknya bertentangan serta kontradiktif dengan ...
আবতার কে বা কা’রা?
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কতিপয় খুতবা ও ...
ইমাম হোসাইন (আ.)-এর মহান শাহাদাতের ...

 
user comment