ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বের সব পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইরান কখনও এ ধরনের অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেনি।
বার্তা সংস্থা আবনা : ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বিশ্বের সব পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ইরান কখনও এ ধরনের অস্ত্র তৈরির পরিকল্পনা করেনি।
তিনি আজ (শনিবার) তেহরানে এক বিশাল জনসমাবেশে আরো বলেছেন, "আমরা বিশ্বাস করি বিশ্বের সব পরমাণু অস্ত্র ধ্বংস করতে হবে। এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই। কিন্তু আমাদের যদি এ বিশ্বাস না থাকতো এবং পরমাণু অস্ত্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিতাম, তাহলে কোনো শক্তি আমাদের প্রতিহত করতে পারতো না।"
তেহরানের জনসভায় বহু সরকারি কর্মকর্তা ও আলেম উপস্থিত ছিলেন। আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেন, আমেরিকা ও ইসরাইলসহ তাদের পশ্চিমা কিছু মিত্র দেশ অভিযোগ করছে, শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচির ছদ্মাবরণে পরমাণু অস্ত্র তৈরি করছে ইরান। এ অভিযোগ কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান করেছে তেহরান।
তাবরিজের জনসমাবেশে আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ ও স্পিকার আলী লারিজানির সমালোচনা করেন। সম্প্রতি ইরানের পার্লামেন্টে শ্রমমন্ত্রীর ইমপিচমেন্টকে কেন্দ্র করে দেশের দুই বিভাগের এ দুই প্রধান যে বাকযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন তার কথা উল্লেখ করে সর্বোচ্চ নেতা এ সমালোচনা করেন।
তিনি বলেন, 'অপ্রমানিত বিষয়ে'র ওপর ভিত্তি করে সরকারের একটি বিভাগের পক্ষ থেকে অন্য দুই বিভাগ অর্থাত বিচার ও আইন বিভাগকে অভিযুক্ত করা অবৈধ এবং ইরানি জাতির অধিকারের লঙ্ঘন।
গত ৩ ফেব্রুয়ারি ইরানের পার্লামেন্ট দেশের শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী আব্দুর রেজা শেইখুল ইসলামীকে ইমপিচ করে। ইরানের সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থার প্রধানের পদ থেকে সাঈদ মোরতাযাভি'কে সরিয়ে দিতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য মন্ত্রীকে অপসারণের সিদ্ধান্ত নেয় পার্লামেন্ট।
শেইখুল ইসলামীর ইমপিচমেন্টের অধিবেশনে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ সংসদ সদস্যদের সামনে একটি ভিডিও ক্যাসেট প্রদর্শন করেন। ওই ক্যাসেটে মোরতাযাভির সঙ্গে স্পিকার আলী লারিজানির ভাই ফাজেল লারিজানিকে আলাপ করতে দেখা যায়।
ভিডিওটিতে দৃশ্যত দেখা যায়, ফাজেল লারিজানি অর্থনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য নিজের পারিবারিক রাজনৈতিক অবস্থানকে ব্যবহারের চেষ্টা করেন।
এরপর ফাজেল লারিজানি ঘোষণা করেন, তার ব্যক্তিগত গোপনীয়তায় অনধিকার চর্চার জন্য তিনি প্রেসিডেন্ট আহমাদিনেজাদ ও মোরতাযাভির বিরুদ্ধে মামলা করবেন।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা তার দেয়া ভাষণে স্পিকার আলী লারিজানিরও সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, প্রেসিডেন্টের অভিযোগ সম্পর্কে বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি অতিরিক্ত বাক্যব্যয় ও আক্রমণাত্মক ভাষা ব্যবহার করেছেন যা উচিত হয়নি।
এ ছাড়া শ্রমমন্ত্রীর ব্যক্তিগত কাজে কোনো ভুল না পাওয়া সত্ত্বেও তাকে ইমপিচের পদক্ষেপ সঠিক ছিল না বলে উল্লেখ করেন আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ সমস্যা সমাধানের উপায় নিয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের মধ্যে সহযোগিতার মনোভাব থাকা উচিত।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ইসলামী বিপ্লবের ৩৪তম বিজয়-বার্ষিকীর শোভাযাত্রায় সর্বস্তরের জনগণের বিপুল অংশগ্রহণের কথা উল্লেখ করে বলেন, অর্থনৈতিক সংকট সত্ত্বেও ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মধ্যে সামান্যতম ক্ষোভ দেখা দেয়নি।
ইরান পরমাণু অস্ত্র তৈরির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ এনে মার্কিন সরকার, ইহুদিবাদী ইসরাইল ও তার ইউরোপীয় মিত্ররা তেহরানের ওপর কয়েক দফায় অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। কিন্তু ইরান এসব অভিযোগকে স্রেফ রাজনৈতিক প্রচারণা হিসেবে অভিহিত করে আসছে। তেহরান বলছে, পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি বা এনপিটিতে স্বাক্ষরকারী দেশ হিসেবে শান্তিপূর্ণ পরমাণু কর্মসূচি পরিচালনার অধিকার তার রয়েছে।#রেডিও তেহরান