বাঙ্গালী
Monday 25th of November 2024
0
نفر 0

পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী (সা.)-১৪৩৪ হিজরি

বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর পবিত্র জন্মের আনন্দঘন মাস রবিউল আউয়াল৷ অধিকাংশ ঐতিহাসিকের মতে, মহান এই রবিউল আউয়াল মাসের ১৭ তারিখে তিনি বেহেশতী সুষমা নিয়ে পৃথিবীতে এলেন৷ অবশ্য এ মতের ব্যতিক্রমও আছে৷ কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ১২ই রবিউল আউয়ালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ যদিও এ মতবিরোধের সমাধানের জন্য আয়াতুল্লাহ ইমাম খোমেনী (রহ:) ১২ থেকে ১৭ই রবিউল আউয়ালকে 'ইসলামী ঐক্য সপ্তাহ' ঘোষণা করেন।

 

যাই হোক, বিশ্বনবী এলেন পথ ভ্রষ্ট্র মানুষকে পথ দেখিয়ে দিতে৷ মিথ্যা পথের অন্ধকার থেকে আলোর পথে পরিচালিত করতে৷ তাঁর আগমণ প্রথিবীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ তাঁর আবির্ভাব সত্য ও সুন্দরের নির্ভীক বিজয়ের স্মারক৷ তাঁর আগমনে আমরা পেয়েছি ইহকালীন শান্তি আর পরকালীন মুক্তির দিক-নির্দেশনা৷ বিনয় অবনত শ্রদ্ধার সাথে তাই কৃতজ্ঞতা জানাই বিশ্বের সেই শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এর প্রতি৷ যাঁর আগমন না ঘটলে সুন্দর পেতনা তার পূর্ণরূপ৷ পৃথিবী সৃষ্টি খুঁজে পেতো না স্বার্থকতা৷ কবির ভাষায়,

 

তুমি না আসিলে মধু ভান্ডার ধরায় কখনো হতনা লুট
তুমি না আসিলে নারগিস কভু খুলতনা তার পর্ণপুট
বিচিত্র আশা মুখর মাসুক খুলত না তার রুদ্ধ দিল
দিনের প্রহরী দিত না সরায়ে আবছা আঁধার কালো নিখিল৷

আমরা আজ তাঁর আগমনের বার্ষিকীতে তাঁরি পূণ্যময় জীবন ও কর্মের খানিকটা তুলে ধরে মূলত: নিজেদের জীবনই ধন্য করবো ৷

ত্রিভূনের প্রিয় মোহাম্মদ এলো রে দুনিয়ায়
আয়রে সাগর আকাশ-বাতাস দেখবি যদি আয়


... ... ... .... ... ... ... ... ....
হ্যাঁ, ত্রিভূবনের যিনি প্রিয়, তিনি পৃথিবীতে এসেছেন৷ সেজন্যে আকাশ-বাতাস, সমুদ্র পর্বত তথা নিসর্গের সবকিছুতেই আনন্দের ধারা বয়ে যাচ্ছে৷ মা আমেনার কোল জুড়ে এলো যেন এক পূর্ণিমার চাঁদ ৷ সে চাঁদের আলোয় আমেনার পাতার ঘর ঝলমল করছে ৷ কবি ফররুখ আহমদ তাঁর "সিরাজাম মুনীরা মুহাম্মদ মোস্তফা" কবিতায় যেমনটি লিখেছেন,

 

পূর্বাচলের দিগন্ত নীলে সে জাগে শাহানশাহের মত
তার স্বাক্ষর বাতাসের আগে ওড়ে নীলাভ্রে অনবরত ৷
ঘুম ভাঙলো কি হে আলোর পাখী ? মহানীলিমায় ভ্রাম্যমান
রাত্রি-রুদ্ধ কন্ঠ হতে কি ঝ'রবে এবার দিনের গান ?
এবার কি সুর ঘন অশ্রুর কারা তট থেকে প্রশান্তির ?
এবার সে কোন আলোর স্বপ্নে তাকাবে ক্ষুব্ধ প্রলয় নীর ?
এ বোবা বধির আকাশ এবার ভুলবে কি তার নীরবতাকে
সেই মুসাফির সুদুরচারীর সুগভীর সুরে দরদী ডাকে ৷

 

আর কবি নজরুল লিখেছেন,

যেন উষারকোলে রাঙ্গা রবি দোলে,
তোরা দেখে যা আমেনা মায়ের কোলে ....

 

সত্যি এই রাঙ্গা রবিই একদিন সমাজের সকল অন্ধকার দূর করে দিয়েছিলো৷ হ্যাঁ অন্ধকারই বটে৷ আরব, পারস্য, মিসর, রোম, ভারতবর্ষ প্রভৃতি তত্কালীন সভ্য জগতের সবখানেই সত্যের আলো নিভে গিয়েছিলো৷ জবুর, তওরাত্‍, বাইবেল প্রভৃতি বিকৃত ও রূপান্তরিত হয়ে পড়েছিলো ৷ ফলে মানুষ আল্লাহকে ভুলে গিয়ে প্রতিমাপূজা, প্রকৃতি পূজা, অগ্নিপূজা শুরু করে দিয়েছিলো৷অনাচার, অবিচার আর ব্যভিচারে পৃথিবীটা জর্জরিত হয়ে পড়েছিলো৷ আরবের অবস্থা ছিলো তখন সবচেয়ে শোচনীয়৷ এমন কোন পাপ নেই, যা আরব সমাজে ছিলো না৷ মদ-জুয়া-ব্যভিচার থেকে শুরু করে চুরি-ডাকাতি আর মারামারির ঘটনা ছিলো আরব সমাজের নিত্যদিনের ব্যাপার৷ নারী জাতির অবস্থা ছিলো তখন অবর্ণনীয়৷নারীর সাথে তখন গৃহপালিত পশুর মতো আচরণ করা হতো৷ কণ্যা সন্তান জন্ম নিলেই তাকে জীবন্ত কবর দেয়া হতো৷ এমনি বিচিত্র ধরনের অরাজকতায় ভরে গিয়েছিল আরব সমাজ৷ চারদিকে নির্যাতিত-নিপীড়িত জনগণ তখন আর্তনাদ করছিল, একজন ত্রানকর্তার আবির্ভাব প্রত্যাশা করছিল৷ আল্লাহ তখন মজলুমের ডাকে সাড়া দিয়ে ত্রাণকর্তার হিসেবে যাঁকে পাঠালেন, তিনি আমাদের প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)৷ তিনি এলেন, যেন আধার বিদীর্ণ করে জেগে উঠলো আলো৷ তিনি এলেন, ইসলামের নবীন সওদা নিয়ে৷

 

হ্যাঁ, ইসলামের সওদা নিয়ে এসে রাসূল (সা.) নির্যাতিত-নিপীড়িত মানুষের দুঃখ-দুর্দশা ঘুচালেন৷ পৌত্তলিকতার নিরর্থকতা প্রমাণ করে আল্লাহর একত্ববাদ কায়েম করলেন৷ মানুষকে দিলেন ইহকালীন শান্তি এবং পরকালীন মুক্তির দিশা ৷ কিন্তু এ কাজ এতোই সহজ? না, মোটেই না৷ বরং যখনি রাসূল (সা.) একত্ববাদের ডাক দিলেন, তখনি কায়েমী স্বার্থবাদী দল তাঁর বিরুদ্ধে উঠে পড়ে লাগলো৷ যাঁর-চারিত্রিক মাধুর্য এবং আমানতদারীর বিশ্বস্ততার মানুষ তাঁকে উপাধি দিয়েছিলো "আল আমীন" সেই আল আমীন যখন তৌহিদের আহবান জানালেন, তখন তাঁর আশপাশের লোকজনই বিরোধীতা করলেন৷ শুধুই কি বিরোধীতা, সাধারণ মানুষ যখন তাঁর আনুগত্য করতে শুরু করে দিলো, তখন কায়েমী সমাজপতিরা তাঁকে হত্যার চেষ্টা চালালো৷ অবশেষে তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় জন্মভূমি পর্যন্ত ত্যাগ করতে বাধ্য হলেন ৷ তার উপর সামাজিক অবরোধ আরোপ করা হলো৷ নির্বাসন দেয়া হলো তাঁকে৷ তবু তিনি বৃহত্তর কল্যাণের জন্যে সকল দুঃখ কষ্টই ধৈর্যের সাথে সহ্য করলেন৷ মানুষকে আল্লার পথে ডাকলেন৷ সংঘদ্ধ করলেন৷ সবশেষে একের পর এক জেহাদ করে সত্যের বিজয় পতাকা উড়ালেন৷ রক্ত ঝরিয়েছেন নিজের শরীর মোবারক থেকে৷ দাঁত ভেঙ্গেছেন, তবু এতোটুকু পিছপা হননি৷ আল্লাহর উপর ভরসা করে মানব মুক্তির শ্রেষ্ঠ সনদ আল ইসলামকে কায়েম করে গেলেন৷ তৈরী করে গেলেন তাঁরি অবিকল চারিত্রিক মাধুর্যপূর্ণ কিছু ব্যক্তিত্বকে৷ ইসলামকে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর জমীনে প্রতিষ্ঠিত করার পর তিনি পুনরায় আল্লাহর আহবানে সাড়া দিয়ে বিদায় নিলেন ক্ষণস্থায়ী এ পৃথিবী থেকে৷ রেখে গেলেন আল্লাহর কিতাব আল কোরআন আর তাঁর পূর্ণাঙ্গ জীবনের অবিকৃত শব্দরূপ আল-হাদিস এবং চারিত্রিক মাধুর্যপূর্ণ আহলে বাইত ও একদল সাহাবী৷ আজ সেই মানবতার মুক্তিদূত রাসূলে করীম (সা.)এর পবিত্র জন্ম বার্ষিকী; ঈদে মীলাদু্ন্নবী৷ এ উপলক্ষে আমরা রাসূল (সা.) এর জীবনী থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে নিজেদের জীবন গড়বো এই হোক ঈদে মীলাদুন্নবী (সা.) এর অঙ্গীকার৷


source : http://bangla.irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য
মহানবী (সাঃ)-এর আহলে বাইতকে ...
বেহেশতের নারীদের নেত্রী- সব যুগের ...
তাওহীদের মর্মবাণী-১ম কিস্তি
হাসনাইন (ইমাম হাসান ও ইমাম হোসাইন) ...
খেলাফত তথা রাসূল (সা.)-এর ...
নবী (সা.) কিভাবে উম্মী ছিলেন বা কেন ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (১ম পর্ব)
Protest einer Antikriegsgruppe gegen Luftangriff Amerikas auf ein Krankenhaus

 
user comment