বাঙ্গালী
Wednesday 27th of November 2024
0
نفر 0

নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ

নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ঈমানের অঙ্গ

আহলে বাইত বা নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসা ইসলামের অন্যতম কার্যাবলীরই একটি। যুব সম্প্রদায় এবং ইমামদের মধ্যে আবেগপূর্ণ সম্পর্ক তাদেরকে (যুবকদেরকে) যে কোন ভুলত্রুটি অথবা ক্ষতিকর ব্যাপার থেকে রক্ষা করে থাকে। তাছাড়া আহলে বাইতের কর্মপন্থা অনুসরণ করে তারা জীবনের সঠিক পথ পেতে পারে। কুরআনে করীমেও আহলে বাইত কর্তৃক জনগণকে পথপ্রদর্শন এবং পরিচালনার বিষয়টিকে তাদের ভালোবাসা এবং বন্ধুত্বের প্রকাশ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। “হে নবী আপনি বলুন, আমি এর (রেসালাতের) বিনিময়ে তোমাদের নিকট হতে আমার স্বজনদের প্রতি সৌহার্দ্য ব্যতীত অন্য কোন প্রতিদান চাই না; যে উত্তম কাজ করে আমি তার জন্য এতে কল্যাণ বর্ধিত করি। আল্লাহ ক্ষমাশীল গুণগ্রাহী।” (সুরা আশ শুরাঃ ২৩)

নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেক নর-নারীর জন্য আমার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভালোবাসা অত্যাবশ্যকীয় করে দেয়া হয়েছে।” (বিহারুল আনওয়ার, ২২তম খন্ড, পৃঃ ৩১৫)

নবী পরিবারের প্রতি ভালোবাসার অনেকগুলো দিক আছে; আলোচ্য নিবন্ধে যুবকদের মধ্যে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির ব্যাপারটি উল্লেখ করা হয়েছে। শুধু যুবকদের মধ্যেই নয়, পরিবার ও সমাজের জন্যও এটি বিবেচনার দাবী রাখে।

মূল বিষয়টি আলোচনার পূর্বে কতিপয় ব্যাপার উল্লেখ করা প্রয়োজন। নবী পরিবার বলতে আমরা বুঝি বার জন নিষ্পাপ ইমাম এবং হযরত ফাতেমা যাহরা (আঃ)কে। আর ভালোবাসা বলতে বুঝি আল্লাহর নবীর পরিবারবর্গের প্রতি বন্ধুত্ব ও ভালোবাসা-বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থে ভালোবাসা এবং হাদীস শাস্ত্রে বিভিন্ন পরিভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে, যেমনঃ বন্ধুত্ব, মমতা ইত্যাদি। যুবকদের মধ্যে আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টির বিভিন্ন পন্থা বলা হয়েছে, যার কিছুকিছু সংক্ষেপে এখানে বর্ণনা করা হলো।

১। ভালোবাসার ধরনঃ সাধারণত বলতে গেলে, জনসাধারণ এবং বিশেষ করে যুবকরা হচ্ছে আদর্শবাদী ও ভালোবাসার আদর্শ পুরুষ। সুতরাং তারা তাদের কথাবার্তা, আচার-আচরণ তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে ব্যবহার করে থাকে। এ অবস্থায় যুবকরা যদি ইমামদের উচ্চ মর্যাদা, তাঁদের পথপ্রদর্শন পদ্ধতি এবং জীবনধারণ পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে পারে তাহলে তারা তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট ও অনুরাগী হবে। ধর্মীয় উপদেশমালায় এ ব্যাপারে সুপারিশ করা হয়েছে যে, জনগণ যেন পবিত্র ইমামদের জীবন অনুসরণ করে। (এহতেজাজ-ই-তাবারসি, খঃ ৬, পৃঃ ১৯৮)

কোরআন মজীদে মহানবী (সাঃ)কে উত্তম আদর্শ বলে পরিচিত করিয়ে দেয়া হয়েছে। (সুরা আহযাবঃ ২১) মহানবী (সাঃ) জনগণকে এ মর্মে উপদেশ দিয়েছেন যে, আমার পরিবারের সদস্যরা কোনটি সঠিক এবং কোনটি ভুল এ পার্থক্য করতে সক্ষম এবং তারাই হচ্ছে নেতা-যাদেরকে অনুসরণ করা জরুরী। (এহ্‌কাকুল হাক, খঃ ৫, পৃঃ ৪২)

২। নবী পরিবারের প্রতি সম্মান প্রদর্শনঃ পিতা-মাতা, শিক্ষকবৃন্দ এবং সমাজের মহান লোকেরা যেভাবে মহানবী (সাঃ)-এর পরিবারের সদস্যদের প্রতি আচরণ করবে, তাঁদের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টিতে তা বিরাট প্রভাব ফেলবে। যেমন বলা যায়, তাঁদের নাম উচ্চারণের সাথে সাথে দরূদ পাঠ, ইমামে যামান অর্থাৎ ইমাম মাহদী (আঃ)-এর নাম উল্লেখ করার সাথে সাথে দণ্ডায়মান হওয়া, ইমামদের জন্মদিবসসমূহকে উৎসব হিসাবে উদযাপন করা, তাঁদের শাহাদাত দিবসে শোকানুষ্ঠান ও কান্না প্রভৃতি যুবকদেরকে আহলে বাইতের নিকটতর করে দেবে। হাদীসে ইমামদের নামে মুসলমানদের ছেলেদের নামকরণের উপদেশ দেয়া হয়েছে। (আল্লামা বারানী, আল আওয়ালেম, খঃ ৭, পৃঃ ৫৫২)

মহানবী (সাঃ) এর নাম উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে তাঁর এবং তাঁর পরিবারের প্রতি সালাম ও দুরূদ পাঠ করা অবশ্য কর্তব্য। সুকুনি যখন ইমাম সাদেক (আঃ)-এর কাছে উপনীত হয়ে জানালেন যে, একটি কন্যা সন্তান জন্মেছে, ইমাম তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেনঃ তার কী নাম রেখেছ? সে বললঃ “ফাতেমা” ইমাম দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললেন এবং বললেনঃ তুমি যখন তার নাম ফাতেমাই রেখেছ, তাকে কখনো ভর্ৎসনা করবে না এবং প্রহারও করবে না। (প্রাগুক্ত)

৩। আহলে বাইতের বিশেষ মর্যাদাঃ নবী পরিবারের প্রতি যুব সম্প্রদায়কে আগ্রাহান্বিত করার জন্য তাঁদের (নবী পরিবারের) বিশেষ মর্যাদা মুসলমানদের কাছে তুলে ধরতে হবে। কারণ যুবকরা সাধারণত সকলের ব্যাপারেই লক্ষ্য করে থাকে বিশেষ করে মহৎ লোকদের ব্যাপারে তাদের ঔৎসুক্য অধিক। অতএব, তারা যদি জানতে পারে যে, আহলে বাইত তাদেরকে একটি গাছের শাখা ও পাতা হিসাবে বিবেচনা করেন যা তাঁদের সাথেই যুক্ত এবং এই পৃথিবীতে তাদের সমস্যাসমূহ নিরসন করে দেবে ও পরকালে তাদের জন্য শান্তি বয়ে আনবে, তাহলে তারা আহলে বাইতের ব্যাপারে বিশেষভাবে আগ্রহী হয়ে উঠবে। এ ব্যাপারে অনেক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

৪। নবী পরিবারের মর্যাদাঃ যুব সমাজকে এ শিক্ষা দেয়া প্রয়োজন যে, প্রশান্তি বিধানে আহলে বাইতের ভূমিকা অশেষ এবং তাঁরাই আমাদের মুরব্বি (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ১২, পৃঃ ২০৩), ইসলামী সভ্যতা সৃষ্টি ও আমাদের পরিচিতি তুলে ধরার ব্যাপারে তাঁদের কতগুলো মৌলিক ভূমিকা রয়েছে। আমাদের ধর্মীয়, রাজনৈতিক, বিচারবিভাগীয় এবং আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো আহলে বাইতের শিক্ষা ও উপদেশ থেকেই উদ্ভূত হয়েছে। তাঁদের ব্যক্তিত্ব এমনই ছিল যে, শত্রু-মিত্র সবাই তাঁদেরকে সম্মান করতো। তাঁদের চমৎকার ব্যক্তিত্বের দু’একটি উদাহরণ এখানে উল্লেখ করা গেলঃ মহানবী (সাঃ)-এর স্ত্রী আয়েশা বলেনঃ “আমি (আমার পিতা) আবু বকরকে আলীর চেহারার প্রতি অধিক তাকাতে দেখলাম। অতঃপর আমি বললাম, হে পিতা! আপনি আলীর চেহারার দিকে অধিক তাকাচ্ছেন এর কারণ কী? তিনি বললেন, হে আমার কন্যা! আমি মহানবী (সাঃ)-এর নিকট থেকে শুনেছি, তিনি বলেছেন, আলীর চেহারার প্রতি তাকালে তা ইবাদাতেরই সমতুল্য।” (ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাহ, পৃঃ ২৭৭)

আহলে বাইতের বিষয়ে পুস্তক প্রণয়ন, ফিল্ম তৈরী এবং সভা সমাবেশের আয়োজন প্রভৃতির মাধ্যমে যদি তাঁদের পরিচিতি তুলে ধরা যায় তাহলে যুব সমাজ অবশ্যই তাঁদের প্রতি আকৃষ্ট হবে। ইমাম রেজা (আঃ) বলেন, “জনগণ যদি আমাদের কথার উপকারিতা জানতে পারে, তাহলে তারা আমাদেরকে অনুসরণ করবে।” (বিহারুল আনওয়ার, খঃ ৭, পৃঃ ১১)

৫। নবী পরিবারের সদস্যদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের গুরুত্বঃ আহলে বাইতের প্রতি ভালোবাসা সম্পর্কে অসংখ্য হাদীস রয়েছে। মহানবী (সাঃ) বলেছেনঃ মুহাম্মাদের পরিবারের প্রতি ভালোবাসা সহকারে যে মৃত্যুবরণ করবে, সে যেন একজন শহীদ হিসাবে মৃত্যুবরণ করল, আর সে অবশ্যই আশিষপ্রাপ্ত হলো এবং সে একজন বিশ্বাসী ও তার অন্যায় কর্মের জন্য অনুশোচনাকারী হিসাবে মৃত্যুবরণ করল। মৃত্যুর ফেরেশতা তাকে জান্নাতের ঘোষণা দেবে এবং তার কবর হবে আল্লাহর অনুগ্রহেরই একটি স্থান..........। (জাভাদ মোহাদ্দেসী রার্গ ভাবার, পৃঃ ৫৯)

শহীদ আয়াতুল্লাহ মোতাহ্‌হারী মনে করেন যে, অন্যান্য ধর্মের ওপরে ইসলামের বড় একটি বিশেষত্ব হচ্ছে এই যে, এর মূল ভিত্তি হচ্ছে ‘ভালোবাসা’। ইবনে সাকিত আহভাযী ছিলেন একজন বড় ধরনের বিজ্ঞানী এবং ইমাম জাওয়াদ-এর ছাত্রদের মধ্যে অন্যতম। আব্বাসী খলিফা মোতাওয়াক্কেল তাঁর দুই ছেলেকে পাঠদানের জন্য তাঁকে মনোনীত করেন। তিনি কোন সুযোগ-সুবিধা ছাড়াই কিছুদিন তাঁর ছেলেদেরকে পড়ান। একদিন মোতাওয়াক্কেল একটি বড় সভার আয়োজন করলেন যেখানে অনেক গুণী, বিজ্ঞানী ও সাহিত্যিক ব্যক্তিত্ব উপস্থিত হলেন। মোতাওয়াক্কেল জানতেন যে, নবী পরিবারের ভক্তদের মধ্যে একজন হচ্ছে ইবনে সাকিত। তাই সভার মধ্যেই মোতাওয়াক্কেল ইবনে সাকিতকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি আমার দুই সন্তান হাসান-হোসাইন-এর মধ্যে কাকে অধিক ভালোবাসেন? ইবনে সাকিত একটি কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হলেন। তারপরও তিনি নির্ভয়ে আন্তরিকতার সাথে উত্তর দিলেনঃ আল্লাহর শপথ, ইমাম আলীর সেবক কাম্বার ও আপনি এবং আপনার দুই সন্তানের চেয়ে উত্তম ছিলেন। এরপর মোতাওয়াক্কেল এতটাই উত্তেজিত হলেন যে, তার চাকর-বাকরকে ইবনে সাকিতের জিহ্বা টেনে উৎপাটিত করার নির্দেশ দিলেন। (সূত্রঃ নিউজ লেটার)

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

ইমাম মাহদি(আ.)'র বাবার কয়েকটি ...
আদর্শ মানব হযরত মুহাম্মদ (সা.) - ১ম ...
হযরত ঈসা (আ.) এর জন্মবার্ষিকী-২০১২
ইমাম হুসাইন (আ.)-এর জীবনী-১১তম পর্ব
যদি কেউ দাড়ি না রাখে তাহলে সে কি ...
বাংলাদেশের নিম গাছ আরাফাতের ...
মহানবীর ওফাত দিবস এবং ইমাম হাসান ...
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর নবুওয়াত-পূর্ব ...
কে হযরত আলী (আ.) কে শহীদ করেছে? তার ...
আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)

 
user comment