বাঙ্গালী
Tuesday 26th of November 2024
0
نفر 0

রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর-৯

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। অনেকেই মনে করেন এখানে ধৈর্য বলতে রোজা বা সংযমকে বোঝানো হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজা আত্মরক্ষার ঢালস্বরূপ। রমজানে পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে পাপের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কোনো
রমজান: খোদা-প্রেমের অসীম সাগর-৯

পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর সাহায্য কামনা কর। অনেকেই মনে করেন এখানে ধৈর্য বলতে রোজা বা সংযমকে বোঝানো হয়েছে। মহানবী (সা.) বলেছেন, রোজা আত্মরক্ষার ঢালস্বরূপ। রমজানে পাপ থেকে মুক্ত থাকার প্রশিক্ষণ নেয়ার পূর্বশর্ত হিসেবে পাপের কুফল ও পরিণতি সম্পর্কে সচেতন হওয়া জরুরি। কোনো কোনো পাপ সংযমের বাঁধ ভেঙ্গে দেয়। যেমন-মদ ও নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন, জুয়া খেলা,তামাশা ও বিদ্রূপপূর্ণ খেলায় অংশগ্রহণ, অপর মানুষের দোষ-ত্রুটি নিয়ে গল্প করা এবং সন্দেহবাদী ও নাস্তিকদের সাথে ওঠাবসা করা (আনিসুল লাইল, ইমাম জাফর সাদিক) কোনো কোনো পাপ দুর্যোগ ডেকে আনে । যেমন-চুক্তি ভঙ্গ করা, লজ্জাজনক কাজ প্রকাশ করা,আল্লাহর স্পষ্ট নির্দেশের বিপরীত রায় দেয়া, জাকাত দিতে অস্বীকার করা বা বাধা দেয়া, মাপে কম দেয়া। (মালবুবি) কোনো কোনো পাপ নিয়ামতগুলোকে গজবে পরিবর্তিত করে দেয় । যেমন-মানুষের সাথে অন্যায় আচরণ করা, একজন আলেমকে চুপ করিয়ে দেয়া বা তাঁর বিরুদ্ধাচরণ করা, আল্লাহর রহমতের প্রতি অকৃতজ্ঞ হওয়া এবং আল্লাহর সাথে শরীক করা, নিজের দারিদ্র প্রচার করা, আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হওয়া ও আল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা(ইমাম জাফর সাদিক,আনিসুল লাইল)

 

কোনো কোনো পাপ দোয়া কবুল হবার পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন-বিকৃত ঈমান পোষণ, দোয়া কবুল হবার ব্যাপারে অবিশ্বাস, ভাইয়ের প্রতি মোনাফেকি, সময়মত নামাজ না পড়া এবং পিতা-মাতার প্রতি দায়িত্ব পালন না করা(প্রাগুক্ত)

 

কোনো কোনো পাপ দূর্ভাগ্য বা কষ্ট ডেকে আনে । যেমন- যারা কষ্টে আছে তাদের সাহায্য না করা,নির্যাতিত ব্যক্তি, যারা সাহায্য প্রার্থনা করছে, তাদের রক্ষার জন্যে অগ্রসর না হওয়া এবং সৎকাজের আদেশ ও অসৎ কাজের প্রতিরোধের বিরোধিতা করা (ইমাম যাইনুল আবেদীন, আনিসুল লাইল। )

 

কোনো কোনো গোনাহ আশাকে বিনষ্ট করে দেয় । যেমন- আল্লাহর অনুগ্রহের ব্যাপারে নিরাশ হওয়া,আল্লাহর ক্ষমাশীলতায় আস্থা না রাখা, আল্লাহর পাশাপাশি অন্য কারো ওপর ভরসা করা এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতিতে অবিশ্বাস করা। (ইমাম জাফর সাদিক)

 

হাদিসে এসেছে, যার মধ্যে দুটি স্বভাব থাকবে মহান আল্লাহ তাকে বিনা হিসেবে বেহেশত দান করবেন। আর এ দুটি গুণ হল, অল্পে তুষ্টি তথা আল্লাহর দেয়া বরাদ্দে সন্তুষ্ট থাকা এবং গোপন বা নিভৃত স্থানেও আল্লাহকে ভয় করা তথা আল্লাহর ভয়ে পাপ না করা।

 

বিষয়টি বলতে খুব সহজ হলেও কাজে তা সহজ নয়। আর এ জন্যই দরকার গভীর খোদা-প্রেম। খোদাপ্রেমের শর্ত হল জ্ঞান বা আল্লাহকে জানা। আল্লাহকে জানার উপায় হল তাঁর প্রিয় মহাপুরুষদের ভালোভাবে জানা। আর সব কিছুর আগে জাগিয়ে তুলতে হবে বিবেককে। বিদ্রোহী প্রবৃত্তিকে দমন করা ছাড়া বিবেক জেগে ওঠে না। আর কুপ্রবৃত্তিকে দমনের জন্যই দরকার রোজা যা রমজান মাসের পরও বিশেষ ক'টি দিন ছাড়া সারা বছরের যে কোনো দিনে রাখা যায়।

 

দোয়ায়ে মাকারিমুল আখলাক বা বা সর্বোচ্চ নৈতিক গুণাবলী' শীর্ষক বিখ্যাত দোয়ার আলোকে আমাদের উচিত মহান আল্লাহর কাছে সম্মানের আবেদনের পাশাপাশি অহংকার থেকেও দূরে রাখার প্রার্থনা করা। আমাদের উচিত মানুষের উপকার করা কোনো স্বার্থ বা বিনিময় পাওয়ার চিন্তা না করেই। উপকার করার পর মানুষকে উপকারের খোঁচা দিলে তা হয়ে পড়ে মূল্যহীন। মানুষ যদি আমাদের অতীতের চেয়ে একটু বেশি সম্মান দেয় তাহলে মনে মনে নিজেকে আরও বেশি বিনয়ী ও হীন করা উচিত। যারা আমাদের কষ্ট দেয় তাদের ক্ষমা করা, যারা আমাদের দোষ-ত্রুটি তুলে ধরে তাদেরকে অন্যদের সামনে শ্রদ্ধার সঙ্গ স্মরণ করা, যারা সম্পর্ক ছিন্ন করে তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলা, যারা আমাদের বঞ্চিত করেছে তাদের দান করা- এসবই অতি উচ্চ স্তরের মহৎ গুণ। মানুষের ভালো কাজের প্রশংসা করা, তাদের দোষ বা ত্রুটি গোপন রাখা, ঘৃণা, ক্রোধ ও প্রতিহিংসার আগুনকে দমিয়ে রাখা এবং বিবদমান মানুষের মধ্যে ঐক্য ও সম্প্রীতি গড়ে দেয়া- এইসব গুণ অর্জন পবিত্র রমজানের প্রশিক্ষণের অন্যতম লক্ষ্য। অধীনস্থদের প্রতি দয়ার্দ্র থাকা, নিজের ক্ষতি হলেও সত্য কথাটি বলা, অনেক সৎকর্ম করলেও তাকে খুব কম বলে মনে করা এবং খুব কম অন্যায় করা সত্ত্বেও তাকে খুব বেশি বলে মনে করাও অতি উচ্চ স্তরের মহৎ গুণ।

 

রিয়া বা নিজের ভালো কাজকে জাহির করা ইচ্ছা এবং 'ওজব্' বা অনেক ভালো কাজ করে ফেলেছি বা অনেক ভালো মানুষ হয়ে গেছি- এ জাতীয় ধারণা হল দু'টি মারাত্মক ও সূক্ষ্ম পাপ। এইসব পাপ মানুষের সব পুণ্যকে ধ্বংস করে ফেলে।

 

মহান নবী-রাসূল (আ.) ও ইমামগণ (আ.) সব সময় নিজেদেরকে হীনতম ও তুচ্ছতম ব্যক্তি বলে মনে করতেন এবং মহা-অপরাধী হওয়ার চেতনা নিয়েই আল্লাহর দরবারে ক্রন্দন করতেন। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা.) প্রতিদিন অন্তত ৭০ বার তওবা করতেন এবং আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দন করতেন যদিও তিনি কখনও কোনো পাপ করেননি। আমিরুল মু'মিনিন আলী (আ.) এই বলে দুঃখ করতেন, পরকালের সফর কত দীর্ঘ অথচ পাথেয় বা সৎকর্ম কতো কম! তিনি রাতের বেলায় এমনভাবে ক্রন্দন করতেন মনে হয় যেন তাঁকে সাপে দংশন করেছে! তাই নবী-রাসূল ও ইমামদের নীচের পর্যায়ে মুসলমানদের তো উচিত আল্লাহর দরবারে আরো বেশি বিনয়ী হওয়া ও আরও বেশি ক্রন্দন করা। নামাজের সময় উপস্থিত হলে আল্লাহর ভয়ে মহান ইমামগণের মুখের রং বদলে যেত। মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত খোদাভীরু ও মুমিন হওয়ার তৌফিক দিন।

 

এবারে পড়া অর্থসহ নবম রোজার দোয়া:


اليوم التّاسع : اَللّـهُمَّ اجْعَلْ لي فيهِ نَصيباً مِنْ رَحْمَتِكَ الْواسِعَةِ، وَاهْدِني فيهِ لِبَراهينِكَ السّاطِعَةِ، وَخُذْ بِناصِيَتي اِلى مَرْضاتِكَ الْجامِعَةِ، بِمَحَبَّتِكَ يا اَمَلَ الْمُشْتاقينَ .
হে আল্লাহ ! এদিনে আমাকে তোমার রহমতের অধিকারী কর । আমাকে পরিচালিত কর তোমার উজ্জ্বল প্রমাণের দিকে । হে আগ্রহীদের লক্ষ্যস্থল । তোমার ভালোবাসা ও মহব্বতের উসিলায় আমাকে তোমার পূর্ণাঙ্গ সন্তুষ্টির দিকে নিয়ে যাও ।


source : irib.ir
0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

আল কোরআনের অলৌকিকতা (৬ষ্ঠ পর্ব)
কবর জিয়ারত
কোরবানির ইতিহাস
পবিত্র ঈদে গাদীর
হযরত ফাতেমার চরিত্র ও কর্ম-পদ্ধতি
হযরত আলীর নামের শেষে (আ.) ব্যবহার ...
কোরআন বিকৃতি মুক্ত
আদাবুস সুলূক (আধ্যাত্মিক পথ ...
মুহাম্মাদের (সা.) সঙ্গে মুবাহিলা ...
একটি শিক্ষণীয় গল্প :হালুয়ার মূল্য

 
user comment