বাঙ্গালী
Friday 27th of December 2024
0
نفر 0

'পাশ্চাত্য ভারসাম্যহীন; ইসলাম সব ধরনের চরমপন্থা থেকে মুক্ত'

মালয়েশিয়ার নওমুসলিম জনাব 'কাভান' প্রথম জীবনে ছিলেন একজন বৌদ্ধ ও এরপর তিনি খ্রিস্ট ধর্ম গ্রহণ করেন। শেষ পর্যন্ত পবিত্র কুরআন ও ইসলামী সমাজের নানা আকর্ষণে মুগ্ধ হয়ে তিনি গ্রহণ করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম।

 

'কাভান' জন্ম নিয়েছিলেন এক বৌদ্ধ পরিবারে। ছয় বছর বয়সে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল একটি চীনা স্কুলে। সেখানে কাভান কনফুসিয়াসের চিন্তাধারার সঙ্গে পরিচিত হন। তিনি নয় বছর বয়সে কুয়ালালামপুরের ভিক্টোরিয়া স্কুলে ইংরেজি ভাষা শেখেন। কিছু দিন পর পরিচিত হন বাইবেলের সঙ্গে এবং কয়েক বছর পর খ্রিস্টান হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কাভান খ্রিস্ট ধর্মের শিক্ষা এতটা রপ্ত করতে সক্ষম হন যে একজন পাদ্রি হিসেবে গির্জায় উপদেশ দিতেন। কিন্তু একদিন গির্জায় যাওয়ার পথে এক পরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে তার সাক্ষাত ঘটে। আর এই সাক্ষাতই ঘুরিয়ে দেয় তার জীবনের মোড়। তিনি সেদিনের সেই ঘটনার স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন:

 

" 'কুয়ালালিপস' গির্জায় বক্তব্য রাখার জন্য যাওয়ার পথে এক ভারতীয় মুসলমানের সঙ্গে দেখা হয়। তার সঙ্গে আগেই পরিচয় হয়েছিল। তিনি সেদিন আমাকে ইংরেজিতে অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি উপহার দেন। কাকা মুহাম্মাদ নামের ওই ব্যক্তি এসেছিলেন এ জন্যই। তিনি অন্যদের কাছে ইসলামের শিক্ষা প্রচারে খুবই আগ্রহী ছিলেন। তাই ইংরেজিতে অনূদিত পবিত্র কুরআনের একটি কপি সংগ্রহের পরই তিনি তা আমার জন্য নিয়ে আসেন। তার কাছ থেকে কুরআনের ওই কপিটি নেয়ার পর সেদিনই তা পড়তে আগ্রহী হই। প্রথমেই কুরআনের বিষয়বস্তুগুলো আমাকে বেশ আকৃষ্ট করে ও এসবের মাধ্যমে প্রভাবিত হই। কিন্তু ওই প্রভাব এতটা ব্যাপক ছিল না যে তখনই মুসলমান হওয়ার সিদ্ধান্ত মাথায় আসতে পারে। এ ঘটনার পর কিছু দিন কেটে যায়। সে সময় খ্রিস্টানদের নানা গ্রুপের ভিন্ন ভিন্ন গির্জার মধ্যে মতভেদ ও উত্তেজনা আমাকে খুবই দুঃখিত এবং হতবাক করেছিল। এইসব বিষয়সহ আরো কিছু বিষয়ের প্রভাবে আমি ইসলাম সম্পর্কে জানার সিদ্ধান্ত নেই। ফলে এইবার খুব মনোযোগ দিয়ে কুরআন পড়লাম এবং বেশ গভীরভাবে প্রভাবিত হলাম।"

 

পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ একত্ববাদের ওপর বেশ জোর দিয়েছেন। আর এ বিষয়টিও গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে কাভানকে। তার মতে ইসলাম ও খ্রিস্ট ধর্মের মধ্যে পার্থক্যের সবচেয়ে বড় দিক হল এই বিষয়।

 

ইসলামের ও পবিত্র কুরআনের শিক্ষার অন্য যে দিক মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভানকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছে তা হল, মানুষের জীবনের সব দিকের প্রতি ভারসাম্যপূর্ণ দৃষ্টি এবং যে কোনো বিষয়ে শৈথিল্য বা বাড়াবাড়ি থেকে দূরে থাকার ওপর গুরুত্ব আরোপ। কাভান এ প্রসঙ্গে বলেছেন: 'আমার মতে বিশ্ব কোনো কোনো মতবাদের একপেশে দৃষ্টিভঙ্গির কারণে নানা সংকটের শিকার হয়েছে। কেউ কেউ কেবল মানুষের আধ্যাত্মিক দিকগুলোকেই গুরুত্ব দেন এবং মানুষের পার্থিব সব বিষয়কে পুরোপুরি উপেক্ষা করেন। অন্যদিকে কেউ কেউ নৈতিক ও আধ্যাত্মিক দিকগুলোকে সম্পূর্ণ এড়িয়ে যান। এই দুই ধরনের মানুষই বাড়াবাড়িতে লিপ্ত। বিশ্বজুড়ে এ ধরনের চরম পন্থা মানুষকে প্রশান্তি থেকে দূরে রাখছে। বিশ্বে নানা যুদ্ধ, সংঘাত ও মতভেদ এ ধরনের চরমপন্থা, ক্ষমতা-লিপ্সা ও নানা ধরনের লোভ-লালসারই ফসল।'

 

মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভান এ বিষয়ে আরো ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছেন: পাশ্চাত্যে আজ ভারসাম্যহীনতা খুবই স্পষ্ট। পাশ্চাত্য হচ্ছে এমন এক ভবনের মত যার বাইরে রয়েছে ব্যাপক চাকচিক্য, কিন্তু ভেতরটা শুন্য ও দুর্বল। তারা যেন এমন এক পাত্র তৈরি করেছে যা উত্তেজনা আর নানা অবিচারে ভরপুর। তারা বিজ্ঞানকে শরীরের ভোগ-বিলাস বা আরামের কাজে ব্যবহার করছে, কিন্তু আত্মাকে দারিদ্র ও উদ্বেগের মধ্যে ছেড়ে দিয়েছে। বস্তুবাদী সভ্যতার বিপদ হল এটা যে, এই সভ্যতা আধ্যাত্মিকতাকে পরিহার করেছে এবং এমনকি আধ্যাত্মিকতাকে মানুষের বস্তুগত নানা খাহেশের সেবায় নিয়োজিত করেছে। অথচ ইসলাম সম্পর্কে পড়াশুনা করে আমি জেনেছি যে এ ধর্ম সব ধরনের চরমপন্থা থেকে মুক্ত।'

 

ইসলামের আরো একটি বড় দিক মালয়েশিয় নও-মুসলিম কাভানকে মুগ্ধ করেছে। আর এ দিকটি হল, ইসলামী বিধানের পরিপূর্ণতা। ইসলাম পার্থিব ও পারলৌকিক সব বিষয়ে দিক-নির্দেশনা দিয়েছে। আর এ জনই ইসলাম একত্ববাদ, পরকাল বা বিচার দিবস ও নবুওতকে ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছে। এইসব বিষয় পরস্পরের সঙ্গে সম্পর্কিত। যেমন, সত কাজের পুরস্কার ও মন্দ কাজের শাস্তির জন্যই পরকাল বা বিচার-দিবস থাকাটা জরুরি।

কাভান বলেছেন:

ইসলাম বৈষয়িকতা বা পার্থিব কিংবা বস্তুগত বিষয় ও আধ্যাত্মিকতার মধ্যে ভারসাম্যের নীতিতে বিশ্বাসী। এ জন্য ইসলামের রয়েছে চমতকার কর্মসূচি। ইসলাম বিধানগুলো খুবই যৌক্তিক ও বিবেক-সম্মত। কুরআন অতীতের ঐশী ধর্মগ্রন্থগুলোকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তৌহিদ বা একত্ববাদের সৌন্দর্য সম্পর্কে কথা বলে। এইসব সৌন্দর্যের কারণেই আমি ৪২ বছর বয়সে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করি এবং নিজের জন্য ইব্রাহিম কাভান নামটি বেছে নিয়েছি।'
ইব্রাহিম কাভান সবশেষে বলেছেন: 'আমি মুসলমান হতে পারার জন্য মহান আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি ও সৌভাগ্যবান হয়েছি বলে পুরোপুরি অনুভূব করছি।'#

 

0
0% (نفر 0)
 
نظر شما در مورد این مطلب ؟
 
امتیاز شما به این مطلب ؟
اشتراک گذاری در شبکه های اجتماعی:

latest article

শীয়া মাযহাবের উৎপত্তি ও ...
বিশ্ব মানবতার মুক্তির দিশারী ...
নবীর প্রতি ভালোবাসা
ইমামত ও খেলাফত
'পাশ্চাত্য ভারসাম্যহীন; ইসলাম সব ...
এক ইসলামের মধ্যে কেন এত মাযহাব
শ্যান স্টোনের কণ্ঠে তৌহিদের বাণী
অস্থায়ী বিবাহ প্রসঙ্গে

 
user comment